HomePhysicsদর্পণ কি? দর্পণ কত প্রকার ও কি কি?

দর্পণ কি? দর্পণ কত প্রকার ও কি কি?

দর্পণ কি? (What is Mirror in Bengali/Bangla?)

দর্পণ হলো এমন একটি মসৃণ তল যেখানে আলোর নিয়মিত প্রতিফলন ঘটে। সাধারণত কাচের একপাশে ধাতুর প্রলেপ লাগিয়ে দর্পণ তৈরি করা হয়ে থাকে কারণ কাচ একটি স্বচ্ছ এবং অনমনীয় বস্তু। কাচের যেদিকে সিলভারিং (কাচে ধাতুর প্রলেপ লাগানোর পদ্ধতি) করা থাকে তার বিপরীত পৃষ্ঠকে দর্পণের পৃষ্ঠ বা প্রতিফলক পৃষ্ঠও বলা হয়।

 

দর্পণ কত প্রকার ও কি কি? (How Many Types of Mirror?)

দর্পণ প্রধানত দুই প্রকার। যথা-

  • সমতল দর্পণ (Plane mirror) ও
  • গোলীয় দর্পণ (Spherical mirror)

সমতল দর্পণ (Plane mirror)

কোনো সমতল পৃষ্ঠ যদি মসৃণ হয় এবং তাতে আলোর নিয়মিত প্রতিফলন ঘটে তবে তাকে সমতল দর্পণ বলে। আমরা প্রতিদিন চেহারা দেখার জন্য যে আয়না ব্যবহার করি সেটি সমতল দর্পণ।

গোলীয় দর্পণ (Spherical/Curved mirror)

যে দর্পণের প্রতিফলক পৃষ্ঠ কোনো গোলকের অংশবিশেষ তাকে গোলীয় দর্পণ বলে।

গোলীয় দর্পণকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়, যথা: উত্তল দর্পণ ও অবতল দর্পণ।

  • উত্তল দর্পণ : যদি কোন গোলকের উত্তল পৃষ্ঠ প্রতিফলকের ন্যায় আচরণ করে তবে তাকে উত্তল দর্পণ বলে। অর্থাৎ গোলকীয় দর্পণের বাইরের উত্তলপৃষ্ঠটি উত্তল দর্পণ হিসেবে কাজ করে।একে অপসারী দর্পণ বলে।
  • অবতল দর্পণ : যদি কোন গোলকের অবতল পৃষ্ঠ প্রতিফলকের ন্যায় আচরণ করে তবে তাকে অবতল দর্পণ বলে। অর্থাৎ গোলকীয় দর্পণের ভিতরের অবতলপৃষ্ঠটি অবতল দর্পণ হিসেবে কাজ করে।

 

দর্পণের ব্যবহার (Use of Mirror)

বিভিন্ন ধরনের দর্পণ আমরা বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করে থাকি। এগুলো নিচে বর্ণনা করা হলো:

সমতল দর্পণ:

  • সমতল দর্পণের সাহায্যে আমরা আমাদের চেহারা দেখি।
  • চোখের ডাক্তারগণ রোগীর দৃষ্টি শক্তি পরীক্ষা করার জন্য বর্ণমালা পাঠের সুবিধার্থে সমতল দর্পণ ব্যবহার করে থাকে।
  • সমতল দর্পণ ব্যবহার করে পেরিস্কোপ তৈরি করা হয়।
  • পাহাড়ি রাস্তার বাঁকে দুর্ঘটনা এড়াতে এটি ব্যবহার করা হয়।
  • বিভিন্ন আলোকীয় যন্ত্রপাতি যেমন- টেলিস্কোপ, ওভারহেড প্রজেক্টর, লেজার তৈরি করতে সমতল দর্পণ ব্যবহার করা হয়।
  • নাটক, চলচ্চিত্র ইত্যাদির সুটিং এর সময় সমতল দর্পণ দিয়ে আলো প্রতিফলিত করে কোনো স্থানের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি করে।

অবতল দর্পণ:

  • সুবিধাজনক আকৃতির অবতল দর্পণ ব্যবহার করে মুখমণ্ডলের বিবর্ধিত এবং সোজা প্রতিবিম্ব তৈরি করা হয়, এতে রূপচর্চা ও দাঁড়ি কাটার সুবিধা হয়।
  • দন্ত চিকিৎসকগণ অবতল দর্পণ ব্যবহার করেন।
  • প্রতিফলক হিসেবে অবতল দর্পণ ব্যবহার করা হয়। যেমন– টর্চলাইট, স্টিমার বা লঞ্চের সার্চলাইটে অবতল দর্পণ ব্যবহার করে গতিপথ নির্ধারণ করা হয়।
  • অবতল দর্পণের সাহায্যে আলোকশক্তি, তাপশক্তি ইত্যাদি কেন্দ্রীভূত করে কোনো বস্তুকে উত্তপ্ত করতে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও এটি রাডার এবং টিভি সংকেত সংগ্রহে ব্যবহৃত হয়। যেমন– ডিশ এন্টেনা, সৌরচুল্লী, টেলিস্কোপ এবং রাডার সংগ্রাহক ইত্যাদি।
  • অবতল দর্পণের সাহায্যে আলোক রশ্মিগুচ্ছকে একটি বিন্দুতে কেন্দ্রীভূত করা যায় বলে ডাক্তাররা চোখ, নাক, কান ও গলা পরীক্ষা করার সময় এ দর্পণ ব্যবহার করেন।

উত্তল দর্পণ:

  • উত্তল দর্পণ সর্বদা অবাস্তব, সোজা এবং খর্বিত প্রতিবিম্ব গঠন করে বিধায় পেছনের যানবাহন বা পথচারী দেখার জন্য গাড়িতে এবং বিয়ের সময় ভিউ মিরর হিসেবে এ দর্পণ ব্যবহার করা হয়।
  • উত্তল দর্পণের সাহায্যে বিস্তৃত এলাকা দেখতে পারা যায় বলে দোকান বা শপিংমলে নিরাপত্তার কাজে উত্তল দর্পণ ব্যবহার করা হয়।
  • প্রতিফলক টেলিস্কোপ তৈরিতে এ দর্পণ ব্যবহার করা হয়।
  • এ দর্পণ বিস্তৃত এলাকায় আলোকরশ্মি ছড়িয়ে দেয় বলে রাস্তার বাতিতে প্রতিফলক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

 

বিম্ব বা প্রতিবিম্ব

কোন নির্দিষ্ট বিন্দু থেকে নির্গত আলোক রশ্মি বা রশ্মিগুচ্ছ প্রতিফলিত বা প্রতিসরিত হয়ে যদি দ্বিতীয় কোন বিন্দুতে মিলিত হয় কিংবা দ্বিতীয় কোনো বিন্দু থেকে অপসৃত হচ্ছে বলে মনে হয় তবে ঐ দ্বিতীয় বিন্দুকে প্রথম বিন্দুর বিম্ব বা প্রতিবিম্ব বলে।

 

দর্পণ সম্পর্কিত আরও প্রশ্ন ও উত্তর

১। দর্পণে কোনটি ঘটে?

উত্তর : প্রতিফলন।

২। দর্পণে সৃষ্ট প্রতিবিম্ব বস্তুর আকৃতির কেমন হয়?

উত্তর : সমান।

৩। সমতলে দর্পণে কোনো বস্তুর পূর্ণ বিম্ব দেখতে হলে দর্পণের দৈর্ঘ্য দর্শকের উচ্চতার কত?

উত্তর : কমপক্ষে অর্ধেক।

৪। সমতল দর্পণে সৃষ্ট বিম্বের বৈশিষ্ট্যগুলো কী কী?

উত্তরঃ সমতল দর্পণে সৃষ্ট বিম্বের নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো দেখা যায়–

  • দর্পণ থেকে বিম্বের দূরত্ব এবং বস্তুর দূরত্ব সমান।
  • বস্তু ও বিম্ব যে সরলরেখায় অবস্থিত, সেটি দর্পণকে লম্বভাবে ছেদ করে।
  • বিম্ব অসদ ও সোজা হবে।
  • বিম্বের পার্শ্ব পরিবর্তন ঘটে।
  • বিম্বের আকার বস্তুর আকারের সমান হবে।

৫। দর্পণের পিছনে ধাতুর প্রলেপ লাগানো হয় কেন?

উত্তর : কাচের এক পৃষ্ঠে ধাতুর প্রলেপ লাগিয়ে দর্পণ তৈরি করা হয়। এর ফলে কাঁচ অস্বচ্ছ প্রতিফলক হিসেবে কাজ করে এবং প্রলেপ লাগানো পৃষ্ঠের বিপরীত পৃষ্ঠে আলোর প্রতিফলন হয়।

৬। দর্পনে লম্বভাবে আপতিত রশ্মি একই পথে ফিরে আসে কেন?

উত্তর : আমরা জানি, প্রতিফলনের ক্ষেত্রে, আপতন কোণ ও প্রতিফলন কোণ সমান। যেহেতু দর্পণে আপতিত রশ্মি লম্বভাবে আপতিত হলে আপতন কোণ 0° হয়, তাই প্রতিফলন কোণও 0° হবে, অর্থাৎ প্রতিফলিত রশ্মি 0° হওয়ায় আলো একই পথে ফিরে আসে।

 

Tags :

দর্পণ কি বা কাকে বলে?; দর্পণের প্রকারভেদ চিত্রসহ ব্যাখ্যা; সমতল দর্পণ ও গোলীয় দর্পণের মধ্যে পার্থক্য কি?; রাডারে কোন দর্পণ ব্যবহার করা হয়?; অবতল দর্পণের তিনটি ব্যবহার; পার্লারে কোন দর্পণ ব্যবহার করা হয়?; দর্পণের মেরু কাকে বলে?; প্রতিবিম্ব কাকে বলে?; দর্পণ কিভাবে তৈরি করা হয়?; দর্পণের প্রধান ফোকাস কাকে বলে?; দর্পণ কিভাবে জীবন বাচায়?; গোলীয় আয়না কাকে বলে?;সমতল দর্পণে প্রতিবিম্ব গঠন; উত্তল দর্পণে বিবর্ধনের মান কত?; ;অবতল দর্পণ ব্যবহার করে প্রতিবিম্ব সৃষ্টি ও প্রদর্শন; অবতল দর্পণের বৈশিষ্ট্য; সমতল দর্পণের বক্রতা কেন্দ্র কোথায় অবস্থিত?; সমতল দর্পণের ফোকাস দূরত্ব কত?;

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments