HomeChemistryহাইড্রোকার্বন কাকে বলে? হাইড্রোকার্বন মূলত কত প্রকার?

হাইড্রোকার্বন কাকে বলে? হাইড্রোকার্বন মূলত কত প্রকার?

কার্বন ও হাইড্রোজেনের সমন্বয়ে গঠিত যৌগসমূহকে হাইড্রোকার্বন বলে। এতে কার্বন ও হাইড্রোজেন সমযোজী বন্ধনে আবদ্ধ থাকে। হাইড্রোকার্বনসমূহকে সাধারণভাবে CxHy হিসেবে লেখা হয়। যেমন; মিথেন (CH4), ইথেন (C2H6), ইথিন (C2H4), সাইক্লোহেক্সেন (C6H12), বেনজিন (C6H6)।

হাইড্রোকার্বনের শ্রেণীবিভাগ

হাইড্রোকার্বনকে মূলত দুই প্রকার। যথা : (১) অ্যালিফেটিক হাইড্রোকার্বন ও (২) অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন।

অ্যারোম্যাটিক হাইড্রোকার্বন (Aromatic Hydrocarbon)

এই শ্রেণির হাইড্রোকার্বনে এক বা একাধিক অ্যারোম্যাটিক বলয় (অ্যারোম্যাটিক রিং) থাকে। অ্যারোম্যাটিক হাইড্রোকার্বনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হল বেনজিন।

অ্যারোমেটিক শব্দটি গ্রিক শব্দ অ্যারোমা (Aroma) থেকে এসেছে। অ্যারোমেটিক নামকরনের পেছনে একটি কারণ রয়েছে। বিজ্ঞানীরা প্রথম যে অ্যারোমেটিক যৌগগুলো খুঁজে পেয়েছিলেন সেগুলো ছিল সুগন্ধিযুক্ত। আর সুগন্ধিযুক্ত কে ইংরেজিতে বলে aromatic বা aroma। আর তাই ঐ যৌগগুলোর গাঠনিক সংকেত এর মতো গাঠনিক সংকেত বিশিষ্ট সকল যৌগগুলোর নামই অ্যারোমেটিক রাখা হয়। অ্যারোমেটিক যৌগগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত হলো বেনজিন(C6H6), ন্যাপথ্যালিন(C10H8)এবং অ্যানথ্রাসিন(C14H10)^১।অ্যারোমেটিক যৌগগুলো সাধারণত 5, 6 অথবা 7 সদস্যের সমতলীয় যৌগ। অর্থাৎ হাইড্রোকার্বন গুলোকে একটি সুষম পঞ্চভূজ,ষড়ভুজ অথবা সপ্তভূজ দিয়ে গাঠনিক বন্ধন বোঝানো হয়। এ যৌগগুলোতে একান্তর দ্বিবন্ধন থাকে।অর্থাৎ একটি একক বন্ধনের পরে একটি দ্বিবন্ধন থাকে। অ্যারোমেটিক যৌগে কখনো ত্রিবন্ধন ব্যবহৃত হয় না।সকল অ্যারোমাটিক যৌগগুলোকে হাকেল নীতি অনুসারে (4n+2) সংখ্যক সঞ্চারণশীল পাই ইলেক্ট্রন যৌগ দ্বারা চিহ্নিত করা যায়।এছাড়া কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সকল অ্যারোমাটিক যৌগগুলোকে এদের সাধারণ সঙ্কেত দ্বারা প্রকাশ করা যায়।সেটি হলো (C4r+2H2r+4) যেখানে r=বলয় সংখ্যা।

ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম

হাইড্রোকার্বন ঘরের তাপমাত্রায় কঠিন (প্যারাফিন মোম, ন্যাপথ্যালিন), তরল (বেনজিন) ও গ্যাসীয় (মিথেন, ইথেন) তিনরকম অবস্থাতেই থাকতে পারে। হাইড্রোকার্বনের গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক তার আণবিক ভর, দ্বিমেরু ভ্রামক ও কঠিন অবস্থায় প্যাকিং-এর উপর নির্ভর করে।

কার্বনের যোজ্যতা চার হওয়ার কারণে লম্বা কার্বন-কার্বন শৃঙ্খল গঠন হতে পারে, এবং কার্বনের এই “ক্যাটিনেশন” ধর্মের জন্য হাইড্রোকার্বনের অসংখ্য গঠনবৈচিত্র্য সম্ভব।

কার্বন ও হাইড্রোজেনের তড়িৎ ঋণাত্মকতার পার্থক্য মাত্র ~0.35, তাই হাইড্রোকার্বন সাধারণত নন-পোলার হয়। এই কারণেই বেশিরভাগ হাইড্রোকার্বন হাইড্রোফোবিক ও নন-পোলার জৈব দ্রাবকে (যেমন কার্বন টেট্রাক্লোরাইড, ইথার) দ্রাব্য এবং জলের মতন অজৈব দ্রাবকে অদ্রাব্য।

সম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বনে (অ্যালকেন) সমস্ত বন্ধনই অনমনীয় সিগমা (σ) বন্ধন হওয়ার কারণে অ্যালকেন সাধারণ অবস্থায় নিষ্ক্রিয় হয়। উচ্চ তাপমাত্রায় অ্যালকেন অক্সিজেন দ্বারা জারিত হয়ে কার্বন ডাইঅক্সাইড ও জল তৈরি করে। সূর্যালোকের উপস্থিতিতে অ্যালকেন হ্যালোজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে হ্যালোঅ্যালকেন গঠন করে।

অ্যালকিন ও অ্যালকাইনে দুর্বল পাই (π) বন্ধন থাকে, যা নিউক্লিয়ফিল বা ইলেক্ট্রোফিলের সাথে সংযোজন বিক্রিয়া করতে পারে। অ্যারোম্যাটিক হাইড্রোকার্বনের অ্যারোম্যাটিক ধর্মের জন্য π বন্ধন থাকা সত্ত্বেও তা অত্যন্ত নিষ্ক্রিয় হয়, যা কেবলমাত্র অনুঘটকের উপস্থিতিতে সংযোজন ও প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া করতে পারে।

উৎস

পৃথিবীতে হাইড্রোকার্বনের প্রধান উৎস পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস। পাললিক শিলার স্তরে জমে থাকা জৈব পদার্থ প্রচণ্ড তাপ ও চাপে রূপান্তরিত হয়ে তৈলাক্ত বালি, ওয়েল শেল নামের পাথর ও সামুদ্রিক মিথেন হাইড্রেটের স্তরে পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস তৈরি করে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments