HomeBlogধ্বনি পরিবর্তন কাকে বলে? ধ্বনি পরিবর্তনের কয়টি ধারা ও কি কি?

ধ্বনি পরিবর্তন কাকে বলে? ধ্বনি পরিবর্তনের কয়টি ধারা ও কি কি?

ধ্বনি পরিবর্তন বলতে স্বরধ্বনি এবং ব্যঞ্জনধ্বনির পরিবর্তনকেই বোঝায়। নিম্নে ধ্বনি পরিবর্তনের কয়েকটি নিয়ম ধারা উল্লেখ করা হল :

(১) অন্তর্হতি : পদের মধ্যে কোনো ব্যঞ্জনধ্বনি লোপ হলে তাকে অন্তর্হতি বলে। যেমন– ফলাহার > ফলার, আলাহিদা > আলাদা, ফাল্গুন > ফাগুন ইত্যাদি।

(২) অভিশ্রুতি : অপিনিহিত অথবা বিপর্যস্ত স্বরধ্বনি পূর্ববর্তী স্বরধ্বনির সাথে মিলে গেলে এবং তদনুসারে পরবর্তী স্বরধ্বনির পরিবর্তন ঘটলে তাকে অভিশ্রুতি বলে। যেমন– ‘করিয়া’ থেকে অপিনিহিতির ফলে ‘কইরিয়া’ কিংবা বিপর্যয়ের ফলে ‘কইরা’ থেকে অভিশ্রুতিজাত ‘করে’। এরূপ– শুনিয়া > শুনে, বলিয়া > বলে, আসিয়া > এসে, গাছুয়া > গেছো, বানিয়া > বেনে, মাছুয়া > মেছো, হাটুয়া > হেটো ইত্যাদি।

(৩) অপিনিহিতি : শব্দের মধ্যে ই বা উ থাকলে তাকে আগে এনে উচ্চারণ করলে কখনো কখনো উচ্চারণে অনেক সুবিধা হয়। উচ্চারণের এ রীতিকে অপিনিহিত বলে। যেমন– রাখিয়া > রাইখ্যা, জালিয়া > জাইল্যা, আজি > আইজ, বাচ্য > বাইচ্য, চারি > চাইর, বাক্য > বাইক্য, চলিয়া > চইল্যা, করিয়া > কইরা, গাঁতিত > গাঁইতি ইত্যাদি।

(৪) অসমীকরণ : একই স্বরের পুনরাবৃত্তি দূর করার জন্যে মাঝখানে যখন একটি স্বরধ্বনি যুক্ত হয় তখন তাকে অসমীকরণ বলে। যেমন– ধপ + ধপ > ধপাধপ, শপ + শপ > শপাশপ, ঝপ + ঝপ > ঝপাঝপ, টপ + টপ > টপাটপ, চপ + চপ > চপাচপ ইত্যাদি।

(৫) আদি স্বরাগম : উচ্চারণের সুবিধার্থে কিংবা অন্য কোনো কারণে শব্দের আদিতে স্বরধ্বনি আসলে তাকে আদি স্বরাগম বলে। যেমন স্কুল > ইস্কুল, স্টেশন > ইস্টিশন, স্পর্শ > ইস্পর্শ, স্টেনগান > এস্টেনগান ইত্যাদি।

(৬) মধ্য স্বরাগম বা বিপ্রকর্ষ : কখনো কখনো উচ্চারণ সহজ, সুন্দর ও সাবলীল করার জন্যে কিংবা কবিতার ছন্দ ও মাত্রার সাম্যের জন্যে সংযুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনিকে ভেঙে তার মধ্যে স্বরধ্বনি আনার রীতিকে মধ্য স্বরাগম বা বিপ্রকর্ষ বা স্বরভক্তি বলা হয়। যেমন-

  • অ – রত্ন > রতন, যত্ন > যতন, ধর্ম ধরম, কর্ম > করম, স্বপ্ন > স্বপন, বিমর্ষ > বিমরষ ইত্যাদি।
  • ই – প্রীতি > পিরীতি, ক্লিপ > কিলিপ, ফিল্ম > ফিলিম, স্নিগ্ধ > সিনিগ্ধ ইত্যাদি।
  • উ – মুক্তি > মুকতি, শক্ত > শকত, যুক্তি > যুকতি ইত্যাদি।
  • এ – গ্রাম > গেরাম, প্রেক > পেরেক, প্রেম > পেরেম, স্রেফ > সেরেফ ইত্যাদি।
  • ও – শ্লোক > শোলোক, মুরগ > মোরগ ইত্যাদি।

(৭) সমীভবন : উচ্চারণের সুবিধার জন্য যখন শব্দ মধ্যবর্তী দুটো ভিন্ন ধ্বনি একে অপরের প্রভাবে সমতা লাভ করে তখন তাকে সমীভবন বলে। যেমনঃ কাঁদনা > কান্না; বদজাত > বজ্জাত ইত্যাদি। সমীভবন প্রধানত তিন রকমের হয়।

  • প্রগত সমীভবন : পূর্ব ধ্বনির প্রভাবে পরবর্তী ধ্বনির পরিবর্তন ঘটে। অর্থাৎ পরবর্তী ধ্বনি পূর্ববর্তী ধ্বনির মতো হয়, একে প্রগত সমীভবন বলে। যেমন : চক্র > চক্ক, পক্ব > পক্ক, পদ্ম > পদ্দ, লগ্ন > লগ্‌গ, চন্দন > চন্নন ইত্যাদি।
  • পরাগত সমীভবন : পরবর্তী ধ্বনির প্রভাবে পূর্ববর্তী ধ্বনির পরিবর্তন হয়, একে পরাগত সমীভবন বলে। যেমন : তৎ + জন্য > তজ্জন্য, তৎ + হিত > তদ্ধিত, উৎ + মুখ > উন্মুখ, উৎ + শ্বাস > উচ্ছ্বাস, উৎ + হার > উদ্ধার ইত্যাদি।
  • অন্যোন্য সমীভবন : যখন পরস্পরের প্রভাবে দুটি ধ্বনিই পরিবর্তিত হয়, তখন তাকে অন্যোন্য সমীভবন বলে। যেমন : সংস্কৃত সত্য > প্রাকৃত সচ্চ। সংস্কৃত বিদ্যা > প্রাকৃত বিজ্জা ইত্যাদি।

(৮) বিষমীভবন : উচ্চারণের সুবিধার্থে একই শব্দের মধ্যকার দুটো সমবর্ণের একটির প্রভাবে অন্যটির পরিবর্তন ঘটলে তাকে বিষমীভবন বলে। যেমনঃ লাঙ্গল > নাঙ্গল; গরম গরম > গরমাগরম; শরীর > শরীল ইত্যাদি।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments