HomePhysicsএক্স রে কি? এক্স-রে কে আবিষ্কার করেন? এক্স রে কত প্রকার?

এক্স রে কি? এক্স-রে কে আবিষ্কার করেন? এক্স রে কত প্রকার?

এক্স রে কি? (What is X-ray in Bengali/Bangla?)

এক্স-রে বা রঞ্জন রশ্মি হলো একটি উচ্চ ভেদনক্ষমতা সম্পন্ন তাড়িতচৌম্বক বিকিরণ, যা দ্রুতগতিসম্পন্ন ইলেকট্রন দ্বারা কোনো ধাতব পাতকে আঘাত করে উৎপন্ন করা যায়।

 

এক্স-রে আবিষ্কার

এক্স-রে আবিষ্কার করেন জার্মান বিজ্ঞানী উইলিয়াম রন্টজেন ১৮৯৫ সালে এবং এক্স-রে আবিষ্কারের জন্য ১৯০১ সালে পদার্থবিজ্ঞানে প্রথম নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। রন্টজেন তড়িৎক্ষরণ নলে (discharge tube) ১০−৩ মিলিমিটার পারদ চাপে বায়ুর মধ্যে তড়িৎক্ষরণের পরীক্ষা করতে গিয়ে লক্ষ্য করেন যে নল থেকে কিছু দূরে অবস্থিত বেরিয়াম প্লাটিনোসায়ানাইড আবৃত পর্দায় প্রতিপ্রভার সৃষ্টি হচ্ছে। পরে তিনি আবিষ্কার করেন যে, তড়িৎক্ষরণ নল থেকে ক্যাথোড রশ্মি যখন নলের দেয়ালে পড়ে তখন এই রশ্মির উৎপত্তি হয়। তিনি এই রশ্মির নাম রাখেন এক্স রশ্মি, যা বাংলায় রঞ্জনরশ্মি নামে পরিচিত।

 

এক্স-রে ও সাধারণ আলোর মধ্যে পার্থক্য কি?

এক্স-রে ও সাধারণ আলোর মধ্যে প্রধান পার্থক্য হল এদের তরঙ্গ দৈর্ঘ্যে। সাধারণ আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ৭x১০−৭ মিটার থেকে ৪x১০−৭ মিটারের কাছাকাছি। এক্স রশ্মির তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ১০−৮ মিটার থেকে ১০−১১ মিটারের কাছাকাছি। সাধারণ আলো দেখা যায় এবং বিভিন্ন রঙে বিভক্ত হয়। কিন্তু এক্স রশ্মি দেখা যায় না। এক্স রশ্মি উচ্চ ভেদন ক্ষমতাসম্পন্ন। এক্স রশ্মির আয়ন সৃষ্টিকারী বিকিরণ গ্যাস বা বায়বীয় পদার্থের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করার সময় বায়বীয় পদার্থটিকে আয়নিত করে, কিন্তু সাধারণ আলো এটি করতে পারে না।

 

এক্সরের প্রকারভেদ (Types of X-ray)

এক্স-রে প্রধানত দুই প্রকার। যথা :

  • কোমল এক্সরে (Soft X-ray) : যে এক্সরের তরঙ্গদৈর্ঘ্য অপেক্ষাকৃত বেশি, ফলে ভেদন ক্ষমতা অপেক্ষাকৃত কম, তাকে কোমল এক্সরে বলে।
  • কঠিন এক্সরে (Hard X-ray) : যে এক্সরের তরঙ্গদৈর্ঘ্য অপেক্ষাকৃত কম, ফলে ভেদন ক্ষমতা অপেক্ষাকৃত বেশি, তাকে কঠিন এক্সরে বলে।

 

এক্সরের একক (Unit of X-ray)

এক্সরের একক হল রন্টজেন। এক রন্টজেন বলতে সেই পরিমাণ বিকিরণ বুঝায় যা স্বাভাবিক চাপ ও তাপমাত্রায় এক মিলিমিটার বায়ুতে এক স্থির বৈদ্যুতিক আধানের সমান আধান উৎপন্ন করতে পারে।

 

এক্সরে তৈরির পদ্ধতি

এক্স-রে তৈরির জন্য তিনটি পদ্ধতি আছে; যথা—

(১) গ্যাস নল পদ্ধতি (Gas tube method);

(২) কুলীজ নল পদ্ধতি (Coolidge tube method) ও

(৩) বিটাট্রন পদ্ধতি (Betatron method)।

এক্সরে নলে এক্স-রে উৎপাদন কৌশল নিম্নে ব্যাখ্যা করা হলো :

সাধারণত এক্স-রে নলে এক্স-রে উৎপন্ন হয়। এক্স-রে নল একটি বায়ু শূন্য কাচনল। কাচ নলের দু প্রান্তে দুটি তড়িৎদ্বার বা ইলেকট্রোড লাগানো থাকে। এদের একটি ক্যাথোড এবং অন্যটি অ্যানোড। ক্যাথোডে টাংস্টেন ধাতুর একটি কুণ্ডলী থাকে একে ফিলামেন্ট বলে। ফিলামেন্টের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত তড়িৎ প্রবাহ ক্যাথোডকে উত্তপ্ত করে। ফলে ক্যাথোড থেকে ইলেকট্রন মুক্ত হয় এবং বের হয়ে আসে। ক্যাথোড থেকে অ্যানোডের মাঝে খুব উচ্চ বিভব পার্থক্য প্রয়োগ করা হলে ক্যাথোড থেকে ইলেকট্রনগুলো খুব দ্রুত গতিতে ছুটে যায় এবং লক্ষ্যবস্তু অ্যানোডকে আঘাত করে। এই শক্তিশালী ইলেকট্রনের আঘাতে অ্যানোডের পরমাণুর ভেতর দিকের কক্ষপথে থাকা ইলেকট্রন কক্ষপথচ্যুত হয়। তখন বাইরের দিকের কক্ষপথ থেকে কোনো ইলেকট্রন সেই জায়গা পূরণ করে। এর কারণে যে শক্তিটুকু উদ্বৃত্ত হয়ে যায় সেটি শক্তিশালী এক্স-রে হিসাবে বের হয়ে আসে।

এক্ষেত্রে, ইলেকট্রনের গতিশক্তি তাড়িতচৌম্বক তরঙ্গে পরিণত হয়।

 

এক্সরের ধর্ম

  • এক্সরে চার্জ শূন্য।
  • এক্সরে সরলরেখায় চলাচল করে।
  • এক্সরে অধিক ভেদনক্ষমতাসম্পন্ন।
  • এক্সরে একটি তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ, তড়িৎক্ষেত্র বা চৌম্বকক্ষেত্র দ্বারা এটি বিচ্যুত হয় না।
  • এক্সরের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য অনেক কম, কম্পাঙ্ক অনেক বেশি।
  • সাধারণ আলোর মতো এক্স রশ্মির প্রতিফলন, প্রতিসরণ, ব্যতিচার, অপবর্তন ও সমাবর্তন হয়ে থাকে।
  • আলোকচিত্রগ্রাহী পাতের (ফটোগ্রাফিক প্লেট) উপর এর প্রতিক্রিয়া আছে।
  • এক্সরশ্মির আলোক-তড়িৎ ক্রিয়া আছে।
  • জিঙ্ক সালফাইড, বেরিয়াম প্লাটিনোসায়ানাইড, প্রভৃতি পদার্থে এ রশ্মি প্রতিপ্রভার সৃষ্টি করে।
  • এক্সরে গ্যাসীয় পদার্থে আয়ন সৃষ্টিকারী বিকিরণ।
  • এক্সরে দেখা যায় না। সাধারণ আলো চোখে পড়লে দেখা যায়, কিন্তু এক্স রশ্মি চোখে পড়লে দেখা যায় না।
  • এক্সরশ্মির তীব্রতা ব্যস্তানুপাতিক সূত্র মেনে চলে।
  • এক্সরশ্মি জীবন্ত কোষকে ধ্বংস করতে পারে।
  • এক্সরশ্মি প্রতিপ্রভা সৃষ্টি করে।
  • এক্সরের আলোর বেগে অর্থাৎ প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৩×১০৮ মিটার (৩ লক্ষ কিলোমিটার) বেগে গমন করে।

 

এক্সরের ব্যবহার

চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক্সরের ব্যবহারঃ

  • স্থানচ্যুত হাড়, হাড়ে দাগ বা ফাটল, ভেঙ্গে যাওয়া হাড়, শরীরের ভিতরের কোন বস্তুর বা ফুসফুসের ক্ষত, দাঁতের ক্যারিস ইত্যাদির অবস্থান নির্ণয়ে এক্সরে ব্যবহার করা হয়।
  • ক্যান্সারের চিকিৎসায় এক্স রশ্মি বিকিরণ ব্যবহার করা হয়।
  • পরিপাক (Digestive) নালী দিয়ে খাদ্যবস্তুর চলাচল পথ অনুসরণ, আলসার নির্ণয় ইত্যাদির জন্য ব্যবহার করা হয়।

শিল্পখাতে এক্সরের ব্যবহারঃ

  • ধাতব ঢালাইয়ের দোষ ত্রুটিপূর্ণ ঢালাই, ধাতব পাতের গর্ত, ইত্যাদি নির্ণয়ে ব্যবহৃত হয়।
  • কেলাস গঠন পরীক্ষায় এক্সরে ব্যবহার করা হয় এবং মণিকারেরা এর সাহায্যে আসল ও নকল গহনা চিহ্নিত করতে পারেন।
  • টফি, লজেন্স, সিগারেট ইত্যাদির মান বজায় আছে কিনা বা টফি ও লজেন্সে ক্ষতিকর কোন কিছু মিশ্রিত হয়েছে কি না, তা জানার জন্য এক্সরে ব্যবহার করা হয়।

গোয়েন্দা বিভাগে এক্সরের ব্যবহারঃ

  • কাঠের বাক্স বা চামড়ার থলিতে বিস্ফোরক লুকিয়ে রাখলে তা খুঁজে বের করতে ব্যবহার করা হয়।
  • শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তারা চোরাচালানের দ্রব্যাদি খুঁজে বের করতে ব্যবহার করেন।

 

এক্সরে সম্পর্কিত কিছু তথ্য–

  • ১৮৯৫ সালে এক্সরে আবিষ্কৃত হয়।
  • এক্সরে একধরনের উচ্চশক্তিসম্পন্ন রশ্মি।
  • এক্সরে বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ।
  • এক্সরের তরঙ্গদৈর্ঘ্য দৃশ্যমান আলো থেকে কয়েক হাজার গুণ ছোট। তাই এর শক্তিও সাধারণ আলো থেকে কয়েক হাজার গুণ বেশি।
  • এক্সরে দেখা যায় না।

 

এক্সরে সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তরঃ–

১। এক্সরে কী ধরনের বিকিরণ?

উত্তর : এক্স-রে তাড়িতচৌম্বকীয় বিকিরণ।

২। এক্সরে প্রথম কত সালে আবিষ্কার হয়?

উত্তর : ১৮৮৫ সালে।

৩। এক্সরে আবিষ্কার করেন কে?

উত্তর : উইলহেলোম রন্টজেন।

৪। এক্সরে কত সালে আবিষ্কৃত হয়?

উত্তর : ১৮৮৫ সালে।

৫। এক্সরের অপর নাম কি?

উত্তর : রঞ্জন রশ্মি।

৬। কোনটি শরীরের মাংসপেশী ভেদ করে ফটোগ্রাফি প্লেটে ছবি তুলতে পারে?

উত্তর : এক্স রশ্মি।

এক্সরে ও সাধারণ আলোর পার্থক্য কি?
উত্তর : সাধারণ আলোর সঙ্গে এক্স-রের পার্থক্য হলো তরঙ্গ দৈর্ঘ্যে।

এক্সরের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য কত?

উত্তর : 10-8 – 10-12m।

এক্সরে নলের দু’প্রান্তে কয়টি তড়িৎদ্বার লাগানো থাকে?
উত্তর : ২টি।

এক্সরে যন্ত্রে ক্যাথোড কোন পদার্থের তৈরি?
উত্তর : টাংস্টেন।

এক্সরে টিউবের ক্যাথোডে টাংস্টেন ধাতুর কুন্ডলীকে কী বলে?
উত্তর : ফিলামেন্ট।

ফিলামেন্টের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত তড়িৎ প্রবাহ কোনটিকে উত্তপ্ত করে?
উত্তর : ক্যাথোড।

কোনটির কারণে ফিলামেন্ট হতে ইলেকট্রন মুক্ত হয়?
উত্তর : তাপ।

এক্সরে টিউবে অ্যানোড ও ক্যাথোডের মধ্যে বিভব পার্থক্য প্রায়–
উত্তর : 100 হাজার ভোল্ট।

সাধারণত কোন ধাতুকে অ্যানোড হিসেবে ব্যবহার করা হয়?
উত্তর : তামা।

স্থানচ্যুত হাড়, হাড়ে ফাটল, ভেঙ্গে যাওয়া হাড় খুব সহজে শনাক্ত করা যায় কোনটির সাহায্যে?
উত্তর : এক্স-রশ্মি।

দাঁতের ক্যাভিটি এবং অন্যান্য ক্ষয় বের করার জন্য কোনটি ব্যবহার করা হয়?
উত্তর : এক্সরশ্মি।

পেটের অন্ত্রের প্রতিবন্ধকতা সনাক্ত করা যায় কোন রশ্মির সাহায্যে?
উত্তর : এক্স রশ্মির।

বুকের এক্সরের সাহায্যে কী নির্ণয় করা যায়?
উত্তর : ফুসফুসের রোগ।

 

 

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments