হাদিস কাকে বলে? হাদিসের প্রকারভেদ ও গুরুত্ব
হাদিস আরবি শব্দ। এর অর্থ কথা, বাণী ইত্যাদি। ইসলামি পরিভাষায় মহানবি হযরত মুহাম্মাদ (স.) এর বাণী, কর্ম ও মৌনসম্মতিকে হাদিস বলে। একে কুরআনের ব্যাখ্যা বলা হয়। এটি কুরআন বুঝার পথকে সহজ করে দেয়।
ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায়, “মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর কথা, কাজ, অনুমোদন ও মৌনসম্মতিকে হাদিস বলে।”
ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, “হাদিস এমন একটি শাস্ত্র যার মাধ্যমে মহানবী (সাঃ) এর বক্তব্য বা কথা ও অবস্থা সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়।”
ড. মুহাম্মদ ত্বহান বলেছেন, “যে কথা, কাজ ও সমর্থনের সম্বন্ধ মহানবী (সাঃ) এর দিকে করা হয়েছে তাকে হাদিস বলে।”
নূরুল আনওয়ার গ্রন্থে বলা হয়েছে, “শুধুমাত্র রাসূল (সাঃ) এর বাণীকেই হাদিস বলা হয়।”
মিজানুল আকবর প্রণেতার মতে, “রাসূল পাক (সাঃ) এর সাথে সম্পর্কিত কথা, কাজ ও মৌনসম্মতিকে হাদিস বলা হয়।”
জমহুর মুহাদ্দিস-ই কিরাম এর মতে, “মহানবী (সাঃ) ও সাহাবী কিরাম এর কথা কাজ ও মৌনসম্মতিকে হাদিস বলে।”
অধিকাংশ মুহাদ্দিসিনে কিরামের মতে, “মহানবী (সাঃ) এর কথা, কাজ ও মৌনসম্মতি এবং সাহাবী ও তাবেঈগণের বক্তব্যকে হাদিস বলে।”
হাদিসের প্রকারভেদ
বিভিন্ন দিক থেকে হাদিসকে বিভিন্নভাবে ভাগ করা যায়। যেমন–
মতন বা হাদিসের মূল বক্তব্যের উপর ভিত্তি করে হাদিসকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যথা–
১. কাওলি,
২. ফি‘লি এবং
৩. তাকরিরি।
মতনের দিক থেকে হাদিস ৩ প্রকার। যথাঃ-
- হাদিস-ই- মারফু
- হাদিস-ই- মাওকুফ
- হাদিস-ই- মাকতু
যে হাদিসের সনদ সরাসরি মহানবী (সাঃ) পর্যন্ত পৌঁছেছে তাকে হাদিসে হাদিসে মারফু বলে।
যে হাদিসের সনদ মহানবী (সাঃ) পর্যন্ত পৌঁছে নাই এবং সাহাবী কিরাম (রাঃ) পর্যন্ত পৌঁছেছে তাকে হাদিসে মাওকুফ বলে।
যে হাদিসের সনদ তাবেঈ (রহঃ) পর্যন্ত পৌঁছেছে তাকে হাদিসে মাকতু বলে। অন্যকথায়, যে হাদিসে কোনো তাবিঈর বাণী, কাজ ও মৌন সম্মতি বর্ণিত হয়েছে তাকে মাকতু হাদিস বলা হয়।
কোন কোন মুহাদ্দিসগণ এর সাথে আরেকটি প্রকার সংযুক্ত করেছেন সেটি হলো হাদিসে কুদসি।
হাদিসে কুদসীঃ যে হাদীসের ভাব ভাষা দুটিই আল্লাহ তায়ালার তবে সেটি মহানবী (সাঃ) বর্ণনা করেছেন, তাকে হাদিসে কুদসি বলে।
রাবী বাদ পড়া হিসাবে হাদিস দুই প্রকার।যথাঃ
- মুত্তাছিল হাদিস
- মুনকাতে হাদিস
যে হাদিসের সনদের ধারাবাহিকতা সর্বস্তরে ঠিক রয়েছে কোথাও কোন রাবী বাদ পড়ে নি তাকে মুত্তাছিল হাদিস বলে।
যে হাদিসের সনদের মধ্যে কোন রাবীর নাম বাদ পড়েছে তাকে মুনকাতে হাদিস বলে।
মুনকাতে হাদিস আবার তিন প্রকারঃ
- মুরসাল হাদিস
- মুয়াল্লাক হাদিস
- মুদাল হাদিস
যে হাদিসে শেষের দিকে রাবীর নাম বাদ পড়েছে অর্থাৎ সাহাবীদের নামই বাদ পড়েছে তাকে মুরসাল হাদিস বলে।
যে হাদিসের সনদের প্রথম দিকে রাবীর নাম বাদ পড়েছে অথার্ৎ সাহাবীর পর তাবেয়ী, তাবে তাবেয়ীর নাম বাদ পড়েছে তাকে মুয়াল্লাক হাদিস বলে।
যে হাদিসে দুই বা ততোধীক রাবী ক্রমান্বয়ে সনদ থেকে বিলুপ্ত হয়েছে তাকে মুদাল হাদিস বলে।
বিশুদ্ধতার বিচারে হাদিস ৩ প্রকার। এগুলো হলো–
- সহীহ হাদিস
- হাসান হাদিস
- যঈফ হাদিস
সহীহ হাদিসঃ যে হাদীসের বর্ণনাকারীদের বর্ণনার ধারাবাহিকতা রয়েছে এবং সনদের প্রতিটি স্তরে বর্ণনাকারীর নাম, বর্ণানাকারীর বিশ্বস্ততা, আস্তাভাজন, স্বরণশক্তি অত্যন্ত প্রখর এবং কোনস্তরে তাদের সংখ্যা একজন হয়নি তাকে সহীহ হাদিস বলে।
হাসান হাদিসঃ যে হাদীসে সহীহ হাদীসের সব গুনই রয়েছে, তবে তাদের স্বরণ শক্তির যদি কিছুটা দুর্বলতা প্রমাণিত হয়েছে, তাকে হাসান হাদিস বলে।
যঈফ হাদিসঃ হাসান, সহীহ হাদীসের গুন সমুহ যে হাদীসে পাওয়া না যায় তাকে যঈফ হাদিস বলে।
সনদের ভিত্তিতে হাদিস আবার ৪ প্রকার। যথাঃ
- হাদিস-ই-মুত্তাসিল
- হাদিস-ই-মুনকাতেঈ
- হাদিস-ই- মাউযু
- হাদিস-ই-মাতবুক
এছাড়াও আরও অনেক প্রকার হাদিস রয়েছে।
হাদিসের গুরুত্ব
হাদিস শরিফ নবি করিম (স.) এর জীবনের সকল কাজকর্মের সংরক্ষক। এর মাধ্যমেই আমরা মহানবি (স.) এর সকল নির্দেশনা ও শিক্ষা জানতে পারি। সুতরাং পুণ্য ও ন্যায়ের পথে চলার জন্য হাদিস শরিফের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। তাছাড়া হাদিস ইসলামি জীবনব্যবস্থার দ্বিতীয় উৎস। আল-কুরআনের পরই এর স্থান। হাদিস আল-কুরআনের ব্যাখ্যা স্বরূপ। তিনি যেসব বিধান সাহাবিগণকে হাতে-কলমে শিক্ষা দিয়েছেন। হাদিস জানার মাধ্যমে আমরা এগুলো জানতে পারি। আল্লাহ তাআালা বলেন, ‘রাসুল তোমাদের যা দেন তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা তোমাদের নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক।’ আল্লাহ তাআলার এ বাণীতে হাদিসের গুরুত্ব ফুটে উঠেছে।