HomeComputerক্লাউড কম্পিউটিং কি? ক্লাউড কম্পিউটিং এর সুবিধা ও অসুবিধা কি?

ক্লাউড কম্পিউটিং কি? ক্লাউড কম্পিউটিং এর সুবিধা ও অসুবিধা কি?

ক্লাউড কম্পিউটিং কি? (What is Cloud computing in Bengali/Bangla?)

তথ্য প্রযুক্তির নানা ধরণের সেবা পাওয়ার জন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে সব সময়ই নানা ধরণের যন্ত্রপাতি, সার্ভার ইত্যাদি কিনতে হয়। সার্ভার ব্যবহার বা কর্মক্ষম রাখার জন্য প্রয়োজন হয় মূল্যবান সফটওয়্যার এবং সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য প্রয়োজন হয় দক্ষ জনশক্তি। তাহলেই প্রতিষ্ঠানটি তথ্যপ্রযুক্তি থেকে সঠিক সেবা পেতে পারে। অনেক সময়ই একটি সেবার প্রয়োজন হয় খুব সাময়িক এবং সেই সাময়িক সেবার জন্যও প্রতিষ্ঠানটিকে অনেক খরচ সাপেক্ষ একটা প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতে হয়। শুধু তাই নয়, তথ্য প্রযুক্তি-সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি এত দ্রুত উন্নত হচ্ছে যে, অনেক অর্থ দিয়ে নানা ধরণের যন্ত্রপাতি কেনার কয়েক বছরের ভেতরে দেখা যায় তার আর্থিক মূল্য কমে প্রতিষ্ঠানটি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এ ধরণের পরিস্থিতির কারণে তথ্য প্রযুক্তি ক্লাউড কম্পিউটিং নামে একটি নতুন ধরনের সেবা জন্ম নিয়েছে। এর পেছনের ধারণাটি খুবই সহজ। যেকোনো ব্যবহারকারী বা যেকোনো প্রতিষ্ঠান নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে কম্পিউটারের সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান থেকে যেকোনো ধরণের সেবা গ্রহণ করতে পারবে। ব্যবহারকারীকে কিছুই করতে হবে না, সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান তার জন্য সবকিছু করে দেবে। ব্যবহারকারীর প্রয়োজনটা সাময়িক হলে সে সাময়িক ভাবে এটি ব্যবহার করবে এবং যতটুকু সেবা গ্রহন করবে, ঠিক ততটুকু সেবার জন্য মূল্য দেব। আমরা কিংবা আমাদের পরিচিত কেউ যদি yahoo, gmail ব্যবহার করে কোনো ই-মেইল পাঠিয়ে থাকি তাহলে আসলে ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবহার করে সেটি করা হয়েছে। কিংবা তুমি যদি কেউ সার্চ ইঞ্জিন গুগলে কোনো তথ্য খুঁজে দেখ, তাহলেও সেটিতেও ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবহার করা হয়েছে। সুতরাং আমরা বলতে পারি, ইন্টারনেটে বা ওয়েবে সংযুক্ত হয়ে কিছু গ্লোবাল সুবিধা ভোগ করার যে পদ্ধতি তাই হচ্ছে ক্লাউড কম্পিউটিং। এটি একটি বিশেষ পরিষেবা। এখানে ‘ক্লাউড’ বলতে দূরবর্তী কোনো শক্তিশালী সার্ভার কম্পিউটারকে বােঝানো হয়। বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে ইন্টারনেট সংযুক্ত কম্পিউটারের মাধ্যমে ক্লাউড প্রদত্ত সেবা সমূহ ভোগ করা যায়।

ক্লাউড কম্পিউটিং’ কম্পিউটিং শক্তি, অনলাইন পরিষেবা, ডেটা অ্যাকসেস, ডেটা স্পেস প্রদান করে। ক্লাউড কম্পিউটিং আজকের দিনে খুব গুরুত্বপূর্ণ। উদারহণস্বরূপ বলা যেতে পারে, অনলাইন ব্যাকআপ সার্ভিস, সামাজিক যোগাযোগ সার্ভিস এবং পার্সোনাল ডেটা সার্ভিস। ক্লাউড কম্পিউটিং-এর জন্য ইন্টারনেট সংযোগ অপরিহার্য। তবে কোনো কোনো কারণে ক্লাউড বা সার্ভার-এ সমস্যা হলে কাজের ক্ষতি হয়। এটি এমন একটি মডেল যাতে নিম্নোক্ত ৩টি বৈশিষ্ট্য থাকবে।

  • রিসোর্স স্কেলেবিলিটি : ছােট বা বড় যাই হোক ক্রেতার সব ধরণের চাহিদাই মেটানো হবে, ক্রেতা যত সেবা চাইবে দাতা ততোই অধিক পরিমাণে সেবা দিতে পারবে।
  • অন-ডিমান্ড : ক্রেতা যখন চাইবে, তখনই সেবা দিতে পারবে। ক্রেতা তার ইচ্ছা মতো যখন খুশি তার চাহিদা বাড়াতে বা কমাতে পারবে।
  • পে-অ্যাজ-ইউ-গো: এটি একটি পেমেন্ট মডেল। ক্রেতাকে আগে থেকে কোনো সার্ভিস রিজার্ভ করতে হবে না। ক্রেতা যতটুকু ব্যবহার করবে কেবলমাত্র ততটুকুর জন্যই মূল্য দেবে।

ক্লাউড কম্পিউটিং-এ বিবেচ্য বিষয়সমূহ : গোপনীয়তা ও নমনীয়তা, বৈধতা ও উন্মুক্ততা, গুণগত দিক ও নিরাপত্তা, টেকসই, ইনফরমেশন টেকনোলজির ব্যবহার।

 

ক্লাউড কম্পিউটিং এর ইতিহস (History of Cloud Computing)

১৯৬০ সালে জন ম্যাক ক্যার্থি ক্লাউড কম্পিউটিং সম্পর্কে মতামত দেন এভাবে, “কম্পিউটেশন একদিন সংগঠিত হবে পাবলিক ইউটিলিটি হিসেবে।” তবে প্রকৃতপক্ষে এ ধারণা ভিত্তি লাভ করেছে ১৯৯০ সালের দিকে। নব্বই এর দশকের শেষে বড় বড় কোম্পানিরা ইন্টারনেটে ব্যবসার আশায় বিশাল বিনিয়োগ করে ডেটা সেন্টার আর নেটওয়ার্কে। ২০০০ সাল নাগাদ হঠাৎ করে পরা ব্যবসাটাই ধ্বসে যায়, ফলে অনেক দেউলিয়া হয়ে পড়ে। তাদের ডেটা সেন্টারের মাত্র ৫% এর মতো ব্যবহৃত হচ্ছিল এবং বাকিটা সময়ে সিস্টেম অলস হয়ে বসে থাকত। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘন্টা হিসেবে ভাড়া দিয়ে অলস বসে থাকা কম্পিটারগুলোকে কাজে লাগানোর বুদ্ধি থেকেই শুরু হয় ক্লাউড কম্পিউটিং যুগের। ২০০৫ সাল থেকে আমাজন ডট কম ইলাস্টিক কম্পিউট ক্লাউড বা EC2 শুরু করে। এর পর আর পেছনে তাকাতে হয়নি ক্লাউড কম্পিউটিংকে। আইবিএম, মাইক্রোসফট, গুগল থেকে শুরু করে প্রচুর কোম্পানি এখন ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবসার সাথে জড়িত।

 

ক্লাইউড কম্পিউটিং-এর বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Cloud Computing)

  • সাবলীলভাবে কাজের উন্নতি সাধন করে।
  • রিসোর্স (হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার) শেয়ার করে খরচ কমানো যায়।
  • ভার্চুয়াল প্রযুক্তি ব্যবহার করাসহ বিভিন্ন ডিভাইস ও জায়গায় এটি ব্যবহার করা যায়।
  • অধিক নির্ভরযোগ্য ও রিসোর্স অধিক নিরাপদ।
  • এটির ধারণক্ষমতা অধিক ও এটি নিয়ন্ত্রণ বা পরিচালনা করা সহজ।

 

ক্লাউড কম্পিউটিং-এর সুবিধা (Advantages of Cloud Computing)

  • অপারেটিং খরচ তুলনামূলক কম থাকে।
  • নিজস্ব হার্ডওয়্যার বা সফটওয়্যারের প্রয়োজন হয় না ফলে খরচ কম।
  • সার্বক্ষণিক ব্যবহার করা যায়।
  • যেকোনো স্থান থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য আপলোড বা ডাউনলোড করা যায়।
  • তথ্য কীভাবে প্রসেস বা সংরক্ষিত হবে তা জানার প্রয়োজন হয় না।
  • স্বয়ংক্রিয়ভাবে সফটওয়্যার আপডেট করা হয়ে থাকে।
  • যেকোনো ছোট বা বড় হার্ডওয়্যার-এর মধ্যে অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারের সুবিধা রয়েছে।
  • সহজে কাজকর্ম মনিটরিং এর কাজ করা যায় ফলে বাজেট ও সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা যায়।

 

ক্লাউড কমিউটিং-এর অসুবিধা (Disadvantages of Cloud Computing)

  • ডেটা, তথ্য অথবা প্রোগ্রাম বা অ্যাপ্লিকেশন-এর ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না এবং এটি দ্রুতগতিসম্পন্ন নয়।
  • আবহাওয়াজনিত কারণে বা ইন্টারনেট সংযোগ বিঘ্নিত হলে সার্ভিস বিঘ্নিত হয়।
  • ক্লাউড সাইটটিতে সমস্যা দেখা দিলে ব্যবহারকারীরা তার সার্ভিস থেকে বঞ্চিত হন।
  • তথ্যের গোপনীয়তা ভঙ্গের এবং তথ্য পাল্টে যাওয়ার অর্থাৎ হ্যাকিং হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • তথ্য ক্লাউডে পাঠিয়ে দেওয়ার পর তা কোথায় সংরক্ষণ হচ্ছে বা কীভাবে প্রসেস হচ্ছে তা ব্যবহারকারীদের জানার উপায় থাকে না।
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments