HomeBlogজোয়ার ভাটা কাকে বলে? জোয়ার ভাটা কেন হয়?

জোয়ার ভাটা কাকে বলে? জোয়ার ভাটা কেন হয়?

জোয়ার ভাটা কাকে বলে? (What is called Tide in Bengali/Bangla?)

চন্দ্র ও সূর্য ভূ-পৃষ্ঠের জল ও স্থলভাগকে আকর্ষণ করে যার ফলে ভূ-পৃষ্ঠের পানি নির্দিষ্ট সময় অন্তর প্রত্যহ এক স্থানে ওঠে এবং অন্যস্থানে নেমে যায়, একেই জোয়ার ভাটা (Tide) বলে।

 

জোয়ার-ভাটা সৃষ্টির কারণ কি? (What is the reason for Tide?)

জোয়ার-ভাটা সৃষ্টির প্রধান কারণ হল-

  • সূর্য ও প্রধানত চাঁদ দ্বারা পৃথিবীর ওপর প্রযুক্ত মহাকর্ষ বল।
  • পৃথিবীর ওপর কার্যকরী অপকেন্দ্রিক বল।

পৃথিবীর যে পাশে চাঁদ থাকে সে পাশে চাঁদ দ্বারা পৃথিবীপৃষ্ঠের সমুদ্রের জল তার নিচের মাটি অপেক্ষা বেশি জোরে আকৃষ্ট হয়। এ কারণে চাঁদের দিকে অবস্থিত জল বেশি ফুলে উঠে। একই সময়ে পৃথিবীর যে অংশ চাঁদের বিপরীত দিকে থাকে, সেদিকের সমুদ্রের নিচের মাটি তার উপরের জল অপেক্ষা চাঁদ কর্তৃক বেশি জোরে আকৃষ্ট হয়। আবার চাঁদ থেকে জলের দূরত্ব মাটি অপেক্ষা বেশি থাকায় জলের উপর চাঁদের আকর্ষণ কম থাকে। ফলে সেখানকার জলও ফুলে উঠে। ফলে একই সময়ে চাঁদের দিকে এবং চাঁদের বিপরীত দিকে পৃথিবীর সমুদ্রপৃষ্ঠের জলের এই ফুলে উঠাকে জোয়ার বলে।

আবার পৃথিবী ও চাঁদের ঘুর্ণনের কারণে একসময় ফুলে ওঠা জল নেমে যায়। জলের এই নেমে যাওয়াকে ভাটা বলে। পৃথিবী যে সময়ের মধ্যে নিজ অক্ষের চারদিকে একবার আবর্তন করে (এক দিনে) সে সময়ের মধ্যে পৃথিবীর যেকোন অংশ একবার চাঁদের দিকে থাকে এবং একবার চাঁদের বিপরীত দিকে থাকে। এ কারণে পৃথিবীর যেকোন স্থানে দুইবার জোয়ার এবং দুইবার ভাটা হয়।

জোয়ার-ভাটার জন্য সূর্যের আকর্ষণও অনেকাংশে দায়ী। তবে অনেক দূরে থাকায় সূর্যের আকর্ষণ চাঁদের আকর্ষণের থেকে কম কার্যকর। সূর্য এবং চাঁদ যখন সমসূত্রে পৃথিবীর একই দিকে বা বিপরীত দিকে অবস্থান করে তখন উভয়ের আকর্ষণে সর্বাপেক্ষা উঁচু জোয়ার হয়, জোয়ারের জল বেশি ছাপিয়ে পড়ে। এই অবস্থাকে ভরা কাটাল বা উঁচু জোয়ার বলা হয়। আর পৃথিবীকে কেন্দ্র করে সূর্য এবং চাঁদের মধ্য কৌণিক দূরত্ব যখন এক সমকোণ পরিমাণ হয় তখন একের আকর্ষণ অন্যের আকর্ষণ দ্বারা প্রশমিত হয়। তাই সবচেয়ে নিচু জোয়ার হয় যাকে মরা কাটাল বলে আখ্যায়িত করা হয়।

 

জোয়ার ভাটা কত প্রকার ও কি কি? (How Many Types of Tide?)

জোয়ার ভাটা ৪ প্রকার। যেমনঃ

১. মুখ্য জোয়ার,

২. গৌণ জোয়ার,

৩. তেজ কটাল ও

৪. মরা কটাল।

১. মুখ্য জোয়ার : চন্দ্র পৃথিবীর চারদিকে আবর্তনকালে পৃথিবীর যে অংশ চন্দ্রের নিকটবর্তী হয়, সেখানে চন্দ্রের আকর্ষণ সর্বাপেক্ষা বেশি হয়। এ আকর্ষণে চারদিক হতে জলরাশি এসে চন্দ্রের দিকে ফুলে ওঠে এবং জোয়ার হয়। এরুপে সৃষ্ট জোয়ারকে মুখ্য জোয়ার বা প্রত্যক্ষ জোয়ার বলা হয়।

২. গৌণ জোয়ার : চন্দ্র পৃথিবীর যে পার্শ্বে আকর্ষণ করে তার বিপরীত দিকের জলরাশির ওপর মহাকর্ষণ শক্তির প্রভাব কমে যায় এবং কেন্দ্রাতিগ শক্তির সৃষ্টি হয়। এতে চারদিক হতে পানি ঐ স্থানে এসে জোয়ারের সৃষ্টি করে। এভাবে চন্দ্রের বিপরীত দিকে যে জোয়ার হয় তাকে গৌণ জোয়ার বা পরোক্ষ জোয়ার বলে।

৩. তেজ কটাল : অমাবস্যা তিথিতে চন্দ্র ও সূর্য পৃথিবীর একই পার্শ্বে এবং পূর্ণিমা তিথিতে পৃথিবীর এক পার্শ্বে চন্দ্র ও অপর পার্শ্বে সূর্য অবস্থান করে। ফলে এ দুই তিথিতে চন্দ্র ও সূর্য সমসূত্রে থাকে এবং উভয়ের মিলিত আকর্ষণে যে প্রবল জোয়ারের সৃষ্টি হয় তাকে তেজ কটাল বা ভরা কটাল (Spring Tide) বলে।

৪. মরা কটাল : কৃষ্ণপক্ষ ও শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে চাঁদ ও সূর্য পৃথিবীর সঙ্গে পরস্পর সমকোণে থাকলে চাঁদের আকর্ষণে যেদিকে জলরাশি ফুলে ওঠে ঠিক তার সমকোণে সূর্যের আকর্ষণেও সমুদ্রের জল ফুলে ওঠে। চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণ বল পরস্পর বিপরীতে কাজ করায় সমুদ্রপৃষ্ঠের জলরাশি বিশেষ ফুলে ওঠে না, এইভাবে সৃষ্ট জোয়ারকে মরা কটাল বা মরা জোয়ার বলে।

 

জোয়ার-ভাটার সময়ের ব্যবধান

কোনো নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট একটি সময়ে মুখ্য জোয়ার হওয়ার ১২ ঘণ্টা ২৬ মিনিট পরে সেখানে গৌণ জোয়ার হয় এবং মুখ্য জোয়ারের ২৪ ঘণ্টা ৫২ মিনিট পর সেখানে আবার মুখ্য জোয়ার হয়। তাই প্রত্যেক স্থানে জোয়ারের ৬ ঘণ্টা ১৩ মিনিট পরে ভাটা হয়।এ পৃথিবীর চারদিকে একবার ঘুরে আসতে চাদের সময় লাগে প্রায় ২৭ দিন। পৃথিবী যখন ২৪ ঘণ্টায় একবার নিজের মেরুদণ্ডের চারদিকে আবর্তন করে তখন চাঁদ নিজের অক্ষের ১ অংশ বা ৩৬০° ২৭ = (প্রায়) ১৩° পথ এগিয়ে যায়। এই ১৩° পথ অতিক্রম করতে পৃথিবীর আরও (১৩° x ৪ মিনিট = ৫২ মি.) ৫২ মিনিট সময় লাগে। সুতরাং পৃথিবীর যেকোন স্থান ২৪ ঘণ্টা ৫২ মিনিট পরে একবার করে চাদের সামনে আসে। তাই প্রতিটি মুখ্য বা গৌণ জোয়ার ২৪ ঘণ্টা ৫২ মিনিট পরে অনুষ্ঠিত হয় এবং একটি নির্দিষ্ট স্থানে একদিন যে সময়ে মুখ্য জোয়ার হয় সেইদিন তার ১২ ঘণ্টা ২৬ মিনিট পরে সেখানে গৌণ জোয়ার অনুষ্ঠিত হয়। আর, যে দুই স্থানে জোয়ার হয় তাদের সমকোণে অবস্থিত স্থান দুটিতে সবসময় ভাটা হয় বলে প্রত্যেক জায়গায় জোয়ারের প্রায় ৬ ঘণ্টা ১৩ মিনিট পরে সেখানে ভাটা হয়।

 

জোয়ার-ভাটার প্রভাব (Effects of Tides)

মানব-জীবনের উপর জোয়ার-ভাটার যথেষ্ট প্রভাব আছে। বিশ্বের সমুদ্র উপকূলবর্তী দেশসমূহে জোয়ার-ভাটার নিম্নের প্রভাবসমূহ লক্ষ করা যায়।

১। জোয়ার-ভাটার মাধ্যমে ভূখণ্ড থেকে আবর্জনাসমূহ নদীর মধ্য দিয়ে সমুদ্রে গিয়ে পতিত হয়।

২। দৈনিক দুবার জোয়ার-ভাটা হওয়ার ফলে ভাটার টানে নদীর মোহনায় পলি ও আবর্জনা জমতে পারে না।

৩। জোয়ার-ভাটার ফলে সৃষ্ট স্রোতের সাহায্যে নদীখাত গভীর হয়।

৪। বহু নদীতে ভাটার স্রোতের বিপরীতে বাঁধ দিয়ে জলবিদ্যুৎ (Hydroelectricity) উৎপাদন করা হয়।

৫। জোয়ারের পানি নদীর মাধ্যমে সেচে সহায়তা করে এবং অনেক সময় খাল খনন করে জোয়ারের পানি আটকিয়ে সেচকার্যে ব্যবহার করা হয়।

৬। শীতপ্রধান দেশে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি জোয়ারের সাহায্যে নদীতে প্রবেশ করে এবং এর ফলে নদীর পানি সহজে জমে না।

৭। জোয়ার-ভাটার ফলে নৌযান চলাচলের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা হয়। জোয়ারের সময় নদীর মোহনায় ও তার অভ্যন্তরে পানি অধিক হয় বলে বড় বড় সমুদ্রগামী জাহাজের পক্ষে নদীতে প্রবেশ করা সুবিধা হয়। আবার জোয়ারের টানে ঐ জাহাজ অনায়াসে সমুদ্রে নেমে আসতে পারে। বাংলাদেশের দুটি প্রধান সমুদ্রবন্দর পতেঙ্গা ও মংলা এবং অন্যান্য উপকূলবর্তী নদীবন্দর সচল রাখতে জোয়ার-ভাটার ভূমিকা রয়েছে।

৮। অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে নদীতে অধিক মাত্রায় জোয়ারের সময় নৌকা, লঞ্চ প্রভৃতি ডুবে যায় বা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এতে নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকায় জানমালের ক্ষতি হয়। এই অধিক জোয়ারে নদীর সংকীর্ণ মোহনায় শব্দতরঙ্গ সৃষ্টি হলে একে জোয়ারের বান বলে।

 

অনুশীলনী

১। জোয়ার ভাটা সৃষ্টির প্রধান কারণ কয়টি?

উত্তর : দুইটি।

২। জোয়ার-ভাটার তেজ কটাল কখন হয়?

উত্তর : অমাবস্যায়।

৩। জোয়ার-ভাটা সৃষ্টি হয় পৃথিবীর কোন গতির কারণে?

উত্তর : আহ্নিক গতি।

৪। কেন্দ্রাতিগ শক্তি কীভাবে জোয়ার-ভাটা সৃষ্টিতে সহায়তা করে?

উত্তর : পৃথিবী তার অক্ষ থেকে চারদিকে দ্রুতবেগে ঘুরছে বলে তার পৃষ্ঠ থেকে তরল পানিরাশি চতুর্দিকে ছিটকে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে। একেই কেন্দ্রাতিগ শক্তি বলে। পৃথিবী ও চন্দ্রের আবর্তনের জন্যে ভূপৃষ্ঠের তরল ও হালকা জলরাশির ওপর কেন্দ্রাতিগ শক্তির প্রভাব অধিক হয়। এর ফলেই জলরাশি সর্বদা বাইরে নিক্ষিপ্ত হয় এবং তরল জলরাশি কঠিন ভূ-ভাগ হতে বিচ্ছিন্ন হতে চায়। এমনিভাবে কেন্দ্রাতিগ শক্তি জোয়ার-ভাটা সৃষ্টিতে সহায়তা করে।

৫। দিনে দুই বার জোয়ার-ভাটা হয় কেন?

উত্তর : ঘূর্ণনজাত কেন্দ্রাতিক বলের ফলে পৃথিবী চাঁদ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। পৃথিবীর যে পৃষ্ঠ চাঁদের দিকে সেদিকে চাঁদের আকর্ষণ কেন্দ্রাতিগ বলের চেয়ে বেশি বলে সেখানকার পানি ফুলে উঠে জোয়ারের সৃষ্টি করে। একই সময়ে পৃথিবীর অপর দিকে চাঁদের আকর্ষণ কেন্দ্রাতিগ বলের চেয়ে কম বলে সেখানকার পানিও ফুলে ওঠে। এ দুটি পৃষ্ঠের লম্বভাবে অবস্থিত স্থানে চলে ভাটা। এ কারণেই কোনো স্থানে দিনে দুইবার জোয়ার-ভাটা হয়।

 

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তরঃ–

১। কত ঘণ্টা পরপর জোয়ার-ভাটা হয়?

ক) ৬ ঘণ্টা ১৩ মিনিট

খ) ৬ ঘণ্টা ৩০ মিনিট

গ) ১২ ঘণ্টা ১৩ মিনিট

ঘ) ১২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট

সঠিক উত্তর : ক

 

Tags :

  • জোয়ার ভাটা কয়টি কি কি?;
  • জোয়ার ভাটা কি? (What is tide explain?)
  • জোয়ার ভাটা হয় না কোন নদীতে?
  • জোয়ার ভাটা সৃষ্টির কারণ কি? (What causes tide?)
  • জোয়ার ভাটা সৃষ্টি হয় কিসের প্রভাবে?
  • জোয়ার ভাটার মরা কটাল কখন হয়?
  • জোয়ার ভাটা হয় কোন নদীতে?
  • জোয়ার ভাটার শ্রেণিবিভাগ;
  • জোয়ার-ভাটা সৃষ্টিতে কেন্দ্রমুখী বলের প্রভাব উল্লেখ করো;
  • জোয়ার ভাটা কত সময় পর পর হয়?
  • জোয়ারের জল বেশি উঠবে কখন?
  • জোয়ার কত ঘন্টা অন্তর হয়?
  • সূর্য ও চাঁদের জোয়ার সৃষ্টির অনুপাত কত?
  • What is lowest tide called?; What is the highest tide called?; What are the two types of tide?; Where are there no tides?; How do tides affect humans?; Types of tides;
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments