HomeComputerকম্পিউটার পেরিফেরালস কি?

কম্পিউটার পেরিফেরালস কি?

কম্পিউটার পেরিফেরালস কি? (What is Computer Peripherals in Bengali/Bangla?)

পেরিফেরালস হলো কম্পিউটারে সংযুক্ত অতিরিক্ত হার্ডওয়্যার যা নির্দিষ্ট কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। পেরিফেরালস এর সাহায্যে কম্পিউটারে উপাত্ত ও নির্দেশ প্রদান, কম্পিউটার হতে ফলাফল গ্রহণ এবং ফলাফল সংরক্ষণ করা হয়। যেমন: প্রিন্টার, প্লটার, ডিস্ক, ডিস্ক ড্রাইভ, সিডি-রম ইত্যাদি।

সংজ্ঞা : যে সকল হার্ডওয়্যার কম্পিউটারের সাথে যুক্ত থেকে কম্পিউটারে উপাত্ত ও নির্দেশ প্রদান, কম্পিউটার হতে ফলাফল গ্রহণ এবং ফলাফল সংরক্ষণ করা হয়, তাদের কম্পিউটার পেরিফেরালস (Computer Peripherals) বলে।

কম্পিউটার পেরিফেরালস-এর প্রধান অংশ দুটি। ক. ইনপুট ডিভাইস (Input Device) খ. আউটপুট ডিভাইস (Output Device)।

 

ইনপুট ডিভাইস (Input Device)

যে সকল যন্ত্রের মাধ্যমে কম্পিউটারে তথ্য বা সংকেত প্রবেশ করানো হয় তাকে ইনপুট ডিভাইস বলে। যেমন : কীবোর্ড, মাউস, স্ক্যানার, OCR, OMR, MICR, Joystick, Light Pen, Punch Card Reader, Digitizer, Barcode Reader, Webcam, Digital Camera, Magnetic Tapedrive, Microphone, Trackball, Electronic White Board।

১। কী-বোর্ড (Keyboard)

কীবোর্ড হচ্ছে কম্পিউটারের প্রধান ইনপুট ডিভাইসগুলোর মধ্যে একটি। এটি কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণক হিসেবে কাজ করে। বর্তমানে প্রচলিত কী-বোর্ডগুলোতে সর্বোচ্চ ১০৫টি Key থাকে। সাধারণ কীবোর্ড বিন্যাস কে বলা হয়- QWERTY।

কী-বোর্ড কতকগুলো গুরুত্বপূর্ণ শর্টকাট কমান্ড–

  • Ctrl + S (ফাইল সেভ করার ক্ষেত্রে)।
  • Ctrl + C (টেক্সট কপি করার ক্ষেত্রে)।
  • Ctrl + V (টেক্সট পেস্ট করার ক্ষেত্রে)।
  • Ctrl + X (টেক্সট কর্তন করার ক্ষেত্রে)।
  • Ctrl + Z (টেক্সট Undo করার ক্ষেত্রে)।
  • Ctrl + Y (টেক্সট Redo করার ক্ষেত্রে)।
  • Ctrl + A (টেক্সট Select করার ক্ষেত্রে)।
  • Ctrl + Esc (Start Menu ওপেন করার ক্ষেত্রে)।
  • Ctrl + Shift + Esc (উইন্ডোর Task Manager ওপেন করার ক্ষেত্রে)।
  • Ctrl + Home (ডকুমেন্টের শুরুতে যাওয়ার জন্য)।
  • Ctrl + P (ফাইল প্রিন্ট করার ক্ষেত্রে)।
  • Ctrl + K (Hyperlink ইনসার্ট করার ক্ষেত্রে)।

 

বিভিন্ন ধরনের Key এবং এর কাজ

Function Key ‍: F1-F12 বোতামগুলোকে Function Key বলে। তথ্য সংযোজন, বিয়োজন বা নির্দেশ প্রদানের জন্য Function Key ব্যবহার করা হয়। Function Key এর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ–

  • F1 : সাহায্য কী (Help Key) হিসেবে ব্যবহৃত হয়, প্রোগ্রামের কোনো হেল্প মেনু দেখতে এটি ব্যবহৃত হয়।
  • F2 : সাধারণত ফাইল বা ফোল্ডারের নাম পরিবর্তন করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • F3 : মাইক্রোসফট উইন্ডোজসহ অনেক প্রোগ্রামের সার্চ সুবিধা পাওয়া যায়।
  • F4 : Alt + F4 চেপে সক্রিয় সব প্রোগ্রাম বন্ধ করা যায়।
  • F5 : এটির মাধ্যমে find, replace, go to window খোলা যায়। এছাড়া যে কোন page refresh, স্লাইড শো শুরু এবং বন্ধ করার জন্য এ বাটনটি ব্যবহার করা হয়।
  • F6 : Mouse-এর কার্সরকে ইন্টারনেট ব্রাউজারের এড্রেসবারে নিয়ে যেতে চাইলে এটি ব্যবহার করা হয়।
  • F7 : মাইক্রোসফট ওয়ার্ডে বানান (Spelling) ও ব্যাকরণ ঠিক করা হয়। Shift + F7 চেপে মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের নির্বাচিত শব্দের প্রতিশব্দ, বিপরীত শব্দ জানা যায়।
  • F8 : অপারেটিং সিস্টেম সেইফ মুড-এ চালু করার জন্য এটি ব্যবহৃত হয়।
  • F9 : System Option হিসেবে কাজ করে।
  • F10 : ইন্টারনেট ব্রাউজার বা কোন খোলা উইন্ডোর মেনুবার নির্বাচন করতে এটি ব্যবহৃত হয়।
  • F11 : সক্রিয় উইন্ডো ফুল স্ক্রিনে দেখতে এটি ব্যবহৃত হয়।
  • F12 : মাইক্রোসফট ওয়ার্ডে Save as উইন্ডো চালু করতে ব্যবহৃত হয়।

মডিফায়ার বাটন : শিফট (Shift), কন্ট্রোল (Control), অল্টার (Alt) প্রভৃতি বাটনকে মডিফায়ার বাটন বলে।

আলফানিউমেরিক Key : ইংরেজি বর্ণমালা ও গাণিতিক সংখ্যাবিশিষ্ট Key গুলোকে একত্রে আলফানিউমেরিক Key বলে। সাধারণত কীবোর্ড-এর বাম পাশে অ্যালফাবেট কী (A-Z) এবং নিউমেরিক কী (0-9) কে একত্রে আলফানিউমেরিক কী বলা হয়।

নিউমেরিক Keypad : কী-বোর্ডের ডান অংশে 0-9 এবং যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ ইত্যাদি Key গুলোকে নিউমেরিক Keypad বলা হয়। Keyboard-এ ১৭টি নিউমেরিক Key রয়েছে।

কার্সর মুভমেন্ট : Keyboard এর ডানদিকে ৪টি Arrow Key আছে। এদেরকে কার্সর মুভমেন্ট কী বলা হয়।

২। মাউস (Mouse)

মাউস একটি ইনপুট ডিভাইস। ডগলাস অ্যাঞ্জেলবার্ট ১৯৬৩ সালে মাউস আবিষ্কার করেন। ১৯৮৪ সালে ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারে সর্বপ্রথম মাউস ব্যবহার করা হয়। মাউস হলো হাত দিয়ে নিয়ন্ত্রিত একটি পয়েন্টিং ডিভাইস। এটা দিয়ে কী বোর্ডে নির্দেশ প্রদান ছাড়াই একটি কম্পিউটার চালানো যায়। একটি স্ট্যান্ডার্ড মাউসে দুটি বা তিনটি বাটন থাকে।

৩। OMR, OCR, MICR

  • OMR (Optical Mark Reader) একটি input device. এটি এমন একটি যন্ত্র যা পেন্সিল বা কালির দাগ বুঝতে পারে। MCQ পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নে বা গোলক ভরাট করা খাতা পড়তে OMR ব্যবহার করা হয়।
  • OCR (Optical Character Recognition) একটি input device. এটি বিভিন্ন বর্ণ ও দাগ বুঝতে পারে। OCR এ আগে থেকেই প্রত্যেক বর্ণের বৈদ্যুতিক সংকেত জমা থাকে যার সাথে মিলিয়ে কোন বর্ণ পড়া হচ্ছে কিনা তা OCR বুঝতে পারে। চিঠির পিন কোড, ইলেকট্রিক বিল, ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়াম, নোটিশ ইত্যাদি পড়ার জন্য OCR ব্যবহৃত হয়।
  • MICR (Magnetic Ink Character Recognition)-এর মাধ্যমে কোন বর্ণ পড়া হচ্ছে তা বুঝা যায়। বাংলাদেশ ব্যাংক সকল তফসিলি ব্যাংকে MICR যুক্ত চেক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে। এক্ষেত্রে চৌম্বক কালি বা ফেরোসোফিরিক অক্সাইডযুক্ত কালির সাহায্যে চেক লেখা হয়।

আরও কয়েকটি ইনপুট ডিভাইসঃ

  • Scanner একটি input device। এর মাধ্যমে যে কোন লেখা, ছবি, ড্রয়িং অবজেক্ট ইত্যাদি স্ক্যান করে কম্পিউটারে ডিজিটাল ইমেজ হিসেবে কনভার্ট করা যায়।
  • Digitizer এমন একটি ইনপুট ডিভাইস যা দিয়ে ড্রয়িং, ম্যাপিং, এনিমেশন, গ্রাফিক্স ইত্যাদি কাজগুলো খুব সহজে এবং সাবলীলভাবে সম্পাদন করা যায়। বাংলাদেশ ভূমি জরিপ অধিদপ্তর ডিজিটাইজার ব্যবহার করে তাদের মৌজাম্যাপগুলো সংরক্ষণ ও সম্পাদন করেছে।
  • জয়স্টিক একটি ইনপুট ডিভাইস যাতে আয়তাকার বেইসের উপর একটি দণ্ড বসানো থাকে। জয়স্টিক কম্পিউটার গেমস খেলার জন্য নিয়ন্ত্রক External input device হিসেবে কাজ করে।
  • লাইট পেন কম্পিউটারে সংযুক্ত বিশেষ ধরনের কলম যার সাহায্যে ডিজাইন করা যায়। লাইট পেনের মাথায় সেন্সর থাকে যা আলো অনুভব করতে পারে। লাইট পেনের এক প্রান্তে সেন্সর থাকে এবং অন্যপ্রাপ্ত কম্পিউটারের সাথে যুক্ত থাকে।
  • Barcode Reader একটি অপটিক্যাল ইনপুট ডিভাইস। একে ইউনিভার্সাল প্রোডাক্ট কোড বলা হয়। দোকান থেকে বিক্রিত জিনিসের প্যাকেটের উপর বার কোডের সাহায্যে জিনিসের নাম এবং নির্মাণকারীর নাম এবং মূল্য ইত্যাদি তথ্য লেখা থাকে। অতঃপর একটি কম্পিউটার বার কোড রিডারের সাহায্যে কোডটি পড়ে তা কোন সংখ্যা বোঝায়, তা জেনে নিতে পারে।
  • গ্রাফিক্স ট্যাবলেট দেখতে অনেকটা পেন্সিলের স্লেটের মত। এটি কার্যত মাউসের বিকল্প যন্ত্র।

 

আউটপুট ডিভাইস (Output Device)

কম্পিউটারের আউটপুট ডিভাইস বলতে ঐ সকল যন্ত্রপাতিকে বুঝায় যার সাহায্যে ব্যবহারকারীর দেওয়া নির্দেশ অনুযায়ী প্রক্রিয়াকরণের পরবর্তী ফলাফল প্রকাশ বা প্রদর্শন করা হয়। উল্লেখযোগ্য কিছু আউটপুট ডিভাইস হলো– মনিটর, প্রিন্টার, প্লটার, স্পিকার, প্রজেক্টর, হেডফোন ইত্যাদি।

১। মনিটর (Monitor)

মনিটর সাধারণত তিন ধরনের হয়ে থাকে। যথা : Cathode Ray Tube (CRT) Monitor, Liquid Crystal Display (LCD) Monitor ও Light Emitting Diode (LED) Monitor।

CRT (Cathode Ray Tube)

  • ক্যাথোড রশ্মি টিউব রঙিন মনিটরের পর্দার ভিতরের পৃষ্ঠে লাল, সবুজ ও আসমানী (মৌলিক রং) এর ফসফর নামক এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থের অসংখ্য দানা থাকে।
  • এই তিন বর্ণের তিনটি ফসফর দানা মিলে একটি বিন্দুত্রয়ী গঠন করে।
  • CRT মনিটরে মৌলিক রঙ প্রদর্শেনের জন্য তিন ধরনের Electron Gun থাকে।

LCD (Liquid Crystal Display)

  • LCD এর ডিসপ্লে ইউনিট এর পর্দা সমতল।
  • এলসিডি মনিটরে বিশেষ ধরণের তরল ক্রিস্টাল ব্যবহার করা হয় যা স্বাভাবিক অবস্থায় স্বচ্ছ।
  • বিদ্যুৎ পরিবাহিতার মাধ্যমে স্বচ্ছ ক্রিস্টাল চার্জিত হয়ে ছবি ফুটিয়ে তোলে।
  • ক্যালকুলেটর ও ঘড়িতে এলসিডি ডিসপ্লে ব্যবহৃত হয়।

LED (Light Emitting Diode)

  • LED-এর ব্যাকলাইট ভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে।
  • এটি চোখের জন্য স্বাচ্ছন্দ্যময় এবং স্থায়িত্বকাল বেশি।
  • এটি তৈরি করার সময় LCD মনিটরের মত মার্কারি ব্যবহার করা হয় না বিধায় এটি বেশি পরিবেশবান্ধব।
  • বিদ্যুৎ খরচ LCD মনিটর অপেক্ষা ৪০% কম।

২। প্রিন্টার (Printer)

কম্পিউটারের ফলাফল কাগজে ছাপানোর যন্ত্রকে প্রিন্টার বলে। Printer একটি Output Device। একে অফলাইন ডিভাইস বলা হয়। প্রিন্টারের রেজুলেশন পরিমাপক একক হল ডিপিআই (DPI-Dot per inch)।

কার্যপ্রণালি অনুসারে প্রিন্টার দুই প্রকার। যথা : ১। ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার ও ২। নন-ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার।

ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার : যে প্রিন্টারে প্রিন্টহেড কাগজকে স্পর্শ করে তাকে বলা ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার। ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার আবার দুই প্রকার। যথা : ক. লাইন প্রিন্টার খ. সিরিয়াল প্রিন্টার।

নন-ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার : যে প্রিন্টারে প্রিন্টহেড কাগজকে স্পর্শ করে না তাকে নন ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার বলা হয়। যা বিভিন্ন ধরণের হতে পারে। যেমন : থার্মাল, ইঙ্কজেট, স্থির বৈদ্যুতিক, লেজার ইত্যাদি।

লেজার প্রিন্টার : এই প্রিন্টারে লেজার রশ্মির সাহায্যে কাগজে লেখা ফুটিয়ে তোলা হয়। একে পেইজ প্রিন্টারও বলা হয়। কার্বন কণা লেজার প্রিন্টারের টোনারে সংরক্ষিত থাকে। কাগজের উপর পতিত কার্বন কণা উচ্চ তাপ ও চাপে গলে গিয়ে স্থায়ীভাবে কাগজে বসে যায়। এভাবে লেজার প্রিন্টার কাজ করে। লেজার প্রিন্টার উন্নতমানের এবং দ্রুত গতিসম্পন্ন।

৩. মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর : এই প্রজেক্টরের মাধ্যমে কম্পিউটারের কোন তথ্য, মুভি, টিভি প্রোগ্রাম বড় স্ক্রিনে উপস্থাপন করা যায়। এটি বিভিন্ন সভা, সেমিনার, ওয়ার্কশপ, ক্লাসরুমে ব্যবহার করা হয়।

৪. প্লটার : Plotter হলো মানচিত্র বা নকশা প্রিন্টের জন্য ব্যবহৃত বিশেষ ধরনের প্রিন্টার। স্থপতি, প্রকৌশলী এবং অন্য যে কোন ধরনের নকশাবিদ এবং যারা মানচিত্র তৈরি করেন তাদের সূক্ষ্মতিসূক্ষ্ম রেখার সুস্পষ্ট এবং সঠিক ব্যবহারের জন্য প্লটারে প্রিন্ট নেওয়ার প্রয়োজন হয়। প্লটারে প্রিন্ট হয় পেন এর সাহায্যে। প্লটারে চিকন থেকে মোটা যেকোন ধরনের পেন ব্যবহার করা যায়। প্লটার দুই ধরনের- ক. ফ্লাটবেড প্লটার খ. ড্রাম প্লটার।

 

ইনপুট-আউটপুট ডিভাইস কাকে বলে? (What is called Input-Output Device?)

যে সকল ডিভাইস ইনপুট ও আউটপুট উভয় হিসেবে ব্যবহার করা হয় তাদেরকে ইনপুট-আউটপুট ডিভাইস বলে। যেমন- মডেম, টাচস্ক্রিন, ডিজিটাল ক্যামেরা, নেটওয়ার্ক কার্ড, সিডি/ডিভিড, সাউন্ড কার্ড, নেটওয়ার্ক কার্ড (NIC), Audio Cards, Headsets, ফ্যাক্স ইত্যাদি।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments