HomeMathematicsবৃত্ত কাকে বলে? বৃত্তের বিভিন্ন অংশের সংজ্ঞা

বৃত্ত কাকে বলে? বৃত্তের বিভিন্ন অংশের সংজ্ঞা

বৃত্ত কাকে বলে? (What is called Circle in Bengali/Bangla?)

কোন নির্দিষ্ট বিন্দু থেকে সমদূরত্বে আবর্তিত গোলাকার আবদ্ধ সমতলীয় জ্যামিতিক চিত্রকে বৃত্ত বলে। নির্দিষ্ট বিন্দুকে বৃত্তের কেন্দ্র (centre) এবং ধ্রুবক দূরত্বকে বৃত্তের ব্যাসার্ধ (radius) বলা হয়।

সভ্যতার প্রবাহে চাকার আবিষ্কার একটি বিপ্লবের সূচনা করে। যা সভ্যতার বিকাশকে দ্রুত ত্বরান্বিত করে। বিজ্ঞানের আবিষ্কার থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা গ্রহণের জন্য চাই সম্যক জ্ঞান। তাই চাকার বৈশিষ্ট্য জানতে বৃত্ত সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান থাকা আবশ্যক। গোলাকার বস্তু মাত্রই বৃত্ত নয়। বৃত্তের বৈশিষ্ট্য হলো সমতলে নির্দিষ্ট পরিসীমার মধ্যে বক্ররেখা দ্বারা আবদ্ধ বৃহত্তম ক্ষেত্রফল। এটি তখনই সম্ভব যখন কোনো বস্তু একটি বিন্দুকে কেন্দ্র করে সমদূরত্বে চারিদিকে সমানভাবে বিরাজ করে। বৃত্ত (Circle) শব্দটি গ্রিক ‘Kirkos’ থেকে এসেছে।

 

বৃত্তের ইতিহাস

বৃত্তের ইতিহাস অনেক পুরানো। প্রাচীন সভ্যতায় বৃত্তের ধারণা থেকে চাকার আবিষ্কার হয়। ফলে বর্তমান প্রচলিত সকল আধুনিক যন্ত্রপাতি নির্মাণ সম্ভবপর হয়েছে। খ্রিস্টপূর্ব ১৭০০ অব্দের কাছাকাছি সময়ে প্রাচীন মিশরীয় গণিতবিদগণ π (পাই) এর আসন্ন মান ব্যবহার করে বৃত্তের ক্ষেত্রফল নির্ণয় করেন। তবে π যে তুরীয় সংখ্যা তা ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে লিন্ডেম্যান (Lindeman) প্রমাণ করেন। ইউক্লিড খ্রিস্টপূর্ব ৩২০ হতে ৩০০ অব্দের মধ্যে ১৩ খন্ডের যে গ্রন্থ রচনা করেন সেখানে তিনি বৃত্তের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করেন। পরবর্তীতে প্লেটো (Plato) বৃত্তের সংজ্ঞা দেন।

 

বৃত্তের বৈশিষ্ট্য

  • বৃত্ত হল নির্দিষ্ট পরিসীমার মধ্যে আবদ্ধ বৃহত্তম ক্ষেত্রফল।
  • বৃত্ত বিশেষ ধরনের প্রতিসাম্যের অধিকারী একটি আকৃতি। কেন্দ্রভেদী যে কোন রেখাই প্রতিফলন প্রতিসম অক্ষ হিসেবে কাজ করে এবং কেন্দ্রের সাপেক্ষে যে কোন কোনে ঘূর্ণন প্রতিসাম্য তৈরি হয়।
  • প্রতিটি বৃত্তের আকৃতি অভিন্ন।
  • বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের অনুপাত একটি ধ্রূব সংখ্যা, একে π দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
  • কার্তেসীয় স্থানাঙ্ক ব্যাবস্থায় মূলবিন্দুতে কেন্দ্র বিশিষ্ট একক ব্যাসার্ধের বৃত্তকে বলা হয় একক বৃত্ত।
  • যে কোন তিনটি বিন্দুগামী, যারা অসমরেখ, একটি এবং কেবলমাত্র একটি বৃত্ত রয়েছে।

 

বৃত্তের বিভিন্ন অংশের সংজ্ঞা

বৃত্তের পরিধি :

একটি আবদ্ধ বক্ররেখার সীমান্ত বরাবর দৈর্ঘ্যকে তার পরিধি (Circumference) বলে। অন্যভাবে বলা যায়, বৃত্তের চারদিকের সীমান্ত বরাবর দূরত্বকে বৃত্তের পরিধি বলে।

বৃত্তের পরিধির সূত্রঃ বৃত্তের পরিধি = 2πr [যেখানে, r হলো বৃত্তের ব্যাসার্ধ।]

বৃত্তের চাপ :

পরিধির যে কোনো অংশকে বলা হয় চাপ (Arc)।

বৃত্তের জ্যা :

পরিধির যে কোনো দুই বিন্দুর সংযোজক সরলরেখাকে জ্যা (Chord) বলে। উল্লেখ্য, বৃত্তের ব্যাস বৃত্তের একটি জ্যা।

বৃত্তের ব্যাস :

বৃত্তের কোনো জ্যা যদি কেন্দ্র দিয়ে যায় তবে জ্যাটিকে বৃত্তের ব্যাস (Diameter) বলে।

বৃত্তের ব্যাসার্ধ :

বৃত্তের কেন্দ্র থেকে বৃত্তের পরিধির উপর কোনো বিন্দুর দূরত্বকে ঐ বৃত্তের ব্যাসার্ধ বলে।

 

বৃত্ত বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ উপপাদ্য ও অনুসিদ্ধান্তসমূহ

১. বৃত্তের সকল সমান জ্যা কেন্দ্র থেকে সমান দুরে অবস্থান করে।

২. বৃত্তের কেন্দ্র থেকে ব্যাস ভিন্ন অন্য কোনো জ্যা এর ওপর অঙ্কিত লম্ব ঐ জ্যাকে সমদ্বিখণ্ডিত করে।

৩. বৃত্তের একই চাপের ওপর দণ্ডায়মান বৃত্তস্থ কোণ কেন্দ্রস্থ কোণের অর্ধেক।

৪. বৃত্তের একই চাপের উপর দণ্ডায়মান কেন্দ্রস্থ কোণ বৃত্তস্থ কোণের দ্বিগুণ।

৫. দুইটি বৃত্ত পরস্পর স্পর্শ করলে, তাদের কেন্দ্রদ্বয় ও স্পর্শ বিন্দু সমরেখ হবে।

৬. একই সরলরেখায় অবস্থিত নয় এরূপ তিনটি বিন্দু দিয়ে একটি মাত্র বৃত্ত আঁকা যায়।

৭. বৃত্তের একই চাপের ওপর দণ্ডায়মান বৃত্তস্থ কোণগুলো পরস্পর সমান।

৮. অর্ধবৃত্তস্থ কোণ এক সমকোণ।

 

অনুশীলনী

প্রশ্ন-১. বৃত্ত কাকে বলে?

উত্তর : কোনো সমতলের উপরস্থ একটি নির্দিষ্ট বিন্দু থেকে সমান দূরত্বে (ধ্রুবক দূরত্বে) অবস্থিত বিন্দুসমূহের সেট একটি সঞ্চারপথ গঠন করে। এই সঞ্চারপথটিকে বৃত্ত (Circle) বলে।

প্রশ্ন-২. বৃত্তের ব্যাসার্ধ কাকে বলে?

উত্তর : বৃত্তের কেন্দ্র থেকে পরিধি পর্যন্ত বিস্তৃত রেখাকে বৃত্তের ব্যাসার্ধ বলে। এটি ব্যাসের অর্ধেক।

প্রশ্ন-৩. সহায়ক বৃত্ত কাকে বলে?

উত্তর : কোনো উপবৃত্তের বৃহৎ অক্ষকে ব্যাস ধরে অঙ্কিত বৃত্তকে উপবৃত্তটির সহায়ক বৃত্ত বলে।

প্রশ্ন-৪. এককেন্দ্রিক বৃত্ত কাকে বলে?

উত্তর : একই বিন্দু একাধিক বৃত্তের কেন্দ্র হলে বৃত্তগুলোকে এককেন্দ্রিক বৃত্ত বলে।

প্রশ্ন-৫. বৃত্তের বৃহত্তম জ্যা কাকে বলে?

উত্তর : বৃত্তের ব্যাসকে বৃত্তের বৃহত্তম জ্যা বলে।

প্রশ্ন-৬. নববিন্দু বৃত্ত কাকে বলে?

উত্তর : কোনো ত্রিভুজের বাহুগুলোর মধ্যবিন্দুত্রয়, শীর্ষবিন্দুগুলো থেকে বিপরীত বাহুত্রয়ের উপর অঙ্কিত লম্বত্রয়ের পাদবিন্দুত্রয় এবং শীর্ষবিন্দু ও লম্ববিন্দুর সংযোজক রেখাত্রয়ের মধ্যবিন্দুত্রয়, সর্বমোট এই নয়টি বিন্দু একই বৃত্তের উপর অবস্থান করে। এই বৃত্তকেই নববিন্দু বৃত্ত বলে।

 

Tags :

  • বৃত্ত কাকে বলে চিত্র সহ
  • বৃত্তের পরিধি কাকে বলে চিত্র সহ
  • বৃত্ত সংক্রান্ত সূত্র 
  • বৃত্তের পরিধি নির্ণয়ের সূত্র কি
  • সমবৃত্ত কাকে বলে
  • বৃত্ত কলা কাকে বলে
  • বৃত্তের জ্যা কাকে বলে
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments