HomeChemistryক্রোমাটোগ্রাফি কি? ক্রোমাটোগ্রাফি কত প্রকার?

ক্রোমাটোগ্রাফি কি? ক্রোমাটোগ্রাফি কত প্রকার?

ক্রোমাটোগ্রাফি (Chromatography) হচ্ছে এক ধরনের বিশ্লেষণী পদ্ধতি, যাতে একটি সচল মাধ্যমকে একটি স্থির মাধ্যমের মধ্যে প্রবাহিত করে কোনো রাসায়নিক মিশ্রণের বিভিন্ন উপাদানগুলোকে পরিশোষণ মাত্রা বা বণ্টন গুণাংকের উপর ভিত্তি করে পৃথক করা হয়।

গ্রীক শব্দ ক্রোমা (Chroma) যার অর্থ বর্ণ এবং গ্রাফেইন (Graphin) যার অর্থ লেখা। এই দুটি শব্দের মিলিত রূপই হলো ক্রোমাটোগ্রাফি (Chromatography) বা বর্ণচিত্রণ। এর সাহায্যে জটিল রাসায়নিক মিশ্রণের উপাদানগুলো পৃথকীকরণ, সনাক্তকরণ এবং তাদের পরিমাণ নির্ণয় করা হয়। 1903 খ্রিস্টাব্দে রুশ বিজ্ঞানী সোয়েট (Tswett) উদ্ভিদ থেকে রঙিন পদার্থ যেমনঃ ক্লোরোফিল নামক উপাদান পৃথক করার কাজে ক্রোমাটোগ্রাফি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন।

 

ক্রোমাটোগ্রাফির ইতিহাস

ইতালীয় বংশোদ্ভূত বিজ্ঞানী মিখাইল তসভেট রাশিয়ায় ১৯০০ সালে ক্রোমাটোগ্রাফি প্রথম তৈরি করেছিলেন। তিনি ২০ শতকের প্রথম দশকে এই কৌশলটি তৈরি করেছিলেন এবং ক্রোমাটোগ্রাফি শব্দটি উদ্ভাবন করেন, প্রাথমিকভাবে উদ্ভিদ রঙ্গক যেমন ক্লোরোফিল, ক্যারোটিন এবং জ্যান্থোফিল পৃথকীকরণের জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। যেহেতু এই উপাদানগুলি বিভিন্ন রঙের ব্যান্ডে পৃথক (যথাক্রমে সবুজ, কমলা এবং হলুদ)। ১৯৩০ ও ১৯৪০ এর দশকে বিকশিত নতুন ধরনের ক্রোমাটোগ্রাফি এই কৌশলটিকে অনেক পৃথকীকরণ প্রক্রিয়ার জন্য উপযোগী করে তুলেছে।

১৯৪০ এবং ১৯৫০ এর দশকে আর্চার জন পোর্টার মার্টিন এবং রিচার্ড লরেন্স মিলিংটন সিঞ্জের কাজের ফলস্বরূপ ক্রোমাটোগ্রাফি কৌশল উল্লেখযোগ্যভাবে বিকাশ লাভ করেছিল, যার জন্য তারা ১৯৫২ সালে রসায়নে নোবেল পুরস্কার জিতেছিলেন। তারা বিভাজন ক্রোমাটোগ্রাফির নীতি এবং মৌলিক কৌশল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং তাদের কাজ বেশ কয়েকটি ক্রোমাটোগ্রাফিক পদ্ধতির দ্রুত বিকাশকে প্রণোদিত করেছিল: কাগজ ক্রোমাটোগ্রাফি, গ্যাস ক্রোমাটোগ্রাফি, এবং যা উচ্চ-কর্মক্ষমতা তরল ক্রোমাটোগ্রাফি হিসাবে পরিচিত। তারপর থেকে, প্রযুক্তিটি দ্রুত অগ্রগতি লাভ করেছে। গবেষকরা অনুসন্ধানে দেখেছেন যে, তসভেটের ক্রোমাটোগ্রাফির মূল নীতিগুলি বিভিন্ন উপায়ে প্রয়োগ করা যেতে পারে, যার ফলে নিম্নবর্ণিত ক্রোমাটোগ্রাফির বিভিন্ন প্রকার রয়েছে৷ ক্রমাগত অগ্রগতি ক্রোমাটোগ্রাফির প্রযুক্তিগত কর্মক্ষমতাকে উন্নত করছে, ক্রমবর্ধমান অনুরূপ অণুগুলির পৃথকীকরণের অনুমতি দেয়।

 

ক্রোমাটোগ্রাফির গুরুত্ব

মিশ্রণ পৃথকীকরণ বিজ্ঞানের বিভিন্ন পদ্ধতি ও কৌশলের গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ বস্তু হলো একটি স্থির মাধ্যম (stationary phase) এবং একটি সচল মাধ্যম (mobile phase)। স্থির মাধ্যম কঠিন বা তরল হতে পারে এবং সচল মাধ্যম তরল বা গ্যাস হতে পারে। মিশ্রণ পৃথকীকরণ বিজ্ঞানে দুইটি ভৌত ধর্ম যথা – (ক) অধিশোষণ (adsorption) ও (খ) বণ্টন গুনাঙ্কের (distribution coefficient) ভূমিকাই মুখ্য। এই দুটি ধর্ম কখনো পৃথকভাবে বা কখনো একসঙ্গে কার্যকর হয়ে রাসায়নিক মিশ্রণের উপাদানগুলোর ভ্রমণ হারের পার্থক্য সৃষ্টি করে।

 

ক্রোমাটোগ্রাফির শ্রেণিবিভাগ

ক্রোমাটোগ্রাফি বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন–

১। পরিশোষণ প্রণালী

২। বণ্টন বা বিভাজন প্রণালী।

৩। গ্যাস ক্রোমাটোগ্রাফি (জিসি) (Gas Chromatography or GC)

৪। গ্যাস-তরল ক্রোমাটোগ্রাফি কি? (Gas liquid chromatography)

 

গ্যাস ক্রোমাটোগ্রাফি (জিসি) (Gas Chromatography or GC)

গ্যাস ক্রোমাটোগ্রাফি (GC) হচ্ছে কোন মিশ্রণের উপাদানগুলোকে পৃথক করে শনাক্তকরণ ও পরিমাণ নির্ণয়ের একটি পদ্ধতি। এটি একটি বাণিজ্যিক গ্যাস ক্রোমাটোগ্রাফ যন্ত্রে করা হয়। গ্যাস ক্রোমাটোগ্রাফিতে একটি বাহক গ্যাসকে (সাধারণত নিষ্ক্রিয় গ্যাস বা N2) মোবাইল ফেজ হিসেবে এবং একটি স্তম্ভকে স্থির ফেজ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যে পদার্থকে বিশ্লেষণ করতে হবে তাকে দ্রবণে নিয়ে একটি মাইক্রোসিরিঞ্জ দিয়ে কলামের মাথায় ইনজেক্ট করা হয়। ফলে বস্তুটি গঠন অনুসারে কলামের কঠিন অধিশোষকে বিভিন্ন মাত্রায় অধিশোষিত হয়। এর পর এর ভেতর দিয়ে একটি বাহক গ্যাস (He বা N2) চালনা করা হয়। বাহক গ্যাস বস্তুটিকে দ্রবণ থেকে বহন করে কলামের মধ্য দিয়ে টেনে নেবে। এতে বিভিন্ন বস্তু বিভিন্ন বেগে কলাম থেকে নির্গম পথে বের হয় যা ডিটেকটরে সিগনাল আকারে ধরা পড়ে। নির্গমন মুখে পৌছাতে প্রতিটি উপাদানের যে সময় লাগে তাকে ধারণ সময় (retention time) বলে। এ ধারণ সময় ও ডিটেকটার সিগনালের peak area এর সাহায্যে বিভিন্ন উপাদান শনাক্ত ও পরিমাণ নির্ণয় করা হয়।

 

গ্যাস-তরল ক্রোমাটোগ্রাফি (Gas liquid chromatography)

গ্যাস-তরল ক্রোমাটোগ্রাফি এক ধরনের পার্টিশন ক্রোমাটোগ্রাফি, যেখানে চলমান দশাটি একটি নিষ্ক্রিয় গ্যাস এবং স্থির দশাটি কঠিন পৃষ্ঠদেশের ওপর অধিশোষিত উচ্চ স্ফুটনাঙ্কবিশিষ্ট তরল। নমুনাকে গ্যাসীয় দশায় অন্তঃক্ষেপ (Inject) করা হয়। যেখানে নমুনা বাষ্পীভূত হয়ে তরল দশায় (কলামে) প্রবাহিত হয়। নমুনায় বাষ্প, গ্যাস এবং তরল দশায় বিভাজিত হওয়ার কারণে উপাদানসমূহকে ক্রমবর্ধমান বণ্টন অনুপাতের ভিত্তিতে বের করে নিয়ে আসে। কলামের মধ্যে দিয়ে বাহক গ্যাস প্রবাহিত করে ইল্যুশন সম্পন্ন করা হয়। স্থির দশায় যেসব উপাদানের নগণ্য দ্রাব্যতা রয়েছে, সেগুলো কলামের ভিতর দিয়ে দ্রুত বেরিয়ে আসে, যেসব উপাদানের বণ্টন সহগ দ্রাবক তরল দশার প্রতি অনুকূল, সেগুলো কলাম থেকে নিম্নগতিতে নিষ্ক্রান্ত হয়। পৃথককৃত উপাদানসমূহ কলামের অপরপ্রান্ত দিয়ে নিষ্ক্রান্ত হয়ে ডিটেক্টরে পৌঁছায়। উপাদানসমূহ বিভিন্ন ডিটেক্টর দ্বারা শনাক্ত করা হয় যা গ্যাসীয় দশায় উপাদানের ঘনমাত্রাকে বৈদ্যুতিক সিগনালে রূপান্তরিত করে। সিগন্যালসমূহ রেকর্ডার বা ইন্টিগ্রেটরে লিপিবদ্ধ করা হয়। পরবর্তীতে পৃথককৃত উপাদানসমূহের মাত্রিক ও পরিমাণগত বিশ্লেষণ করা হয়।

গ্যাস-তরল ক্রোমাটোগ্রাফি এর প্রয়োগ (Application of Gas liquid chromatography) :

গ্যাস-তরল ক্রোমাটোগ্রাফি আবিষ্কৃত হওয়ার পর থেকে এর প্রয়োগ ও বিকাশের উপর প্রতিবছর অসংখ্য গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়ে আসছে। এর অসংখ্য প্রয়োগের কতিপয় নিম্নরূপ :

  • হাইড্রোকার্বনের ও পেট্রোলিয়াম বিশ্লেষণে;
  • হ্যালোজেনেটেড হাইড্রোকার্বন পৃথকীকরণে;
  • কার্বক্সিলিক এসিড ও কাবক্সিলিক এসিডের এস্টার পৃথকীকরণে;
  • বিভিন্ন অ্যামিন ও পিরিডিন সমগোত্রক পৃথকীকরণে;
  • গ্যাসোলিনে বিদ্যমান বিভিন্ন হাইড্রোকার্বন এমনকি শতাধিক হাইড্রোকার্বন পৃথকীকরণে ও শনাক্তকরণে;
  • খাদ্য দ্রব্যে বিদ্যমান বা ব্যবহৃত উপাদান পৃথকীকরণ ও শনাক্তকরণে ব্যবহৃত হয়।
  • বাইওকেমিক্যাল, মেডিকেল এবং প্রভৃতির সাথে জড়িত বিভিন্ন উপাদান বিশ্লেষণে ব্যবহার করা হয়।
  • বিক্রিয়ার গতিবেগ ও কলাকৌশল বিশ্লেষণে।
  • জৈব সালফার যৌগ পৃথকীকরণে।
  • উচ্চ স্ফুটনাঙ্ক বিশিষ্ট তরল থেকে অধিক উদ্বায়ী তরলকে পৃথক করার জন্য গ্যাস-তরল ক্রোমাটোগ্রাফি ব্যবহৃত হয়।
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments