HomeBlogপুষ্টিহীনতা বা অপুষ্টি কাকে বলে?

পুষ্টিহীনতা বা অপুষ্টি কাকে বলে?

খাদ্যে পুষ্টি উপাদানসমূহের কোনটি কম থাকলে কিংবা না থাকলে দেহে পুষ্টির অভাব ঘটে। দেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাবজনিত ঘটনাকে পুষ্টিহীনতা বা অপুষ্টি বলে।

পুষ্টিহীনতার কারণ :

পুষ্টিহীনতার প্রধান কারণ অজ্ঞতা ও অসচেতনতা। পরিবারের বাড়ন্ত শিশুদের চাহিদা বাদ দিয়ে বয়স্ক ব্যক্তিদের মাছের মাথা, দুধের সর, পনির, চর্বিসহ মাছ বা মাংসের বড় টুকরা পরিবেশন করা মারাত্মক ভুল। বয়স্ক লোকের যেমন আমিষ ও চর্বির চাহিদা কম হয় তেমনি এর বিপরীতে বাড়ন্ত শিশু, কিশোর-কিশোরীদের চাহিদা হয় অনেক বেশি। খাদ্য পরিবেশনে ভুল নীতির পুষ্টিহীনতার কারণে সৃষ্টি হয়।

পুষ্টিহীনতার প্রতিকার :

১। দামি খাদ্যের পরিবর্তে একই পুষ্টিমান ও উপাদানসমৃদ্ধ কম মূল্যের খাদ্যের বিষয়ে পরিবারের প্রধানকে জানতে ও জানাতে হবে।

২। খাদ্য সম্পর্কে কুসংস্কার বা ভ্রান্ত ধারণা যেমন : হাঁসের ডিম, বোয়াল মাছ, মিষ্টি কুমড়া প্রভৃতি খাওয়া যাবে না; এ ধারণা পরিহার করতে হবে।

৩। বাবা-মাকে পুষ্টিমানযুক্ত খাবারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানতে হবে।

৪। অধিক সময় ধরে রান্না করলে অনেক শাকসবজি খাব্বরের খাদ্যগুণ নষ্ট হয় তা মাকে জানাতে হবে।

৫। শাকসবজি রান্নার আগে ধুয়ে নিতে হবে। কাটার পর ধোয়া চলবে না।

৬। আমিষ জাতীয় খাদ্যের অভাব পূরণের জন্যে বাড়িতে হাঁস, মুরগি, গাভী পালনের জন্যে অভিভাবকদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

৭। বড় মাছের দাম বেশি বলে এগুলোর পরিবর্তে ছোট মাছ খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

৮। খাদ্য উপাদান অনুসারে একটি তালিকা তৈরি করে সেখান থেকে দৈনন্দিন খাদ্য বাছাই করে পরিবারে জোগান দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

৯। পুষ্টি, পুষ্টিহীনতা প্রতিকার প্রভৃতি বিষয়ে রেডিও, টিভি, সংবাদপত্রের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে।

 

অপুষ্টি জনিত রোগ কাকে বলে?

অপুষ্টি অর্থাৎ শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানের অভাবের কারণে যে রোগ সৃষ্টি হয় তাকে অপুষ্টিজনিত রোগ বলে। শরীরের স্বাভাবিক কার্যকলাপ, ক্ষয়পূরণ ও রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানের অভাবে অপুষ্টিজনিত অবস্থার সৃষ্টি হয়। দীর্ঘ সময় অপুষ্টিতে ভুগলে শরীর সহজেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। রাতকানা, রিকেটস, স্কার্ভি ইত্যাদি হলো কয়েকটি অপুষ্টিজনিত রোগ।

 

রাতকানা

ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবে রাতকানা রোগ হয়। সাধারণত দুই থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের মধ্যে এ রোগ বেশি দেখা দেয়।

রাতকানা রোগের লক্ষণ :

রাতকানা রোগের দুটি লক্ষণ হলো–

  • রাতকানা রোগ হলে রোগী সবকিছু ঝাপসা দেখে।
  • অল্প আলোতে ভালোভাবে দেখতে পায় না।

 

রিকেটস (Rickets)

রিকেটস ভিটামিন ‘ডি’ এর অভাবজনিত একটি রোগ, যাতে দেহের হাড় দুর্বল হয়ে যায়, গাঁট ফুলে যায়, পায়ের হাড় বেঁকে যায় ও সরু হাড় ভাঁজ খেয়ে যায়।

রিকেটস রোগের লক্ষণসমূহ হলো—

  • ভিটামিন ডি এর অভাবে শিশুদের হাড় নরম হয়ে যায় এবং বৃদ্ধি-ব্যাহত হয়।
  • পায়ের হাড় ধনুকের মতো বেঁকে যায় এবং দেহের চাপে অন্যান্য হাড়গুলো বেঁকে যায়।
  • হাত-পায়ের অস্থিসন্ধি বা গিট ফুলে যায়।
  • বুকের হাড় বা পাঁজরের হাড় বেঁকে যায়।

বয়স্কদের রিকটেস অস্টিওম্যালেশিয়া নামে পরিচিত। এই রোগের লক্ষণগুলো নিম্নরূপ–

  • ভিটামিন ‘ডি’ এর অভাবে ক্যালসিয়াম শোষণে বিঘ্ন ঘটে।
  • ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের সঞ্চয় কমতে থাকে।
  • থাইরয়েড গ্রন্থির কাজের পরিবর্তন ঘটে।
  • অস্থি দূর্বল হয়ে কাঠিন্য কমে যায় এবং হালকা আঘাতেই ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।

 

স্কার্ভি

ভিটামিন-সি এর অভাবজনিত একটি রোগ। এ রোগের প্রাথমিক উপসর্গগুলো হলো দুর্বলতা, ক্লান্তিবোধ ও হাত-পায়ে ব্যথা। চিকিৎসা না করলে রক্তশূন্যতা, মাড়ির রোগ, চুলের পরিবর্তন ও ত্বক থেকে রক্তপাত ঘটতে পারে। রোগের অবস্থা খারাপ হতে থাকলে আরও কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায় যেমন ক্ষত নিরাময়ে দেরি হওয়া, ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন ও সর্বশেষে সংক্রমণ বা রক্তপাতজনিত কারণে মৃত্যুও হতে পারে।

 

Tags :

  • রাতকানা রোগ কেন হয়?
  • রাতকানা রোগের লক্ষণ কি?
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments