ইস্পাত কি? ইস্পাত কি দিয়ে তৈরি?

ইস্পাত হচ্ছে লোহা ও কার্বনের একটি সংকর ধাতু যাতে মান ভেদে মোট ওজনের 0.2% থেকে 2.1% কার্বন থাকে।

ম্যাংগানিজ, ক্রোমিয়াম, ভ্যানাডিয়াম এবং ট্যাংস্টেন লোহার সাথে মিশিয়ে ইস্পাত তৈরি করা যায়। তবে কার্বনই সবচেয়ে সাশ্রয়ী উপাদান।

ইস্পাত লোহার তুলনায় দৃঢ়তর। লোহার সঙ্গে বিভিন্ন ধাতু মিশ্রণ করা হলে লোহার দৃঢ়তা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। নিম্ন গলনাংক ও ঢালাই যোগ্যতার জন্য উচ্চ কার্বনযুক্ত সংকর ঢালাই লোহা (ইং: কাস্ট আয়রন) নামে পরিচিত।

 

ইস্পাতের ইতিহাস (History of Steel)

বিভিন্ন অদক্ষ উপায়ে রেনেসাঁ যুগের অনেক আগে থেকেই ইস্পাত তৈরি শুরু হয়। কিন্তু ১৭শ শতাব্দীতে বিভিন্ন উন্নত উপায়ে ইস্পাত তৈরি শুরু হলে এর ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। ১৯ শতকের মাঝামাঝি সময়ে বেসমার পদ্ধতিতে ইস্পাত উৎপাদন শুরু হলে এটি সস্তা ও বহুল ব্যবহৃত ধাতুতে পরিণত হয়। আরও পরে বেসিক অক্সিজেন প্রক্রিয়ায় উৎপাদনের ফলে এর মান অনেক বৃদ্ধি পায় ও দাম অনেক কমে যায়। বর্তমানে ইস্পাত পৃথিবীর অন্যতম বহুল ব্যবহৃত পদার্থ। দালান-কোঠা, মেশিন, জাহাজ, গাড়ী, তৈজসপত্র ইত্যাদির প্রধান উপাদান ইস্পাত। বর্তমানে ইস্পাতের মান বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানদানকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পরিমাপ করা হয়।

 

ইস্পাতের শ্রেণিবিভাগ (Classification of Steel)

ইস্পাতকে সাধারণ দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা–

  • প্লেইন কার্বন স্টীল (Plain carbon steel)
  • অ্যালয় স্টীল (Alloy steel)

প্লেইন কার্বন স্টীলকে আবার নিম্নলিখিতভাবে ভাগ করা যায়–

  • মাইল্ড স্টীল (Mild steel)
  • মিডিয়াম কার্বন স্টীল (Medium carbon steel)
  • হাই কার্বন স্টীল (High carbon steel)
  • টুল স্টীল (Tool steel)

সংকর (Alloy) ইস্পাতকে নিম্নলিখিতভাবে ভাগ করা যায়–

  • কন্ট্রাকশনাল অ্যালয় স্টীল
  • করােশন ও হিট রেজিস্ট্যান্স অ্যালয় স্টীল
  • অ্যালয় টুল ও ডাই স্টীল
  • স্পেশাল স্টীল।

 

ইস্পাতের বৈশিষ্ট্য (Properties of Steel)

অন্যান্য ধাতুর মত লোহাও ভূগর্ভে অক্সিজেন ও সালফারের সাথে যুক্ত অবস্থায় থাকে। ঢালাই লোহার গলনাংক ১৩৭০ ডিগ্রী সেলসিয়াস। ইস্পাতের ঘনত্ব মানের ওপর ভিত্তি করে প্রতি ঘনসেন্টিমিটার ৭.৭৫ থেকে ৮.০৫ গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে।

 

এ সম্পর্কিত আরও কিছু প্রশ্ন ও উত্তরঃ–

১। নিকেল ইস্পাত কাকে বলে?

উত্তরঃ আয়রনের সঙ্গে নিকেল ও কার্বন মিশ্রিত করলে যে সংকর ধাতু তৈরি হয় তাকে নিকেল ইস্পাত বলে। নিকেল ইস্পাত ক্যাবল, বিমান, অটোমোবাইলের যন্ত্রাংশ, ভারী বন্দুক তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।

 

২। ম্যাঙ্গানিজ ইস্পাত কাকে বলে?

উত্তরঃ আয়রনের (Fe) সঙ্গে ম্যাঙ্গানিজ (Mn) ও কার্বন (C) মিশ্রিত করে যে সংকর ধাতু তৈরি করা হয় তাকে ম্যাঙ্গানিজ ইস্পাত বলে।

 

৩। ক্রোমিয়াম ইস্পাত কাকে বলে?

উত্তরঃ আয়রনের (Fe) সাথে ক্রোমিয়াম (Cr) ও কার্বন (C) মিশ্রিত হয়ে যে সংকর ধাতু তৈরি করে তাকে ক্রোমিয়াম ইস্পাত বলে। ক্রোমিয়াম ইস্পাত দ্বারা বল বিয়ারিং প্রস্তুত করা হয়।

 

৪। কোবাল্ট ইস্পাত কাকে বলে?

উত্তরঃ আয়রনের (Fe) সাথে কোবাল্ট (Co) ও কার্বন (C) মিশ্রিত হয়ে যে সংকর ধাতু তৈরি করে তাকে কোবাল্ট ইস্পাত বলে। কোবাল্ট ইস্পাত দ্বারা বল বিয়ারিং ও স্থায়ী চুম্বক তৈরি করা হয়।

 

৫। টাংস্টেন ইস্পাত কাকে বলে?

উত্তরঃ আয়রনের (Fe) সাথে টাংস্টেন (W) ও কার্বন (C) মিশ্রিত হয়ে যে সংকর ধাতু তৈরি করে তাকে টাংস্টেন ইস্পাত বলে। টাংস্টেন ইস্পাত দ্বারা উচ্চ ঘূর্ণন যন্ত্রপাতি তৈরি করা হয়।

 

৬ । ক্রোম ভ্যানাডিয়াম ইস্পাত কি?

উত্তরঃ ক্রোম ভ্যানাডিয়াম ইস্পাত হচ্ছে আয়রনের (Fe) সঙ্গে ক্রোমিয়াম (Cr) ও ভ্যানাডিয়ামের (V) সংকর ধাতু। এটি গাড়ির স্প্রিং, এক্সেল, মোটরগাড়ির ফ্রেম তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।

Leave a Comment