HomeBlogব্যাকরণ কাকে বলে? ব্যাকরণের কাজ কি?

ব্যাকরণ কাকে বলে? ব্যাকরণের কাজ কি?

ব্যাকরণ হচ্ছে ভাষার নিয়ম-কানুন শেখার মাধ্যমে। অর্থাৎ, কোনো ভাষাকে শুদ্ধভাবে লিখতে, পড়তে ও বলতে যে নিয়ম-কানুনের প্রয়োজন হয় তাকে ব্যাকরণ বলে।

 

বিভিন্ন পণ্ডিত ব্যক্তি প্রদত্ত ব্যাকরণের সংজ্ঞা

ভাষাবিজ্ঞানী ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, যে শাস্ত্র পাঠ করলে ভাষা শুদ্ধরূপে লিখতে, পড়িতে ও বলিতে পারা যায় তাহাকে ব্যাকরণ বলে।

 

ভাষাবিজ্ঞানী ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, যে শাস্ত্র দিয়ে কোনো ভাষাকে বিশ্লেষণ করে তার স্বরূপ, প্রকৃতি ও প্রয়োগরীতি বিশেষভাবে নির্ণয় করা যায় সে শাস্ত্রকে বলে সে ভাষার ব্যাকরণ।

 

ভাষাবিজ্ঞানী ড. মুনীর চৌধুরী বলেন, যে শাস্ত্রে ভাষার বিশ্লেষণ দ্বারা ভাষাকে তার উপাদানসমূহের বিচার, তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক, যোগাযোগের প্রণালি এবং তাদের অশুদ্ধি ও বিশুদ্ধি নির্ণয় করা যায় তাকে ব্যাকরণ বলে।

 

ড. সুকুমার সেন-এর মতে, ‘যে শাস্ত্রে ভাষার স্বরূপ ও প্রকৃতির বিচার-বিশ্লেষণ আছে এবং যে শাস্ত্রে জ্ঞান থাকলে ভাষা শুদ্ধরূপে বলতে, লিখতে ও শিখতে পারা যায়, তাকে ভাষার ব্যাকরণ বলে।

 

ভাষাবিজ্ঞানী ড. মুহাম্মদ এনামুল হকের মতে, যে শাস্ত্রের দ্বারা ভাষাকে বিশ্লেষণ করে বিবিধ অংশের পারস্পরিক সম্বন্ধ নির্ণয় করা যায় এবং ভাষা রচনাকালে আবশ্যকমতো সেই নির্ণীত তত্ত্ব ও তথ্য প্রয়োগ সম্ভবপর হয়ে ওঠে, তার নাম ব্যাকরণ।

 

 

ব্যাকরণের প্রকারভেদ

 

ডঃ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ব্যাকরণের বৈশিষ্ট্যসমূহ বিশ্লেষণ করে ব্যাকরণকে চারটি শ্রেণীতে ভাগ করেছেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন ব্যাকরণবিদগণ তাঁর এ শ্রেণীবিভাগকে গ্রহণ করেছেন। যেমন–

 

১. বর্ণনাত্মক ব্যাকরণ (Descriptive Grammar)

 

২. ঐতিহাসিক ব্যাকরণ (Historical Grammar)

 

৩. তুলনামূলক ব্যাকরণ (Comparative Grammar)

 

৪. দার্শনিক বিচারমূলক ব্যাকরণ (Philosophical Grammar)

 

১. বর্ণনাত্মক ব্যাকরণ : সাম্প্রতিককালের কোন একটি ভাষার রীতি ও তার প্রয়োগ সম্পর্কে বর্ণনা প্রদানই এই জাতীয় ব্যাকরণের আলোচ্য বিষয় এবং সেই কালের ভাষা যথাযথ ব্যাবহার করাও এর লক্ষ্য।

 

২. ঐতিহাসিক ব্যাকরণ : কোন নির্দিষ্ট যুগের ভাষাগত প্রয়োগরীতি আলোচনাপূর্বক আলোচ্য ভাষার প্রকৃত রূপটি উদ্ঘাটন ও বিকাশের ইতিহাস পর্যালোচনা করাই এর লক্ষ্য।

 

৩. তুলনামূলক ব্যাকরণ : এ শ্রেণীর ব্যাকরণ কোন বিশেষ কালের বিভিন্ন ভাষার গঠন, প্রয়োগরীতি ইত্যাদির তুলনামূলক আলোচনার করে। অর্থাৎ কোন সুনির্দিষ্ট কালের বিশেষ একটি ভাষায় প্রয়োগ রীতি আলোচনাকালে অন্য ভাষার প্রয়োগ ও রীতির সাথে তুলনামূলক আলোচনার মাধ্যমে প্রথমোক্তটির উৎপত্তি ও বিকাশের ঐতিহাসিক ধারাটি অনুসন্ধানই এর লক্ষ্য।

 

৪. দার্শনিক বিচারমূলক ব্যাকরণ : ভাষার অন্তর্নিহিত চিন্তা প্রণালীটি আবিষ্কার ও অবলম্বন করে সাধারণভাবে কিংবা বিশেষভাবে ভাষার রূপের উৎপত্তি ও বিবর্তন ঘটে থাকে, তার বিচার করা এ পর্যায়ের ব্যাকরণের আলোচ্য বিষয়।

 

 

ব্যাকরণ পাঠের প্রয়োজনীয়তা

 

১. ভাষা জ্ঞান লাভের জন্য : কোনো ভাষার বিশুদ্ধ রূপ ও তার ব্যবহারবিধি শিখতে হলে ব্যাকরণের জ্ঞান থাকা অপরিহার্য।

 

২. ভাষার প্রয়োগ রীতি জানতে : ভাষার সকল নিয়ম পদ্ধতি, স্বরূপ, প্রকৃতি, সুষ্ঠু প্রয়োগরীতি জানার জন্য ব্যাকরণ পাঠের প্রয়োজন।

 

৩. বিশুদ্ধ বাক্য গঠন : বাক্যের অন্তর্গত পদসমূহ ও এর পারস্পারিক সম্পর্ক নির্ণয় করে তা লেখা ও বলার মাধ্যমে প্রকাশ করতে হলে ব্যাকরণ পাঠ করা অত্যাবশ্যক।

 

 

ব্যাকরণের কাজ

 

ব্যাকরণের কয়েকটি কাজ নিচে তুলে ধরা হলো–

 

কোনাে ভাষার নিয়ম-নীতি লিপিবদ্ধ করাই ব্যাকরণের প্রধান কাজ।

 

ভাষার বিশ্লেষণ করা ব্যাকরণের কাজ।

 

ভাষার সৌন্দর্য সৃষ্টি করতে ব্যাকরণ সাহায্য করে।

 

ব্যাকরণ ভাষা প্রয়ােগের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

 

ব্যাকরণের মাধ্যমে সুষ্ঠু জ্ঞানলাভ করা যায়।

 

ব্যাকরণ ভাষা ও সাহিত্যের রস গ্রহণেও সহায়তা করে থাকে।

 

ভাষার শিল্প সৌন্দর্য উপলদ্ধির জন্য ব্যাকরণ সাহায্য করে।

 

 

বাংলা ব্যাকরণ

 

বাংলা ভাষাকে শুদ্ধরূপে লিখতে, পড়তে ও বলতে যে নিয়ম-কানুনের প্রয়োজন হয় তাকে বাংলা ব্যাকরণ বলে।

 

 

বাংলা ব্যাকরণের মৌলিক অংশ বা আলোচ্য বিষয়

 

ড. সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়, ড. সুকুমার সেন এবং পণ্ডিত হরনাথ ঘোষ পূর্ণাঙ্গ বাংলা ব্যাকরণ রচনার কাঠামোর ব্যাপারে এবং ব্যাকরণের মৌলিক অংশ সম্পর্কে একমত পোষণ করেন। তাদের মতে ভাষার তিনটি মৌলিক অংশ। যেমন– ১। ধ্বনিতত্ত্ব, ২। রূপতত্ত্ব এবং ৩। বাক্যতত্ত্ব।

 

১. ধ্বনিতত্ত্ব : ব্যাকরণে ধ্বনি বা বর্ণের আলোচনাকে ধ্বনিতত্ত্ব বলে। বাংলা ভাষার ধ্বনিসমূহের শ্রেণিবিভাগ (বর্ণ প্রকরণ), উচ্চারণ প্রণালি, বর্ণ বিন্যাস, সন্ধি, বানান পদ্ধতি (ণ-ত্ব ও ষ-ত্ব বিধান) প্রভৃতি বাংলা ব্যাকরণের এ অংশে আলোচিত হয়।

 

২. রূপতত্ত্ব : শব্দ প্রকরণ অর্থাৎ শব্দের প্রকার ও শব্দ গঠন, পদ প্রকরণ অর্থাৎ পদের পরিচয়, লিঙ্গ, বচন, শব্দরূপ কারক, সমাস ধাতুরূপ, প্রত্যয় প্রভৃতি এ অংশে আলোচিত হয়।

 

৩. বাক্যতত্ত্ব : বাক্যের প্রকার, বাক্যের বিশ্লেষণ, বাক্যের রীতি, বাক্যের ব্যবহার, বাক্যে শব্দের প্রয়োগ, বাগ্‌ধারা, বিভিন্ন প্রকারের বাক্য গঠন প্রণালি প্রভৃতি এ অংশে আলোচিত হয়।

 

 

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর

 

(১) ‘ব্যাকরণ’ শব্দটি কোন ভাষার শব্দ?

 

ক) বাংলা   খ) আরবি

 

গ) হিন্দি  ঘ) সংস্কৃত

 

 

(২) ‘ব্যাকরণ’ শব্দের সঠিক অর্থ হল—

 

ক) বিশেষভাবে বিভাজন

 

খ) বিশেষভাবে বিশ্লেষণ

 

গ) বিশেষভাবে সংযোজন

 

ঘ) বিশেষভাবে বিয়োজন

 

 

(৩) ব্যাকরণকে কী বলা হয়?

 

ক) ভাষার বিচার

 

খ) ভাষার সংবিধান

 

গ) ভাষার অভিধান

 

ঘ) ভাষার বিশ্লেষক

 

 

(৪) বিরাম চিহ্নের ব্যবহার ব্যাকরণের কোন অংশে আলোচিত হয়?

 

ক) বাক্য প্রকরণে

 

খ) ধ্বনি প্রকরণে

 

গ) শব্দ প্রকরণে

 

ঘ) ছন্দ প্রকরণে

 

 

(৫) বাংলা ব্যাকরণ প্রথম রচনা করেন কে?

 

ক) ইউলিয়াম কেরী

 

খ) ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ

 

গ) ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়

 

ঘ) মি. সি. এন. বি. হ্যালহেড

 

 

(৬) বাংলা ব্যাকরণকে কয় ভাগে ভাগ করা যায়?

 

ক) ৩ ভাগে  খ) ৪ ভাগে

 

গ) ৫ ভাগে  ঘ) ৬ ভাগে

 

 

(৭) কোনটি ব্যাকরণের মূল ভিত্তি?

 

ক) ভাব  খ) ভাষা

 

গ) বাক্য  ঘ) ধ্বনি

 

 

(৮) ব্যাকরণ কখন এসেছে?

 

ক) ভাষা সৃষ্টির আগে

 

খ) ভাষার আগে

 

গ) ভাষা সৃষ্টির সঙ্গে

 

ঘ) সাম্প্রতিকালে

 

 

(৯) ব্যাকরণের কাজ কী?

 

ক) ভাষার বিশ্লেষণ

 

খ) ভাষার উন্নতি

 

গ) ভাষার নিয়ম শৃঙ্খলা

 

ঘ) ভাষার নিয়ম প্রতিষ্ঠা।

 

 

(১০) কী কারণে ব্যাকরণ পাঠের প্রয়োজন?

 

ক) ভাষা শিক্ষার জন্য

 

খ) ভাষার শুদ্ধাশুদ্ধি নির্ণয়ের জন্য

 

গ) ভাষা বিষয়ে জ্ঞানদানের জন্য

 

ঘ) ভাষার বিকাশের জন্য

 

 

(১১) বাংলা ব্যাকরণের প্রধান আলোচ্য বিষয় কয়টি?

 

ক) ২টি  খ) ৩টি

 

গ) ৪টি  ঘ) ৫টি

 

 

উত্তরঃ–

 

১ : ঘ); ২ : খ); ৩ : খ); ৪ : ক); ৫ : ঘ); ৬ : খ); ৭ : খ); ৮ : ক); ৯ : ক); ১০ : খ); ১১ : গ);

 

 

আরো পড়ুনঃ-

 

১। ভাষা কাকে বলে? ভাষা কত প্রকার ও কি কি? (Language in Bengali)

 

২। বিরাম চিহ্ন কাকে বলে? বিরাম চিহ্নের গুরুত্ব কি?

 

 

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

MOST POPULAR