HomePhysicsপদার্থের আণবিক বন্ধন কি?

পদার্থের আণবিক বন্ধন কি?

পৃথিবীতে স্বতন্ত্র বা একক পরমাণু খুব কমই দেখা যায়। এমনকি বায়ুমন্ডলের নিচের স্তরেও এরকম একক বা স্বতন্ত্র পরমাণু তেমন দেখা যায় না। তবে শুধুমাত্র নিষ্ক্রিয় গ্যাস পরমাণুসমূহকে একাকী থাকতে দেখা যায়। অন্যান্য সকল পরমাণুসমূহকে একত্রে যুক্ত হয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গোষ্ঠীতে থাকতে দেখা যায় যাদের আমরা অণু বলি। তবে তরল ও কঠিন পদার্থে বড় বড় গোষ্ঠী দেখা যায়। কঠিনও তরল পদার্থের কিছু অণুতে একই পদার্থের পরমাণুসমূহ সম্পূর্ণরূপে একত্রিতভাবে থাকে এবং অন্যান্য অণুতে ভিন্ন পদার্থের পরমাণুসমূহ একত্রিতভাবে থাকে। কিন্তু প্রশ্ন জাগে এরা কিরূপে বা কি শক্তিতে একত্রিতভাবে থাকে। এটি রসায়নশাস্ত্রে যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনই পদার্থবিজ্ঞানেও সমান গুরুত্বপূর্ণ। এ সকল অণুতে পরমাণুসমূহ এক বিশেষ আকর্ষণ শক্তি দ্বারা আবদ্ধ থাকে। আর এ শক্তিকেই বন্ধন বা আণবিক বন্ধন বলে। অবশ্য রসায়নশাস্ত্রে একে রাসায়নিক বন্ধন বলে।

পরমাণুসমূহ যে আকর্ষণী বলের সাহায্যে পরস্পরের সাথে সংযুক্ত হয়ে বিভিন্ন অণু গঠন করে তাকে আণবিক বন্ধন (Molecular bond) বলে।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, দুটি হাইড্রোজেন পরমাণু বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে একটি হাইড্রোজেন অণু (H2) এবং দুটি হাইড্রোজেন পরমাণুর সাথে একটি অক্সিজেন পরমাণু বন্ধনে সংযুক্ত হয়ে পানির অণু (H2O) গঠন করে।

পদার্থবিজ্ঞানে প্রযোজ্য আণবিক বন্ধনসমূহ নিম্নরূপঃ

১. আয়নিক বন্ধন (Ionic bond)

২. সমযোজী বন্ধন (Covalent bond)

৩. ধাতব বন্ধন (Metalic bond)

৪. ভ্যান ভার ওয়ালস্ বন্ধন (Van der Waals bond)

এদের সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হল :

আয়নিক বন্ধন

আমরা জানি যে, কোনো কঠিন পদার্থে অণু বা আয়নগুলো যে অবস্থান দখল করে থাকে, তাকে বলা হয় ল্যাটিস বিন্দু। আয়নিক বন্ধনে ধনাত্মক ও ঋণাত্মক আয়ন ল্যাটিস বিন্দু দখল করে থাকে। এসব আয়নের মধ্যকার স্থির তড়িৎ আকর্ষণ আয়নিক বা তড়িৎযোজী বন্ধন তৈরি করে। এই আকর্ষণ বল খুবই প্রবল। সুতরাং এই বন্ধনে তৈরি পদার্থ খুবই শক্ত এবং এদের গলনাঙ্কও অনেক বেশি। এসব পদার্থের তড়িৎ পরিবাহিতা খুব কম। আয়নিক বন্ধন দ্বারা যে পদার্থ তৈরি হয় তাদের বলা হয় আয়নিক কঠিন পদার্থ। আয়নিক বন্ধন কখনো দুটি অধাতু পরমাণু বা দুটি ধাতু পরমাণুর মধ্যে গঠিত হয় না। দুটি বিপরীতধর্মী মৌল যেমন- ধাতু ও অধাতুর মধ্যে সৃষ্ট আয়নিক বন্ধন দ্বারা যৌগ গঠিত হয়। এ ধরনের যৌগ হলো সোডিয়াম ক্লোরাইড। সোডিয়াম ও ক্লোরিনের পরমাণু সমন্বয়ে সোডিয়াম ক্লোরাইড গঠিত হয়।

 

সমযোজী বন্ধন

একই বা ভিন্ন দুটি অধাতুর পরমাণুর মধ্যে সমযোজী বন্ধন গঠিত হয়। পারিপার্শ্বিক পরমাণুগুলো পরস্পরের সাথে ইলেকট্রন শেয়ার করে এই বন্ধন তৈরি করে। এ রকম সমযোজী বন্ধন কোনো স্থানে বিস্তৃত হয়ে কঠিন পদার্থের বৃহৎ কাঠামো তৈরি করে। সিলিকন ইত্যাদি সমযোজী কঠিন পদার্থের উদাহরণ। হীরক গঠনে প্রতিটি কার্বন পরমাণু পারিপার্শ্বিক চারটি কার্বন পরমাণুর সাথে বন্ধন তৈরি করে। এরা যথেষ্ট শক্ত , উচ্চ গলনাঙ্কবিশিষ্ট এবং তড়িৎ কুপরিবাহী।

 

ধাতব বন্ধন

কোনো ধাতুর মধ্যে যে আকর্ষণ বল পরমাণুগুলোকে পরস্পরের সাথে আটকে রাখে তাকে ধাতব বন্ধন বলা হয়। ধাতুতে ল্যাটিস বিন্দুতে ধনাত্মক আয়ন থাকে। এই আয়ন উপাদানিক পরমাণু থেকে এক বা একাধিক ইলেকট্রনকে আলাদা করে তৈরি হয়। এসব ইলেকট্রন অত্যন্ত সচল এবং ধাতব কঠিন পদার্থের সর্বত্র গ্যাসের অণুর মতো ঘুরে বেড়ায়। এই ইলেকট্রনগুলো কোনো পরমাণুর থাকে না বরং সমগ্র বস্তুখণ্ডের অংশ হয়ে যায়। ধাতুতে পরমাণুগুলো ইলেকট্রন হারিয়ে ধনাত্মক আধানে আহিত আয়নে রূপান্তরিত হয় এবং একটি ত্রিমাত্রিক ল্যাটিসে বিন্যস্ত হয়। এ যেন ইলেকট্রনের সমুদ্রে ডুবন্ত ধাতব আয়ন। মুক্ত ইলেকট্রন থাকার কারণে ধাতু তড়িৎ সুপরিবাহী।

 

ভ্যান্ডারওয়ালস বন্ধন

এই বন্ধন দ্বারা আণবিক কঠিন পদার্থ তৈরি হয়। পরমাণুগুলোর মধ্যে সমযোজী বন্ধনের মাধ্যমে এ ধরনের কঠিন পদার্থ তৈরি হয়। অণুগুলোর মধ্যে বন্ধন নির্ভর করে অণুগুলো পোলার (Polar) বা অ-পোলার (non-polar) কিনা তার উপর। কোনো অণুর ঋণাত্মক আধানের কেন্দ্র যদি ধনাত্মক আধানের সাথে সমাপতিত হয় তাহলে অণুটিকে বলা হয় অ-পোলার। হাইড্রোজেন, অক্সিজেন ও ক্লোরিনের অণুগুলো এ ধরনের অণু। অন্যথায়, অণুটিকে বলা হয় পোলার অণু। পানির অণু হলো পোলার অণু। পোলার অণুগুলোর মধ্যকার বন্ধনকে বলা হয় দ্বিপোল-দ্বিপোল বন্ধন। অ-পোলার অণুগুলোর মধ্যকার বন্ধনকে বলা হয় ভ্যানডার ওয়ালস বন্ধন। আণবিক কঠিন পদার্থ সাধারণত নরম এবং নিম্ন গলনাঙ্কবিশিষ্ট হয়। এরা তড়িৎ কুপরিবাহী।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments