HomeICTগ্লোবাল ভিলেজ কি? গ্লোবাল ভিলেজের সুবিধা ও অসুবিধা কি?

গ্লোবাল ভিলেজ কি? গ্লোবাল ভিলেজের সুবিধা ও অসুবিধা কি?

গ্লোবাল ভিলেজ এর ধারণা (Concept of Global Village)

Village বা গ্রাম হলো একটি ছোট গোষ্ঠি অথবা কতগুলো বাড়ির সমষ্টি। নির্দিষ্ট এলাকায় সীমিত আয়তনে একটি গ্রামের অবস্থান বিধায় গ্রামে বসবাসকারীরা সবাই সবাইকে চিনে। গ্রামে কোন তথ্য প্রকাশিত হলে মুহূর্তেই তা মুখে মুখে জানাজানি হয়ে যায়। গ্রামে যে কোন মুহূর্তে একজন আরেকজনের কাজে সহযোগিতা করে থাকে।

গ্লোবাল শব্দের অর্থ হলো বিশ্ব। গ্লোবাল ভিলেজ অর্থ বিশ্বগ্রাম। গ্লোবাল ভিলেজ হলো প্রযুক্তিনির্ভর একটি বিশ্ব যাতে অনেক দূরে অবস্থান করেও বিশ্বের সবদেশ সবজাতি একটি গ্রামের মতো সুবিধা পায়।

বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তেই গ্রামের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা হয়। কতকগুলো গ্রামের সমন্বয়ে শহর, কতকগুলো শহরের সমন্বয়ে একটি জেলা বা অঞ্চল এবং কতকগুলো জেলা ও অঞ্চলের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে একটি দেশ। আবার অসংখ্য দেশের সম্মিলিত ভৌগোলিক অবস্থানকে বিশ্ব বলে বিবেচনা করা হয়। বর্তমানে প্রযুক্তির কল্যাণে বিশ্বের পরিধি আজ ছোট হয়ে এসেছে। বৃহৎ প্রেক্ষাপটে সেই হিসেবে বিশ্বটাই হলো একটি গ্রাম।

বিশ্বগ্রাম বা গ্লোবাল ভিলেজ বলতে সাধারণত এমন একটি ধারণাকে বোঝানো হয় যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের লোকজন একে অপরের সাথে সহজ যাতায়াত ও ভ্রমণ, গণমাধ্যম ও ইলেকট্রনিক যোগাযোগের (রেডিও, টেলিভিশন, টেলিফোন, মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট প্রভৃতি) মাধ্যমে যুক্ত থাকে এবং ক্রমেই একটি একক কম্যুনিটিতে পরিণত হয়। বিভিন্ন ধরনের মিডিয়া রিশেষ করে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব এর ব্যাপক ব্যবহার ও প্রভাবের কারণে আজ বিশ্বের কোনো এক দেশের এক প্রান্তের লোকজন অন্য প্রান্তের অন্য কোনো দেশের লোকের সাথে খুব সহজেই যোগাযোগ করতে পারছে। তথ্যের এই আদান প্রদান বিশ্বকে এতটাই কাছে নিয়ে এসেছে যে এটি এখন একটি গ্রাম বা ভিলেজ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ- বাংলাদেশে অবস্থানকারী কোনো ব্যক্তি এখন অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসকারী কোনো ব্যক্তির সাথে তাৎক্ষণিকভাবে অনলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন। টেলিফোন, টেলিভিশন, কম্পিউটার ও ইন্টারনেট (মেসেঞ্জার, ই মেইল, সোশ্যাল মিডিয়া) সহ আরও কিছু ইলেকট্রনিক মাধ্যম এক্ষেত্রে দূরত্বের ব্যবধানটি ঘুচিয়ে দিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।

বিশ্বগ্রাম বা গ্লোবাল ভিলেজে আজকাল বিশ্বের একপ্রান্তের লোক অন্যপ্রান্তের লোকের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। আজকের বিশ্বে আমরা মূলত একটি বিশ্বগ্রাম বা গ্লোবাল ভিলেজেই বসবাস করছি। যোগাযোগ, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, গবেষণা, অফিস, বাসস্থান, ব্যবসায়-বাণিজ্য, সংবাদ, বিনোদন ও সামাজিক যোগাযোগ এবং সাংস্কৃতিক উপাদান বিনিময়ের ক্ষেত্রে বিশ্বগ্রামের বহুল প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের লোকজন এখন আন্তঃসংযুক্ত ও আন্তঃনির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।

 

গ্লোবাল ভিলেজ এর জনক কে?

কানাডিয়ান দার্শনিক ও লেখক হারবার্ট মার্শাল ম্যাকলুহান (Herbert Marshall MeLuhan) ( July 21, 1911 December 31, 1980) হলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি বিশ্বগ্রাম বা গ্লোবাল ভিলেজ শব্দটিকে সকলের সামনে তুলে ধরে একে জনপ্রিয় করে তোলেন। ১৯৬২ সালে তাঁর প্রকাশিত ‘The Gutenberg Galaxy : The Making of Typographic Man’ এবং ১৯৬৪ সালে প্রকাশিত ‘Understanding Media : The Extensions of Man’ বইয়ের মাধ্যমে এই বিষয়টি গুরুত্ব লাভ করে।

 

গ্লোবাল ভিলেজ এর সংজ্ঞা

গ্লোবাল ভিলেজ হলাে তথ্য ও যােগাযােগ প্রযুক্তি নির্ভর এমন একটি পরিবেশ যেখানে দূরবর্তী স্থানে অবস্থান করেও পৃথিবীর সকল মানুষই একটি একক সমাজে বসবাস করার সুবিধা পায় এবং একে অপরকে সেবা প্রদান করে থাকে অর্থাৎ গ্লোবাল ভিলেজ হচ্ছে এমন একটি ধারণা যেখানে গােটা পৃথিবীটাকেই একটি গ্রাম হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

 

গ্লোবাল ভিলেজের সুবিধাসমূহ

  • বিভিন্ন দেশ এবং তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা যায়।
  • ক্লিক করে মুহূর্তেই যে কোন দেশের তথ্য জানা যায়।
  • মুহূর্তের মধ্যে বিশ্বের যে কোন স্থানের কোন ব্যাক্তির সাথে যােগাযােগ করা যায়।
  • মানুষের কাজের দক্ষতা এবং গতি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
  • সহজেই বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল জানা যাচ্ছে।
  • মুহূর্তে বিশ্বের যেকোন প্রান্তে ই-মেইলের মাধ্যমে টেক্সট, অডিও এবং ভিডিও আদান-প্রদান করা যায়।
  • বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার, ফ্রিওয়্যার, বিনােদন উপকরণ ইন্টারনেট থেকে ডাউনলােড করে সংগ্রহ করা যায়।
  • বিভিন্ন শিক্ষামূলক সাইট থেকে প্রয়ােজনীয় তথ্য আহরণ করে জ্ঞান অর্জন করা যায়। অন-লাইনে যেকোন লাইব্রেরি থেকে বই পড়া যায় এবং ঘরে বসেই বিশ্বের নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলাের শিক্ষা গ্রহণ করা যায়।
  • টেলিমেডিসিন পদ্ধতিতে পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে বসে বিশ্বের নামকরা চিকিৎসকদের চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায়।
  • ইন্টারনেট টিভি ও ইন্টারনেট রেডিও চালুর ফলে ঘরে বসেই কম্পিউটারে বিভিন্ন ধরনের টেলিভিশন ও রেডিও চ্যানেলের অনুষ্ঠান উপভােগ করা যায়।
  • ঘরে বসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পত্রপত্রিকা পড়া যায়।
  • ঘরে বসেই পণ্য কেনা বেচা করা যায়। ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটছে এবং লেনদেন সহজ হচ্ছে।
  • ওয়েবপেজে একটি বিজ্ঞাপন নিমেষেই সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেওয়া যায়।
  • স্যাটেলাইট টেলিভিশন, ইন্টারনেট নির্ভর অনলাইন সংবাদ মাধ্যমগুলাের মাধ্যমে প্রতি মুহূর্তে বিশ্বের কোথায় কী ঘটছে সে খবরাখবর জানা যায়।
  • ঘরে বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে আউটসাের্সিং করে উপার্জন করা যায়।

 

গ্লোবাল ভিলেজের অসুবিধাসমূহ

  • ইন্টারনেট হ্যাকিং করে তথ্য চুরি হওয়া।
  • অসত্য তথ্য প্রকাশের মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে।
  • জনগণ কোন কিছু পড়ে এর সূত্র যাচাই না করে সত্য বলে গ্রহণ করতে পারে।
  • নেটে বেশি সময় দেয়ার কারণে সত্যিকারের বন্ধুর চেয়ে ভাচুয়াল বন্ধুর সংখ্যা বাড়তে পারে। এতে করে মানুষের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা বৃদ্ধি পেতে পারে।
  • ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তথ্য চুরি করা। ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি।
  • পর্ণোগ্রাফির মাধ্যমে সামাজিক অবক্ষয়ের সৃষ্টি হওয়া।
  • সাইবার আক্রমণ সংঘটিত হওয়া।
  • সহজে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ফলে কোন দেশের নিজস্ব সংস্কৃতির বিলুপ্তি ঘটা।
  • প্রযুক্তির বেশি ব্যবহারের ফলে শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হওয়া।
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments