HomeBlogমাটি কি? মাটি কত প্রকার ও কি কি?

মাটি কি? মাটি কত প্রকার ও কি কি?

মাটি কি? (What is Soil in Bengali/Bangla?)

মাটি হলো ভূ-পৃষ্ঠের উপরিভাগে অবস্থিত নানারকম জৈব ও অজৈব রাসায়নিক পদার্থের মিশ্রণ যাতে উদ্ভিদ ও গাছপালা জন্মায়। মাটির নির্দিষ্ট স্তরবিন্যাস আছে। এটি উদ্ভিদের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের জোগান দেয় এবং দাঁড়িয়ে থাকতে সহায়তা করে।

 

মাটির উপাদান (Components of Soil)

মাটি প্রধানত ৪ টি প্রধান উপাদান সমন্বয়ে গঠিত। যেমন –

১৷ খনিজ পদার্থ – ৪৫%

২৷ জৈব পদার্থ – ৫%

৩৷ বায়ু – ২৫ %

৪৷ পানি – ২৫%

 

মাটি কত প্রকার ও কি কি? (How Many Types of Soil?)

মাটির গঠন, বর্ণ, পানি ধারণক্ষমতা ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে মাটিকে মূলত চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো বালু মাটি, পলি মাটি, কাদামাটি এবং দো-আঁশ মাটি। এবার আমরা বিভিন্ন মাটির বৈশিষ্ট্য জেনে নিই।

১. বালু মাটি

বালু মাটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এদের পানি ধারণক্ষমতা খুবই কম। বালু মাটির আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, এতে বিদ্যমান মাটির কণার আকার সবচেয়ে বড় থাকে, ফলে কণাগুলোর মাঝে ফাঁকা জায়গা বেশি থাকে, যার ফলে বায়বায়ন অনেক বেশি হয়। বালু মাটিতে অতি ক্ষুদ্র শিলা ও খনিজ পদার্থ থাকে। বালু মাটিতে হিউমাস থাকলে এটি চাষাবাদের জন্য সহজসাধ্য, তবে যেহেতু এই মাটির পানি ধারণক্ষমতা কম, তাই পানি দিলে তা দ্রুত নিষ্কাশিত হয় এবং গ্রীষ্মকালে বিশেষ করে উদ্ভিদে পানির স্বল্পতা দেখা যায়। তাই যে সকল ফসলাদিতে অনেক বেশি পানি লাগে সেগুলো বালু মাটিতে ভালো হয় না। তবে যখন প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয় যা জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে, সে সকল ক্ষেত্রে বালু মাটি চাষাবাদের উপযোগী হয়ে উঠতে পারে। কারণ, বালু মাটিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় না যার ফলে গাছের শিকড় পঁচে না। জলাবদ্ধতা হলে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো গাছের শিকড়ে পঁচন ধরে যার ফলে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয়।

২. দোআঁশ মাটি : এ ধরনের মাটিতে মাটির কণাগুলোর প্রতিটিই প্রায় সমপরিমাণে থাকে। এ মাটির পানি ধারণ ও শোষণক্ষমতা উভয়ই বেশি।

৩. এঁটেল মাটি : শতকরা ৪০-৫০ ভাগ কর্দম কণাবিশিষ্ট মাটিকে এঁটেল মাটি বলে। এর পানি ধারণক্ষমতা বেশি কিন্তু শোষণক্ষমতা কম। এ মাটি ভেজা অবস্থায় আঠালো কিন্তু শুকনা অবস্থায় খুবই শক্ত হয়।

৪. পলি মাটি

পলি মাটির পানি ধারণক্ষমতা বালু মাটির চেয়ে বেশি। পলি মাটি খুবই উর্বর হয় আর মাটির কণাগুলো বালু মাটির কণার তুলনায় আকারেও ছোট হয়। পলি মাটির কণাগুলো ছোট হওয়ায় এরা পানিতে ভাসমান আকারে থাকে এবং এক পর্যায়ে পানির নিচে থাকা জমিতে পলির আকারে জমা পড়ে। পলি মাটিতে জৈব পদার্থ ও খনিজ পদার্থ (যেমন- কোয়ার্টজ) থাকে। বালু মাটির মতো পলি মাটির কণাগুলোও দানাদার হয় এবং এতে উদ্ভিদের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর উপাদান বেশি থাকে।

 

 

মাটির বৈশিষ্ট্য (Properties of Soil)

মাটির বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপঃ-

এঁটেল মাটি

  • এটেল মাটিতে বালু অপেক্ষা পলি ও কাদার ভাগ বেশি থাকে।
  • এ কাদা মাটি খুব নরম, দানা খুব ছোট ও মিহি।
  • এ মাটি বেশি পানি ধরে রাখতে পারে।
  • এ মাটিতে ভালভাবে বাতাস চলাচল করতে পারেনা।
  • এ মাটি সব ফসলের জন্য তেমন উপকারী নয়, তবে ধান চাষ করা যায়।

বেলে মাটি

  • বেলে মাটিতে বালির ভাগ বেশি থাকে।
  • এ মাটির পানি ধারণক্ষমতা কম।
  • বেলে মাটিতে ফসল তেমন ভাল হয় না তবে তরমুজ শসা, বাঙ্গী, চীনাবাদাম, মিষ্টি আলু ইত্যাদি ভাল জন্মে।

দোআঁশ মাটি

  • দোআঁশ মাটিতে বালি, পলি ও কাদা সম পরিমানে থাকে।
  • এ মাটির পানি ধারন ক্ষমতা মাঝারী।
  • চাষাবাদের জন্য দোআঁশ মাটি উপযুক্ত। এ মাটিতে ধান, পাট, গম, পিয়াজ, মরিচ, ভূট্টা, আলু, শাকসবজি ইত্যাদি ভাল জন্মে।

 

মাটির দিগবলয় বা হরাইজোন কাকে বলে?

মাটি ৪টি সমান্তরাল স্তরে বিভক্ত। মাটির এই চারটি সমান্তরাল স্তরের প্রতিটি স্তরকে মাটির দিগবলয় বা হরাইজোন (Horizon) বলে।

মাটির চারটি স্তরের উপরের স্তরটি হচ্ছে হরাইজোন A (Horizon A) বা টপ সয়েল। এই স্তরে উদ্ভিদ ও প্রাণীর মৃতদেহ পচে এবং পচনের ফলে উৎপাদিত বিশেষ পদার্থ হিউমাসসহ অন্যান্য জৈব পদার্থ এ স্তরে থাকে। তবে এ স্তরে খনিজ পদার্থ থাকে না। টপ সয়েল বা হরাইজোন A এর পরের স্তর হলো সাব সয়েল (Sub Soil) বা হরাইজোন B (Horizon B)। এ স্তরে টপ সয়েল থেকে আসা খনিজ পদার্থ জমা থাকে এবং সামান্য পরিমাণ হিউমাস থাকে।

হরাইজোন C (Horizon C) হচ্ছে মাটির তৃতীয় স্তর। এ স্তরের নিচে থাকে শিলা যা খুব শক্ত। মূল শিলা থেকেই মাটি তৈরি হয়। মূল শিলা পরিবর্তিত হয়ে যে নরম শীলায় পরিণত হয় তা Horizon-C তে জমা থাকে।

Horizon-C এর নিচে থাকা কঠিন শিলাময় স্তরটি মাটির ৪র্থ স্তর।

 

এ সম্পর্কিত আরও প্রশ্ন ও উত্তর

১। কৃষকের ভাষায় মাটিকে কি বলে?

উত্তর : কৃষকের ভাষায় ভূ-পৃষ্ঠের ১৫-১৮ সে. মি. গভীর স্তরকে মাটি বলে।

২। মাটির উৎপাদন ক্ষমতা কি?

উত্তরঃ নির্দিষ্ট ব্যবস্থাপনায় চাষকৃত মাটির স্বাভাবিক অবস্থায় নির্দিষ্ট এক বা একাধিক ফসল উৎপাদনের জন্য মাটির যে ক্ষমতা তাকে মাটির উৎপাদন ক্ষমতা বলা হয়। এক কথায়, মাটির ফসল উৎপাদন করার ক্ষমতাকে মাটির মাটির উৎপাদন ক্ষমতা বলে। মাটির উৎপাদন ক্ষমতা ফসলের ফলন দ্বারা পরিমিত হয়। মাটি ও ফসল ব্যবস্থাপনা দ্বারা মাটির উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো যায়।

৩। কীভাবে মাটি সংরক্ষণ করা যায়?

উত্তরঃ মাটি সংরক্ষণের সবচেয়ে ভালো কৌশল হলো মাটিতে বেশি করে গাছ লাগানো। মাটিতে তৃণগুল্ম ও দুর্বা বা অন্য যেকোনো ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ ও অন্যান্য গাছপালা থাকলে ভারী বৃষ্টিপাত ও মাটির ক্ষয়সাধন করতে পারে না। গাছের শিকড় মাটির ভিতরে থাকায় তা মাটিকে দৃঢ়ভাবে আটকে রাখে। জমিতে ফসল তোলার পর তা উপরে না তুলে গোড়া জমিতে রেখে দিলে একদিকে যেমন জমির উর্বরতা বাড়ে অন্যদিকে তেমনি জমির ক্ষয়ও কমে যায়। ঢালু জায়গা দিয়ে পানি যাতে প্রবাহিত না হতে পারে সে উদ্দেশ্যে ঢালু জায়গায় ঘাস, ধনচে বা কলমি জাতীয় গাছ লাগিয়ে মাটির ক্ষয়রোধ করা হয়।

৪। ফসল উৎপাদনে দো-আঁশ মাটি উপযোগী কেন?

উত্তরঃ ফসল চাষাবাদের জন্য দো-আঁশ মাটি খুবই উপযোগী। কারণ, এই মাটি বালি, পলি ও কাদামাটির সমন্বয়ে তৈরি হয়। দো-আঁশ মাটির একদিকে যেমন পানি ধারণক্ষমতা ভালো আবার প্রয়োজনের সময় পানি দ্রুত নিষ্কাশন হতে পারে। তাই ফসল চাষাবাদের জন্য দো-আঁশ মাটি খুবই উপযোগী।

৫। মাটির রং লালচে হওয়ার কারণ কী?

উত্তরঃ লৌহের পরিমাণ বেশি হলে মাটি সাধারণত লাল দেখায়। কারণ আয়রন অক্সাইডের রং লাল। তাই যে অঞ্চলের মাটিতে আয়রন অক্সাইডের পরিমাণ বেশি সে অঞ্চলের মাটির রং লাল। বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে এরকম লালচে মাটি দেখা যায়।

৬। মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির নিয়ামকগুলো কী কী?

উত্তরঃ মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির নিয়ামকগুলো হলো–

১. খনিজ পদার্থ;

২. জৈব পদার্থ;

৩. ভূমির বন্ধুরতা;

৪. জমিচাষ;

৫. পানিসেচ;

৬. রাসায়নিক সার প্রয়োগ;

৭. জৈব সার প্রয়োগ।

 

Tags :

  • মাটি কাকে বলে কৃষি শিক্ষা
  • এটেল মাটি কাকে বলে
  • এটেল মাটির রং কেমন
  • মাটি কাকে বলে class 6
  • মাটির নাম কি
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments