HomeUncategorizedস্থির তড়িৎ (Statical Electricity)

স্থির তড়িৎ (Statical Electricity)

স্থির তড়িতের উৎপত্তি

আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ঘটনা থেকে আমরা দেখতে পাই যে, শীতকালে শুকনো আবহাওয়ায় প্লাস্টিকের চিরুনি দিয়ে মাথা আঁচড়ালে চিরুনিটি কিছুক্ষণ ছোট ছোট কাগজের টুকরাকে আকর্ষণ করে। এ ঘটনা নতুন নয়। খ্রিস্টের জন্মের ছয়শত বছর পূর্বে গ্রিক দার্শনিক থেলিস (Thales : 640-548B.C) সর্বপ্রথম পর্যবেক্ষণ করেন যে, সোলেমানি পাথর বা আম্বারকে (পাইন গাছর শক্ত আঠা) রেশমী কাপড় দিয়ে ঘষলে এগুলো ছোট ছোট কাগজের টুকরাকে আকর্ষণ করতে পারে। আকর্ষণের এ অদৃশ্য শক্তিকে বিদ্যুৎ বা তড়িৎ বলা হয়।

বিদ্যুৎকে ইংরেজিতে বলা হয় ইলেকট্রিসিটি (Electricity)। আম্বার (Amber) এর গ্রিক নাম ইলেকট্রন থেকে ইলেকট্রিসিটি (Electricity) বা তড়িৎ বা বিদ্যুৎ শব্দের উদ্ভব হয়েছে। গ্রিক পণ্ডিতদের পর আর কেউ এ বিষয়ে তেমন কোন আগ্রহ প্রকাশ করেন বলে জানা যায় নি। পরবর্তীকালে ষোড়শ শতাব্দীতে চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডাঃ উইলিয়াম গিলবার্ট এ সম্বন্ধে বিস্তারিত অনুসন্ধান করেন। তিনি দেখতে পান যে, শুধু আম্বারই নয় কাচ, রাবার, ইবোনাইট, গন্ধক প্রভৃতি পদার্থের মধ্যেও ঐ গুণ আছে। প্রকৃতপক্ষে প্রত্যেক বস্তুই ঘর্ষণের ফলে অন্য হালকা বস্তুকে কম-বেশি আকর্ষণের ক্ষমতা অর্জন করে। তবে কোন বস্তুতে এ আকর্ষণ ক্ষমতা অনেক বেশি দেখা যায় আর কিছু বস্তুতে এর পরিমাণ অনেক কম বা নেই বললেই চলে। ডাঃ গিলবার্ট এ ঘটনাকে তড়িতাহিতকরণ (Electrification) বলে অভিহিত করেন। সুতরাং আমরা তড়িতাহিতকরণকে নিম্নোক্তভাবে সংজ্ঞায়িত করতে পারি।

“ঘর্ষণের ফলে প্রত্যেক বস্তুই অন্য বস্তুকে আকর্ষণের কম বা বেশি ক্ষমতা অর্জন করে। এ ঘটনাকে তড়িতাহিতকরণ বলে”। রেশম দ্বারা ঘষা (অ্যাম্বারের ন্যায়) যেসব বস্তু অন্যান্য আকর্ষণের ক্ষমতা রাখে অর্থাৎ বিদ্যুতের সঞ্চার হয় তাদের বলা হয় তড়িতাহিত (Electrified) বস্তু বা সংক্ষেপে আহিত বা চার্জিত বস্তু (Charged) বলে। আর যেসব বস্তুতে চার্জ বা বিদ্যুৎ থাকে না তাদের বলা হয় অ-আহিত বা অচার্জিত (Uncharged or neutral) বস্তু।

 

চার্জ ও চার্জের প্রকৃতি

চার্জ : যার উপস্থিতিতে কোন বস্তু ছোট ছোট হালকা কাগজের টুকরা আকর্ষণ করার সামর্থ্য রাখে এবং যার চলাচলে তড়িৎ প্রবাহ, তড়িৎক্ষেত্র ও চৌম্বক ক্ষেত্রের উদ্ভব হয় তাকে চার্জ বলে।

চার্জের প্রকৃতি : চার্লস এফ. ডুফে (Charles F. du Fay) পরীক্ষার সাহায্যে প্রমাণ করেন যে, ঘর্ষণের ফলে বিভিন্ন বস্তুতে উৎপন্ন চার্জের প্রকৃতি এক রকম হয় না। কোন একটিতে সৃষ্ট চার্জের প্রকৃতি অন্যটিতে সৃষ্ট চার্জের প্রকৃতির বিপরীত হতে দেখা যায়। পরবর্তীকালে ১৭৪৭ খ্রিস্টাব্দে বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন চার্জের বিপরীত প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করে এদের নামকরণ করেন।

তিনি রেশমে ঘষা কাচদণ্ডে যে চার্জ সৃষ্টি হয় তাকে ধনাত্মক চার্জ এবং ফ্লানেলে ঘষা ইবোনাইট দণ্ডে যে চার্জ সৃষ্টি হয় তাকে ঋণাত্মক চার্জ নামে অভিহিত করেন। অর্থাৎ প্রকৃতি অনুসারে চার্জ দুই প্রকার; যথা-

১। ধনাত্মক চার্জ (Positive charge) এবং

২। ঋণাত্মক চার্জ (Negative charge)।

 

চার্জের কোয়ান্টায়িত

বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন পরীক্ষা হতে প্রমাণিত হয়েছে যে, চার্জ নিরবিচ্ছিন্ন নয়, একটি ন্যূনতম মানের পূর্ণ সংখ্যক গুণিতক। এ ন্যূনতম চার্জ হচ্ছে একটি ইলেকট্রন বা একটি প্রোটনের চার্জ এবং এর মান 1.6 x 10-19 Coulomb। এ চার্জকে যদি e দ্বারা প্রকাশ করা হয় তাহলে কোন বস্তুর মোট চার্জ, q = ne লেখা যায়। এখানে n হচ্ছে একটি পূর্ণ সংখ্যা। কোন বস্তুতে চার্জের মান নিরবিচ্ছিন্ন হতে পারে না-চার্জ বিচ্ছিন্ন মানের। অর্থাৎ চার্জ কোয়ান্টায়িত।

 

চার্জ সংরক্ষণের নীতি

চার্জকে সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যায় না। কোন প্রক্রিয়ায় চার্জকে স্থানান্তরিত করা যায় কিন্তু কোন নতুন চার্জ সৃষ্টি করা যায় না, ধ্বংসও করা যায় না। যেমন- কাচদণ্ডকে যদি রেশমি কাপড় দ্বারা ঘর্ষণ করা হয় তখন কাচদণ্ড ধনাত্মক চার্জে চার্জিত হয় অর্থাৎ কাচদণ্ডে ইলেকট্রনের ঘাটতি ঘটে। রেশমি কাপড় ঋণাত্মক চার্জে চার্জিত হয়, অর্থাৎ রেশমি কাপড়ে ইলেকট্রনের আধিক্য ঘটে। পরীক্ষা করে দেখা গেছে, কাচদণ্ড থেকে যে পরিমাণ ঋণাত্মক চার্জ স্থানান্তরিত হয় রেশমি কাপড়ে ঠিক সেই পরিমাণ ঋণাত্মক চার্জের আবির্ভাব হয়।

অর্থাৎ ঘর্ষণের ফলে চার্জের সৃষ্টি হয় নি। চার্জ শুধুমাত্র এক বস্তু থেকে অন্য বস্তুতে স্থানান্তরিত হয়েছে।

 

কুলম্বের সূত্র

১৭৮৫ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিজ্ঞানী কুলম্ব দুটি বৈদ্যুতিক চার্জের মধ্যে আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল সম্পর্কিত একটি সূত্র প্রদান করেন। এ সূত্রকে কুলম্বের সূত্র বলা হয়। নিচে সূত্রটি বিবৃত করা হলোঃ

“দুটি বিন্দু চার্জ পরস্পরকে যে বলে আকর্ষণ বা বিকর্ষণ করে তা চার্জদ্বয়ের গুণফলের সমানুপাতিক, এদের মধ্যবর্তী দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক এবং এ বল চার্জদ্বয়ের সংযোগ সরলরেখা বরাবর ক্রিয়া করে।”

 

অনুশীলনী প্রশ্নঃ

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

১। পদার্থ সৃষ্টিকারী প্রাথমিক কণিকাসমূহের মৌলিক বৈশিষ্ট্যমূলক ধর্মকে কী বলে?

২। যে কোন পরমাণু আধান নিরপেক্ষ-এর কারণ কী?

৩। বিদ্যুৎবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে কোন কাজটি করা হয়?

৪। কোন দুটি আধানের মধ্যবর্তী দূরত্ব দ্বিগুণ করা হলে এদের মধ্যবর্তী বলের কী ঘটবে?

৫। স্থির তড়িৎ বল F, আধান q ও তড়িৎক্ষেত্রের তীব্রতা E-এর মধ্যে সম্পর্ক কী?

৬। তড়িতাহিতকরণ কাকে বলে?

৭। চার্জ কাকে বলে?

৮। চার্জ কয় প্রকার ও কী কী?

৯। চার্জের কোয়ান্টায়িত বলতে কী বুঝ?

১০। পরমাণুর নিউক্লিয়াসের স্থায়ী কণিকা হিসেবে কী কী কণা থাকে?

১১। কুলম্বের সূত্রটি বিবৃত কর।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments