HomePhysicsপরিমাপের ত্রুটি কাকে বলে? পরিমাপের ত্রুটি কত প্রকার ও কি কি?

পরিমাপের ত্রুটি কাকে বলে? পরিমাপের ত্রুটি কত প্রকার ও কি কি?

যেকোনো পরিমাপ যন্ত্রের সাহায্যেই পরিমাপ করা হোক না কেন সব পরিমাপের ফলাফলে কিছুটা অনিশ্চয়তা থাকবে। এ অনিশ্চয়তাকে পরিমাপের ত্রুটি (Errors in Measurements) বলে।

পদার্থবিজ্ঞান পরিমাপের বিজ্ঞান। পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় বিভিন্ন রাশি পরিমাপ করা অন্যতম প্রধান কাজ। কিন্তু এই পরিমাপের সময় কিছু ত্রুটি থাকেই। এটি কোন পরিমাপ্য রাশির অনুমতি অনিশ্চয়তার (Estimated uncertainty) সূচক। ‘ত্রুটি’ (Error) এবং ‘ভুল’ (Mistake)-দুটি ভিন্ন বিষয়। অশুদ্ধ (Incorrect) পাঠ বা অযথার্থ (Improper) গণনা যা পরীক্ষণকারীর অসাবধানতার জন্য উদ্ভুত তা-ই হচ্ছে ভুল। ভুল সম্পূর্ণরূপে সংশোধনযোগ্য কিন্তু ত্রুটি সম্পূর্ণরূপে সংশোধন বা দূর করা যায় না, ন্যূনতম করা যায়।

 

পরিমাপের ত্রুটি কত প্রকার ও কি কি?

পরিমাপের সময় মূলত চার ধরনের ত্রুটি দেখা যায়। যথা-

১. যান্ত্রিক ত্রুটি

২. পর্যবেক্ষণজনিত ত্রুটি

৩. দৈব বা এলোমেলো ত্রুটি (Random error)

৪. পুনরাবৃত্তিক বা ব্যবস্থাগত ত্রুটি (Systemic error)

 

যান্ত্রিক ত্রুটি (Instrumental Error)

পরীক্ষার জন্য যে সমস্ত যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় তাতে কিছু ত্রুটি থাকতে পারে। এ সকল ত্রুটিকে যান্ত্রিক ত্রুটি বলে। যন্ত্রে প্রধানত যেসব ত্রুটি দেখা যায় তা নিচে তুলে ধরা হলো:

(১) শূন্য ত্রুটি (Zero error)

(২) পিছট ত্রুটি (Backlash error)

(৩) লেভেল ত্রুটি বা অনুভূমিক রেখা ত্রুটি (Level error or Horizontal line error)

  • শূন্য ত্রুটিঃ ভার্নিয়ার স্কেল, স্লাইড ক্যালিপার্স, স্ক্রু গেজ ও স্ফেরোমিটারের প্রধান স্কেলের শূন্য দাগ যদি ভার্নিয়ার বা বৃত্তাকার স্কেলের শূন্য দাগের সাথে না মেলে তাহলে এই ধরনের ত্রুটি দেখা দেয়। এর ফলে পরীক্ষালব্ধ পাঠ প্রকৃত পাঠের চেয়ে কম বা বেশি হতে পারে। শূন্য ত্রুটির পরিমাপ নির্ণয় করে আপাত পাঠ থেকে তা বিয়োগ করে প্রকৃত পাঠ নির্ণয় করা হয়।
  • পিছট ত্রুটিঃ যে সকল যন্ত্র, নাট ইত্যাদি নীতির উপর ভিত্তি করে তৈরি, সে সকল যন্ত্র একটু পুরানো হলে সাধারণত এই ধরনের ত্রুটি দেখা দেয়। কারণ বহু ব্যবহারের ফলে নাটের গর্ত বড় হয়ে যেতে পারে বা স্ক্রু ক্ষয় হয়ে আলগা হয়ে যায়। ফলে স্ক্রু উভয় দিকে একই পরিমাণ ঘূর্ণনের ফলে একই পরিমাণ দূরত্ব অতিক্রম করে না। এই জাতীয় ত্রুটিকে পিছট ত্রুটি বলে। পাঠ নেওয়ার সময় স্ক্রুকে একই দিকে ঘুরিয়ে পাঠ নিলে এই ত্রুটির হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
  • লেভেল ত্রুটিঃ নিক্তি, ট্যানজেন্ট গ্যালভানোমিটার, বিক্ষেপী চৌম্বক মাপক ইত্যাদি যন্ত্রকে ঠিকমত অনুভূমিক করে না নিলে পাঠ নির্ণয়ে ভুল হয়। লেভেলি স্ক্রু বা স্পিরিট লেভেলের সাহায্যে যন্ত্রগুলো যথাযথ লেভেল করে নিতে হয়।

 

পর্যবেক্ষণজনিত ত্রুটি (Observational error)

পর্যবেক্ষণজনিত ত্রুটি বিভিন্নভাবে হতে পারে। যেমন-

(১) ব্যক্তিগত ত্রুটি (Personal error)

(২) প্রান্ত-দাগ ত্রুটি (End-division error)

(৩) লম্বন ত্রুটি (Parallax error)

(৪) সূচক ত্রুটি (Index error)

(৫) পরিবেশগত ত্রুটি (Environmental error)

  • ব্যক্তিগত ত্রুটি (Personal error) : যে কোনো পর্যবেক্ষণের মান বিভিন্ন ব্যক্তির জন্যে বিভিন্ন রকম হতে পারে। আবার একই ব্যক্তি একই পর্যবেক্ষণ কয়েকবার করলে প্রতিবারই পৃথক মান পেতে পারেন। যেমন, কোনো এক সময় কয়েকজন পর্যবেক্ষক যদি একই সরল দোলকের দোলনকাল নির্ণয় করেন তাহলে দেখা যাবে যে, বিভিন্ন ব্যক্তির পাওয়া মান বিভিন্ন হয়েছে। আবার একই ব্যক্তি যদি কয়েকবার দোলনকাল নির্ণয় করেন তাহলে প্রতিবারই পৃথক মান পাওয়া যেতে পারে। মাপের এই বিভিন্নতা ব্যক্তির চিন্তাধারা, মানসিকতা, শারীরিক অবস্থা সব কিছুর উপর নির্ভর করে। এ প্রকার ত্রুটিকে ব্যক্তিগত ত্রুটি বলে। একই রাশির অনেকগুলো পাঠ নিয়ে গড় পাঠ বের করলে এ ত্রুটি কিছুটা কমানো যায়। তবে এই ত্রুটি একেবারে দূর করা যায় না।
  • প্রান্ত-দাগ ত্রুটি (End-division error) : দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে কোনো স্কেলের প্রান্তের দাগ ক্ষয়ে যেতে পারে বা অস্পষ্ট হয়ে পড়তে পারে। ফলে, প্রান্ত দাগ ব্যবহার করে পরিমাপ নিলে তাতে ভুল হয়ে যেতে পারে। তাই স্কেলের মাঝামাঝি অংশ ব্যবহার করে পাঠ নিলে এ ধরনের ত্রুটি এড়ানো যায়।
  • লম্বন ত্রুটি (Parallax error) : দৃষ্টির দিক পরিবর্তনের সাথে সাথে কোনো লক্ষ্যবস্তুর অবস্থানের আপাত পরিবর্তনকে লম্বন বলে। এ কারণে পরিমাপে যে ভুল হয় তাকে লম্বন ত্রুটি বলে।
  • সূচক ত্রুটি (Index error) : সাধারণত আলোক বেঞ্চে এ ধরনের ত্রুটি দেখা দেয়। বেঞ্চের স্ট্যান্ডের গায়ে সূচক দাগ থাকে। দুটি স্ট্যান্ডের সূচক দাগের মধ্যবর্তী দূরত্ব এবং স্ট্যান্ডের উপর রাখা বস্তুদ্বয়ের (পিন ও দর্পণ বা লেন্স) মধ্যবর্তী প্রকৃত দূরত্ব সমান নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে সূচক দাগ দেখে পাঠ নিলে যে ভুল হয় তাকে সূচক ত্রুটি বলে। সূচক দন্ড ব্যবহার করে এ ত্রুটির পরিমাণ নির্ণয় করা যায় এবং আপাত পাঠ থেকে এই ত্রুটি বাদ দিয়ে প্রকৃত পাঠ নির্ণয় করা হয়।
  • পরিবেশগত ত্রুটি (Environmental error) : তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, ভূ-পৃষ্ঠে থেকে উচ্চতা ইত্যাদি নৈসর্গিক কারণে পরীক্ষালব্ধ পাঠ প্রকৃত পাঠ থেকে পৃথক হতে পারে। যেমন আপেক্ষিক গুরুত্ব নির্ণয়ের সময় আমরা যে পানি ব্যবহার করি সে পানির তাপমাত্রা 4°C এ থাকে না, পরীক্ষাগারের তাপমাত্রায় থাকে। এই পানি ব্যবহার করে যে আপেক্ষিক গুরুত্ব পাওয়া যাবে তা প্রকৃত আপেক্ষিক গুরুত্ব হবে না। প্রকৃত আপেক্ষিক গুরুত্ব পাওয়ায় জন্যে পরীক্ষালব্ধ মানকে পরীক্ষাগারের তাপমাত্রার পানির আপেক্ষিক গুরুত্ব দিয়ে গুণ করতে হবে।

 

এলোমেলো ত্রুটি (Random error)

ঘরের দৈর্ঘ্য মাপার জন্য যতবারই মিটার স্কেলটি ঘরের মেঝেতে ফেলা হয় ততবারই এলোমেলো ত্রুটি পরিমাপের অন্তর্ভুক্ত হয়। প্রত্যেক বার মিটার স্কেল ফেলার পর এর সম্মুখ প্রান্তের অবস্থান চিহ্নিত করার জন্য মেঝেতে যে দাগ দেওয়া হয়, তা প্রকৃত দাগ থেকে কিছুটা সামনে বা পেছনে দেওয়া হয়। এ দাগের সাথে মিলিয়ে যখন আবার মিটার স্কেলটি ফেলা হয় তখন আরও একটি এলোমেলো ত্রুটি পরিমাপে এসে যায়। এ দাগের সাথে মিলানোর সময়ও স্কেলটির পেছনের প্রান্তে কখনো দাগের কিছুটা সম্মুখে বা পিছনে মিলানো হয়। এলোমেলো ত্রুটির ফলে চূড়ান্ত ফলাফল হয়তো অত্যন্ত বেশি বা খুব কম হয়ে যেতে পারে। এলোমেলো ত্রুটিকে এড়ানোর সম্ভব নয়। কিন্তু সতর্কতা অবলম্বন করলে এ ত্রুটি কমিয়ে আনা যায়। এলোমেলো ত্রুটিকে কমিয়ে আনতে হলে পরিমাপটি বার বার নিয়ে এদের গড় নিতে হয়।

 

পুনরাবৃত্তিক বা ব্যবস্থাগত ত্রুটি (Systematic error)

পরীক্ষণের কার্যধারা ও যন্ত্রপাতির ত্রুটিজনিত যে ত্রুটি তাকে বলা হয় পুনরাবৃত্তিক বা ব্যবস্থাগত ত্রুটি। উপরোক্ত ঘরের দৈর্ঘ্য পরিমাপে পুনরাবৃত্তিক বা ব্যবস্থাগত ত্রুটি তখনই থাকবে যদি মিটার স্কেলটি 1 মিটারের চেয়ে সামান্য বড় বা ছোট হয় অথবা মিটার স্কেল মাপার সময় যে দাগ দেওয়া হয় তা যদি সব সময় প্রকৃত স্থান থেকে খানিকটা এগিয়ে বা পিছিয়ে দেওয়া হয়। মিটার স্কেলটি যদি 1 মিটার থেকে সামান্য বড় হয় আর প্রত্যেক বার এ সম্মুখ প্রান্তের জন্য দাগ যদি কিছুটা এগিয়ে দেওয়া হয় তাহলে ঘরের দৈর্ঘ্য প্রকৃত দৈর্ঘ্যের চেয়ে ছোট হবে। আবার মিটার স্কেলটি যদি 1 মিটারের চেয়ে সামান্য ছোট হয় আর এক সম্মুখ প্রান্তের জন্য দাগটা যদি কিছুটা পিছিয়ে কাটা হয় তাহলে ঘরের দৈর্ঘ্য প্রকৃত দৈর্ঘ্যের চেয়ে বড় হবে। পুনরাবৃত্তিক ত্রুটি নির্ণয় করতে হলে এবং তার পরিমাপ নিতে হলে যন্ত্রপাতি ও কার্যধারাকে বার বার যাচাই করতে হয়।

 

এ সম্পর্কে আরো জানুনঃ–

১। কোনো কিছুর পরিমাণ নির্ণয় কে কি বলে?

উত্তর : পরিমাপ।

২। পরিমাপের সময় কয় ধরনের ত্রুটি হতে পারে?

উত্তর : ৩।

৩। পরীক্ষণের জন্য যন্ত্রের ত্রুটিকে কী বলে?

উত্তর : যান্ত্রিক ত্রুটি।

৪। প্রকৃত মানের তুলনায় পরিমাপ করা মাপের পার্থক্যকে কী বলে?

উত্তর : চূড়ান্ত ত্রুটি।

৫। যান্ত্রিক ত্রুটি কী?

উত্তর : পদার্থবিজ্ঞানে পরীক্ষণের জন্য তথা মাপ জোখের জন্যে আমাদের যন্ত্রের প্রয়োজন হয়। সেই যন্ত্রে যদি ত্রুটি থাকে তাকে যান্ত্রিক ত্রুটি বলে।

৬। পরিমাপের ত্রুটিকে প্রধানত কয় ভাগে ভাগ করা হয়?

উত্তর : পরিমাপের ত্রুটিকে প্রধানত দু’ভাগে ভাগ করা হয়। যথা : (১) নিহিত বা পুনরাবৃত্তিক ত্রুটি (Systemic error) এবং (২) দৈব বা এলোমেলো ত্রুটি (Random error)।

 

Tags :

  • পরিমাপের ত্রুটি কি?;
  • পরিমাপের পরম ত্রুটি কত?
  • শূন্য ত্রুটি কাকে বলে?; দৈব ত্রুটি কাকে বলে?; আপেক্ষিক ত্রুটির অংক; শতকরা ত্রুটি কাকে বলে?; লম্বন ত্রুটি কাকে বলে?; কোসাইন ত্রুটি কাকে বলে?;
  • parallax error কোন ধরনের ত্রুটি?
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments