HomeBiologyGene Therapy কাকে বলে? জিন থেরাপি কত প্রকার ও কি কি?

Gene Therapy কাকে বলে? জিন থেরাপি কত প্রকার ও কি কি?

প্রত্যেকটা জীবদেহ অসংখ্য কোষ দিয়ে তৈরি এবং প্রত্যেকটা কোষ নির্দিষ্ট ও সমপরিমাণ জিন বহন করে। জিনগুলো কোষের ভিতরে খুব সূক্ষ্মভাবে কাজ করে। একটি জীবের বৃদ্ধি ও পরিস্ফুরনের সময় উক্ত জিনসমূহ প্রতিটি পৃথকভাবে নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য প্রকাশে বাধ্য থাকে। জিনগুলো এসব বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ ঘটায় বিভিন্ন প্রকার প্রোটিন উৎপাদনের মাধ্যমে। এখন প্রশ্ন হল যদি এইসব জিনে কোন ত্রুটি থাকে তাহলে কি হতে পারে! সহজেই অনুমেয়, ত্রুটিপূর্ণ জিন দ্বারা উৎপাদিত প্রোটিনও ত্রুটি যুক্ত হবে এবং ফলাফল হিসাবে এর প্রভাব পড়বে বৈশিষ্ট্য প্রকাশে। এভাবে জিনের পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন প্রকার জিনগত রোগের সৃষ্টি হতে পারে। জিন থেরাপি আসলে এক ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি যার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার বংশগত বা জিনগত রোগ নিরাময় করা হয়। অন্যভাবে বললে জিন প্রকৌশলের (Genetic Engineering) মাধ্যমে মানুষের ত্রুটিপূর্ণ কোন জিনকে স্বাভাবিক জিন দ্বারা প্রতিস্থাপন করাকে জিন থেরাপি (Gene Therapy) বলে। এ প্রক্রিয়ায় রোগের জন্য দায়ী জিনটা বাদ দেয়া হয় অথবা সেটাকে একটা ভাল জিন দ্বারা প্রতিস্থাপন করা হয়। আর ঠিক এ কারণেই জিন থেরাপি খুবই নির্ভরযোগ্য চিকিৎসা। জিন থেরাপি সাধারণ রোগ নিরাময় পদ্ধতি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা কারণ বিভিন্ন প্রকার ওষুধ প্রয়োগে শুধু রোগের লক্ষণ ও বাহ্যিক সমস্যা গুলো কমে যায় কিন্তু অসুখটি পুরাপুরি নিরাময় হয়না, যে কারণে পরে আবার রোগের লক্ষণ দেখা দেয়। কিন্তু জিন থেরাপির মাধ্যমে নির্দিষ্ট রোগের জন্য দায়ী ত্রুটিপূর্ণ জিন গুলিকে ভালো জিন দ্বারা প্রতিস্থাপন করা হয়। যাতে করে ক্ষতিকর প্রোটিনের স্থলে শরীর সঠিক এনজাইম (Enzyme) বা প্রোটিন (Protein) উৎপাদনে সক্ষম হয়। প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতির সাথে এই চিকিৎসা পদ্ধতির পার্থক্য হলও জিন থেরাপির মাধ্যমে শুধু রোগের উপশমই করা হয় না জিনের বৈশিষ্ট্য-গত ত্রুটি দূর করে একে সমূলে নিবারণ করা হয়।

সম্ভব এবং এই প্রক্রিয়ায় করা পরিবর্তন পরবর্তী বংশধরে স্থানান্তরিত হয় তাই রোগের পুনরায় ফিরে আশার সম্ভাবনা নাই। আর তাই এই ধরনের পরিবর্তন চিরস্থায়ী এবং বংশগতির ধারাকে সরাসরি প্রভাবিত ও পরিবর্তন করে।

 

জিন থেরাপির প্রকারভেদ

কার্যকারিতার উপর ভিত্তি করে জিন থেরাপি প্রধানত দুইভাবে ভাগ করা যায়: দেহকোষ জিন থেরাপি (Somatic Cell Gene Therapy) এবং জননকোষ জিন থেরাপি (Germline Gene Therapy)।

  • দেহকোষ জিন থেরাপি : নাম থেকেই অনুমান করা কঠিন নয় যে এই জিন থেরাপি দেওয়া হয় দেহকোষে (Somatic Cell)। অর্থাৎ, জিন থেরাপি যখন দেহকোষের ক্রোমোজোমে দেওয়া হয় তখন সেটাকে দেহকোষ জিন থেরাপি বলা হয়। দেহকোষ জিন থেরাপিতে রক্ত কোষ বা ত্বকের কোষ জাতীয় শরীরের কোষে পরিবর্তন আনা হয়। এই পদ্ধতিতে শরীর থেকে কোষ সংগ্রহ করে তাতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন এনে তাকে আবার শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয় অথবা শরীরে অবস্থিত কোষেই সরাসরি পরিবর্তন আনা হয়। হ্যামোফিলিয়া (Hemophilia) বা থ্যালাসেমিয়া (Thalassemia) রোগের চিকিৎসায় এই পদ্ধতি বেশ কার্যকর। এই পদ্ধতিতে কয়েক বিলিয়ন সংখ্যক হাড়ের কোষ সংগ্রহ করা হয়। তারপর তাতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন এনে তাকে আবার শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়। এতে নতুন করে যেসব রক্ত কোষ তৈরি হয় তাতে পরিবর্তিত জিনের বৈশিষ্ট্য গুলো প্রকাশ পায়। দেহকোষ জিন থেরাপির মাধ্যমে কৃত পরিবর্তন গুলো শুধুমাত্র রোগীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে, বংশগতির ধারাকে প্রভাবিত করে না। অর্থাৎ, পরবর্তী বংশধরে রোগটি আবার ফিরে আসতে পারে।
  • জননকোষ জিন থেরাপি : অনুরূপ ভাবে, জিন থেরাপিতে যখন জননকোষ ব্যবহার করা হয় তখন সেটাকে জননকোষ (Germ Cell) জিন থেরাপি বলা হয়। জননকোষ জিন থেরাপিতে জননকোষ দুটিকে স্বাভাবিকভাবেই নিষিক্ত হতে দেওয়া হয় তারপর নিষিক্ত ডিম্বাণুতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন এনে তাকে আবার মাতৃগর্ভে প্রতিস্থাপন করা হয়। অতঃপর এই নিষিক্ত ডিম্বাণুটি যে ভ্রূণ গঠন করবে তার সমস্ত কোষে উক্ত ভাবে পরিবর্তিত জিনটি ছড়িয়ে যাবে ফলশ্রুতিতে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি সফল হলে নবজাতকের সমস্ত কোষে পরিবর্তিত জিনটি উপস্থিত থাকে এবং প্রয়োজনীয় কার্য সম্পাদনে সক্ষম হয়, কারণ আমরা জানি নিষেকের ফলে উৎপন্ন ডিপ্লয়েড (2n) এককোষী কোষ থেকেই কোষ বিভাজনের মাধ্যমে পূর্ণ প্রাণীটি বিকশিত হয়। ধারণা করা হয় জননকোষ জিন থেরাপির মাধ্যমে সকল বংশগত রোগ (Genetic Disease) পুরোপুরি ভাবে বিতাড়িত করা সম্ভব এবং এই প্রক্রিয়ায় করা পরিবর্তন পরবর্তী বংশধরে স্থানান্তরিত হয় তাই রোগের পুনরায় ফিরে আশার সম্ভাবনা নাই। আর তাই এই ধরনের পরিবর্তন চিরস্থায়ী এবং বংশগতির ধারাকে সরাসরি প্রভাবিত ও পরিবর্তন করে।

আবার কাজের ধরনের উপর ভিত্তি করে জিন থেরাপি কে প্রধানত দুই ভাবে ভাগ করা যায়। নিচে উভয় পদ্ধতিতে সম্পর্কে সামান্য বর্ণনা দেওয়া হল: এক্স ভিভো (Ex Vivo) এবং ইন ভিভো (In Vivo)।

  • এক্সভিভো জিন থেরাপি : এই প্রক্রিয়ায় প্রথমে দায়ী জিন ধারণকারী কোষ বা টিস্যুটিকে কেটে বাহিরে আনা হয়, এবং গবেষণাগারে উপযুক্ত পরিবেশে এই কোষের উপর জিন থেরাপি দেওয়া হয়। ফলাফল ভালো হলে কোষ বা টিস্যুটিকে পুনরায় দেহে স্থাপন করা হয়। এক্ষেত্রে সাধারণত নন-ভাইরাল বাহক ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতিটি সর্বাপেক্ষা উত্তম কিন্তু যথেষ্ট জটিলতা এবং সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
  • ইনভিভো জিন থেরাপি : এই প্রক্রিয়ায় কোষ দেহে থাকা অবস্থাতেই থেরাপি দিতে হয়। এক্ষেত্রে জিনটি সরাসরি রোগীর দেহে প্রবেশ করাতে হয় এবং তা প্রকাশের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা রাখতে হয়। বাহক হিসাবে ইনভিভো জিন থেরাপিতে বিভিন্ন প্রকার ভাইরাল পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।

 

কী কী রোগের চিকিৎসায় জিন থেরাপি ব্যবহার করা হয়?

জিন থেরাপি তখনই ব্যবহার করা হয় যখন আর প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতিতে কিছুই করার থাকে না। উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত রোগ, এইডস ও ক্যান্সার চিকিৎসার একেবারে শেষ মুহূর্তে জিন থেরাপি ব্যবহার করা হয়। এছাড়া হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, আলঝাইমার, আরথ্রাইটিস, সংক্রমক রোগ প্রভৃতির ক্ষেত্রে জিন থেরাপি ব্যবহার করা হয়।

 

জিন থেরাপির মৌলিক কৌশল

জিন থেরাপি হলো জটিল রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত একটি পদ্ধতি যেখানে ঔষধ বা ড্রাগসের পরিবর্তে কোষের জিনগত পরিবর্তনের মাধ্যমে রোগ নিরাময় করা হয়। পদ্ধতিতে রোগের জন্য দায়ী ত্রুটিপূর্ণ জিন অপসারণ করে সুস্থ জিন প্রতিস্থাপন করা হয়। জিনগত পরিবর্তন খুব সূক্ষ্মভাবে সম্পন্ন করতে হয়। তা না হলে পরবর্তীতে সমস্যা আরও বাড়তে পারে। জিন থেরাপিতে জিন পরিবহনের জন্য নিরাপদ ও কার্যকর বাহক প্রয়োজন। জেনেটিক্যালি অলটার্ড ভাইরাস বর্তমানে বহুল ব্যবহৃত একটি বাহক, যা বিশুদ্ধ জিন পরিবহ করে। রোগ আক্রান্ত কোষে (যেমন : যকৃত, ফুসফুস) এই বাহক ভাইরাস স্থাপন করা হয়। বাহক ভাইরাসগুলো রোগাক্রান্ত কোষে রোগ-বিণাশী জিন ছড়িয়ে দেয়। এতে করে রোগাক্রান্ত কোষে সুস্থ জিন প্রতিস্থাপিত হয়। ফলে কোষগুলো পুনরায় স্বাভাবিক অবস্থা প্রাপ্ত হয়।

 

এ সম্পর্কিত আরও কিছু প্রশ্ন ও উত্তরঃ–

প্রশ্ন-১। জিন থেরাপিতে বাহক হিসেবে কী কী ভাইরাস ব্যবহার করা হয়?

উত্তরঃ জিন থেরাপিতে বাহক হিসেবে সাধারণত তিন ধরনের ভাইরাস ব্যবহার করা হয়। এগুলো হচ্ছে–

১. রেট্রো ভাইরাস

২. এডিনো ভাইরাস ও

৩. এডিনো এসোসিয়েটেড ভাইরাস।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

MOST POPULAR