HomePhysicsস্ক্রু গজ কাকে বলে? স্ক্রু গজ এর সূত্র কি?

স্ক্রু গজ কাকে বলে? স্ক্রু গজ এর সূত্র কি?

আসসালামু আলাইকুম, সবাই কেমন আছেন? আশা করছি আল্লাহ তায়ালার রহমতে সকলে খুব ভালো আছেন। আজকে আমরা আলোচনা করতে যাচ্ছি পদার্থবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ একটি যন্ত্র স্ক্রু-গজ সম্পর্কে। চলুন জেনে নেয়া যাক।

স্ক্রু গজ কাকে বলে? (What is called Screw gauge in Bengali/Bangla?)

আমরা যারা ফিজিক্স নিয়ে পড়াশোনা করেছি বা করছি তারা সবাই কমবেশি স্ক্রু গজ সম্পর্কে জেনেছি। এটি এক ধরনের পরিমাপক যন্ত্র। অর্থাৎ, যে যন্ত্রের সাহায্যে তারের ব্যাসার্ধ, সরু চোঙের ব্যাসার্ধ এবং ছোট দৈর্ঘ্য মাপা যায় তাকে স্ক্রু গজ (Screw gauge) বলে। এই স্ক্রু গেজের অপর নাম মাইক্রোমিটার স্ক্রু-গজ। এ যন্ত্র দিয়ে খুব ছোট দৈর্ঘ্য (এক মিটারের লক্ষ ভাগের এক ভাগ পর্যন্ত) পরিমাপ করা যায় বলে একে মাইক্রোমিটার স্ক্রু গেজ বলে। এই যন্ত্রের সাহায্যে তারের ব্যাসার্ধ, সরু চোঙের ব্যাসার্ধ ও ছোট দৈর্ঘ্য পরিমাপ করা যায়। এতে রয়েছে দুই প্রান্তে দুটি সমান্তরাল বাহু বিশিষ্ট U আকৃতির ফ্রেম কাঠামো F

স্ক্রু গজের এক বাহুর সমতল পিঠ A এর সাথে একটি সমতল প্রান্তবিশিষ্ট দণ্ড বা কীলক স্থায়ীভাবে আটকানো রয়েছে এবং অপর বাহুতে রয়েছে একটি ফাঁপা নল C। এই নলে রয়েছে মিলিমিটারে দাগাঙ্কিত একটি সরল স্কেল এবং একটি বেলনাকৃতির টুপি T পরিহিত একটি স্ক্রু। স্ক্রুটি ফাঁপা নল C এর ভেতর চলাফেরা করতে পারে। বেলনাকৃতি টুপি T-এর কিনারাকে সাধারণত 50 বা 100 ভাগ করা হয়।

স্ক্রুর মাথা B যখন স্থায়ী কীলক বা সমতল প্রান্তবিশিষ্ট দণ্ড A স্পর্শ করে তখন বৃত্তাকার স্কেলের শূন্য দাগ রৈখিক স্কেলের শূন্য দাগের সাথে মিলে যায়। এরকম অবস্থায় দুটি স্কেলের শূন্য দাগ যদি মিলে না যায় তাহলে বুঝতে হবে যান্ত্রিক ত্রুটি রয়েছে।

টুপি T একবার ঘুরালে এর যতটুকু সরণ ঘটে এবং রৈখিক স্কেল বরাবর যে দৈর্ঘ্য এটি অতিক্রম করে তাকে বলা হয় স্ক্রুর পিচ (Pitch)।

বৃত্তাকার স্কেলের মাত্র এক ভাগ ঘুরালে-এর প্রান্ত বা ত্রুটি যতটুকু সরে আসে তাকে বলা হয় যন্ত্রের লঘিষ্ঠ গণন (Least Count)। একে LC দিয়ে প্রকাশ করা হয়। যন্ত্রের পিচকে বৃত্তাকার স্কেলের সংখ্যা দ্বারা ভাগ করলে লঘিষ্ঠ গণন পাওয়া যায়।

সুতরাং, লঘিষ্ঠ গণন = পিচ/বৃত্তাকার স্কেলের ভাগের সংখ্যা

বৃত্তাকার স্কেলের সাধারণত 100 ভাগ থাকে এবং এই যন্ত্রে পিচ থাকে 1 মি.মি.।

সুতরাং লঘিষ্ঠ গণন = 1/100 মি.মি. = 0.01 মি.মি.।

 

স্ক্রু গজের সাহায্যে পরিমাপ

আপনার হাতে যদি একটি স্ক্রু গজ থেকে থাকে তাহলে আপনি খুবই সূক্ষ্ম দৈর্ঘ্য মাপতে পারবেন। এছাড়াও আপনারা বিভিন্ন পাতের পুরুত্ব নির্ণয় করার ক্ষেত্রে স্ক্রু গজ ব্যবহার করে এর পরিমাপ নিতে পারবেন। যেখানে চোঙের ব্যাসার্ধ মাপতে গিয়ে অন্য কোন মাপার বস্তু দিয়ে মাপতে পারেন না তখন আপনারা স্ক্রু গজ ব্যবহার করে তা করতে পারবেন। এছাড়াও আপনারা তারের ব্যাস নির্ণয় করার ক্ষেত্রে এই যন্ত্রটি ব্যবহার করে আপনাদের কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন।

যে তারের ব্যাস মাপতে হবে বা যে পাতের পুরত্ব বের করতে হবে তাকে উপরের চিত্রে দেখানো A ও B এর মাঝে স্থাপন করতে হবে। তার বা পাতটি এমনভাবে স্থাপন করতে হবে যাতে এর এক পাশ A কে এবং অপর পাশ B কে স্পর্শ করে। এবার বৃত্তাকার ও রৈখিক স্কেলের পাঠ নিতে হবে।

মনে করা যাক, রৈখিক স্কেলের পাঠ L মি. মি. এবং বৃত্তাকার স্কেলের ভাগ সংখ্যা C। সুতরাং, তারের ব্যাস বা পাতের পুরত্ব হবে :

ব্যাস বা পুরত্ব = রৈখিক স্কেল পাঠ + বৃত্তাকার স্কেলের ভাগ সংখ্যা × লঘিষ্ঠ গণন অর্থাৎ D = L + C × LC।

উদাহরণ : মনে করা যাক, রৈখিক স্কেল পাঠ 3 মি. মি. এবং বৃত্তাকার স্কেলের ভাগ সংখ্যা 20, তখন তারের ব্যাস,

= 3 মি.মি. + 20 x 0.01 মি.মি.

= 3 মি.মি. + 0.2 মি.মি.

= 3.2 মি.মি.।

স্ক্রুর মাথা যখন সমতল প্রান্তবিশিষ্ট দণ্ড A স্পর্শ করে তখন বৃত্তাকার স্কেলের শূন্য দাগ যদি রৈখিক স্কেলের শূন্য দাগের সাথে মিলে না যায় তাহলে বুঝতে হবে যান্ত্রিক ত্রুটি রয়েছে। এর জন্য পাঠ সংশোধন করে নিতে হয়।

 

স্ক্রু গজের ব্যবহার (Use of Screw gauge)

স্ক্রু গজ ব্যবহার করে নিচের কাজগুলি করা যায়। যেমন–

  • খুব সূক্ষ্ম দৈর্ঘ্য মাপা যায়;
  • তারের ব্যাস নির্ণয় করা যায়;
  • পাতের পুরুত্ব নির্ণয় করা যায়;
  • সরু চোঙের ব্যাসার্ধ নির্ণয় করা যায়।

 

স্ক্রু-গজ (Screw gauge) সম্পর্কিত আরও প্রশ্ন ও উত্তর

১। কোন ধরনের জিনিসের পরিমাপে স্ক্রু গেজ ব্যবহার করা হয়?

উত্তর : খুব ছোট বস্তুর পরিমাপের জন্য এই যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। যেমন— সরু তারের ব্যাস/ব্যাসার্ধ, পাতলা ধাতব পাতের পুরুত্ব ইত্যাদি। এমনকি চুলের ব্যাসও মাপা সম্ভব।

২। স্ক্রু গজের নীতি কী?

উত্তর : স্ক্রু ও নাট নীতির ওপর ভিত্তি করে এই যন্ত্র তৈরি করা হয়েছে। এই যন্ত্রে ঘূর্ণন গতিকে রৈখিক গতিতে পরিণত করার নীতি অবলম্বন করা হয়েছে।

৩। স্ক্রু গজের ত্রুটি কত প্রকার ও কী কী?

উত্তর : স্ক্রু গজে দুই ধরনের ত্রুটি দেখা যায়। যথা– শূন্য ত্রুটি ও পিছট ত্রুটি বা ব্যাকল্যাশ ত্রুটি।

৪। স্ক্রু গজের ন্যূনাঙ্ক কাকে বলে?

উত্তর : স্ক্রু-গজের বৃত্তাকার স্কেলের এক ভাগ ঘুরালে এর প্রান্ত বা বৃত্তাকার স্কেলটি যতটুকু সরে আসে তাকে স্ক্রু গজের ন্যূনাঙ্ক বলে।

৫। কিভাবে নিখুঁতভাবে গোলকের ব্যাস নির্ণয় করা যায়?

উত্তর : স্ক্রু গজ ব্যবহার করে নিখুঁতভাবে গোলকের ব্যাস নির্ণয় করা যায়।

৬। স্ক্রু-গজের লঘিষ্ঠ গণন কী? (What is Least count of screw gauge?)

উত্তর : স্ক্রু গজের সাহায্যে ন্যূনতম যে দৈর্ঘ্য পরিমাপ করা যায় তাকে লঘিষ্ঠ গণন বলে। বৃত্তাকার স্কেল মাত্র এক ঘর ঘুরালে এটি রৈখিক স্কেলে যতটুকু দূরত্ব অতিক্রম করে তাই-ই হচ্ছে স্ক্রু গজের লঘিষ্ঠ গণন।

৭। স্ক্রু গজের পীচ কাকে বলে? (What is called pitch of screw gauge?)

উত্তর : স্ক্রু গজের টুপির সাহায্যে বৃত্তাকার স্কেলটি সম্পূর্ণ একবার ঘুরালে এটি রৈখিক স্কেল বরাবর যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে স্ক্রু গজের পিচ (Pitch) বলে।

৮। স্ক্রু গজের পিচ 0.5 mm বলতে কী বোঝায়?

উত্তর : স্ক্রু গজের পিচ 0.5 বলতে বোঝায় স্ক্রু গজের টুপি একবার ঘোরালে এর 0.5 mm সরণ ঘটে অর্থাৎ রৈখিক স্কেল বরাবর এটি 0.5 mm দৈর্ঘ্য অতিক্রম করে।

৯। স্ক্রু গজের শূন্য ত্রুটি কাকে বলে? (What is called zero error of screw gauge?)

উত্তর : স্ক্রুর মাথা সমতল প্রান্তবিশিষ্ট দণ্ডের সাথে স্পর্শ করালে যদি বৃত্তাকার স্কেলের শূন্য দাগ রৈখিক স্কেলের শূন্য দাগের সাথে মিলে না যায় তাহলে বুঝতে হবে যন্ত্রে শূন্য ত্রুটি আছে।

১০। স্ক্রু গজের শূন্য ত্রুটি কয় ধরনের ও কী কী?

উত্তর : স্ক্রু গজের শূন্য ত্রুটি দু ধরনের হয়। যথা— ১. ধনাত্মক শূন্য ত্রুটি এবং ২. ঋণাত্মক শূন্য ত্রুটি।

১১। স্ক্রু-গজের লঘিষ্ঠ গণন কীভাবে নির্ণয় করা যায়?

উত্তর : স্ক্রু-গজের বৃত্তাকার স্কেলটিকে একবার ঘুরালে এর যতটুকু সরণ ঘটে এবং রৈখিক স্কেল বরাবর যে দৈর্ঘ্য অতিক্রম করে তাকে ঐ যন্ত্রের দৌড় বা পিচ বলে। যন্ত্রের পিচকে বৃত্তাকার স্কেলের সংখ্যা দ্বারা ভাগ করলে লঘিষ্ঠ মান পাওয়া যায়।

১২। স্ক্রু গজের বৃত্তাকার স্কেলের ভাগ সংখ্যা বেশি হলে মাপের সঠিকতা বাড়ে কী?

উত্তর : হ্যাঁ, কারণ পীচ অপরিবর্তিত রেখে বৃত্তাকার স্কেলের ভাগ সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে লঘিষ্ঠ গণন কমে যায়। ফলে মাপের সঠিকতা বাড়ে।

১৩। স্ক্রু গজের তারের ব্যাস নির্ণয়ে যেকোনো জায়গায় দুইবার মাপ নিতে হয় কেন?

উত্তর : তারটি সম্পূর্ণ গোল না হয়ে কোথাও একটু চাপা হতে পারে। তারের একই স্থানে দুইবার পাঠ নিয়ে গড় করলে এই ত্রুটি দূর করা যায়।

১৪। স্ক্রু গজের পরিমাপের সূক্ষ্মতা কীভাবে বাড়ানো যায়?

উত্তর : বৃত্তাকার স্কেলের ভাগ সংখ্যা বাড়িয়ে।

১৫। স্ক্রু গজের সাহায্যে তারের ব্যাস নির্ণয়ে কী কী সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়?

উত্তর : ১. পাঠ নেয়ার সময় লম্বন ত্রুটি পরিহার করতে হবে।

২. স্ক্রুর মাথা জোরে চেপে ধরা যাবে না।

৩. পিছট ত্রুটি এড়ানোর জন্য স্ক্রুকে সর্বদা একই দিকে ঘুরাতে হবে।

৪. শূন্য ত্রুটি নির্ণয় করতে হবে।

 

আপনাদের পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে অন্যদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। এই পোস্ট সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় Comments করতে পারেন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments