কেন্দ্রীয় প্রবণতা কাকে বলে? কেন্দ্রীয় প্রবণতা কত প্রকার ও কি কি?

Uncategorized

আসসালামু আলাইকুম, সবাইকে স্বাগতম জানিয়ে শুরু করছি আরো একটা টিউটোরিয়াল। আজকে আমাদের টিউটোরিয়ালের বিষয়বস্তু হলো কেন্দ্রীয় প্রবণতা বা Central Tendency। আমরা যারা ৮ম, ৯ম-১০ম শ্রেণীতে পড়ি তারা পরিসংখ্যানে একটি কথা প্রায় শুনে থাকি সেটা হলো কেন্দ্রীয় প্রবণতা কাকে বলে?; কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপ কয়টি ও কি কি? এই প্রশ্নগুলির; তো আজকে আমরা এই পোস্টের মাধ্যমে এই প্রশ্নগুলির উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করছি। প্রথমেই জেনে নেই কেন্দ্রীয় প্রবণতা সম্পর্কে।

কেন্দ্রীয় প্রবণতার অর্থ হল কেন্দ্রের দিকে যাওয়ার প্রবণতা। কোন একটি নিবেশন বা তথ্যসারিতে অনেকগুলো মান থাকে। আর একটি মান কেন্দ্রে থাকে। কেন্দ্রের মানটিকে কেন্দ্রীয় মান বলে। কেন্দ্রীয় মানের চতুর্দিকে নিবেশনের বাকী মানগুলো একত্রিত বা ঘনীভূতভাবে থাকতে চায়। কেন্দ্রীয় মানের দিকে নিবেশনের বাকি মানগুলো একত্রিত বা ঘনীভূতভাবে থাকার ইচ্ছা বা প্রবণতাকে কেন্দ্রীয় প্রবণতা বলে। অবিন্যস্ত উপাত্তসমূহ মানের ক্রমানুসারে সাজালে, উপাত্তসমূহ মাঝামাঝি কোনো মানের কাছাকাছি পুঞ্জিভূত হয়। উপাত্তসমূহের কেন্দ্রীয় মানের দিকে পুঞ্জিভূত হওয়ার এই প্রবণতাকে কেন্দ্রীয় প্রবণতা (Central Tendency) বলে।

উদাহরণ : কোনো একটি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বয়সের গড় হলো কেন্দ্রীয় প্রবণতার উদাহরণ।

কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপ কয়টি ও কি কি?

কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপগুলো হলো : ১। গাণিতিক গড় বা গড়, ২। মধ্যক ও ৩। প্রচুরক।

মধ্যক (Median)

গাণিতিক গড় দেখে অনুসন্ধানাধীন উপাত্তসমূহের প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া অনেক সময় সম্ভব হয় না। যেমন কোনো 5 জন ছাত্রের গণিতে প্রাপ্ত নম্বর হল- 30, 30, 30, 90, 100. প্রাপ্ত নম্বরের গাণিতিক গড় হল 56. শেষের নম্বরের জন্য গাণিতিক গড় 56 হয়েছে। কিন্তু এর থেকে ছাত্রদের গণিতের কৃতিত্ব সম্বন্ধে যদি বলা হয় মোটামুটি ভাল, তবে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে না। কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপের জন্য এ গড় যথাযথ নয়। এজন্য অন্য কোনো গড়ের প্রয়োজন হয়। এখানে যদি আমরা কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপ 30 নিই তবে তা বেশি সংখ্যক ছাত্রের প্রাপ্ত নম্বরের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। কেন্দ্রীয় প্রবণতার এ পরিমাপ হল মধ্যক।

মধ্যকের সংজ্ঞা : যদি উপাত্তের মানগুলো মানের ঊর্ধ্বক্রমে বা নিম্নক্রমে সাজানো হয় তবে সজ্জিত মনসমূহের মধ্যম মানকে মধ্যক বলা হয়।

অবিন্যস্ত উপাত্তের মধ্যক নির্ণয় : প্রথমে অবিন্যস্ত উপাত্তের মানসমূহ মানের ক্রমানুসারে সাজান হয়। তারপর সজ্জিত মানসমূহের মধ্যম মানকে হিসেবে নেওয়া হয়। যদি উপাত্তের চলকের n সংখ্যক মান থাকে (n বিজোড় হয়), তবে মধ্যক হবে n + 1 /2 তম পদ। এ ক্ষেত্রে কেবল একটি মধ্যক হবে। আর যদি n জোড় সংখ্যা হয়, তবে দুইটি মধ্যম মান থাকবে অর্থাৎ, মধ্যম মানের পদ দুইটি হবে তম n/2 ও (n/2 + 1) তম পদ। এদের যে কোনো একটিকে মধ্যক হিসেবে নেওয়া যায়। তবে প্রচলিত পদ্ধতিতে মধ্যম মানের গাণিতিক গড়কে মধ্যক হিসেবে নেওয়া হয়।

নিচে কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হলো।

উদাহরণ ১। নিম্নে প্রদত্ত মনসমূহের মধ্যক নির্ণয় কর।

4, 1, 6, 3, 8, 7, 2, 9, 12, 2, 3, 8, 15

সমাধান : মানের ঊর্ধ্ব ক্রমানুসারে সাজালে পাওয়া যায় 1, 2, 2, 3, 3, 4, 6, 7, 8, 8, 9, 12, 15.

এখানে মানের সংখ্যা 13. সুতরাং 7 তম পদ হল মধ্যম পদ যার মান 6.

নির্ণেয় মধ্যক 6.

উদাহরণ ২। চলকের মান 6, 1, 7, 2, 3, 7, 8, 7, 10, 16. হলে, মধ্যক নির্ণয় কর।

সমাধান : মানের ঊর্ধ্বক্রমে সাজালে পাওয়া যায় 1, 2, 3, 6, 7, 7, 7, 8, 10, 16.

এখানে পদের সংখ্যা 10. সুতরাং 10/2 তম এবং এবং (10/2 + 1) তম অর্থাৎ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ পদ দুইটি মধ্যম পদ যাদের মান যথাক্রমে 7 ও 7. এ দুইটির গাণিতিক গড় হল 7. সুতরাং মধ্যক হল 7.

 

প্রচুরক (Mode)

উপাত্তের মানসমূহ মানের ক্রমানুসারে সাজানো হলে দেখা যায় মাঝামাঝি একটি মানের চতুর্দিকে উপাত্তের মানের ঘনত্ব বেশি। প্রকৃতপক্ষে কোনো মানবিশিষ্ট একটি চলকের পুনরাবৃত্তির জন্যই এরূপ পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে। তাই এই মানটি উপাত্তের বৈশিষ্ট্য পরিমাপক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং একে প্রচুরক বলে। সাধারণত কোনো চলকের যে মানটি সবচেয়ে বেশি বার উপস্থাপিত হয়, তাকেই প্রচুরক বলে। কোনো উপাত্তে প্রচুরক নাও থাকতে পারে। আবার থাকলেও প্রচুরক অনন্য নাও হতে পারে।

উদাহরণ ১। কোনো উপাত্তের চলকসমূহের মান হল 2, 2, 3, 6, 7, 7, 7, 8, 9. এদের প্রচুরক নির্ণয় কর।

সমাধান : এখানে 7 সর্বাধিক তিন বার উপস্থাপিত হয়েছে। সুতরাং প্রচুরক হল 7.

উদাহরণ ২। উপাত্তের চলকসমূহের মান হল 2, 4, 6, 9, 8, 15. প্রচুরক নির্ণয় কর।

সমাধান : উপাত্তের চলকসমূহের কোনো মানই পুনরাবৃত্তি হয়নি। সুতরাং প্রদত্ত উপাত্তে প্রচুরক অনুপস্থিত।

উদাহরণ ৩। উপাত্তের চলকসমূহের মান হল 25, 25, 26, 27, 27, 27, 28, 29, 30, 30, 30. প্রচুরক নির্ণয় কর।

সমাধান : এখানে 27 ও 30 সর্বাধিক তিনবার উপস্থাপিত হয়েছে।

সুতরাং প্রচুরক 27 ও 30.

 

অনুশীলনী

১। মধ্যক নির্ণয়ের জন্য উপাত্তগুলো কোন ধরনের হতে হয়?

উত্তর : বিন্যস্ত।

২। ৪, ৬, ৭, ৯, ১২ সংখ্যাগুলোর মধ্যক কোনটি?

উত্তর : ৭।

৩। কোনটি বিন্যস্ত উপাত্তকে সমান দুই ভাগে ভাগ করে?

উত্তর : মধ্যক।

৪। কোনটির মাধ্যমে সংগৃহীত উপাত্তের বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজতর হয়?

উত্তর : মধ্যক।

৫। ৮, ৯, ১০, ১২, ১৪, ১৬ সংখ্যাগুলোর কোনটি মধ্যক?

উত্তর : ১১।

৬। ৭, ১০, ১২, ১১, ১৪, ৮, ৬, ৪ সংখ্যাগুলোর মধ্যক কত?

উত্তর : ৮।

 

  • Tags :
    মধ্যক ও প্রচুরকের মধ্যে পার্থক্য কি?
    মধ্যক কাকে বলে?
    উপাত্তগুলোর মধ্যক ও প্রচুরক নির্ণয় কর;
    গড় মধ্যমা ও প্রচুরক নির্ণয় সূত্র কি?
    13, 17, 14, 11, 9, 14 সংখ্যাগুলোর মধ্যক কত?
    প্রচুরক কেন ব্যবহার করা হয়?
  • কেন্দ্রীয় প্রবণতা পরিমাপের পদ্ধতি গুলি কি কি

2 thoughts on “কেন্দ্রীয় প্রবণতা কাকে বলে? কেন্দ্রীয় প্রবণতা কত প্রকার ও কি কি?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *