HomeElectronicsফিউজ কি? ফিউজ কত প্রকার? ফিউজের সুবিধা ও অসুবিধা কি?

ফিউজ কি? ফিউজ কত প্রকার? ফিউজের সুবিধা ও অসুবিধা কি?

ফিউজ (Fuse) হলো ছোট তার দিয়ে তৈরি সংকর ধাতুর একটি ইলেকট্রিক্যাল ডিভাইস, যা মূলত বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা এড়াবার জন্য ব্যবহার করা হয়। তারটি একটি চিনামাটির কাঠামাের উপর দিয়ে আটকানাে থাকে। এটি সরু এবং গলনাঙ্ক কম বিশিষ্ট হয়। এর মধ্য দিয়ে একটি নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে বেশি তড়িৎ প্রবাহিত হলে এটি অত্যন্ত উত্তপ্ত হয়ে গলে যায়। ফলে তড়িৎ বর্তনী বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এভাবে তড়িৎ প্রবাহ বন্ধ করে দিয়ে ফিউজ যন্ত্রপাতিকে রক্ষা করে। বর্তনীতে ফিউজ সিরিজ সংযােগ করতে হয়।

ফিউজ তারের মান বিভিন্ন হয়ে থাকে। সাধারণত আমরা ৫ অ্যাম্পিয়ার, ১৫ অ্যাম্পিয়ার, ৩০ অ্যাম্পিয়ার এবং ৬০ অ্যাম্পিয়ার ফিউজ তার ব্যবহার করে থাকি। ১০ অ্যাম্পিয়ার ফিউজ মানে এর মধ্য দিয়ে ১০ অ্যাম্পিয়ারের বেশি বিদ্যুৎ প্রবাহিত হলে এটি গলে যাবে। বিভিন্ন যন্ত্রপাতির জন্য বিভিন্ন মানের ফিউজ ব্যবহার করতে হয়। বাতি, পাখা, টিভি ইত্যাদির জন্য ৫ অ্যাম্পিয়ার ফিউজ এবং ইলেকট্রিক কেটলি বা ইত্রির জন্য ১৫ অ্যাম্পিয়ার ফিউজ ব্যবহার করতে হয়। বাড়ির মেইন ফিউজ ৩০ বা ৬০ অ্যাম্পিয়ারের হয়ে থাকে।

ব্যাপারটা আর একটু বােঝার চেষ্টা করি। টেলিভিশন ৫ অ্যাম্পিয়ারের বেশি বিদ্যুৎ প্রবাহের জন্য পুড়ে যায়। এখন যদি টেলিভিশনের সাথে ৩০ অ্যাম্পিয়ারের ফিউজ লাগাও তাহলে কী হবে? এ ফিউজ কোনাে কাজে আসবে না। ইলেকট্রিক কেটলির সাথে ৫ অ্যাম্পিয়ার ফিউজ লাগালে কী হবে? সুইচ অন করলেই ফিউজটি গলে যাবে। কারণ ইলেকট্রিক কেটলিতে ৫ অ্যাম্পিয়ারের বেশি বিদ্যুৎ প্রয়ােজন হয়। যেখানে যা প্রয়ােজন সেখানে তেমন মানের ফিউজ ব্যবহার করতে হবে। প্রয়ােজনের তুলনায় বেশি মানের ফিউজ ব্যবহার করলে কোনাে কাজ দিবে না, অর্থাৎ বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা এড়ানাে যাবে না। আবার কম মানের ফিউজ ব্যবহার করলে বারবার ফিউজ তার পুড়ে যেয়ে অসুবিধার সৃষ্টি করবে। কেউ কেউ আবার বাড়িতে ফিউজ পুড়ে গেলে তার লাগাবার সময় দুই তিনটি তার একত্র করে লাগান। এ রকম কখনাে করা উচিত নয়। কারণ, এতে ফিউজের মান বেড়ে যায়। দুইটি ১০ অ্যাম্পিয়ারের ফিউজ তার একত্র করলে ২০ অ্যাম্পিয়ার ফিউজ হয়ে যাবে।

 

ফিউজ কত প্রকার ও কি কি? (How many types of Fuse?)

ফিউজ পাঁচ রকমের হয়ে থাকে। যথা :

১। কাট আউট ফিউজ

২। কার্টিজ ফিউজ

৩। কিটকাট ফিউজ

৪। এ্যারিয়াল ফিউজ

৫। এইচ. আর. সি ফিউজ।

ফিউজের সুবিধা : ফিউজের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটা অন্য প্রটেকটিভ ডিভাইসগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সহজ ও সস্তা।

ফিউজের অসুবিধা : ফিউজের সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো একই ফিউজকে একবারের বেশি ব্যবহার করা যায় না এবং লাইন বন্ধ করে নতুন ফিউজ লাগাতে হয়।

 

ফিউজ ও সার্কিট ব্রেকারের মধ্যে পার্থক্য কি?

  • ফিউজ (Fuse) : এটি নরম ধাতুর তার সম্বলিত এমন প্রকার বস্তু যা তারের মধ্য দিয়ে প্রয়ােজনের বেশি কারেন্ট প্রবাহিত হলে এর তার পুড়ে গিয়ে বৈদ্যুতিক বর্তনীকে উৎস হতে বিচ্ছিন্ন করে দেয় এবং মূল্যবান যন্ত্রপাতিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করে। বৈদ্যুতিক শক্তি প্রবাহের মাত্রার উপর ফিউজ তারের ক্ষমতা নির্ভরশীল এবং সেই অনুসারে সাধারণত 5 হতে 50 amp পর্যন্ত ফিউজ তার ব্যবহার করা হয়। ফিউজ তার সাধারণ টিন ও তামার মিশ্রণ অথবা খাটি রূপা দ্বারা তৈরি হয়ে থাকে।
  • সার্কিট ব্রেকার ( Circuit Breaker ) : বৈদ্যুতিক লাইনে স্বাভাবিক এবং অস্বাভাবিক অবস্থায় (Abnormal Conditions) সংযােগ অথবা বিচ্ছিন্ন (Disconnect) করার জন্য সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করা হয়। বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনে কোথাও বৈদ্যুতিক গােলযােগ বা ত্রুটি দেখা দিলে সার্কিট ব্রেকার লাইনকে ট্রিপ (Trip) করে দেয় এবং ত্রুটিযুক্ত অংশকে আলাদা করে ফেলে। এতে স্থির কন্টাক্ট (Contact) বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করে।

 

ফিউজ সম্পর্কিত আরও কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

১। ফিউজ কেন ব্যবহার করা হয়?

উত্তর : দূর্ঘটনা এড়াবার জন্য ব্যবহার করা হয়?

২। বাসা-বাড়ির মেইন ফিউজের মান কত?

উত্তর : বাসা-বাড়ির মেইন ফিউজের মান ৩০ বা ৬০ অ্যাম্পিয়ার।

৩। ফিউজের একক কি?

উত্তর : অ্যাম্পিয়ার।

৪। কোনটি ফিউজের বৈশিষ্ট্য?

উত্তরঃ সংকর ধাতুর তৈরি।

৫। ইস্ত্রির জন্য কত অ্যাম্পিয়ারের ফিউজ ব্যবহার করা হয়?

উত্তরঃ ১৫ অ্যাম্পিয়ার।

৬। কোন মৌল দুটির সাহায্যে ফিউজ প্রস্তুত করা হয়?

উত্তরঃ সীসা ও টিন।

৭। ফিউজের উপাদান কয়টি ও কি কি?

উত্তর : ফিউজের উপাদান তিনটি। যথা-

১। ফিউজ তার,

২। ফিউজ তারের বাহক

৩। বেস বা তলদেশ।

 

৮। ৫ অ্যাম্পিয়ার ফিউজ বলতে কী বোঝায়?

উত্তর : ৫ অ্যাম্পিয়ারের ফিউজ বলতে বোঝায় এর মধ্য দিয়ে ৫ অ্যাম্পিয়ারের বেশি বিদ্যুৎ প্রবাহিত হলে ফিউজের তার উত্তপ্ত হয়ে গলে যাবে এবং তড়িৎ বর্তনী বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এতে ৫ অ্যাম্পিয়ারের অতিরিক্ত বিদ্যুৎ প্রবাহিত না হওয়ার ফলে কোনো দুর্ঘটনাও ঘটবে না এবং যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা পাবে।

৯। কি কারণে ফিউজ পুড়ে যায়?

উত্তরঃ যে সমস্ত কারণে ফিউজ পুড়ে যায় সেগুলো হল–

১. শর্ট সার্কিট জনিত কারণে,

২. অতিরিক্ত লোডের কারণে,

৩. আর্থ লিকেজের কারণে।

১০। বর্তনীতে ফিউজ ব্যবহার করা হয় কেন ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : কোনো কারণে বাড়ি ঘরের সরবরাহ লাইনে অতিরিক্ত বিভবের কারণে উচ্চমাত্রায় তড়িৎ প্রবাহের ফলে এর সাথে যুক্ত বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। অতিরিক্ত প্রবাহের কারণে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ফিউজ ব্যভহার করা হয়। অতিরিক্ত প্রবাহের কারণে ফিউজ গলে গিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফলে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পায়।

১১। ফিউজ তার কাকে বলে? ফিউজ তারের জন্য কী কী ধাতু ব্যবহার করা হয়?

উত্তর : কম গলনাঙ্কের সংকর ধাতুর তারকে ফিউজ তার বলে। ফিউজ তারের জন্য ব্যবহৃত ধাতুগুলো হলো– সীসা, দস্তা, অ্যান্টিমনি, তামা, অ্যালুমিনিয়াম ইত্যাদি।

১২। ফিউজের তারের মানের পরিবর্তনে কী সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে?

উত্তরঃ ফিউজের তারের মানের পরিবর্তনে যেসব সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে, তা নিচে ব্যাখ্যা করা হলো।

১. প্রয়োজনের তুলনায় বেশি মানের ফিউজ ব্যবহার করলে—

  • বর্তনীর মধ্য দিয়ে অধিক পরিমাণে  বিদ্যুৎ প্রবাহিত হবে।
  • অধিক পরিমাণে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়ে বিভিন্ন বৈদ্যুতিক উপকরণ নষ্ট হয়ে যাবে।
  • বর্তনীতে আগুন লেগে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
  • মানুষের শক খাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

২. প্রয়োজনের তুলনায় কম মানের ফিউজ ব্যবহার করলে—

  • ফিউজটি বারবার পুড়ে গিয়ে অসুবিধার সৃষ্টি করবে।

১৩। ফিউজিং ফ্যাক্টর বলতে কী বুঝায়?

উত্তর : ফিউজের সর্বনিম্ন গলন কারেন্ট এবং স্বাভাবিক কারেন্টের অনুপাতকে ফিউজিং ফ্যাক্টর বলে। কত মাত্রা তড়িৎ প্রবাহে ফিউজ তার গলে যাবে তা নির্ভর হোল্ডারের গঠন প্রণালির ওপর। ফিউজ তারের তড়িৎ পরিবহন ক্ষমতা সার্কিটের সর্বনিম্ন তড়িৎ পরিবহন ক্ষমতার চেয়ে কম হতে হয়।

১৪। ফিউজ বা কাট আউট বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিকে কীভাবে রক্ষা করে?

উত্তর : ফিউজ হচ্ছে কম গলনাঙ্ক বিশিষ্ট সরু তার। ফিউজের মধ্য দিয়ে একটি নির্দিষ্ট মাত্রার অতিরিক্ত তড়িৎ প্রবাহিত হলে এটি গলে গিয়ে যন্ত্রপাতিকে রক্ষা করে। শর্ট সার্কিট বা ওভারলোড হলে সার্কিটের মধ্য দিয়ে অতিরিক্ত তড়িৎ প্রবাহিত হয়ে ফিউজ পুরে যায়। ফলে যন্ত্রপাতিতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং এতে যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা পায়।

১৫। নিউট্রাল লাইনে ফিউজ লাগানো হয় না কেন?

উত্তর : নিউট্রাল লাইনে ফিউজ লাগালে ইলেক্ট্রিক শক খাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। যদি নিউট্রাল লাইনে ফিউজ লাগানো হয় এবং কোনো কারণে পজিটিভ লাইনের ফিউজ তার না পুড়ে যদি নিউট্রাল তারে লাগানো ফিউজ পুড়ে যায় তবে সার্কিট অফ হয়ে যায়। ঐ অবস্থায় কোনো ব্যক্তি সার্কিটে বিদ্যুৎ সরবরাহ নেই মনে করে পজিটিভ তারে হাত দিলে ইলেকট্রিক শক পেতে পারে। এ ধরনের বিপদ এড়ানোর জন্য নিউট্রাল তারে ফিউজ লাগানো হয় না।

১৬। ফিউজ এর কাট-অফ কারেন্ট কি?

উত্তর : শর্ট সার্কিটের ফলে কারেন্টের সর্বোচ্চ যে মানে পৌছার পূর্বে Fuse তার গলে যায় তাকে সাধারণত ফিউজের কাট-অফ কারেন্ট বলে।

১৭। কারেন্ট রেটিং অফ ফিউজিং এলিমেন্ট কি?

উত্তর : Fuse তারে যখন অতিরিক্ত পরিমাণ কারেন্ট প্রবাহিত হয় তখন অনেক গরম হয়ে যায়। এই অতিরিক্ত গরম অবস্থায় Fuse তার গলে না গিয়ে ম্যাক্সিমাম যে পরিমাণ কারেন্ট বহন করতে পারে তাকে ঐ ফিউজের কারেন্ট রেটিং বলে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments