এম-কমার্স বা মোবাইল কমার্স হলো এমন একটি ব্যবসায়িক সিস্টেম যা তারবিহীন বা ওয়্যারলেস পরিবেশে সংঘটিত হয়। সুতরাং বলা যায় যে, ওয়্যারলেস ডিজিটাল ডিভাইস ও ওয়্যারলেস অ্যাপ্লিকেশন প্রোটোকলের সাহায্যে সরাসরি ইন্টারনেট ব্যবহার করে ই-বিজনেস করাকে এম-কমার্স (M-commerce) বলে। উন্নত দেশগুলোতে এম-কমার্সের সাহায্যে খুব সহজে কেনাকাটা, টিকিট বুকিং, শেয়ার বেচাকেনা ইত্যাদি করা যায়।
মোবাইল কমার্স (Mobile Commerce) শব্দটির উৎপত্তি হয় ১৯৯৭ সালে। মোবাইল কমার্সকে “গ্রাহকের পকেটে খুচরা দোকান” হিসেবেও বলা হয়ে থাকে।
বিসনেস ইন্ট্যালিজেন্স এর তথ্যমতে, মোবাইল ব্যবহারকারীদের ২৯ শতাংশ বর্তমানে তাদের মোবাইল হ্যান্ডসেটের মাধ্যমে পণ্য ও সেবা ক্রয়-বিক্রয় করে থাকে। ওয়ালমার্ট এর মতে, ডিসেম্বর ২০১২ এ তাদের ইন্টারনেট শপিং সাইট ব্যবহারকারীদের ৪০ শতাংশ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সাইট এ প্রবেশ করেছে। ব্যাংক অফ আমেরিকা ধারণা করে, ২০১৫ সালে ইউরোপ ও আমেরিকায় ৬৭.১ বিলিয়ন ডলার ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন হবে মোবাইল ডিভাইসের মাধ্যমে। যুক্তরাজ্যে মোবাইলের মাধ্যমে খুচরা বিক্রেতারা ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে ৩১ শতাংশ বেশি লাভ করবে বলে ধারণা করা হয়।
মোবাইল কমার্স বা এম কমার্স এর ইতিহাস
১০০টি প্রতিষ্ঠান নিয়ে গঠিত গ্লোবাল মোবাইল কমার্স ফোরাম উদ্বোধন হয় ১০ নভেম্বর ১৯৯৭ সালে। নভেম্বর ১৯৯৭ এ অনুষ্ঠিত তাদের প্রথম সমাবেশে কেভিন ডাফে [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] গ্লোবাল মোবাইল কমার্স ফোরাম এর সভাপতি নির্বাচিত হন। এক বছরের মধ্যে ১০০টি প্রতিষ্ঠান ফোরামে যোগ দেয়।
মোবাইল কমার্স সেবা প্রথম চালু হয় ১৯৯৭ সালে ফিনল্যান্ডের হেলসিংকি এ। সেখানে মোবাইল ফোন থেকে এসএমএস বা টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করা যায় এমন দুইটি কোকা-কোলা ভেন্ডিং মেশিন চালু করা হয়। প্রথম মোবাইল ফোন ভিত্তিক ব্যাংকিং ও চালু হয় ১৯৯৭ সালে ফিনল্যান্ডে, ফিনল্যাণ্ডের মেরিটা ব্যাংক এর মাধ্যমে।
কেভিন ডাফে ১৯৯৭ সালের শেষদিকে একটি মোবাইল কমার্স সার্ভার বানান, যেটি ১৯৯৮ সালে দে লা রুএ, মটোরোলা এবং লোজিকের সাথে যৌথভাবে তৈরী একটি সলিউশনে “সবচেয়ে উদ্ভাবনী মোবাইল পণ্য” শ্রেণীতে ফিনান্সিয়াল টাইমস পুরস্কার লাভ করে। ১৯৯৮ সালে প্রথম মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ডিজিটাল পণ্য বিক্রি হয় ফিনল্যান্ড এ রেডিওলিনজার (বর্তমানে এলিসা ওইয়্জের অংশ) মাধ্যমে। তারা বাণিজ্যিকভাবে মোবাইলে রিংটোন ডাউনলোডের সেবা চালু করে।
জাতীয়ভাবে মোবাইল কমার্স এর দুইটি ক্ষেত্র চালু হয় ১৯৯৯ সালে ফিলিপিন্স এর মানি ও জাপানের এনটিটি ডোকোমোর আই-মোড এর মাধ্যমে। আই-মোড একটি আয়/মুনাফা ভাগের প্ল্যান চালু করে যেখানে এনটিটি ডোকোমো কোন কন্টেন্ট এর জন্য ব্যবহারকারীদের প্রদত্ত ফি এর ৯ শতাংশ নেয় আর বাকি ৯১ শতাংশ কন্টেন্ট এর মালিক পায়।
মোবাইল কমার্স সম্পর্কিত সেবাগুলো ছড়িয়ে পড়ে ২০০০ সালের শুরুর দিকে। এ সময়ে নরওয়ে মোবাইলের মাধ্যমে পার্কিং ফি প্রদানের সুবিধা, অস্ট্রিয়া মোবাইলের মাধ্যমে ট্রেনের টিকেট কাটার সুবিধা এবং জাপান মোবাইলের মাধ্যমে প্লেনের টিকেট কাটার সুবিধা চালু করে।
মোবাইল কমার্স পণ্য ও সেবা
- মোবাইল মানি ট্রান্সফার-মোবাইল এর মাধ্যমে টাকা স্থানান্তর
- মোবাইল এটিএম- মোবাইল এর মাধ্যমে টাকা উঠানো
- মোবাইল টিকেটিং-মোবাইল এর মাধ্যমে টিকেট কাটা
- মোবাইল ব্যাংকিং- মোবাইল এর মাধ্যমে ব্যাংকিং কার্যক্রম
- মোবাইল ভাউচার- মোবাইলের মাধ্যমে ভাউচার কেনা এবং তা দিয়ে পরবর্তীতে পণ্য কেনা
- মোবাইল স্থান ভিত্তিক সেবা- ব্যবহারকারীর স্থান ভেদে পণ্যের দাম ও মূল্যহ্রাস
- মোবাইল নিলাম- মোবাইলের মাধ্যমে নিলামে অংশ নেওয়া
- মোবাইল বিজ্ঞাপন- মোবাইলের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন ইত্যাদি
মূল্য প্রদানের মাধ্যম
- ক্রেডিট কার্ড : এই পদ্ধতিতে ব্যবহারকারী তার মোবাইল সিম কার্ড ও ক্রেডিট কার্ড সংযুক্ত করে নিতে পারে এবং ক্রেডিট কার্ড এর মাধ্যমে মোবাইল থেকে কেনা-বেচা ও অন্যান্য মোবাইল কমার্স কার্যক্রমে অংশ নিতে পারে।
- প্রি-পেইড ও পোষ্ট পেইড মোবাইল বিলের মাধ্যমে : মোবাইল কমার্সের চার্জ ব্যবহারকারীর মোবাইলের প্রি-পেইড ও পোষ্ট পেইড বিলের সাথে যুক্ত হবে এবং সেখান থেকে কেটে রাখা হবে।
Tags :
- এম কমার্স বলতে কী বোঝায়?
- এম কমার্স এর ব্যবহার করে কিভাবে পণ্য ক্রয় করা যায়?
- মোবাইল কমার্স কাকে বলে?
- ই কমার্স কি
- এম কমার্স এর সুবিধা
- ই কমার্স ও এম কমার্স
- M-commerce
- M commerce pdf?
- এম-কমার্স ও ই-কমার্সের মধ্যে পার্থক্য দেখাও