HomeICTসংখ্যা পদ্ধতি কাকে বলে? সংখ্যা পদ্ধতি কত প্রকার ও কি কি?

সংখ্যা পদ্ধতি কাকে বলে? সংখ্যা পদ্ধতি কত প্রকার ও কি কি?

আদিকাল থেকে মানুষ তাদের বিভিন্ন প্রয়োজনে হিসাব বা গণনা করার প্রয়োজন অনুভব করে। তখন তারা গণনার জন্য হাতের আঙ্গুল বা দেওয়ালে দাগ কেটে রেখে হিসাব করত। পরবর্তীতে কড়ি, নুড়ি পাথর, দড়ির গিট ইত্যাদি উপকরণ গণনার কাজে ব্যবহার করতো। জ্ঞানের বিকাশ ও পরিধি বাড়ার সাথে সাথে গণনার কাজে বিভিন্ন ধরনের চিহ্ন ও প্রতীকের ব্যবহার শুরু হয়। তখন গণনার জন্য বিভিন্ন ধরনের সংখ্যা পদ্ধতি চালু হয়। তো আজকে আমরা জানবো এই সংখ্যা পদ্ধতি সম্পর্কে। এই পোস্টের মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন সংখ্যা পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। চলুন প্রথমেই জেনে নেই সংখ্যা পদ্ধতি কাকে বলে।

সংখ্যা পদ্ধতি কাকে বলে? (What is called Number System in Bengali/Bangla?)

যে পদ্ধতিতে সংখ্যা গণনা করা হয় বা প্রকাশ করা হয়, তাকে সংখ্যা পদ্ধতি (Number System) বলে। এ সকল সংখ্যাকে বিভিন্ন গাণিতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় গণনার কাজ করা হয়।

সংখ্যা তৈরি করার জন্য যে সকল মৌলিক সাংকেতিক চিহ্ন বা প্রতীক ব্যবহার করা হয় তা হচ্ছে অঙ্ক। যেমন 256 সংখ্যাটি 2, 5 ও 6 আলাদা তিনটি অঙ্ক দ্বারা গঠিত হয়েছে। সংখ্যা পদ্ধতিতে অঙ্ককে নিয়মমত সাজিয়ে বিভিন্ন সংখ্যা পাওয়া যায়। প্রতিটি সংখ্যাকে র‌্যাডিক্স (Radix) পয়েন্ট (.) দিয়ে পূর্ণাংশ (Integer) ও ভগ্নাংশ (Fraction)-এ দুভাগে ভাগ করা হয়। যেমন– 318.582 সংখ্যাটির পূর্ণাংশ 318 এবং ভগ্নাংশ 0.582।

 

সংখ্যা আবিষ্কারের ইতিহাস (History of Number System)

গণনা করার কাজটি নতুন নয়। সভ্যতার সূচনা হতে মানুষ হিসাব-নিকাশের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। তখন গণনার জন্য নানা রকম উপকরণ যেমন- হাতের আঙ্গুল, নুডি পাথর, কাঠি, ঝিনুক, রশির গিট, দেয়ালে দাগ কাটা ইত্যাদি ব্যবহার করা হতো। সময়ের বিবর্তনে গণনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন চিহ্ন ও প্রতীক ব্যবহার শুরু হতে থাকে। খ্রিস্টপূর্ব ৩৪০০ সালে হায়ারোগ্লিফিক্স সংখ্যা পদ্ধতির মাধ্যমে সর্বপ্রথম গণনার ক্ষেত্রে লিখিত সংখ্যা বা চিহ্নের ব্যবহার শুরু হয়। পরবর্তিতে পর্যায়ক্রমে মেয়ান, রোমান ও দশমিক সংখ্যা পদ্ধতির ব্যবহার শুরু হয়।

 

সংখ্যা পদ্ধতির বেজ বা ভিত্তি (Base of Number System)

কোনো একটি সংখ্যা পদ্ধতিতে ব্যবহৃত মৌলিক চিহ্ন সমূহের সমষ্টিকে ঐ সংখ্যা পদ্ধতির বেজ (Base) বা ভিত্তি বলে। যেমন- দশমিক সংখ্যাতে মোট মৌলিক চিহ্ন (০,১,২,৩,৪,৫,৬,৭,৮,৯) ১০টি। সুতরাং দশমিক সংখ্যা পদ্ধতির বেজ ১০। তেমনিভাবে বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতিতে যেহেতু ০ এবং ১ এই দুইটি প্রতিক বা চিহ্ন ব্যবহার করা হয় তাই এর বেজ হচ্ছে ২ । অকটাল সংখ্যা পদ্ধতিতে ০ থেকে ৭ পর্যন্ত মোট ৮ টি প্রতিক বা চিহ্ন নিয়ে যাবতীয় গাণিতিক কর্মকান্ড সম্পাদন করা হয় বলে এর বেজ বা ভিত্তি হলো ৮। হেক্সাডেসিম্যাল সংখ্যা পদ্ধতিতে মোট ১৬ টি প্রতিক বা চিহ্ন ব্যবহার করা হয় বলে এর বেজ হচ্ছে ১৬।

 

সংখ্যা পদ্ধতির প্রকারভেদ (Classification of Number System)

সকল প্রকার গাণিতিক ও যুক্তিমূলক কাজ করার ভিত্তিতে সংখ্যা পদ্ধতিকে সাধারণত চারভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন–

১. দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি (Decimal Number System)

২. বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি (Binary Number System)

৩. অক্টাল সংখ্যা পদ্ধতি (Octal Number System)

৪. হেক্সাডেসিমাল সংখ্যা পদ্ধতি (Hexadecimal Number System)

১. ডেসিমাল বা দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি

যে সংখ্যা পদ্ধতিতে দশটি (১০টি) অঙ্ক (Digit) ব্যবহার করা হয় তাকে দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি বলে। বাস্তব জীবনে আমরা এই সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহার করে বিভিন্ন গণনার কাজ করে থাকি। এই সংখ্যা পদ্ধতির বেজ হলো ১০। কারণ এই পদ্ধতিতে দশটি আলাদা সংখ্যা আছে। সংখ্যাগুলো হলো- ০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮ এবং ৯। (৯) নয় থেকে বড় যে কোনো সংখ্যা প্রকাশ করার জন্য ঐ দশটি সংখ্যার মধ্য হতে প্রয়োজনীয় সংখ্যাটি পাশাপাশি লিখে ব্যবহার করতে হয়।

প্রাচীন ভারতে এই পদ্ধতির প্রচলন প্রথম শুরু হয় বলে একে হিন্দু সংখ্যা পদ্ধতিও বলা হয়।

উদাহরণ : (৪২০)১০

২. বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি

বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি একটি সংখ্যা পদ্ধতি যাতে সকল সংখ্যাকে কেবলমাত্র ০ এবং ১ দিয়ে প্রকাশ করা হয়। এই সংখ্যা পদ্ধতির ভিত্তি দুই। ডিজিটাল ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির লজিক গেটে এই সংখ্যাপদ্ধতির ব্যাপক প্রয়োগ রয়েছে। তাছাড়া প্রায় সকল আধুনিক কম্পিউটারে বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। বাইনারি পদ্ধতিতে প্রতিটি অঙ্ককে বিট বলা হয়।

৩. অক্টাল সংখ্যা পদ্ধতি (Octal Number System)

যে সংখ্যা পদ্ধতিতে আটটি অঙ্ক বা চিহ্ন ব্যবহার করা হয় তাকে অক্টাল সংখ্যা পদ্ধতি বলে। এ পদ্ধতিতে ব্যবহৃত অঙ্কগুলো হলো ০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭। অক্টাল সংখ্যা পদ্ধতির ভিত্তি (Base) হচ্ছে ৮। উদাহরণ : (৭১৪)৮ একটি অক্টাল সংখ্যা।

৪. হেক্সাডেসিমাল সংখ্যা পদ্ধতি (Hexadecimal Number System)

যে সংখ্যা পদ্ধতিতে ১৬ টি অঙ্ক বা চিহ্ন ব্যবহার করা হয় তাকে হেক্সাডেসিমাল সংখ্যা পদ্ধতি বলে। এ পদ্ধতিতে ব্যবহৃত অঙ্কগুলো হলো ০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, A, B, C, D, E, F। হেক্সাডেসিমাল পদ্ধতির ভিত্তি (Base) ১৬। উদাহরণ : (৭৬A)১৬ একটি হেক্সাডেসিমাল সংখ্যা।

সংখ্যা পদ্ধতি সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর

১। ১ এর পরিপূরক গঠন কি?

উত্তরঃ বাইনারি সংখ্যায় ০ এর স্থানে ১ এবং ১ এর স্থানে ০ বসিয়ে অর্থাৎ সংখ্যার বিটগুলােকে উল্টিয়ে, সংখ্যাটির ১ এর পরিপূরক (1’s complement form) গঠন পাওয়া যায়। যেমন- ১০১০১১০ সংখ্যাটির ১ এর পরিপূরক ০১০১০০১ হয়।

২। ASCII এর পূর্ণ রূপ কি?

উত্তরঃ ASCII এর পূর্ণ রূপ হলো American Standard Code for Information Interchange.

৩। ৮ + ৮ = ১০ ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ দশমিক সংখ্যা পদ্ধতিতে ৮ + ৮ = ১৬ হয় কিন্তু ১৬ কে হেক্সাডেসিমেল সংখ্যা পদ্ধতিতে পরিণত করলে ১০ হয়। হেক্সাডেসিমেল সংখ্যা পদ্ধতিতে ৮ + ৮ = ১০ হয়।

৪। ASCII উদ্ভাবন করেন কে এবং কত সালে?

উত্তরঃ ASCII উদ্ভাবন করেন রবার্ট বিমার, ১৯৬৫ সালে।

৫। হেক্সাডেসিমেল সংখ্যা পদ্ধতির অঙ্কগুলো কি কি?

উত্তরঃ হেক্সাডেসিমেল সংখ্যা পদ্ধতির অঙ্কগুলাে হলাে 0, 1, 2, 3, 4, 5, 6, 7, 8, 9, A, B, C, D, E এবং F

৬। কম্পিউটার কোডিং বলতে কি বােঝায়?

উত্তরঃ কম্পিউটারের অভ্যন্তরে গৃহীত সকল প্রকার বর্ণ, চিহ্ন, সংখ্যা, প্রতীক ইত্যাদি সমতুল্য বাইনারি সংখ্যায় রূপান্তর করে নেয়ার প্রয়ােজন হয়। রূপান্তর করার এই প্রক্রিয়াকে কম্পিউটার কোডিং বলা হয়।

৭। কি আবিষ্কারের মাধ্যমে পিংগালা প্রথম বাইনারি পদ্ধতির ধারণা দেন?

উত্তরঃ (০) শূন্য আবিষ্কারের মাধ্যমে পিংগালা প্রথম বাইনারি পদ্ধতির ধারণা দেন।

৮। 12 দশমিক সংখ্যার বাইনারি মান কত?

উত্তরঃ 12 দশমিক সংখ্যার বাইনারি মান 1100

৯। কত সালে ২৭টি গ্রিক এলফাবেট নিয়ে ১০ ভিত্তিক সংখ্যা চালু হয়?

উত্তরঃ খ্রীষ্টপূর্ব ৪০০ সালে ২৭টি গ্রিক এলফাবেট নিয়ে ১০ ভিত্তিক সংখ্যা চালু হয়।

১০। কোড (Code) কি?

উত্তরঃ কোড (Code): কম্পিউটার সিস্টেমে ব্যবহৃত প্রতিটি বর্ণ, সংখ্যা বা বিশেষ চিহ্নকে আলাদাভাবে সিপিইউকে বােঝানাের জন্য বিটের (0 বা 1) বিভিন্ন বিন্যাসের সাহায্যে অদ্বিতীয় (Unique) সংকেত তৈরি করা হয়। এ অদ্বিতীয় সংকেতকে কোড বলে।

১১। হেক্সাডেসিমেল সংখ্যা পদ্ধতির বেজ কত?

উত্তরঃ হেক্সাডেসিমেল সংখ্যা পদ্ধতির বেজ 16

১২। ২ এর পরিপূরক গঠন কি?

উত্তরঃ ১ এর পরিপূরক এর সাথে ১ যােগ করলে বাইনারি সংখ্যার ২ এর পরিপূরক পাওয়া যায়। যেমন ১০১০১১০ সংখ্যাটির ১ এর পরিপূরক ০১০১০১০ হয়।

১৩। সর্বপ্রথম কোথায় ভগ্নাংশের ব্যবহার শুরু হয়?

উত্তরঃ সর্বপ্রথম মিশরে ভগ্নাংশের ব্যবহার শুরু হয়।

১৪। EBCDIC এর পূর্ণ রূপ কি?

উত্তরঃ EBCDIC এর পূর্ণ রূপ Extended Binary Coded Decimal Interchange Code

১৫। প্যারিটি বিট কি?

উত্তরঃ বাইনারি ডেটা কিংবা কোডকে একস্থান থেকে অন্যস্থানে সঠিকভাবে প্রেরণ করার জন্য এর সাথে যে অতিরিক্ত বিট যুক্ত করা হয় তাকেই প্যারিটি বিট বলে।

১৬। বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতির বেজ ২ কেন?

উত্তরঃ বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতিতে দুইটি চিহ্ন (০ ও ১) ব্যবহৃত হয়। এই জন্য এ সংখ্যা পদ্ধতির বেজ ২।

১৭। LSB এর পূর্ণনাম কি?

উত্তরঃ Least Significant Bit

১৮। ট্যালি মার্ক দিয়ে প্রাচীনকালে কোনটিকে বুঝানাে হতাে?

উত্তরঃ ট্যালি মার্ক দিয়ে প্রাচীনকালে দিনের সংখ্যা বুঝানাে হতাে।

১৯। UNICODE উদ্ভাবন করেন কে এবং কত সালে?

উত্তরঃ UNICODE উদ্ভাবন করেন Apple and Xerox Corporation, ১৯৯১ সালে।

২০। দশমিক সংখ্যা পদ্ধতির মােট অঙ্ক কয়টি?

উত্তরঃ দশমিক সংখ্যা পদ্ধতির মােট অঙ্ক 10 টি।

২১। BCD কোড কি?

উত্তরঃ BCD একটি 4 বিট বাইনারি ভিত্তিক কোড। দশমিক পদ্ধতির সংখ্যাকে বাইনারি সংখ্যায় প্রকাশের জন্য এ কোড ব্যবহার করা হয়।

২২। দশমিক সংখ্যা পদ্ধতির বেজ কত?

উত্তরঃ দশমিক সংখ্যা পদ্ধতির বেজ 10

২৩। BCD এর পূর্ণ রূপ কি?

উত্তরঃ BCD এর পূর্ণ রূপ Binary Coded Decimal

২৪। ইউনি কোড কি?

উত্তরঃ ইউনিকোড মূলত: ২ বাইট বা ১৬ বিটের কোড। এ কোডের মাধ্যমে ৬৫, ৫৩৬ অদ্বিতীয় চিহ্নকে নির্দিষ্ট করা যায়।

২৫। অকটাল সংখ্যা পদ্ধতির মােট অঙ্ক কয়টি?

উত্তরঃ অকটাল সংখ্যা পদ্ধতির মােট অঙ্ক 8টি।

২৬। 1 এর পরিপূরক কত?

উত্তরঃ 1 এর পরিপূরক 0

২৭। অকটাল সংখ্যা পদ্ধতির বেজ কত?

উত্তরঃ অকটাল সংখ্যা পদ্ধতির বেজ 8

২৮। হেক্সাডেসিমেল সংখ্যা পদ্ধতির মােট অঙ্ক কয়টি?

উত্তরঃ হেক্সাডেসিমেল সংখ্যা পদ্ধতির মােট অঙ্ক 16টি।

২৯। MSB এর পূর্ণনাম কি?

উত্তরঃ Most Significant Bit

৩০। অকট্যাল সংখ্যা পদ্ধতি কি?

উত্তরঃ ০, ১, ২, …… ৭ এর সমন্বয়ে আটভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতিকে অকট্যাল সংখ্যা পদ্ধতি বলে।

৩১। সরলতম গণনা পদ্ধতি কি?

উত্তরঃ সরলম গণনা পদ্ধতি হলো – বাইনারি পদ্ধতি ।

৩২। বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতির বেজ কত?

উত্তর : ২

৩৩। অক্টাল সংখ্যা পদ্ধতির ভিত্তি কত?

উত্তর : ৮।

৩৪। হেক্সাডেসিমাল সংখ্যা পদ্ধতির ভিত্তি কত?

উত্তরঃ ১৬।

৩৫। হেক্সাডেসিমাল F এর মান বাইনারিতে কত?

উত্তরঃ ১১১১।

৩৬। কোনটি অক্টাল সংখ্যা নয়?

উত্তরঃ ৮।

৩৭। সাধারণত কত বিটে ১ বাইট হিসেব করা হয়?

উত্তরঃ ৮।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments