স্কার্ভি কি? স্কার্ভি এর লক্ষণ এবং প্রতিরোধের উপায় কি?

স্কার্ভি (Scurvy) একটি ভিটামিন-সি এর অভাবজনিত রোগ। এই রোগের ফলে মাড়ি থেকে রক্তপাত হয় এবং অকালে দাঁত পড়ে যায়।

 

স্কার্ভি রোগের উপসর্গসমূহ

প্রাথমিক উপসর্গের মধ্যে রয়েছে অসুস্থতা বোধ ও তন্দ্রা। এক থেকে তিন মাস পরে রোগীর অস্থি ব্যথা ও ঘনঘন শ্বাস হয়। কারনিটিন উৎপাদন কমে যাওয়ার জন্য পেশিব্যথা হতে পারে। অন্যান্য লক্ষণের মধ্যে অন্যতম হলো ত্বকের পরিবর্তন যেমন, ত্বক খসখসে হয়ে যাওয়া, সহজে কালশিরা পড়া ও লাল বিন্দুর মতো ফুসকুড়ি (পিটেকি), মাড়ির রোগ, দাঁত ঢিলা হয়ে যাওয়া, ক্ষত নিরাময়ে বিলম্ব হওয়া ও আবেগীয় পরিবর্তন (যেটা কোনো শারীরিক পরিবর্তন ঘটার পূর্বেই দেখা দিতে পারে)। শৌগ্রেন সিনড্রোম এর মতো চোখ ও মুখ শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। পরবর্তীতে জন্ডিস, সর্বশরীরের স্ফীতি, প্রস্রাব কমে যাওয়া (অলিগিউরিয়া), স্নায়ুরোগ, জ্বর, খিঁচুনি ও এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

 

স্কার্ভি রোগের লক্ষণ

  • দাঁতের গোড়া ফুলে স্পঞ্জের মত হয়ে যাওয়া ও সেখান থেকে রক্তপড়া ও দাঁত নড়বড় করা স্কার্ভির প্রধান লক্ষণ। এইক্ষেত্রে দাঁত নড়ে যেতে এবং শেষ পর্যন্ত দাঁত পড়েও যেতে পারে।
  • হাত-পায়ের গিঁটে ব্যাথা হয়।
  • অল্পতেই ত্বকের নিচে রক্ত ক্ষরণ হয়ে কালাশিরা পড়ে এবং শরীরে কোন ক্ষত হলে সহজে সারতে চায় না।
  • ভিটামিন সি’এর অভাব হলে এনিমিয়া হয় এবং শরীরে পানি জমে ফুলে যায়।
  • শিশুদের স্কার্ভি হলে তাদের পায়ের হাঁটুতে ব্যথা হওয়ায় চুপচাপ পা গুটিয়ে শুয়ে থাকতে পছন্দ করে। এসব শিশুদের কোলে নিলেই কান্নাকাটি করে। এই সব শিশুদের মেজাজ খুব খিটখিটে হয়ে যায়।
  • স্কার্ভিতে আক্রান্ত হলে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কমে যায় এর ফলে সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতাও বৃদ্ধি পায়। মারাত্মক স্কার্ভির কারণে মৃত্যুও হতে পারে।

 

স্কার্ভি রোগের প্রতিকার

  • আকস্মিক মৃত্যুর আশংকা থাকায় দেরি না করে কৃত্রিম এসকরবিক এসিড পর্যাপ্ত মাত্রায় প্রদান করতে হবে।
  • তাজা শাক-সবজি ও ফল বিশেষ করে টকজাতীয় ফল (যেমন- লেবু, আমলকি, পেয়ারা, জাম্বুরা ইত্যাদি) পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ করতে হবে।
  • যতদূর সম্ভব বিধিসম্মত পদ্ধতিতে শাক-সবজি সম্বলিত সহজলভ্য ও পর্যাপ্ত খাদ্য রোগীর রুচি অনুযায়ী সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • যথাযথ চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এর নিরাময় যেমন দ্রুত এবং তেমনি সম্পূর্ণ রূপে মুক্ত হওয়াও সম্ভব।

 

স্কার্ভি রোগের প্রতিরোধ

স্কার্ভি প্রতিরোধের জন্য নিচের ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করা যেতে পারেঃ

  • প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে টাটকা শাক-সবজিকে প্রাধান্য দিতে হবে এবং প্রতিদিনই কিছু পরিমাণে টকজাতীয় ফল যেমন (লেবু, বাতাবিলেবু, আমড়া, কাঁচা পেয়ারা, আমলকি ইত্যাদি) মৌসুমী ফল খাওয়া ভাল। এতে করে ভিটামিন সি’এর অভাব জনিত রোগকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
  • যাদের স্কার্ভি হওয়ার ঝুঁকি আছে তাদের ভিটামিন সি-এর পরিপূরক দিতে হবে।
  • ২ বছরের নিচের বয়সের শিশুরা যারা বোতলে দুধ খায় তাদেরকে প্রতিদিন কিছু পরিমাণে ফলের রস খাওয়ালে তাদের চাহিদা মিটানো সম্ভব হবে।
  • যারা টিনে সংরক্ষিত খাদ্য গ্রহণ করেন যেমন- অভিযাত্রী দল, অনুর্বর এলাকায় কর্মরত সৈন্যদল তাদের জন্য স্কার্ভির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন। এই সব ক্ষেত্রে কৃত্রিম এসকরবিক এসিড সেবন করতে হবে।

Leave a Comment