আত্মকর্মসংস্থান কাকে বলে? উদ্যোগ ও আত্মকর্মসংস্থানের মধ্যে পার্থক্য কি?

Blog

সহজ অর্থে, নিজেই নিজের কর্মসংস্থান করাকে আত্মকর্মসংস্থান (Self-employment) বলে। আরও একটু স্পষ্ট করে বলা যায় যে, নিজস্ব অথবা ঋণ করা স্বল্প সম্পদ, নিজস্ব চিন্তা, জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ন্যূনতম ঝুঁকি নিয়ে আত্মপ্রচেষ্টায় জীবিকা অর্জনের ব্যবস্থাকে আত্মকর্মসংস্থান বলা হয়। আত্মকর্মসংস্থান হচ্ছে মজুরি বেতনভিত্তিক চাকরির বিকল্প পেশার অন্যতম উপায়। আত্মকর্মসংস্থান পেশা বলতে বুঝায় যখন কোনাে ব্যক্তি স্বীয় দক্ষতা বা গুণাবলির বলে সেবা দানের বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করে জীবিকা চালায়।

উদাহারণস্বরূপ বলা যায় যে, আত্মকর্মসংস্থান হচ্ছে যখন একজন কাঠ মিস্ত্রি একটি কাঠের ফার্মে বেতনের বিনিময়ে উপার্জন না করে নিজেই কাঠের আসবাবপত্র তৈরি করে এবং এ থেকে যে আয় হয় তা দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করে। বলতে গেলে একটি দেশের কর্মক্ষম জনসংখ্যার বেশিরভাগই আত্মকর্মসংস্থানে নিয়ােজিত।

 

আত্মকর্মসংস্থানের গুরুত্ব (Importance of Self-employment)

নিচে আত্মকর্মসংস্থানের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো।

১. জীবিকা অর্জন : একটি দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে শ্রমজীবী ও চাকরীজীবী লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু কর্মসংস্থানের চাহিদা যে হারে বাড়ছে সে হারে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না। ফলে বেকার তরুণ-তরুণীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে বেকার তরুণ-তরুণীরা জীবিকা অর্জন করতে পারে।

২. আয় বৃদ্ধি : আত্মকর্মসংস্থানের ফলে ব্যক্তির আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। প্রাথমিক পর্যায়ে আয় সীমিত ও অনিশ্চিত হলেও পরিকল্পিত আত্মকর্মসংস্থানে নিয়োজিত থাকলে আয়ের পরিমাণ নিশ্চিত করা সম্ভব।

৩. ব্যয় হ্রাস : স্বল্প পরিসরে এবং নিজ বাড়িতে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা যায় বিধায় অতিরিক্ত ব্যয়ের পরিমাণ হ্রাস পায়।

৪. স্বল্প পুঁজির সদ্ব্যবহার : ছোট-খাট ব্যবসায়, রেডিও, টিভি রিপেয়ারিং, নার্সারি, মৎস্য খামার, শাকসবজি চাষ প্রভৃতিতে স্বল্প পুঁজির সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা যায়।

৫. সঞ্চয় বৃদ্ধি : আত্মকর্মসংস্থান মানুষকে সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় একত্র করে অনেক বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে মানুষ উৎসাহ পায়। এতে আর্থিক সচ্ছলতা বৃদ্ধি পায়।

৬. ছদ্ম বেকার সমস্যার সমাধান : আমাদের দেশের কর্মক্ষম লোকের একটি বিরাট অংশ ছদ্ম বেকার বা মৌসুমি বেকার। অর্থাৎ বছরের কিছু সময় তারা কাজের সুযোগ পায় না। আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা সম্ভব।

৭. গ্রামীণ অর্থনৈতিক উন্নয়ন : আত্ম-কর্মসংস্থানের মাধ্যমে গ্রামের বেকার যুবক-যুবতিরা আর্থিক সমস্যার সমাধান করতে পারে। এতে গ্রামীণ অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়।

 

উদ্যোগ ও আত্মকর্মসংস্থানের মধ্যে পার্থক্য কি?

উদ্যোগ ও আত্মকর্মসংস্থানের মধ্যে পার্থক্য নিচে দেয়া হলোঃ

উদ্যোগ

  • যেকোনো কাজের কর্মপ্রচেষ্টাই উদ্যোগ।
  • উদ্যোগের মাধ্যমে অন্যের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হয়।
  • উদ্যোগ যেকোনো কাজের জন্য নেওয়া যেতে পারে।

আত্মকর্মসংস্থান

  • নিজেই নিজের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হলো আত্মকর্মস্থান।
  • আর আত্মকর্মসংস্থানে নিজের কাজের ব্যবস্থা করা হয়।
  • আত্মকর্মসংস্থানের জন্য ব্যক্তির উদ্যোগ প্রয়োজন হয়।

 

আত্মকর্মসংস্থান সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

১। আত্মকর্মসংস্থানের সংজ্ঞা কি?

উত্তর : নিজেই নিজের কর্মসংস্থান করাকে আত্মকর্মসংস্থান বলে।

২। আত্মকর্মসংস্থানের জন্য কী প্রয়োজন?

উত্তর : আত্মকর্মসংস্থানের জন্য প্রয়োজন ব্যবসায় উদ্যোগ, দু’টি কর্মঠ হাত, স্বল্প প্রশিক্ষণ ও প্রবল আত্মবিশ্বাস।

৩। আত্মকর্মসংস্থানকে প্রধানত কত শ্রেণিতে ভাগ করা যায়?

উত্তরঃ আত্মকর্মসংস্থানকে প্রধানত দু’টি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যথা–

১। বেতন বা মজুরিভিত্তিক চাকরি এবং

২। আত্মকর্মসংস্থান বা স্বনিয়োজিত পেশা।

৪। আত্মকর্মসংস্থানের জন্য প্রশিক্ষণ প্রয়োজন কেন?

উত্তর : প্রশিক্ষণ দক্ষতা ও যোগ্যতা বৃদ্ধি করে বলে আত্মকর্মসংস্থানের জন্য প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।

৫। আত্মকর্মসংস্থানের একটি বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কর।

উত্তরঃ আত্মকর্মসংস্থানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এতে আয়ের সম্ভাবনা অসীম। ঝুঁকি নিয়ে আত্মকর্মসংস্থান হিসেবে কোনো ব্যবসায় শুরু করার প্রথম দিকে আয় কম হতে পারে। কিন্তু, ব্যবসায় সম্প্রসারিত হলে ব্যক্তির আয় বাড়তে থাকে। এ সুবিধা চাকরি বা অন্যান্য পেশায় পাওয়া যায় না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *