পরাগায়ন কাকে বলে? পরাগায়ন কত প্রকার ও কি কি?

পরাগায়ন কাকে বলে? (What is called Pollination in Bengali/Bangla?)

ফুলের পরাগধানী হতে পরাগরেণুর একই ফুলে অথবা একই জাতের অন্য ফুলের গর্ভমুণ্ডে স্থানান্তরিত হওয়াকে পরাগায়ন বলে। পরাগায়নকে পরাগ সংযোগও বলা হয়। বায়ু, পানি, কীট-পতঙ্গ, পাখি, বাদুড় ইত্যাদি পরাগায়নের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। পরাগায়ন ফল ও বীজ উৎপাদন প্রক্রিয়ার পূর্বশর্ত।

 

পরাগায়ন কত প্রকার? ( How Many Types of Pollination?)

পরাগায়ন দুই প্রকার–

(i) স্ব-পরাগায়ন ও

(ii) পর-পরাগায়ন।

স্ব-পরাগায়ন

একই ফুলে বা একই গাছের ভিন্ন দুটি ফুলের মধ্যে যখন পরাগ সংযোগ ঘটে, তখন তাকে বলা হয় স্ব-পরাগায়ন। সরিষা, কুমড়া ইত্যাদিতে স্ব-পরাগায়ন ঘটে।

বৈশিষ্ট্য : এর মাধ্যমে ফুলের চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য বজায় থাকে। নতুন কোনো প্রকরনের সৃষ্টি হয় না। বীজের বিশুদ্ধতা অক্ষুন্ন থাকে। তবে বীজের জীবনীশক্তি তুলনামূলক কম হয়। বাহকের ওপর নির্ভরশীল নয় বলে পরাগায়ন প্রায় শতভাগ নিশ্চিত হয়। পরাগরেণু নষ্ট কম হয়। কিন্তু এর মাধ্যমে সৃষ্ট উদ্ভিদের অভিযােজন ক্ষমতা কম হয়। এ পরাগায়নে উদ্ভিদের মাতৃগুণাগুণ বজায় থাকে।

উপকারিতা :

  • স্বপরাগায়নে উদ্ভিদের প্রজাতির বিশুদ্ধতা রক্ষিত হয়।
  • পরাগসংযোগ প্রায় নিশ্চিত।
  • পরাগরেণু নষ্ট হয় খুবই কম।
  • এক্ষেত্রে বাহকের প্রয়োজন হয় না বললেই চলে।

অপকারিতা :

  • সাধারণত বংশানুক্রমে কোনো নতুন গুণের আবির্ভাব হয় না।
  • নতুন বংশধরদের অভিযোজন ক্ষমতা বা নতুনের সাথে খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতা কমে।
  • এ প্রজনন অব্যাহত থাকলে, অভিযোজন ক্ষমতা হ্রাসের কারণে কোনো এক পর্যায়ে প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটতে পারে।
  • গাছের ফল-এ কম সহনশীল ও কম জীবনীশক্তিসম্পন্ন বীজের সৃষ্টি হয়।

 

পর-পরাগায়ন

দুটি ভিন্ন তবে একই জাতের উদ্ভিদের মধ্যে যখন পরাগসংযোগ ঘটে, তখন তাকে পর-পরাগায়ন বলে। পরাগায়নে বাহক যেমন- বাতাস, পানি, পতঙ্গ ও প্রাণীর দরকার হয়। শিমুল, পেঁপে প্রভৃতিতে পর-পরাগায়ন হয়।

বৈশিষ্ট্য :

পর-পরাগায়নে দুইটি ফুলের চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য কিছুটা ভিন্নতর হয়। এর ফলে ঐ পরাগায়নে নতুন প্রকরণের সৃষ্টি হয়। পরপরাগায়নে বীজের বিশুদ্ধতা নষ্ট হয়। কিন্তু বীজ অধিক জীবনীশক্তি সম্পন্ন হয়। এছাড়া এ পরাগায়ন সম্পূর্ণ বাহকের উপর নির্ভরশীল এবং পরাগায়ন অনেকটা অনিশ্চিত। তাছাড়া পরাগরেণু ও অনেক নষ্ট হয়। তথাপি পর-পরাগায়নে সৃষ্ট উদ্ভিদের অভিযােজন ক্ষমতা বেশি হয়। এ পরাগায়ন উদ্ভিদের মাতৃগুণে বৈচিত্র্য আসতে পারে।

উপকারিতা :

  • নতুন বৈশিষ্ট্যের সংমিশ্রণ ঘটে। এর ফলে ফুলগুলো রঙিন হয়।
  • ভিন্ন প্রকরণ বা ভিন্ন প্রজাতির সৃষ্টি হতে পারে।
  • ফল-এ সৃষ্ট বীজ অধিক সহনশীল হয়।

অপকারিতা :

  • ইতর পরাগ যোগ বাহকের উপর নির্ভরশীল।
  • বাহক-নির্ভর পরাগায়ন বলে এ পরাগায়ন প্রায় অনিশ্চিত।
  • অধিকাংশ পরাগরেণু নষ্ট হয়।
  • প্রজাতির বিশুদ্ধতা রক্ষিত হয় না।
  • বাহকের আকর্ষণের জন্য উদ্ভিদ বিভিন্ন প্রকার কৌশল অবলম্বন করে (যেমন উজ্জ্বল বর্ণ ও গন্ধ যুক্ত ফল সৃষ্টি মকরন্দ উৎপাদন প্রভৃতি) তাই উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদান এর চাহিদা বেশি থাকে ও উদ্ভিদের শক্তি ক্ষয় হয়।

 

এ সম্পর্কিত আরও কিছু প্রশ্ন ও উত্তরঃ–

১। পরাগরেণু কোথায় উৎপন্ন হয়?

উত্তর : পরাগধানীর মধ্যে পরাগরেণু উৎপন্ন হয়।

২। পরাগায়নের অপর নাম কী?

উত্তর : পরাগ সংযোগ।

৩। একই গাছের ভিন্ন দুটি ফুল পরাগায়নকে কী বলে?

উত্তর : স্ব-পরাগায়ন।

৪। স্ব-পরাগী উদ্ভিদ কোনটি?

উত্তর : সরিষা।

৫। স্ব-পরাগায়নের গুরুত্ব কোনটি?

উত্তর : চরিত্রগত বিশুদ্ধতা।

 

Tags:

  • পরাগায়ন কাকে বলে ক্লাস ৫; পরাগায়ন কাকে বলে class 8; স্ব পরাগায়ন ও পর পরাগায়নের পার্থক্য কি?; স্ব পরাগায়ন কাকে বলে?; পরাগ কাকে বলে?; স্ব পরাগায়ন ঘটে কোন ফুলে?; পরাগায়ন বলতে কী বোঝায়?; ফুল কি থেকে সৃষ্টি হয়?; অটোগ্যামি কি?; পরাগায়ন কিভাবে হয়?; স্বপরাগযোগ এর উদাহরণ; গর্ভমুন্ড কাকে বলে?; পর পরাগায়নের সুবিধা ও অসুবিধা কি?;

Leave a Comment