HomePhysicsচোখের ত্রুটি বলতে কি বুঝ? চোখের ত্রুটি কত প্রকার?

চোখের ত্রুটি বলতে কি বুঝ? চোখের ত্রুটি কত প্রকার?

আমরা জানি সুস্থ এবং স্বাভাবিক চোখ “নিকট বিন্দু” থেকে শুরু করে অসীম দূরত্বের দূরবিন্দুর মাঝখানে যে স্থানেই কোনো বস্তু থাকুক না কেন সেটা স্পষ্ট দেখতে পারে। এটাই চোখের স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি। এই স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি ব্যাহত হলেই তাকে চোখের দৃষ্টির ত্রুটি বলা হয়।

চোখের দৃষ্টির ত্রুটি মোট চার রকমের। যথা :

(ক) হ্রস্বদৃষ্টি বা ক্ষীণদৃষ্টি (Myopia or short sight)

(খ) দীর্ঘদৃষ্টি বা দূরদৃষ্টি (Hypermetropia or long sight)

(গ) বার্ধক্য দৃষ্টি বা চালশে (Presbyopia)

(ঘ) বিষম দৃষ্টি বা নকুলান্ধতা (Astigmatism)

এদের মধ্যে প্রথম দুটিকে দৃষ্টির প্রধান ত্রুটি বলা হয়। নিচে এ দুটি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

(ক) হ্রস্বদৃষ্টি বা ক্ষীণদৃষ্টি (Myopia or short sight)

যখন চোখ কাছের বস্তু দেখতে পায় কিন্তু দূরের বস্তু দেখতে পায় না, তখন চোখের এই ত্রুটিকে হ্রস্বদৃষ্টি বলে। এরূপ চোখের দূর বিন্দুটি অসীম দূরত্ব অপেক্ষা খানিকটা নিকটে থাকে এবং বস্তুকে স্পষ্ট দৃষ্টির ন্যূনতম দূরত্ব হতে আরও কাছে আনলে অধিকতর স্পষ্ট দেখায়। নিম্নলিখিত দুটি কারণে এই ত্রুটি হয়ে থাকে।

(১) চোখের লেন্সের অভিসারী শক্তি বৃদ্ধি পেলে ও

(২) কোনো কারণে অক্ষি-গোলকের ব্যাসার্ধ বৃদ্ধি পেলে।

ফলে দূরের বস্তু হতে নির্গত আলোক রশ্মি চোখের লেন্সের মধ্য দিয়ে প্রতিসরণের পর রেটিনার সামনে (F) বিন্দুতে প্রতিবিম্ব গঠন করে (চিত্র-১)। ফলে চোখ বস্তু দেখতে পায় না।

চিত্র-১

প্রতিকার

এই ত্রুটি দূর করার জন্য এমন একটি অবতল লেন্সের চশমা ব্যবহার করতে হবে যার ফোকাস দূরত্ব হ্রস্বদৃষ্টির দীর্ঘতম দূরত্বের সমান। এই চশমা লেন্সের অপসারী ক্রিয়া চোখের উত্তল লেন্সের অভিসারী ক্রিয়ার বিপরীতে ক্রিয়া কলে। ফলে অসীম দূরত্বের বস্তু হতে নির্গত সমান্তরাল আলোক রশ্মি এই সাহায্যকারী অবতল লেন্স L (চিত্র-১) এর মধ্য দিয়ে চোখে পড়ার সময় প্রয়োজনমতো অপসারিত হয় এবং অপসারিত রশ্মিগুলো চোখের লেন্সে প্রতিসরিত হয়ে রেটিনা বা অক্ষিপট R এর ওপর পড়ে। এই অপসারিত রশ্মিগুচ্ছকে পিছনের দিকে বর্ধিত করলে, এরা T বিন্দুতে মিলিত হবে। অতএব চোখ বস্তুটাকে T বিন্দুতে দেখবে এবং T বিন্দুই হ্রস্বদৃষ্টির দীর্ঘতম দূরত্ব।

 

(খ) দীর্ঘদৃষ্টি বা দূরদৃষ্টি (Hypermetropia or long sight)

যে চোখ দূরের জিনিস ভালোভাবে দেখতে পায় কিন্তু কাছের জিনিস ভালোভাবে দেখতে পায় না তাকে দীর্ঘ দৃষ্টি ত্রুটি বলে। সাধারণত বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে এই ত্রুটি দেখা যায়। দুটি কারণে এই ত্রুটি ঘটে। যেমন–

(১) চোখের লেন্সের অভিসারী ক্ষমতা কমে গেলে অথবা চোখের লেন্সের ফোকাস দূরত্ব বেড়ে গেলে।

(২) কোনো কারণে অক্ষিগোলকের ব্যাসার্ধ কমে গেলে।

ফলে স্বাভাবিক নিকট বিন্দু (N) হতে নির্গত আলোক রশ্মি চোখের লেন্সের মধ্য দিয়ে প্রতিসরণের পর রেটিনার পিছনে (F) বিন্দুতে মিলিত হয় (চিত্র-২)। ফলে চোখ কাছের বস্তু দেখতে পায় না।

প্রতিকার

এই ত্রুটি দূর করার জন্য চোখের সামনে একটি উত্তল লেন্সের চশমা ব্যবহার করতে হবে। ফলে চোখের নিকটতম বিন্দু (N) (চিত্র-২) হতে নির্গত আলোক রশ্মি এই সাহায্যকারী লেন্সে এবং চোখের লেন্সে পর পর দুইবার প্রতিসরিত হবার পর প্রয়োজনমতো অভিসারী হয়ে রেটিনা (R) এর উপরে পড়বে। এই প্রতিসরিত রশ্মিগুলোকে পিছনের দিকে করলে বর্ধিত এরা N1 বিন্দুতে মিলিত হবে। অতএব চোখ বস্তুটিকে N1 বিন্দুতে দেখবে এবং এই (N1) বিন্দুই দীর্ঘদৃষ্টির নিকটমত দূরত্ব।

 

ক্ষীণ দৃষ্টি ত্রুটি ও দীর্ঘ দৃষ্টি ত্রুটির মধ্যে পার্থক্যঃ

ক্ষীণ দৃষ্টি ত্রুটি ও দীর্ঘ দৃষ্টি ত্রুটির মধ্যে পার্থক্য নিচে তুলে ধরা হলো-

ক্ষীণ দৃষ্টি ত্রুটি

  • কাছের বস্তু স্পষ্ট দেখে কিন্তু দূরের বস্তু স্পষ্ট দেখতে পায় না।
  • চোখের লেন্সের অভিসারী ক্ষমতা বেড়ে গেলে বা ফোকাস দূরত্ব কমে গেলে এ ত্রুটি হয়।
  • অক্ষি গোলকের ব্যাসার্ধ বৃদ্ধি পেলে এ ত্রুটি ঘটে।
  • এ ত্রুটি দূর করতে অবতল লেন্স ব্যবহার করতে হয়।

দীর্ঘ দৃষ্টি ত্রুটি

  • দূরের বস্তু স্পষ্ট দেখে কিন্তু কাছের বস্তু স্পষ্ট দেখতে পায় না।
  • চোখের লেন্সের অভিসারী ক্ষমতা কমে গেলে বা ফোকাস দূরত্ব বেড়ে গেলে এ ত্রুটি হয়।
  • অক্ষি গোলকের ব্যাসার্ধ কমে গেলে এ ত্রুটি ঘটে।
  • এ ত্রুটি দূর করতে উত্তল লেন্স ব্যবহার করতে হয়।
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments