HomeBlogঅর্থকরী ফসল কাকে বলে? অর্থকরী ফসল কী কী?

অর্থকরী ফসল কাকে বলে? অর্থকরী ফসল কী কী?

যেসব শস্য প্রধানত বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সরাসরি বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে উৎপাদন করা হয় তাকে অর্থকরী ফসল বলে। অর্থকরী ফসল দেশে বাজারজাতসহ বিদেশে রপ্তানি হয়ে থাকে। আমাদের দেশে অর্থকরী ফসলের মধ্যে পাট, চা, আখ, তামাক, রেশম, রবার ও তুলা প্রধান।

 

পাট (Jute)

পাট বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী ফসল। যে সকল কৃষিজাত পণ্য বিদেশে রপ্তানী করে বৈদেশিক মুদ্রা লাভ হয়, তার মধ্যে পাটই প্রধান। জীবনের স্বাচ্ছন্দ্য বিধানে পাট আমাদের সাহায্য করে সবচেয়ে বেশি। এই পাট স্বর্ণের মতই উচ্চ মূল্যে বাংলাদেশকে কোটি কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সাহায্য করে। আর পাট বিক্রয়লব্ধ অর্থের ওপরই বাংলাদেশের জাতীয় সমৃদ্ধি বহু অংশ নির্ভর করে বলেই পাটকে বাংলাদেশের স্বর্ণসূত্র বা সোনালী আঁশ বলা হয়।

পাট এক রকমের তৃণজাতীয় উদ্ভিদ। পাট লম্বায় পাঁচ থেকে দশ হাত পর্যন্ত হয় এবং আধ থেকে এক ইঞ্চি পরিমাণ মোটা হয়। পাট গাছ সোজা ও লম্বা হয়। এ গাছের কোন ডালপাল থাকে না। মাথার আগায় থাকে এক গুচ্ছ সবুজ পাতা। পাট গাছের রং সবুজ হলেও পাটের রং সাদা ও লালচে ধরনের হয়।

প্রকারভেদ : আমাদের দেশে সাধারণত দু’প্রকার পাট উৎপন্ন হয়। এক প্রকার পাটের পাতা ও গাছের আবরণ অত্যন্ত তেতো। কোন কোন পাট গাছের পাতা একটু মিষ্টি ধরনের হয়। এ পাতা শাক হিসেবে খাওয়া যায়। পাটের শাক খুব উপাদেয়।

 

বাংলাদশের পাট উৎপাদন অঞ্চল : বাংলাদেশের প্রায় সব জায়াগায় পাট জন্মায়। তবে ময়মনসিংহ, টাংগাইল, ঢাকা, কুমিল্লা, ফরিদপুর, পাবনা, রংপুর এবং রাজশাহী অঞ্চলে পাট বেশি জন্মে। তার মধ্যে আবার সবচেয়ে উৎকৃষ্ট ও বেশি পাট জন্মে ময়মনসিংহ অঞ্চলে। বাংলাদেশের প্রায় ষাট লক্ষ বিঘা জমিতে পাট চাষ হয়ে থাকে এবং প্রতি বছর বাংলাদেশে ৪৩.৫০ লক্ষ টন পাট উৎপন্ন হয়।

উৎপাদন প্রণালী : পাট চাষ খুবই কষ্টসাধ্য। ফাল্গুন ও চৈত্র মাসে পাটের বীজ বুনতে হয়। কিন্তু তার পূর্বে জমিতে অনেকবার চাষ দিতে হয়। তখন বৃষ্টি প্রয়োজন হয়। জলা জমিতে পাট ভালো জন্মে। শক্ত মাটি হলে চাষীদের পরিশ্রমের সীমা থাকে না। মাটি খুব নরম না করলে পাট খুব ভাল হয় না। প্রচুর বৃষ্টিপাত ও রোদ পেলে পাট তাড়াতাড়ি বাড়তে থাকে। কিন্তু পানিতে বৃষ্টির পানি জমে গেলে পাট নষ্ট হয়ে যায়। পাট গাছ একটু বড় হলে নিড়ানি দিয়ে আগাছা বেছে ফেলতে হয়। পাট গাছ বড় হলে শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে কাটতে হয়।

চাষীরা পাট গাছের গোড়া কেটে আঁটি বাঁধে এবং পানির মধ্যে ডুবিয়ে রাখে। ২০-২৫ দিন ডুবিয়ে রাখলে পাট গাছ পচে যায়। তারপর আঁশগুলো ছাড়িয়ে পানিতে ধুয়ে ফেলতে হয়। ঐ আঁশই পাট৷ আঁশগুলো সাদা বা একটু লালচে হয়। পাট গাছ থেকে আঁশ ছাড়ানোর পর যা অবশিষ্ট থাকে, তাকে পাটখড়ি বা পাটকাঠি বা শোলা বলে।

প্রয়োজনীয়তা : আমাদের দৈনন্দিন জীবনে পাটের নানাবিধ প্রয়োজন রয়েছে। পাট থেকে কাপড়, কার্পেট, চট, থলে, বস্তা ও দড়ি প্রভৃতি তৈরি হয়। আমাদের দেশে পাট থেকে ‘জুটন’ নামে এক শ্রেণীর ভারী মূল্যবান কাপড় তৈরি হচ্ছে। তাছাড়া পাটের আঁশ দিয়ে তৈরি উন্নত ও আন্তর্জাতিক মানের নানারকম কুটির শিল্প সামগ্রী এখন প্রচুর পরিমাণে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। ইদানিং পাটখড়ি দিয়ে কাগজ তৈরি হচ্ছে। গ্রামে পাটখড়ি জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং অনেক দরিদ্র চাষী পাটখড়ি দিয়ে বাড়ির বেড়া ঘরের চাল তৈরি করে। পাট গাছের কচি পাতা আমরা শাক হিসেবে খাই।

আমাদের উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রার এক বিরাট অংশ আসে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি থেকে। আমাদের দেশে যে সব পাটকল রয়েছে তাতে কয়েক লক্ষ শ্রমিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে।

অপকারিতা : পাট চাষে চাষীদের ক্ষতিরও কারণ আছে। ধান চাষে খরচ কম হয় এবং পরিশ্রমও তুলনামূলকভাবে কম। পাট-পচা পানিতে মশা জন্মে এবং সেই পানি অত্যন্ত দূষিত। পল্লীবাসীরা মশার কামড়ে এবং পচা পানি পান করে বিভিন্ন রোগে ভোগে। যেসব জমিতে পাট বোনা হয়, সেসব জমিতে যদি ধান বোনা হয়, তবে লোকেরা দুর্দশা কম হয়। অল্প জমিতে পাট বুনলেই চলে।

 

ইক্ষু (Sugarcane)

চিনি, গুড়, উৎপাদনের জন্য ইক্ষু বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল। ইক্ষু চাষের জন্য সমতলভূমি প্রয়োজন। রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, পাবনা, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, ঢাকা, যশোর, ময়মনসিংহ ইক্ষু চাষের প্রধান অঞ্চল।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments