কিউআর কোড কি? কিউআর কোড কিভাবে কাজ করে?

কিউআর কোড কি? (What is QR Code in Bengali/Bangla?)

কোনো পন্যে কিংবা চাকরির বিজ্ঞাপনে লেখা দেখলেন, ‘এ বক্সটি আপনার স্মার্টফোনের মাধ্যমে Scan করুন’। আপনি তো অবাক। সাদাকালো হিজিবিজির এ বক্সের ছবিটি কিসের? স্ক্যানই বা করব কীভাবে? জেনে রাখুন, এ বক্সের নামই কিউআর (QR) (ক্যুইক রেসপন্স) কোড। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গার মতো বাংলাদেশেও কিউআর (QR) এর ব্যবহার হচ্ছে। এই কোডটি স্ক্যান করলে পেয়ে যাবেন সংশ্লিষ্ট কোম্পানি সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় Information। এই টিটোরিয়ালের মাধ্যমে জানতে পারবেন QR Code কী কেনো এবং এর ব্যবহার ও তৈরির বিষয় সম্পর্কে।

 

কিআর কোড কি? (What is QR Code?)

কিউআর কোড হলো এক ধরনের মেট্রিক্স/২ফ বারকোড। তবে সাধারণ বাইনারি কোডের চেয়ে এর তথ্য ধারণক্ষমতা বেশি। একটি কিউআর কোড ৭০৮৯টি সংখ্যা বা ৪২৯৬টি অক্ষর ধারণ করতে পারে। বুঝতেই পারছেন ছোটখাটো একটি প্যারাগ্রাফ লেখা যাবে। সাধারণত বারকোড পড়ার জন্য লেজার জাতীয় স্ক্যানার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আর কিউআর কোড পড়ার জন্য একটা স্মার্টফোন যথেষ্ট। নিমিষেই ফটো তুলে কিউআর কোড পড়া যায়। একটু খেয়াল করলেও আজকাল বিভিন্ন কার্ড, পোস্টার কিংবা অনলাইনেও এর ছড়াছড়ি দেখতে পাবেন। এটি প্রথমে ডিজাইন করে জাপানের জনপ্রিয় অটোমোবাইল কোম্পানি টয়োটার অধীনস্থ ডেনসো এবং তা পরে সারা জাপানে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। আর বারকোড হচ্ছে এক ধরনের অপটিক্যাল মেশিন দিয়ে পাঠযোগ্য লেবেল, যাতে ওই পণ্য সম্পর্কিত তথ্য সংযুক্ত থাকে। তখন ক্যুইক রেসপন্স কোড এ সঙ্কেতাক্ষরে লেখা কোনো তথ্য নিদিষ্ট করে চারটি নমুনার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল, সংখ্যাসূচক, বর্ণসূচক, বাইনারি (কমপিউটারের দ্বিপদ সঙ্কেত বা মেশিন ল্যাঙ্গুয়েজ), কান্দজি (এক ধরনের জাপানি লিপিবিদ্যা, যা চীন থেকে গ্রহণ করা)। ক্যুইক রেসপন্স কোড অটোমোবাইল কোম্পানিগুলো ছাড়িয়ে সাধারণ বারকোড ইউপিসি বারকোডের তুলনায় ব্যাপক জনপ্রিয় হওয়ার কারণ হচ্ছে এটার দ্রুত তথ্য পুনরুদ্ধার করার ক্ষমতা আর অনেক বেশি আকারে তথ্য ধারণক্ষমতার জন্য।

 

কিউআর কোড ব্যবহারের কারণ

কিউআর কোড ব্যবহার করে নিমিষেই স্মার্টফোনে ওয়েব ঠিকানা বা বিভিন্ন তথ্য দেখানো যায়। স্মার্টফোনে কিউআর কোড ব্যবহার খুবই সহজ। এ জন্য এমন একটি অ্যাপ নামাতে হবে, যা এ কোড সাপোর্ট করে। প্রতিটি স্মার্টফোন প্লাটফর্মেই বিনামূল্যে অনেক কিউআর কোড স্ক্যানার পাওয়া যাবে। স্ক্যান করার জন্য অ্যাপ্লিকেশনটি চালু করে ফোনের ক্যামেরা কোড বরাবর ধরুন। সেকেন্ডের মধ্যে স্ক্যান করে আপনাকে কোডের ভেতরের তথ্যটি জানিয়ে দেয়া হবে। কিংবা সেটি কোনো লিয়মল হলে আপনাকে ওই ওয়েবসাইটে নিয়ে যাবে।

 

সিভিতে বাড়ছে কিউআর কোডের ব্যবহার

বিশ্বব্যাপী চাকরিদাতারা ইতোমধ্যেই ব্যাপক হারে শুরু করেছেন কিউআর কোডের ব্যবহার। এ ছাড়া সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে আপনিও আপনার সিভিতে ব্যবহার করতে পারেন এ কোড। এর ফলে চাকরিদাতারা খুব সংক্ষিপ্ত ও সহজ উপায়ে আপনার সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়ে যেতে পারেন। অবশ্য যার হাতে সিভিটি পড়বে, তিনি এ বিষয়ে অভিজ্ঞ না-ও হতে পারেন। তাই কিউআর কোডের নিচে দিয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা লিখে দিতে পারেন।

 

ভিজিটিং কার্ডে কিউআর কোড

আপনার ভিজিটিং কার্ডেও একইভাবে কিউআর কোডের মাধ্যমে যুক্ত করতে পারেন ওয়েবসাইট অ্যাড্রেস, ফেসবুক বা অন্য কোনো সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের ঠিকানা। আরও দিতে পারেন যোগাযোগের ঠিকানা। ফলে আপনার কার্ডটি যাকে দিচ্ছেন, তিনি অনেক ঝামেলা থেকে রেহাই পাবেন। স্ক্যান করেই তিনি আপনার বিস্তারিত তথ্য সংরক্ষণ করে নিতে পারবেন কিংবা আপনার ওয়েবসাইটে যেতে পারবেন। কার্ডে নতুনত্ব আনার পাশাপাশি এটি সময়ও বাঁচিয়ে দেবে।

 

গাড়ির পার্টস চিনতে কিউআর কোড

জাপানের গাড়ি নির্মাতা কোম্পানিগুলো সম্প্রতি কিউআর কোডকেই গাড়ির বিভিন্ন পার্টস শনাক্ত করার জন্য বেছে নিয়েছে। এর জন্য তাদের আর আগের মতো সিরিয়াল নম্বর মেলাতে হবে না, প্রতিটি পার্টসের বিস্তারিত জানা যাবে শুধু স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমে। শুধু তাই নয়, অনেক ফেসবুক পেজ কিংবা ওয়েবসাইটেও দেখবেন এ কোডের মাধ্যমে কোনো লিঙ্ক বা তথ্য পরিবেশন করতে।

 

আরও প্রয়োজনে কিউআর কোড

ম্যাগাজিন, বই এ বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা যেতে পারে বা বিশেষ কোনো প্রমোশনাল অফার, বিলবোর্ডে এর ব্যবহার হতে পারে, যা দিতে পারে আপনাকে তার ব্যবসায়ের বিবরণ বা ধরন অথবা ঠিকানা, এমনকি ভৌগোলিক স্থানাঙ্ক পাওয়া যেতে পারে। এমনকি ফোন নাম্বার কিংবা ই-মেইল ঠিকানা সংরক্ষণের জন্যে বিজনেস কার্ডে ব্যবহার হতে পারে। প্রযুক্তির এই যুগে আপনি হয়তো চাইবেন না, আপনার বিজনেস কার্ডে বিশদ বর্ণনা লিখে অহেতুক হাসির পাত্র হতে। আপনার ফোন নাম্বার, ঠিকানা, ফেসবুক আইডি সব যদি ৪০৭২ সংখ্যার একটি কোডে লেখা যায়, তাহলে কেমন হবে। আর সেটিই করা যাবে এই কিউআর কোডে। বর্তমানে অনেক নামিদামি কোম্পানি তাদের অ্যাডে কিউআর কোড ব্যবহার করছে। শুনলে অবাক হবেন, আধুনিক দেশগুলোও কয়েনের মধ্যে কিউআর কোড ব্যবহার করছে। হল্যান্ড কিউআর কোডযুক্ত কয়েনও বের করেছে। কিউআর কোড খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অনেকেই শরীরে কিউআর ট্যাটু আঁকছে। তবে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। দেশের বিভিন্ন পত্রিকা, তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এমনকি ব্যক্তিগতভাবেও কিউআর কোড ব্যবহার করা হচ্ছে।

 

কিউআর কোড স্ক্যানার

কিউআর কোড পড়ার জন্য প্রয়োজন একটি কিউআর কোড স্ক্যানার। প্রায় প্রতিটি স্মার্টফোন প্লাটফর্মে ডিফল্টভাবে কিউআর কোড স্ক্যানার দেয়া থাকে। তবে না থাকলেও অ্যাপ স্টোরে বিনামূল্যের অনেক কিউআর কোড স্ক্যানার রয়েছে। এগুলো ইনস্টল করে কিউআর কোড পড়া যায়। এ ক্ষেত্রে জনপ্রিয় কয়েকটি কিউআর কোড স্ক্যানার হলো- নিউরিডার, ট্যাপমিডিয়া কিউআর রিডার, আই-নিগমা, বারকোড জেনারেটর, স্ক্যানলাইফ বারকোড রিডার, ক্যুইকমার্ক কিউআর কোড রিডার, কিউআর ড্রয়েড ইত্যাদি। এগুলো গুগল প্লে স্টোর, অ্যাপল আইটিউন ইত্যাদি অ্যাপ স্টোর থেকে সংশ্লিষ্ট ডিভাইসের জন্য ডাউনলোড ও ইনস্টল করে ব্যবহার করা যাবে।

 

কিউআর কোড তৈরি করা

কিউআর কোড স্ক্যান করার মতোই এটি তৈরি করারও বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন বা কিউআর কোড জেনারেটর রয়েছে। এ ক্ষেত্রে জনপ্রিয় হলো- কিউআর ড্রয়েড, আই-নিগমা, ক্যুইকিউআর ক্যুইকমার্ক, কিউআর স্টাফ, জেব্রাক্রসিং ইত্যাদি। এসব অ্যাপে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সহজেই কিউআর কোড তৈরি করা যায়। বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও কিআর কোড জেনারেট বা তৈরি করা যায়। যেমন-

  • 2tag.nl/index.php,
  • andrewchamp.com,
  • qrjumps.com/content/home,
  • goqr.me,
  • qrmobilize.com,
  • kere-merkan.net/qr code-and-2d-code-generator,
  • qrstuff.com

অ্যাপের মতোই এসব ওয়েবসাইট থেকে কিউআর কোড তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য দিলেই হয়। তৈরি হয়ে যাবে আপনার কাঙিক্ষত কিউআর কোড।

Leave a Comment