HomeUncategorizedপ্রেষণা কী? প্রেষণার স্তর কয়টি ও কী কী?

প্রেষণা কী? প্রেষণার স্তর কয়টি ও কী কী?

ইংরেজি Motivation শব্দটির বাংলা প্রতিশব্দ প্রেষণা। Motivation শব্দটি ল্যাটিন শব্দ Movere থেকে এসেছে যার অর্থ হলাে ‘চালনা করা’। তাই প্রেষণার শাব্দিক অর্থ হলো কর্মীর কাজে গতিময়তা সৃষ্টি করা।

আভিধানিক অর্থে প্রেষণা হলো অন্তর্নিহিত শক্তিপ্রবাহ যা মানুষের কর্ম সম্পাদনে উৎসাহিত করে। কোনো একটি কাজ সুষ্ঠু ও কৃতিত্বের সাথে সম্পাদন করতে দৈহিক শক্তিই যথেষ্ট নয়, মানসিক শক্তি অর্থাৎ মনোবলও প্রয়োজন। আর কর্মীকে কার্য সম্পাদনে আগ্রহী করে তোলা ও মনোবল সৃষ্টি করাকে প্রেষণা বলে।

 

প্রেষণার সংজ্ঞা

  • মনোবিদ উইনার এর মতে, প্রেষণা হল এমন একটি অবস্থা যা ব্যক্তিকে বিশেষ একটি ক্রিয়া সম্পাদনের উদবুদ্ধ করে, ক্রিয়া সম্পাদনকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যমুখি করে এবং লক্ষ্যপূরণ না হওয়া পর্যন্ত ব্যক্তিকে কর্মসম্পাদনে ব্যস্ত রাখে।
  • ম্যাকগেওকের মতে, প্রেষণা হল ব্যক্তির এমন একটি অবস্থা, যা বিশেষ একটি কাজের অনুশীলনের দিকে পরিচালিত করে, তাকে কাজটির সঙ্গে পরিচিত করে এবং ব্যক্তির বিভিন্ন আচরণের পর্যাপ্ততা ও কাজটি সম্পাদনের একটি সংজ্ঞা দান করে।
  • মনোবিদ সুইফট এর মতে, ব্যক্তির বিভিন্ন ধরনের চাহিদা পূরণের জন্য যে পরিবর্তনশীল প্রক্রিয়া ব্যক্তির আচরণ ধারাকে নিয়ন্ত্রণ করে তাকে প্রেষণা বলে।
  • মনোবিদ ক্রাইডার এর মতে, আকাঙ্ক্ষা, প্রয়োজন এবং আগ্রহ, যা একটি প্রাণীকে সক্রিয় বা কর্মদ্যোগী করে তোলে এবং একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুর দিকে পরিচালিত করে, তাকে প্রেষণা বলে।

 

প্রেষণার স্তর কয়টি ও কী কী?

প্রেষণার স্তর প্রধানত ৩টি। যথা–

১. অভাব বোধ (Need)

২. উদ্দেশ্যমূলক আচরণ এবং

৩. উদ্দেশ্য সাধন।

১. অভাব বোধ : প্রেষণা জৈবিক ও সামাজিক দু’প্রকারে হয়ে থাকে। মানুষের জৈবিক তাড়নায় যেসব প্রেষণার উদ্ভব ঘটে তাকে জৈবিক প্রেষণা বলে। যেমন— ক্ষুধা, তৃষ্ণা, যৌনতা প্রভৃতি। সামাজিক প্রেষণা হচ্ছে কৃতিত্ব, প্রভাব প্রতিপত্তি, খ্যাতি, মর্যাদা ইত্যাদি। মানুষের সমাজ সভ্যতা, সাংস্কৃতিক জীবনের পরিপ্রেক্ষিতে একজন ব্যক্তির জীবনে এসব প্রেষণা সৃষ্টি হয়।

২. উদ্দেশ্যমূলক আচরণ : অভাব বোধ দূরীকরণের জন্য মানুষ সক্রিয়ভাবে উদ্বুদ্ধ হয়ে উঠে। প্রয়োজন মেটানোর জন্য কার্যে প্রবৃত্ত করে। এ প্রবৃত্তকরণকেই উদ্দেশ্যমূলক আচরণ বলে। যেমন— মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বাড়িঘর তৈরি করে, শিশু ক্ষুধার্ত হলে খাবারের জন্য কান্নাকাটি করতে থাকে।

৩. উদ্দেশ্য সাধন : মানুষ ক্ষুধার্ত হলে তা নিবৃত্ত করার জন্য কোনো লক্ষ্য নির্ধারণ করে এবং এ লক্ষ্য অর্জনের প্রচেষ্টা চালায় শেষ পর্যন্ত উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কার্যটি সম্পাদিত করে। প্রেষণার জন্যই মানুষ নিজের শক্তিকে একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্যের অভিমুখে চালনা এবং করে থাকে।

 

প্রেষণার বৈশিষ্ট্য

প্রেষণার কতগুলি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সেগুলি হল–

১) তাড়না : ব্যক্তির অভাববোধ থেকে এক ধরনের মানসিক অবস্থা অর্থাৎ তাড়নার সৃষ্টি হয়। ব্যক্তির চাহিদা সরাসরি উদ্দেশ্যমুখি আচরণ সৃষ্টি করতে পারে না। তাড়নাই পরবর্তী কালে ব্যক্তিকে উদ্দেশ্যমুখি আচরণে উদ্বুদ্ধ করে। অর্থাৎ প্রেষণা সৃষ্টি হয়।

২) চাহিদা বা অভাব বোধ : প্রেষণা ব্যক্তিগত চাহিদা থেকে সৃষ্টি হয়। কোন ব্যক্তির বিশেষ কোনো চাহিদা থাকলে বা তার মধ্যে কোন অভাব দেখা দিলে প্রেষণা সৃষ্টি হয়। চাহিদা পূরণের জন্য ব্যক্তি বিভিন্ন ধরনের আচরণ করে থাকে। প্রত্যেকটি আচরণের পিছনে কোনো না কোনো অভাব বোধ থাকে মানুষ যখন কোন কিছুর অভাব অনুভব করে তখনই তার মধ্যে প্রেষণার সৃষ্টি হয়।

৩) লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ : প্রেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করা। প্রেষণা ব্যক্তিকে লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করে। লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারলেই ব্যক্তি পরিতৃপ্তি লাভ করে এবং প্রেষণা হ্রাস পায়।

৪) ধারাবাহিক প্রক্রিয়া : প্রেষণা একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। একটি চাহিদা সম্পন্ন হলে আরেকটি চাহিদার জন্য ব্যক্তির মধ্যে প্রেষণা সৃষ্টি হয়। কিন্তু একটি চাহিদা পূরণের জন্য প্রেষণা অন্য কোন চাহিদা পূরণের জন্য কার্যকারী হতে পারে না। প্রত্যেকটি কাজের জন্য নতুন করে প্রেষণা সৃষ্টি হয়।

৫) প্রেষণার হ্রাস ও বৃদ্ধি : প্রেষণা চিরস্থায়ী নয়। একটি প্রেষণা পূরণ হওয়ার পর ব্যক্তির মধ্যে সেই প্রেষণা হ্রাস পায়। আরেকটি প্রেষণা উদ্ভব হয় অর্থাৎ আগের প্রেষণা হ্রাস পায় এবং নতুন প্রেষণার তীব্রতা বৃদ্ধি পায়।

৬) বাধ্যতামূলক ক্ষমতা : প্রেষণার একটি বাধ্যতামূলক ক্ষমতা থাকে। ওই ক্ষমতা মূলত ব্যক্তির চাহিদার প্রকৃতি এবং লক্ষ্যবস্তুর দ্বারা নির্ধারিত হয়।

৭) ভারসাম্য রক্ষা : প্রেষণা ব্যক্তিজীবনের ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে। দৈহিক চাহিদা, সামাজিক চাহিদা ও মানসিক চাহিদা পূরণ না হলে ব্যক্তিজীবনে যে ভারসাম্যের অভাব ঘটে তা দূর করতে সাহায্য করে প্রেষণা। প্রকৃতপক্ষে ব্যক্তিজীবনের সুস্থিরতা বজায় রাখার জন্য প্রেষণা সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

৮) আচরণের গতি প্রকৃতি নির্ণয় : প্রেষণা আচরণসম্পন্ন করে না আচরণকে উদ্বুদ্ধ করে। ব্যক্তির আচরণের গতি নির্ণয় করে। অর্থাৎ প্রেষণা ব্যক্তিকে উদ্দেশ্যমুখি আচরণের পাশাপাশি তার কর্মতৎপরতাকে বাড়িয়ে তোলে।

 

প্রেষণা চক্র কী? (What is Motivational circle?)

প্রেষণা চক্র হচ্ছে এমন একটি সিস্টেম যাতে কর্মীরা উৎসাহিত হয়ে কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যার্জনে ব্রতী হয় এবং এর মাধ্যমে তারা তাদের প্রয়োজন মেটাতে পারে। চক্রের আকারে এ প্রক্রিয়া আবর্তিত হয় বলে একে প্রেষণা চক্র বলে।

 

Tags :

  • প্রেষণা বলতে কী বোঝায়?
  • প্রেষণা প্রধানত কত প্রকার?
  • প্রেষণা তত্ত্বের জনক কে?
  • প্রেষণা চক্র কি
  • প্রেষণা প্রধানত কত প্রকার
  • প্রেষণা চক্রের ধাপ কয়টি ও কি কি
  • প্রেষণার স্তর গুলি কি কি
  • অনার্থিক প্রেষণা কি কি
  • প্রেষণা pdf
  • প্রেষণার তত্ত্ব
  • প্রেষণা চক্রের ধাপ কি কি
  • প্রেষণা দানের উপায়
  • প্রেষণার বৈশিষ্ট্য
  • মাসলোর প্রেষণা তত্ত্ব
  • সামাজিক প্রেষণা কাকে বলে?
  • বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ প্রেষণার পার্থক্য কি?
  • প্রেষণা চক্রের প্রথম ধাপ কোনটি?
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments