কিভাবে পিসির যত্ন করবেন?

কম্পিউটার হচ্ছে ইলেকট্রনিক জগতে বিজ্ঞানের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ সৃষ্টি। কম্পিউটার তার যান্ত্রিক সুবিধার মাধ্যমে দৈনন্দিন জীবনের প্রায় সমস্ত জটিল কার্যের সহজ ও সুন্দর সমাধান খুব অল্প সময়ে দিয়ে থাকে। যেহেতু কম্পিউটার একটা যন্ত্র এবং সর্বাধুনিক ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশই এর কার্যক্রমের প্রধান নিয়ন্ত্রক, তাই এর কাছ থেকে সঠিক ও সুন্দর কাজ, সেই সাথে এটির দীর্ঘআয়ু পেতে হলে আপনার শরীরের মত এরও নিয়মিত যত্ন নেয়া প্রয়োজন। বাজারে বিভিন্ন আকৃতির ও স্তরের কম্পিউটার রয়েছে। তারমধ্যে মাইক্রো কম্পিউটার বা পিসি (Desk Top PC) হচ্ছে সবচেয়ে বেশী সংখ্যায় সর্বস্তরে ব্যবহৃত কম্পিউটার। আপনি যদি এরূপ একটি পিসির ব্যবহারকারী হন তাহলে এটির যত্ন নিতে কি কি ব্যবস্থাদি গ্রহণ করবেন তা নিয়ে এই টিটোরিয়ালে আলোচনা করা হলো। আলোচনার সুবিধার্থে প্রথমে সমস্যা সৃষ্টিকারী কারণ ও পরবর্তীতে তার প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করা হল।

 

সম্ভাব্য সমস্যা ও কারণসমুহ

সমস্যা সৃষ্টিকারী কারণগুলোকে তাদের বৈশিষ্ট্য অনুসারে ৩টি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে-

১। পারিপার্শ্বিক কারণ

২। ব্যবহারকারীর অসাবধানতা বা ভুল ব্যবহার জনিত কারণ

৩। অন্যান্য কারণ

১। পারিপার্শ্বিক কারণঃ

পারিপার্শ্বিক কারণগুলো আমাদের চারপাশে বিরাজমান। এগুলো আমাদের গোচরে বা অগোচরে সক্রিয়ভাবে কম্পিউটারকে নিয়ত ক্ষতি করে যাচ্ছে। এগুলোকে আবার কয়েকটা ভাগে ভাগ করা যেতে পারে–

(ক) তাপমাত্রাঃ কম্পিউটারের ক্ষতি করার ক্ষেত্রে তাপমাত্রা একটি উল্লেখযোগ্য কারণ। কম্পিউটার যখন কার্যত থাকে তখন এ যন্ত্রাংশগুলোর মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহের ফলে তা ক্রমাগত উত্তপ্ত হতে থাকে। অনেক সময় ধরে ব্যবহার চলতে থাকলে এক পর্যায়ে এ তাপ অনেক বেড়ে যায়, যা কম্পিউটারের বিভিন্ন সংবেদনশীল (sensetive) যন্ত্রাংশকে অকেজো করে দিতে পারে এবং অনেক মূল্যবান যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এরূপ ঘটনায় এমনকি পুরো কম্পিউটারটিই অকেজো হয়ে যেতে পারে। এ সমস্যা যেমন অনেক অর্থদন্ড ঘটায় তেমনি চলমান কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজকেও নষ্ট করে দেয়। এছাড়া কম্পিউটারে ব্যবহৃত ফ্লপি ডিস্ক এর সাধারণ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে তাপমাত্রার একটা সীমা মেনে চলতে হয় যা প্রতিটি ফ্লপি ডিস্কে কভারের গায়ে লিখা থাকে (১০° – ৫২° সেঃ বা ৫০° – ১২৬° ফাঃ)

(খ) আর্দ্রতাঃ বায়ুর আর্দ্রতা বেশী হলে বায়ুস্থ জলীয় বাষ্প বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রাংশ, চুম্বকীয় ডিস্ক ইত্যাদির ওপর জমে, যা ধাতব যন্ত্রাংশে মরিচা ধরায়। এছাড়া বায়ুস্থ ধুলিকণা এর সাথে মিলে যন্ত্রাংশের ওপরে একটা আস্তরণ সৃষ্টি করে। এ আস্তরণ বিভিন্ন বর্তনীতে বিদ্যুৎ চলাচলে বাধার সৃষ্টি করে বা বিপথগামী করতে পারে। জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি পরিবেশকে স্যাতসেতে করে দেয় যা ডিস্কসহ বিভি যন্ত্রাংশে fungus বা ছত্রাক জন্ম দিয়ে এদের কার্যকারীতা কমিয়ে দেয়।

(গ) মরিচাঃ বায়ুতে জলীয় বাষ্পের আধিক্য কম্পিউটারের বিভিন্ন ধাতব যন্ত্রাংশে মরিচা ধরায়। এ মরিচা ঐ যন্ত্রাংশটির কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে, বিদ্যুৎ প্রবাহকে বিপথগামী করতে পারে, এমনকি শর্ট সার্কিট (short circuit) করে কম্পিউটারকে অকেজো করে দিতে পারে।

(ঘ) অতিসুক্ষ্ম আনুবীক্ষণিক ধূলিকণাঃ ধুলিকণা কম্পিউটারের জন্যে সবচাইতে ক্ষতিকর উপাদান। এ ধুলিকণা কী-বোর্ডের মধ্যে জমে “কী” গুলো জাম করে দেয় ফলে কী-বোর্ড ঠিকমত কাজ করেনা। এছাড়া এর অভ্যন্তরীন ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রাংশেরও ক্ষতি করে। সব চাইতে বেশী ক্ষতি করে ফ্লপি ডিস্কের। ধুলিকণা জমে থাকা অবস্থায় কোন ডিস্ক কম্পিউটারকে দিয়ে পড়াতে গেলে তা ডিস্ক ড্রাইভের হেড সংস্পর্শে এসে ঘূর্ণাবস্থায় ডিস্কের সাথে এর ঘর্ষণ লাগে ফলে ডিস্কের ট্রাক কেটে দেয়। এতে করে ঐ ট্রাক বা ট্রাকসমুহে সংরক্ষিত তথ্য তাে নষ্ট হয়ই উপরন্তু ভবিষ্যতের জন্য ঐ ট্র্যাকগুলো অকেজো হয়ে যায়। শুধু ডিস্কই নয় কখনও কখনও এই ধুলিকণা ড্রাইভ হেডকেও নষ্ট করে দিতে পারে।

(ঙ) কার্বন কণাঃ কম্পিউটার কক্ষের আশপাশে বা এলাকায় কোন কলকারখানা বা ধোয়ার উৎস থাকলে তা থেকে আগত কার্বন কণা কম্পিউটারের কী-বোর্ড এবং অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারে। কার্বন নিজেই কোন বর্তনীতে বিদ্যুৎ পরিবাহক হিসেবে কাজ করতে পারে। ফলে স্বভাবতইঃ কম্পিউটারের কী-বোর্ড এবং অভ্যন্তরীন ইলেকট্রনিক বর্তনীর সূক্ষ্ম IC বা chip এর সাধারণ বিদ্যুৎ বা ইলেক্ট্রনিক চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে। সর্বোপরি শর্ট সার্কিট সৃষ্টি করে কোন iC বা chip কেটে যাওয়ার কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে।

 

২। ব্যবহারে অসাবধানতা বা ভুল ব্যবহার

কম্পিউটার আসলে নিজে থেকে কখনও কোন কাজ করে দেয় না। আমাদের কোন কাজ কম্পিউটারকে দিয়ে করাতে হলে কাজটি কি দিয়ে কেমন করে করতে হবে তার পুরোটাই কম্পিউটারকে বলে দিতে হয়। কম্পিউটারের কাছ থেকে এরূপ কোন কাজ দ্রুত, সুন্দর ও সঠিকভাবে পেতে হলে কম্পিউটারের ব্যবহারকারী বা পরিচালনাকারী ব্যক্তির নির্দেশ বা ব্যবহারের ধরণের ওপরই তা নির্ভর করে। এই ব্যবহারের ক্ষেত্রে অসাবধানতা বা ভুল ব্যবহার শুধু তথ্য প্রক্রিয়াকরণে ভুল ফলই দিবে না কখনও তা কম্পিউটার যন্ত্রটাকেও ক্ষতিগ্রস্ত বা নষ্ট করে দিতে পারে। এই ধরনের কাজ গুলোর মধ্যে রয়েছে-

  • হার্ড ডিস্ক যুক্ত কম্পিউটারের সিপিইতে কোন প্রকার ঝাকুনী লাগা যা হার্ড ডিস্ককে ক্ষতি করতে পারে এবং ডিস্কে রক্ষিত তথ্যকেও স্বাভাবিক ভাবেই নষ্ট করে দিতে পারে।
  • ফ্লপি ডিস্ক ড্রাইভে ডিস্ক প্রবেশ করানোর সময় তা সঠিক ভাবে প্রবেশ না করিয়ে উল্টো ভাবে প্রবেশ করানো বা কোথাও আটকে গেলে জোর করে প্রবেশ করানোর চেষ্টা শুধু ডিস্ককেই ক্ষতি করে না ড্রাইভ হেডকেও ক্ষতি করতে পারে।
  • সিপিইউ, মনিটর ও প্রিন্টারসহ যাবতীয় যন্ত্রের বিদ্যুৎ ও পারস্পরিক সহযোগকারী প্লাগ সঠিক ভাবে যথাস্থানে সংযোগ করা না হলে তা থেকে মারাত্মক ক্ষতির সৃষ্টি হতে পারে।

কম্পিউটারে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ বা উপাদান যেমন মাউস, ডিস্ক ইত্যাদি যত্রতত্র ফেলে রাখলে তাতে ধুলাবালি যুক্ত হতে পারে, যা ঐ মাউস বা ডিস্কসহ কম্পিউটারের ড্রাইভ হেডকেও ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে।কম্পিউটারের কী-বোর্ড বা কম্পিউটারের আশপার্শ্বে কোথাও ধুমপান করা যা থেকে সিগারেটের দগ্বাংশ এসে পড়তে পারে, চা পান করা বা চা সমেত কাপ রাখা যা অসাবধানতাবশতঃ কী-বোর্ড বা কম্পিউটারের ওপর ঢেলে পড়তে পারে ইত্যাদি কমপিউটারের জন্য ক্ষতিকর। খুব জোরে শব্দ করে কী-বোর্ডের কী আঘাত করা খুবই শ্রুতিকটু এবং তা কী-বোর্ডের কী গুলোর নীচের কার্বন পাত বা স্প্রিং বা বর্তনীর ক্ষতি করতে পারে৷ কখনও কোন কারণে কম্পিউটারের সুইচ বন্ধ করে সঙ্গে সঙ্গেই তা আবার চালিয়ে দেন, এতে করে বিদ্যুৎ প্রবাহের হঠাৎ উত্থান-পতন (fluctuation) মনিটরের পিকচার টিউব নষ্ট করে দিতে পারে বা কোন মুল্যবান আইসি কেটে দিতে পারে।

অন্যান্য কারণঃ উপরে উল্লেখিত কারণগুলো ছাড়াও আরও কিছু অদৃশ্য কারণ রয়েছে, যা কম্পিউটারকে বা এতে সংরক্ষিত তথ্যের ক্ষতি করতে পারে। এদের মধ্যে রয়েছে-

  • কম্পিউটারে কোন ড্রাইসেল ব্যাটারী ব্যবহার করা থাকলে একটা সময়ান্তে তা নিঃশেষ হয়ে যায় (যা কম্পিউটারের ঘড়ির তারিখ ও সময় স্লো করে দেয়) সে অবস্থায় এটি যথা সময়ে প্রতিস্থাপন না করলে এক সময় তা গলে গিয়ে ব্যাটারী সংযোগ ব্যবস্থাকে বিকল করে দিতে পারে।
  • বিদ্যুৎ প্রবাহের পরিমানে উত্থান-পতন, বিশেষ করে ভোল্টজ বেড়ে গেলে তা কম্পিউটারের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।

Leave a Comment