ন্যানো প্রযুক্তি কি? ন্যানো প্রযুক্তির ব্যবহার

ন্যানো প্রযুক্তি কি? (What is Nanotechnology in Bengali/Bangla?)

ন্যানো প্রযুক্তি হলো পারমাণবিক বা আণবিক স্কেলে অতিক্ষুদ্র ডিভাইস তৈরি করার জন্য ধাতব ও বস্তুকে সুনিপুণভাবে কাজে লাগানোর বিজ্ঞান। ন্যানো প্রযুক্তি দুইটি পদ্ধতিতে ব্যবহৃত হয় একটি হচ্ছে “বটম-আপ” এবং অন্যটি হচ্ছে “টপ-ডাউন”। বটম-আপ পদ্ধতিতে ন্যানো ডিভাইস এবং উপকরণগুলি আণবিক স্বীকৃতির নীতির উপর ভিত্তি করে আণবিক উপাদান দ্বারা তৈরি হয় এবং ইহারা রাসায়নিকভাবে একীভূত হয়। এই পদ্ধতিতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আকারের ছোট জিনিস দিয়ে বড় কোনো জিনিস তৈরি করা হয়। টপ-ডাউন পদ্ধতিতে একটি উপকরণ পরমাণু স্তরের নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই বৃহৎ সত্ত্বা হতে গঠিত হয়। অর্থাৎ এই পদ্ধতিতে কোনো জিনিসকে কেঁটে ছোট করে তাকে নির্দিষ্ট আকার দেওয়া হয়।

ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহারে চিকিৎসাবিজ্ঞান, ইলেকট্রনিক্স, শক্তি উৎপাদনসহ বহু ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। কম্পিউটারের মেমোরি যেমন হার্ডডিস্ক এর মেমোরি পরিসর বাড়ানো এবং হার্ডডিস্ক এর আকার ছোট করার কাজে ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।

 

ন্যানো প্রযুক্তির প্রয়োগ (Application of nanotechnology)

বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। নিম্নে কতিপয় প্রয়োগ ক্ষেত্র উল্লেখ করা হলো :

১. ন্যানো রোবট তৈরিতে : ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহার করে অতি ক্ষুদ্র রোবট তৈরির গবেষণা চলছে।

২. ঔষধ তৈরিতে : ঔষধ তৈরির আণবিক গঠন, যাতে রোগাক্রান্ত সেলে সরাসরি ঔষধ প্রয়োগ করা যায়।

৩. কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরিতে : ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনুভূতিসম্পন্ন কৃত্রিম অঙ্গ প্রত্যক্ষ তৈরি করা সম্ভব।

৪. বাতাস পরিশোধনে : শিল্প কারখানা হতে নির্গত ক্ষতিকারক ধোঁয়াকে রাসায়নিক বিক্রিয়া মাধ্যমে অক্ষতিকর গ্যাসে রূপান্তরের মাধ্যমে বাতাস পরিশোধন করতে পারে।

৫. ক্যান্সার রোগ নির্ণয় ও নিরাময় : ন্যানোসেন্সর ব্যবহার করে মানবদেহের রক্তের ভেতরে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান বায়োমার্কার সম্পূর্ণভাবে নির্ণয় করা সম্ভব হয়েছে। ন্যানো সূঁচ ব্যবহার করে সূক্ষ্মভাবে শুধুমাত্র ক্যান্সার আক্রান্ত কোষে ঔষধ প্রয়োগ করে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করা যায়।

৬. কম্পিউটার হার্ডওয়্যার তৈরিতে : কম্পিউটারের মেমোরি, গতি, দক্ষতা ইত্যাদি বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন হার্ডওয়্যার এবং ভিডিও গেমস কনসোল তৈরিতে ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়।

৭. ইলেকট্রনিক্স শিল্পে : বিদ্যুৎ খরচ, ওজন এবং আকৃতি কমিয়ে কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি তৈরিতে ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়।

৮. রাসায়নিক শিল্পে : সানস্ক্রিন এ ব্যবহৃত টিটানিয়াম ডাই-অক্সাইড তৈরির কাজে ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়।

৯. মহাকাশ অভিযানে : মহাকাশ অভিযানে ব্যবহৃত বিভিন্ন নভোযানকে হালকা করে তৈরি করে জ্বালানির পরিমাণ কমাতে ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়।

 

ন্যানো প্রযুক্তির অসুবিধা/ক্ষতিকারক দিক (Disadvantages of Nanotechnology)

  • ন্যানোটেকনোলজি গবেষণা এবং প্রয়োগ অনেক ব্যয়সাপেক্ষ।
  • প্রচলিত শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং ফার্মে এ প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে অনেকে কর্মহীন হয়ে যাবে।
  • অনেক ন্যানো প্রডাক্টস মানুষের মস্তিষ্ক এবং ফুসফুসের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
  • ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহার করে মারাত্মক যুদ্ধাস্ত্র তৈরি করা সম্ভব বিধায় যুদ্ধক্ষেত্রে আরো ভয়াবহতার আশংকা করা হচ্ছে।
  • ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে পানি এবং বায়ু দূষণ হতে পারে যা মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণিদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
  • ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাইক্রোস্কোপিক রেকর্ডিং ডিভাইস তৈরি করা যাবে যা সাধারণ চোখে দেখা যাবে না। এতে করে মানুষের প্রাইভেসি এবং সিকিউরিটি বিঘ্নিত হবে।
  • এ প্রযুক্তির ভুল ব্যবহার বিরাট ক্ষতি করতে পারে।

 

জৈব প্রযুক্তি এবং ন্যানো প্রযুক্তির মধ্যে পার্থক্য কি?

যে প্রযুক্তির সাহায্যে কোনো জীবকোষ, অণুজীব বা তার অংশবিশেষ ব্যবহার করে নতুন কোনো বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জীব এর উদ্ভাবন বা উক্ত জীব থেকে প্রক্রিয়াজাত বা উপজাত দ্রব্য প্রস্তুত করা যায়, সে প্রযুক্তিকে জৈব প্রযুক্তি বলে। এটি DNA transplant মেথডে করা হয়। অন্যদিকে ন্যানো প্রযুক্তি হলো পারমাণবিক বা আণবিক স্কেলে অতিক্ষুদ্র ডিভাইস তৈরি করার জন্য ধাতব ও বস্তুকে সুনিপুণভাবে কাজে লাগানোর বিজ্ঞান। এ প্রযুক্তিতে পরমাণুকে ন্যানো পার্টিকেল হিসাবে রূপায়িত করা হয়।

জৈব প্রযুক্তি প্রয়োগ করা হয় জীবের মধ্যে বৈশিষ্ট্যগত পরিবর্তন সাধনের জন্য। অন্যদিকে ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন বস্তুর (যেমন : যন্ত্রপাতি) উন্নতি সাধনের জন্য।

জৈব প্রযুক্তির অনেকগুলো পদ্ধতি রয়েছে। এর মধ্যে টিস্যু কালচার ও জিন প্রকৌশল অন্যতম। অন্যদিকে, ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয় দুটি পদ্ধতিতে। একটি ‘বটম আপ’ এবং অন্যটি ‘টপ ডাউন’।

 

Tags :

  • ন্যানো প্রযুক্তির জনক কে?
  • ন্যানো প্রযুক্তি কাকে বলে

Leave a Comment