অষ্টক ও দুই এর নিয়ম (Octet and Duet Rules)

অষ্টক নিয়ম (Octet Rules)

প্রতিটি মৌলই তার সর্বশেষ শক্তিস্তরে নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ইলেকট্রন বিন্যাসের প্রবণতা দেখায়। হিলিয়াম ছাড়া সকল নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ইলেকট্রন বিন্যাসে সর্বশেষ শক্তিস্তরে 8টি করে ইলেকট্রন বিদ্যমান। অণু গঠনকালে কোনো মৌল ইলেকট্রন গ্রহণ, বর্জন অথবা ভাগাভাগির মাধ্যমে তার সর্বশেষ শক্তিস্তরে 8টি করে ইলেকট্রন ধারণের মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ইলেকট্রন বিন্যাস লাভ করে। একেই ‘অষ্টক’ নিয়ম বলা হয়। যেমন: CH4 অণুতে কেন্দ্রীয় পরমাণু কার্বনের সর্বশেষ শক্তিস্তরে 8টি ইলেকট্রন বিদ্যমান। যেখানে 4টি ইলেকট্রন কার্বনের নিজস্ব আর বাকি 4টি ইলেকট্রন চারটি হাইড্রোজেন পরমাণু থেকে আসে।

এভাবে পরমাণুসমূহ তার সর্বশেষ শক্তিস্তরে 8টি ইলেকট্রন ধারণ করে নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ইলেকট্রন বিন্যাস লাভের মাধ্যমে যৌগ গঠনের পদ্ধতিকে ‘অষ্টক’ নিয়ম বলে।

অষ্টক নিয়ম কাকে বলে : বিভিন্ন মৌলের পরমাণুসমূহ নিজেদের মধ্যে ইলেকট্রন আদান-প্রদান এবং শেয়ারের মাধ্যমে পরমাণুসমূহের শেষ শক্তিস্তরে যে আটটি ইলেকট্রনের বিন্যাস লাভ করে তাকে অষ্টক নিয়ম বলে। যেমন, সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl) গঠনের সময় সোডিয়াম পরমাণু একটি ইলেকট্রন ত্যাগ করে এবং ক্লোরিন পরমাণু ঐ ইলেকট্রন গ্রহণ করে। এভাবেই, উভয় মৌলের পরমাণুই সর্ববহিঃস্থ স্তরে অষ্টক কাঠামো লাভ করে।

অষ্টক নিয়মের সাহায্যে বেশিরভাগ যৌগের বন্ধন ব্যাখ্যা করা যায়। মৌলসমূহ অষ্টক পূর্ণ করার জন্যই রাসায়নিক বন্ধনে অংশ নেয়।

 

দুই এর নিয়ম (Duet Rules)

‘অষ্টক’ নিয়মের কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে বিজ্ঞানীরা নতুন একটি নিয়মের উপস্থাপন করেন। যাকে ‘দুই’ এর নিয়ম বলা হয়। ‘দুই’ এর নিয়মটি অষ্টক নিয়মটি অধিকতর উপযোগী এবং আধুনিক। নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলোর সর্বশেষ শক্তিস্তরে যেমন 2টি বা 8টি ইলেকট্রন বিদ্যমান, তেমনি অণু গঠনে কোনো পরমাণুর সর্বশেষ শক্তিস্তরে এক বা একাধিক জোড়া ইলেকট্রন বিদ্যমান থাকবে, এটিই হচ্ছে ‘দুই’ এর নিয়ম। অর্থাৎ অণুতে যেকোনো পরমাণুর সর্বশেষ শক্তিস্তরে এক বা একাধিক জোড়া ইলেকট্রন অবস্থান করবে।

যেমন: BeCl2 অণুর কেন্দ্রীয় পরমাণু Be এর সর্বশেষ শক্তিস্তরে 2 জোড়া অর্থাৎ 4টি ইলেকট্রন বিদ্যমান। BF3 অণুর কেন্দ্রীয় পরমাণু B এর সর্বশেষ শক্তিস্তরে 3 জোড়া অর্থাৎ 6টি ইলেকট্রন বিদ্যমান। CH4, অণুর কেন্দ্রীয় পরমাণু C এর সর্বশেষ শক্তিস্তরে 4 জোড়া অর্থাৎ 8টি ইলেকট্রন বিদ্যমান। শুধু তাই নয় কেন্দ্রীয় পরমাণু ছাড়াও অন্য পরমাণুগুলো অর্থাৎ Cl এর সর্বশেষ শক্তিস্তরে 4 জোড়া অর্থাৎ 8টি ইলেকট্রন বিদ্যমান।

F সর্বশেষ শক্তিস্তরে 4 জোড়া অর্থাৎ 8টি ইলেকট্রন বিদ্যমান এবং H এর সর্বশেষ শক্তিস্তরে 1 জোড়া অর্থাৎ 2টি ইলেকট্রন বিদ্যমান। এক্ষেত্রে সকল পরমাণু ‘দুই’ এর নিয়ম অনুসরণ করেছে। উল্লেখ্য, পর্যায় সারণির 1-20 পর্যন্ত মৌলসমূহ মূলত ‘অষ্টক’ ও ‘দুই’ এর নিয়ম ভালোভাবে অনুসরণ করে।

Leave a Comment