যে সকল পদার্থকে রাসায়নিক পদ্ধতিতে বিশ্লেষণ করে দুই বা ততোধিক ভিন্ন ধর্মবিশিষ্ট পদার্থে পরিণত করা যায় না, তাদেরকে মৌল বা মৌলিক পদার্থ বলে। যেমন– হাইড্রোজেন (H), অক্সিজেন (O), কার্বন (C), আয়রণ (Fe), কপার(Cu) ইত্যাদি। এ পর্যন্ত 109টি মৌলিক পদার্থের সন্ধান পাওয়া গেছে।
মৌলিক পদার্থকে কয়ভাগে ভাগ করা হয়?
মৌলিক পদার্থগুলোকে ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মের ওপর ভিত্তি করে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- ১. ধাতু, ২. অধাতু, ও ৩. উপধাতু।
ধাতু (Metal)
যেসব মৌলিক পদার্থ চকচকে, বিদ্যুৎ ও তাপ সুপরিবাহী সেসব মৌলিক পদার্থকে ধাতু বলে। এদের নিজস্ব ধাতুদ্যুতি আছে, আঘাত পেলে ধাতব শব্দ হয়। ধাতুর ঘাতসহতা ও প্রসারণ ধর্ম আছে। ধাতুর গলনাঙ্ক সাধারণত বেশি হয় এবং অক্সাইডগুলো সাধারণত ক্ষারধর্মী।
ব্যতিক্রম : পারদ স্বাভাবিক তাপমাত্রায় তরল। লিথিয়াম, সোডিয়াম, পটাসিয়াম ইত্যাদি ধাতু পানি অপেক্ষা হালকা। তবে এদের ভৌত গুণাবলি অধাতুর মতো।
অধাতু (Non-metal)
যেসব মৌল প্রধানত তাপ ও বিদ্যুৎ অপরিবাহী তাদের অধাতু বলে। এরা সাধারণত হালকা, কম গলনাঙ্কের, তাপ ও তড়িৎ কুপরিবাহী। অধাতুর অক্সাইড সাধারণত অম্লধর্মী।
ব্যতিক্রম : কার্বন, সিলিকন, বোরন উচ্চ গলনাঙ্কবিশিষ্ট, গ্রাফাইট উচ্চ তাপমাত্রায় তড়িৎ সুপরিবাহী।
উপধাতু (Metalloid)
যেসব মৌল কখনো ধাতু আবার কখনো অধাতুর মতো আচরণ করে সেগুলোকে উপধাতু বলে। এদের সংখ্যা তেমন নেই। যেমন- বোরন, সিলিকন, জার্মেনিয়াম, আর্সেনিক ইত্যাদি পদার্থকে উত্তপ্ত করলে সরাসরি বাষ্পে পরিণত হয়। আবার এদের বাষ্পকে শীতল করলে পূর্বের মতো তরল না হয়ে সরাসরি কঠিন হয়ে যায়।
ডাল্টনের পরমাণুবাদের মূল বক্তব্য কী?
ডাল্টনের পরমাণুরাদের মূল বক্তব্য হচ্ছে–
- মৌলিক পদার্থসমূহ পরমাণু নামক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা দিয়ে গঠিত।
- একটি মৌলের বা মৌলিক পদার্থের সকল পরমাণু একই রকম। একটি মৌলের সকল পরমাণুর আকার, ভর ও রাসায়নিক ধর্ম একই রকম।
- একটি মৌলের পরমাণুসমূহ অন্য মৌলের পরমাণুসমূহ হতে ভিন্ন রকম। অর্থাৎ ভিন্ন ভিন্ন মৌলের পরমাণুর আকার, ভর ও ধর্ম ভিন্ন ভিন্ন।
- যৌগিক পদার্থসমূহ একের অধিক মৌলিক পদার্থ দিয়ে গঠিত। বিভিন্ন মৌলের পরমাণুসমূহ সরল অনুপাতে যুক্ত হয়ে যৌগিক পদার্থ বা যৌগ তৈরি করে।
- একটি রাসায়নিক বিক্রিয়ায় পরমাণুসমূহের সৃষ্টি বা ধ্বংস হয় না। শুধু একে অপরের সাথে যুক্ত হয় বা একে অন্য থেকে আলাদা হয়।
মৌলিক ও যৌগিক পদার্থের মধ্যে পার্থক্য কি?
মৌলিক ও যৌগিক পদার্থের মধ্যে পার্থক্য নিম্নে দেওয়া হলোঃ
- যেসব পদার্থকে বিশ্লেষণ করলে ঐ পদার্থ ছাড়া অন্য কোন পদার্থ পাওয়া যায় না সেই পদার্থকে মৌলিক পদার্থ বলে। অপরদিকে, যেসব পদার্থকে বিশ্লেষণ করলে একাধিক ভিন্ন পদার্থ পাওয়া যায় সেই পদার্থ গুলিকে যৌগিক পদার্থ বলে।
- মৌলিক পদার্থ গুলি একই মৌলের একাধিক পরমাণুর সমন্বয়ে গঠিত। কিন্তু, যৌগিক পদার্থ একাধিক ভিন্ন মৌলের পরমাণুর সমন্বয়ে গঠিত।
- উদাহরণঃ হাইড্রোজেন অণুকে (H₂) বিশ্লেষণ করলে শুধু হাইড্রোজেন পাওয়া যায়। সুতরাং হাইড্রোজেন একটি মৌলিক পদার্থ। অপরদিকে, পানিকে (H₂O) বিশ্লেষণ করলে দুটি হাইড্রোজেন পরমাণু ও একটি অক্সিজেন পরমাণু পাওয়া যায়। সুতরাং পানি একটি যৌগিক পদার্থ।
Tags :
- মৌলিক পদার্থ কয়টি ও কি কি
- কৃত্রিম মৌলিক পদার্থ কয়টি
- প্রাকৃতিক মৌলিক পদার্থ কয়টি
- প্রকৃতিতে প্রাপ্ত মৌলিক পদার্থ কয়টি
- মৌলিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণার নাম কি
- মৌলিক পদার্থ গুলো কি কি?
- সবচেয়ে হালকা মৌলিক পদার্থ কোনটি?প্রকৃতিতে প্রাপ্ত মৌলিক পদার্থের সংখ্যা কত?
- একাধিক মৌলিক পদার্থ যোগ করলে কি পদার্থ পাওয়া যায়?
- মৌলিক পদার্থের সংকেত
- মৌলিক পদার্থের সংখ্যা কতটি
- সবচেয়ে কঠিন মৌলিক পদার্থ কোনটি