রক্তকণিকা কাকে বলে? রক্তকণিকা কত প্রকার ও কি কি?

রক্তরসে ভাসমান বিভিন্ন ধরনের কোষকে রক্তকণিকা (Blood Corpuscles) বলে। রক্তকণিকা প্রধানত তিন প্রকার। যথা–

১) লোহিত রক্তকণিকা বা এরিথ্রোসাইট

২) শ্বেত রক্তকণিকা বা লিউকোসাইট এবং

৩) অণুচক্রিকা বা থ্রম্বোসাইট।

১. লোহিত রক্তকণিকা বা এরিথ্রোসাইট (Erythrocyte)

মানুষের পরিণত লোহিত রক্তকণিকা গোল, দ্বিঅবতল, নিউক্লিয়াসবিহীন চাকতির মতো ও লাল বর্ণের। এর কিনারা মসৃণ এবং মধ্যাংশের চেয়ে পুরু।

লোহিত রক্তকণিকার হিমোগ্লোবিন ফুসফুস থেকে দেহকোষে অধিকাংশ O2 এবং সামান্য পরিমাণ CO2 পরিবহন করে। রক্তের ঘনত্ব ও সান্দ্রতা রক্ষা করাও এর কাজ। এগুলোর হিমোগ্লোবিন ও অন্যান্য অন্তঃকোষীয় বস্তু বাফাররূপে রক্তে অম্ল-ক্ষারের সাম্য রক্ষা করে। প্লাজমা ঝিল্লিতে অ্যান্টিজেন প্রোটিন সংযুক্ত থাকে যা মানুষের রক্ত গ্রুপিংয়ের জন্য দায়ী। এবং এসব কণিকা রক্তে বিলিরুবিন ও বিলিভার্ডিন উৎপন্ন করে।

 

হিমোগ্লোবিন (Hemoglobin)

হিমোগ্লোবিন (Hemoglobin) হলো লোহিত রক্তকণিকায় অবস্থিত এক ধরনের রঞ্জক প্রোটিন জাতীয় পদার্থ, যার ফলে রক্ত লাল বর্ণ ধারণ করে। এটি ইংরেজি Haeme ও Globulin শব্দ হতে উৎপন্ন হয়েছে। হিমোগ্লোবিন অক্সিজেনের সাথে যুক্ত হয়ে অক্সিহিমোগ্লোবিন যৌগ গঠন করে অক্সিজেন পরিবহন করে। আবার এটি কার্বনেট আয়ন হিসাবে কিছু পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইডও পরিবহন করে। লাল রক্ত কণিকার কঠিনতর অংশের ৯৫% জুড়ে রয়েছে এই হিমোগ্লোবিন নামক প্রোটিন। একজন সুস্থ মানুষের দেহের প্রতি ১০০ মিলি রক্তে গড়ে ১৫-১৬ গ্রাম হিমোগ্লোবিন থাকে।

হিমোগ্লোবিনের কাজ : হিমোগ্লোবিন শরীরের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন সরবরাহ করে যার ফলে কোষের বিপাক ক্রিয়া অক্সিজেনের উপস্থিতিতে সংগঠিত হয়। এছাড়াও হিমোগ্লোবিন কার্বন ডাই-অক্সাইড মুক্ত করে।

 

৩) অণুচক্রিকা বা থ্রম্বোসাইট

অণুচক্রিকা রক্তকণিকার অন্যতম প্রধান উপাদান। ইংরেজিতে এদেরকে প্লেইটলেট (Platelet) বলে। এটি আকারে ছোট, বর্তুলাকার ও বর্ণহীন। এরা গুচ্ছকারে থাকে। প্রতি কিউবিক মিলিমিটারে প্রায় ২ লক্ষ ৫০ হাজার অণুচক্রিকা থাকে। অস্থিমজ্জার মধ্যে অণুচক্রিকা উৎপন্ন হয়। এদের গড় আয়ু ৫ – ১০ দিন।

অণুচক্রিকার কাজ : অণুচক্রিকার প্রধান কাজ হলো রক্ত জমাট বাঁধা। কোনো রক্তবাহী নালির ক্ষতি হলে এরা অনতিবিলম্বে থ্রোম্বোপ্লাস্টিন নামক এক প্রকার রাসায়নিক দ্রব্য নিঃসরণ করে। যা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। রক্তে উপযুক্ত পরিমাণ অণুচক্রিকা না থাকলে রক্তপাত সহজে বন্ধ হয় না। ফলে অনেক সময় রোগীর প্রাণনাশের সম্ভাবনা থাকে।

 

এ সম্পর্কিত আরও কিছু প্রশ্ন ও উত্তরঃ–

১। রক্তের কোন কণিকা অক্সিজেন বহন করে?

উত্তরঃ রক্তের লোহিত রক্তকণিকা অক্সিজেন বহন করে।

২। অণুচক্রিকাকে প্লেটলেট বলা হয় কেন?

উত্তর : অণুচক্রিকা দেখতে গোলাকার বা বৃত্তের মতো। এরা লোহিত রক্তকণিকার চেয়ে আকারে ছোট হয় ও নিউক্লিয়াস থাকে না। এরা গুচ্ছাকারে থাকে। দেহের কোনো অংশ কেটে রক্তপাত ঘটলে অণুচক্রিকা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। তাই অণুচিক্রকাকে প্লেটলেট বলা হয়।

 

Tags :

  • অণুচক্রিকা কাকে বলে?; রক্তে অনুচক্রিকা না থাকলে কি হবে?; প্লাটিলেট এর কাজ কি?; রক্তে প্লাটিলেট বেড়ে গেলে কি হয়?; প্লাটিলেট কিভাবে বাড়ে?; প্লাটিলেট দেওয়ার নিয়ম কি?; প্লেটলেট কি?; অনুচক্রিকা কোথায় তৈরি হয়?; অনুচক্রিকার বৈশিষ্ট্য কী কী?; অনুচক্রিকার গঠন; অনুচক্রিকার গড় আয়ু কত দিন?; প্লেটলেট কমে যাওয়ার কারণ কি?; অনুচক্রিকা কিভাবে রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে?;

Leave a Comment