HomeBlogনির্বাচন বলতে কি বুঝায়? নির্বাচন কত প্রকার?

নির্বাচন বলতে কি বুঝায়? নির্বাচন কত প্রকার?

নির্বাচন হচ্ছে জনপ্রতিনিধি বাছাইয়ের পদ্ধতি। স্থানীয় পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত ভােটাধিকার প্রাপ্ত সকল নাগরিক ভােট দিয়ে জনপ্রতিনিধি বাছাই করে। প্রতিনিধি বাছাইয়ের প্রক্রিয়াকে নির্বাচন বলে। যারা ভােট দেয়, তাদের নির্বাচক বা ভােটার বলে। নির্বাচকের সমষ্টিকে নির্বাচকমণ্ডলী বলা হয়। সুষ্ঠু নির্বাচন গণতান্ত্রিক শাসন পদ্ধতির অন্যতম শর্ত। এ ছাড়া সামরিক শাসন ও এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থায়ও কখনাে কখনাে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে দেখা যায়। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় নির্বাচনের গুরুত্ব অপরিসীম। নির্বাচনের মাধ্যমেই জনমত প্রকাশ পায়। নির্বাচনের মাধ্যমেই ভােটারগণ একাধিক প্রতিনিধিদের মধ্য থেকে যােগ্য প্রার্থীকে ভােট দিয়ে নির্বাচিত করে। যে দল বেশি ভােট পায়, তারা সরকার গঠন করে। নির্বাচকমণ্ডলী সরকার ও জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করে। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় নির্বাচন সরকারকে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য করে। একটি দল নির্বাচিত হয়ে সঠিকভাবে জনগণের জন্য কাজ না করলে পরবর্তী নির্বাচনে জনগণ সাধারণত সেই দলকে আর নির্বাচিত করে না। উন্নত গণতান্ত্রিক দেশে এটি যেমন সত্যি, তেমনিভাবে অনুন্নত দেশের ক্ষেত্রেও সত্যি। বৃটেনে ২০১০ সালের নির্বাচনে লেবার পার্টির পরিবর্তে সে দেশের জনগণ কনজারভেটিভ পার্টিকে ভােট দেয়। তেমনি, বাংলাদেশে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের পরিবর্তে ‘বিএনপি’ কে এবং ২০০৮ সালে ‘বিএনপি’ র পরিবর্তে আওয়ামী লীগকে এ দেশের জনগণ ক্ষমতায় বসায়। এভাবেই নির্বাচন জনগণের সাথে শাসকশ্রেণির যােগাযােগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। জনগণ নির্বাচনের মাধ্যমে শাসকশ্রেণির প্রতি একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সমর্থন অব্যাহত রাখে। বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সাল থেকে ২০১৪ পর্যন্ত ৪০ বছরে ১৫ বার সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ২ বার ছিল গণভােট, ৩ বার রাষ্ট্রপতি এবং ১০ বার সংসদ নির্বাচন হয়। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় এ সব নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

 

নির্বাচনের ইতিহাস

সভ্যতার ইতিহাসের প্রাচীন কাল থেকেই প্রাচীন গ্রিস ও প্রাচীন রোমে নির্বাচনের ব্যবহার হয়ে আসছে এবং গোটা মধ্যযুগে পবিত্র রোমান সম্রাট ও পোপের মত শাসক বাছাই করতেও নির্বাচনের ব্যবহার হতো। প্রাচীন ভারতে নির্বাচনের মাধ্যমে প্রজারা বাছাই করতেন রাজাদের। প্রাচীন ভারতের খালিফ, উঠমান এবং আলি, মধ্যযুগের গোড়ার দিকে রশিদুন খলিফৎ এবং বাংলার মধ্যযুগের গোড়ার দিকে পাল রাজাদের মধ্যে গোপালকে বাছাই করতে এই নির্বাচন করা হয়েছিল। তবে আধুনিক ‘নির্বাচন’ হলো জনগণের ভোটে সরকার নির্বাচন। সপ্তদশ শতাব্দীর একেবারে শুরুর দিকে উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপে যখন প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার গঠনের ধারণা এলো তার আগে পর্যন্ত অবশ্য জনসাধারণকে দিয়ে সরকারী পদাধিকারী বাছাইয়ের এই আধুনিক ‘নির্বাচন’ বিষয়টির আবির্ভাবই হয়নি।

নির্বাচনের ইতিহাসের অনেকটা জুড়েই রয়েছে ভোটাধিকারের প্রশ্নগুলি, বিশেষ করে সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলির ভোটাধিকার। উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের সংস্কৃতিতে প্রভাবশালী গোষ্ঠী ছিল পুরুষরাই, নির্বাচকমণ্ডলীতেও তাই এদেরই প্রাধান্য থাকতো, অন্যান্য বহু দেশেও এই একই ধারা চলে আসছিল। গ্রেট ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলিতে শুরুর দিকের নির্বাচনগুলিতে জমিদার অথবা শাসক শ্রেণীর পুরুষদের প্রাধান্য ছিল। ১৯২০ সাল পর্যন্ত অবশ্য পশ্চিম ইউরোপের সমস্ত দেশ এবং উত্তর আমেরিকার গণতন্ত্রে সর্বজনীনভাবেই পুরুষ ভোটাধিকার চালু ছিল এবং তার পর থেকেই বহু দেশ মহিলাদের ভোটাধিকার দেওয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছিল। পুরুষদের সর্বজনীন ভোটাধিকারের কথা আইনগতভাবে সিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও অনেক সময়েই অবাধ নির্বাচনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বাধা অন্তরায় সৃষ্টি করতো (নাগরিক অধিকার আন্দোলন দেখুন)।

 

নির্বাচনের প্রকারভেদ

নির্বাচন দুই প্রকার। যেমন- প্রত্যক্ষ নির্বাচন ও পরােক্ষ নির্বাচন।

  • প্রত্যক্ষ নির্বাচন : যে নির্বাচনে জনগণ সরাসরি ভােট দিয়ে প্রতিনিধি বাছাই করে তাকে প্রত্যক্ষ নির্বাচন বলা হয়। যেমন- বাংলাদেশের সংসদ সদস্যগণ জনগণের প্রত্যক্ষ ভােটে নির্বাচিত হন।
  • পরােক্ষ নির্বাচন : জনগণ ভােটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি বা একটি মধ্যবর্তী সংস্থা নির্বাচিত করেন। এই জনপ্রতিনিধিগণ ভােট দিয়ে যখন রাষ্ট্রপতি বা সংসদের সংরক্ষিত আসনের সদস্য নির্বাচন করেন, তখন তাকে বলা হয় পরােক্ষ নির্বাচন। যেমন- বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি সংসদ সদস্যদের ভােটে নির্বাচিত হন। আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি মধ্যবর্তী সংস্থা দ্বারা নির্বাচিত হন।
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments