HomeBiologyপ্রস্বেদন কাকে বলে? প্রস্বেদনকে প্রয়োজনীয় অমঙ্গল বলা হয় কেন?

প্রস্বেদন কাকে বলে? প্রস্বেদনকে প্রয়োজনীয় অমঙ্গল বলা হয় কেন?

যে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদের দেহের ভেতর থেকে পাতার মাধ্যমে বাষ্পাকারে পানির নির্গমন হয় তাকে প্রস্বেদন (Transpiration) বলে। মূল এবং ফুলের মাধ্যমেও প্রস্বেদন বা বাষ্পমোচন হতে পারে। উদ্ভিদ তার মূল দিয়ে জল শোষণ করে থাকে এবং পত্ররন্ধ্রের রক্ষীকোষ দুটোর-স্ফীতি ও শিথিল অবস্থা পত্ররন্ধ্র খোলা ও বন্ধ হওয়া নিয়ন্ত্রণ করে। পত্ররন্ধ্রের মাধ্যমে বেশিরভাগ প্রস্বেদন সম্পন্ন হয়।

প্রস্বেদনের ফলে মেসোফিল কলায় যে ব্যাপন চাপ ঘাটতি (Diffusion pressure deficit) দেখা যায় তা জাইলেম বাহিকায় যে বিশেষ চোষণ চাপ (suction pressure) সৃষ্টি করে মূল থেকে খনিজ লবণ মিশ্রিত জলকে ঊর্ধ্বমুখে পরিবাহিত করে, তাকে বাষ্পমোচন টান বা প্রস্বেদন টান বলে। এই টানের ফলেই রসের উৎস্রোত (Ascent of sap) ঘটে।

 

প্রস্বেদন কত প্রকার ও কি কি?

প্রস্বেদন সংঘটিত হওয়ার স্থানের ভিত্তিতে প্রস্বেদন তিন প্রকার। যথা:

  • পত্ররন্ধ্রীয় প্রস্বেদন
  • ত্বকীয় বা কিউটিকুলার প্রস্বেদন
  • লেন্টিকুলার প্রস্বেদন।

১। পত্ররন্ধ্রীয় প্রস্বেদন : পাতায়, কচি কাণ্ডে, ফুলের বৃতি ও পাপড়িতে দুটি রক্ষীকোষ বিশিষ্ট যে রন্ধ্র থাকে তাকে পত্ররন্ধ্র বলে এবং এই পত্ররন্ধ্রের মাধ্যমে যে প্রস্বেদন হয় তাকে পত্ররন্ধ্রীয় প্রস্বেদন বলে।

২। কিউটিকুলার প্রস্বেদন : উদ্ভিদের বহিঃত্বকে, বিশেষ করে পাতার উপরে ও নিচে কিউটিনের আবরণ থাকে। এ আবরণকে কিউটিকল বলে। কিউটিকল ভেদ করে কিছু পানি বাষ্পাকারে বাইরে বের হয়। এ প্রক্রিয়াই হলো কিউটিকুলার প্রস্বেদন।

৩। লেন্টিকুলার প্রস্বেদন : উদ্ভিদে গৌণ বৃদ্ধি হলে কাণ্ডের বাকল ফেটে লেন্টিসেল নামক ছিদ্রের সৃষ্টি হয়। লেন্টিসেলের ভেতরের কোষগুলো আলাদাভাবে সজ্জিত থাকে এবং এর মাধ্যমে কিছু পানি বাইরে বেরিয়ে যায়। একে লেন্টিকুলার প্রস্বেদন (lenticular transpiration) বলে।

 

প্রস্বেদনের গুরুত্ব কি?

  • প্রস্বেদনের কারণে উদ্ভিদ দেহ থেকে পানি বের করে দিয়ে অতিরিক্ত পানির চাপ থেকে মুক্ত হয়।
  • প্রস্বেদন কোষরসের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে। ফলে উদ্ভিদ সহজে মূল দিয়ে পানি ও খনিজ লবণ শোষণ করতে পারে।
  • প্রস্বেদনের কারণে উদ্ভিদদেহ ঠান্ডা থাকে এবং পাতায় আর্দ্রতা বজায় থাকে।

 

প্রস্বেদনের হার

পত্ররন্ধ্রের খোলা ও বন্ধ হওয়ার উপর নির্ভর করে প্রস্বেদনের হার। এছাড়া প্রস্বেদনের হার পাতার চারপাশের আবহাওয়া, আর্দ্রতা, তাপমাত্রা, বাতাস এবং সূর্যালোকের পরিমাণের উপর নির্ভর করে। উদ্ভিদ কি পরিমাণ জল হারায় তা নির্ভর করে এর আকার এবং কি পরিমাণ জল মূলের মাধ্যমে শোষণ করা হয় তার উপর।

 

প্রস্বেদনকে প্রয়োজনীয় অমঙ্গল বলা হয় কেন?

আমরা জানি, প্রস্বেদনের মাধ্যমে উদ্ভিদ তার দেহের অতিরিক্ত পানি (৯৯%) বাষ্পাকারে বের করে দেয়। এ পানি উদ্ভিদদেহে নানা ক্ষতিসাধন করতে পারে। আবার প্রস্বেদনের কারণেই উদ্ভিদ সহজে মাটি থেকে পানি ও খনিজ লবণ শোষণ করতে পারে। শোষিত পানির সাহায্যে উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ ঘটায়। এর পাশাপাশি প্রস্বেদনের কিছু অপকারী ভূমিকা রয়েছে। যেমন- শোষণের চেয়ে প্রস্বেদনের হার বেশি হলে উদ্ভিদ নেতিয়ে পড়ে, এমনকি এর মৃত্যু ঘটে। এ বিপরীতমুখী বৈশিষ্ট্যের কারণে প্রস্বেদনকে “প্রয়োজনীয় অমঙ্গল” বলা হয়।

 

প্রস্বেদন সম্পর্কিত আরও প্রশ্ন ও উত্তর

১। প্রস্বেদনের অপর নাম কি?

উত্তর : বাষ্পমোচন।

২। প্রস্বেদন কী ধরনের প্রক্রিয়া?

উত্তর : শরীরবৃত্তীয়।

৩। কোন প্রক্রিয়ার প্রভাবে শীতকালে গাছের সবুজ পাতা ঝরে যায়?

উত্তর : প্রস্বেদন।

৪। প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় কোনটি নির্গত হয়?

উত্তর : পানি।

 

Tags :

  • প্রস্বেদনকে প্রয়োজনীয় অমঙ্গল বলেছেন কে
  • প্রস্বেদনকে একটি অতি প্রয়োজনীয় অমঙ্গল বলা হয় কেন
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments