HomeBiologyক্লোরোপ্লাস্ট কি? ক্লোরোপ্লাস্টের কাজ কি?

ক্লোরোপ্লাস্ট কি? ক্লোরোপ্লাস্টের কাজ কি?

ক্লোরোপ্লাস্ট কি? (What is a Chloroplast in Bengali/Bangla?)

ক্লোরোপ্লাস্ট হলো সবুজ বর্ণের প্লাস্টিড, যা ক্লোরোফিল-a, ক্লোরোফিল-b, ও জ্যান্থোফিলের সমন্বয়ে গঠিত। উদ্ভিদের পাতা, সবুজ কচি কান্ড, কাঁচা ফল ইত্যাদির কোষে প্রচুর পরিমাণে ক্লোরোপ্লাস্ট থাকে। নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদকোষে কম সংখ্যায় (১-৫টি) এবং উচ্চশ্রেণির উদ্ভিদকোষে অধিক সংখ্যায় ক্লোরোপ্লাস্ট থাকে।

 

ক্লোরোপ্লাস্টের গঠন (Structure of Chloroplast)

নিচে বর্ণিত অংশগুলো নিয়ে ক্লোরোপ্লাস্ট গঠিত।

  • আবরণী (Membrane) : প্রতিটি ক্লোরোপ্লাস্ট লিপোপ্রোটিন দিয়ে গঠিত একটি দ্বিস্তর বিশিষ্ট বৈষম্যভেদ্য ঝিল্লিতে আবৃত। গঠনশৈলীর দিক থেকে পর্দাটি প্লাজমা মেমব্রেনের অনুরূপ। ঝিল্লিটি ক্লোরোপ্লাস্টের অন্তঃস্থ পদার্থকে রক্ষা করে এবং ক্লোরোপ্লাস্টের ভেতরে ও বাইরে বিভিন্ন বস্তুর যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করে।
  • স্ট্রোমা (Stroma) : ঝিল্লিবেষ্টিত ক্লোরোপ্লাস্টের ভেতরে অবস্থিত স্বচ্ছ, দানাদার, অসবুজ, তরল জলীয় পদার্থটির নাম স্ট্রোমা। লিপোপ্রোটিন ও কিছু এনজাইম নিয়ে স্ট্রোমা গঠিত। স্ট্রোমা গ্রানার ধাত্র বা ম্যাট্রিক্স হিসেবে কাজ করে।
  • গ্রানা (Grana; একবচনে granum) : ক্লোরোপ্লাস্টের স্ট্রোমার ভেতরে ক্লোরোফিল বহনকারী ঝিল্লিযুক্ত অনেকগুলো গঠন থাকে। এদেরকে থাইলাকয়েড (thylakoid) বা গ্রানাম চক্র (granum disc) বলে। ১০ হতে ১০০টি থাইলাকয়েড উপর্যুপরি সজ্জিত হয়ে একটি গ্রানাম গঠন করে। গ্রানাগুলোর আয়তন ০.৩ – ১৭ মাইক্রোমিটার (um) হতে পারে। প্রতিটি ক্লোরােপ্লাস্টে সাধারণত ৪০ – ৬০টি গ্রানা থাকে। গ্রানাম চক্রের ঝিল্লির ভেতরের গায়ে কোয়ান্টোজোম নামক কিছু স্ফটিকার ব্যস্ত থাকে।
  • স্ট্রোমা ল্যামেলী (Stroma lamellae) : পাশাপাশি অবস্থিত গ্রানার কিছু সংখ্যক গ্রানাম চক্র অত্যন্ত সূক্ষ্ম নালিকা দিয়ে যুক্ত থাকে। গ্রানাম চক্রের সংযোগ-সাধনকারী এসব নালিকার নাম স্ট্রোমা ল্যামেলী।

রাসায়নিক গঠন : কার্বোহাইড্রেট, লিপিড, প্রোটিন, ক্লোরোফিল, ক্যারোটিনয়েড (ক্যারোটিন ও জ্যান্থোফিল), DNA, RNA, কিছু এনজাইম ও কো-এনজাইম এবং খনিজ অণু নিয়ে ক্লোরোপ্লাস্ট গঠিত। স্টার্চ হচ্ছে সাধারণ কার্বোহাইড্রেট। ক্লোরোপ্লাস্টের শুষ্ক ওজনের ১০-২০% লিপিড। কোলিন, ইনোসিটল, গ্লিসারল, ইথানোল অ্যামাইন হচ্ছে সুলভ লিপিড-অ্যালকোহল। প্রোটিনের (শুষ্ক ওজনের ৩৫-৫৫%) মধ্যে ৮০% হচ্ছে অদ্রবণীয় যা লিপিডের সঙ্গে একত্রে ঝিল্লি নির্মাণ করে, বাকি ২০% দ্রবণীয় এবং এনজাইমরূপে থাকে। ক্লোরোপ্লাস্টে রয়েছে ক্লোরোফিল নামক সবুজ রঞ্জক পদার্থ। এর ৭৫% ক্লোরোফিল-a ও ২৫% ক্লোরোফিল-b। এছাড়াও রয়েছে সামান্য ক্যারোটিন ও জ্যান্থোফিল।

 

ক্লোরোপ্লাস্টের কাজ (Function of Chloroplast)

সৌরশক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে (ATP, NADP) পরিণত করে ও সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO2) ও পানির (H2O) সাহায্যে শর্করা তৈরী করে। সূর্যালোকের সাহায্যে ফসফোরাইলেশান প্রক্রিয়া সম্পাদন করে। ফলে ADP+ Pi থেকে ATP তৈরী করে। এনজাইম এর সহায়তায় আমিষ ও স্নেহজাতীয় খাদ্য তৈরী করা ক্লোরোপ্লাস্টের কাজ। সাইটোপ্লাজমীয় বংশগতিধারায় এটি বংশগত জিন DNA অণুতে বহন করে। ক্লোরোপ্লাস্ট সালোকসংশ্লেষণের ক্যালভিন চক্রের প্রয়োজনীয় এনজাইম সংশ্লেষণ করে। বংশানুসারে নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের স্বকীয়তা ধারণ করে রাখে। ক্লোরোপ্লাস্টে ফটোরেস্পিরেশন ঘটে। ক্লোরোপ্লাস্ট প্রয়োজনে প্রোটিন, নিউক্লিক অ্যাসিড তৈরী করে। ক্লোরোপ্লাস্টে এর নিজস্ব DNA আছে। এদের সাহায্যে ক্লোরোপ্লাস্ট নিজের অনুরূপ সৃষ্টি ও কিছু প্রয়োজনীয় প্রোটিন তৈরী করতে পারে।

 

ক্লোরোপ্লাস্ট ও মাইটোকন্ড্রিয়ার মধ্যে পার্থক্য কি?

নিচে ক্লোরোপ্লাস্ট ও মাইটোকন্ড্রিয়ার মধ্যে পার্থক্য আলোচনা করা হলো–

আবরণী ঝিল্লি, স্ট্রোমা, থাইলাকয়েড, গ্রানাম, স্ট্রোমা ল্যামেলি, ফটোসিনথেটিক ইউনিট, ATP সিনথেসিস এবং DNA এ অংশগুলো নিয়ে ক্লোরোপ্লাস্ট গঠিত হয়। অপরদিকে, আবরণী ঝিল্লি, প্রকোষ্ঠ, ATP সিনথেসিস ও ETS, DNA ও রাইবোজোম এবং অন্যান্য উপাদান নিয়ে মাইটোকন্ড্রিয়া গঠিত। ক্লোরোপ্লাস্ট ও মাইটোকন্ড্রিয়া উভয়ই লিপোপ্রোটিন বাইলেয়ারের দুটি মেমব্রেন নিয়ে গঠিত। উচ্চশ্রেণির উদ্ভিদকোষে ক্লোরোপ্লাস্টের আকৃতি সাধারণত লেন্সের মতো, তবে নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদকোষে এরা পেয়ালাকৃত, সর্পিলাকার, জালিকাকার, তারকাকার, গোলাকার ইত্যাদি আকৃতিরও হতে পারে। অপরদিকে মাইটোকন্ড্রিয়া সাধারণত বৃত্তাকার, দণ্ডাকার, তন্তুকার, তারকাকার ও কুণ্ডলী আকার হতে পারে। লেন্স আকৃতির ক্লোরোপ্লাস্টের ব্যাস সাধারণত ৩-৫ মাইক্রন, কিন্তু বৃত্তাকার মাইটোকন্ড্রিয়ার ব্যাস ০.২-২.০ মাইক্রন এবং সূত্রাকার মাইটোকন্ড্রিয়ার ব্যাস ৪০-৭০ মাইক্রন। সাধারণত গড়ে প্রতিটি উচ্চশ্রেণির উদ্ভিদকোষে ১০-৪০টি ক্লোরোপ্লাস্ট থাকে। অপরদিকে গড়ে প্রতি কোষে ৩০০-৪০০টি মাইটোকন্ড্রিয়া থাকে। রাসায়নিকভাবে কার্বোহাইড্রেট, লিপিড, প্রোটিন, ক্লোরোফিল, ক্যারোটিনয়েড (ক্যারোটিন জ্যান্থোফিল), DNA, RNA, কিছু সংখ্যক এনজাইম ও কো-এনজাইম নিয়ে ক্লোরোপ্লাস্ট গঠিত। অপরদিকে, মাইটোকন্ড্রিয়ার শুষ্ক ওজনের ৬৫% প্রোটিন, ২৯% গ্লিসারাইড, ৪% লেসিথিন ও সেফালিন এবং ২% কোলেস্টেরল, লিপিডের মধ্যে ৯০% ফসফোলিপিড, বাকি ১০% ফ্যাটি অ্যাসিড, ক্যারোটিনয়েড, ভিটামিন E এবং কিছু অজৈব পদার্থ বিদ্যমান। ক্লোরোপ্লাস্ট খাদ্য সংশ্লেষে সাহায্য করে বলে একে কোষের রান্নাঘর বা শর্করা জাতীয় খাদ্যের কারখানা বলা হয়। এছাড়াও নিজের প্রয়োজনে প্রোটিন, নিউক্লিক অ্যাসিড তৈরি, ADP কে ATP তে রূপান্তর করা, ফটোরেসপিরেশন করা ক্লোরোপ্লাস্টের অন্যতম কাজ। অপরদিকে, কোষের যাবতীয় জৈবনিক কাজের শক্তি সরবরাহ করে বলে মাইটোকন্ড্রিয়াকে কোষের পাওয়ার হাউস বা শক্তিঘর বলা হয়। এছাড়া শ্বসনের জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম, কো-এনজাইম ধারণ করা, শ্বসনের বিভিন্ন পর্যায়, যেমন- ক্রেবস চক্র, ইলেকট্রন ট্রান্সপোর্ট, অক্সিডেটিভ ফসফোরাইলেশন ইত্যাদি কাজ মাইটোকন্ড্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।

 

এ সম্পর্কিত আরও কিছু প্রশ্ন ও উত্তরঃ–

১। থাইলাকয়েড কি?

উত্তর : থাইলাকয়েড হচ্ছে ক্লোরোপ্লাস্টে গ্রানার এক একটি একক, যা দেখতে চ্যাপ্টা থলে আকৃতির।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments