প্লাস্টিড কাকে বলে? প্লাস্টিড কত প্রকার? প্লাস্টিড এর কাজ কি?

সজীব উদ্ভিদকোষের সাইটোপ্লাজমে বর্ণহীন অথবা বর্ণযুক্ত গোলাকার বা ডিম্বাকার অঙ্গাণুকে প্লাস্টিড (Plastid) বলে। একে বর্ণাধারও বলে।

১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে শিম্পার (Schimper, 1856-1901) সর্বপ্রথম উদ্ভিদকোষে সবুজবর্ণের প্লাস্টিড লক্ষ করেন এবং এর নামকরণ করেন ক্লোরোপ্লাস্ট। পরবর্তীকালে অন্যান্য প্লাস্টিড আবিষ্কৃত হয়েছে। ইলেকট্রণ অণুবীক্ষণযন্ত্রের সহায়তায় জানা গেছে যে সালোকসংশ্লেষী ব্যাকটেরিয়া এবং নীলাভ সবুজ শৈবালেও ক্লোরোফিল বহনকারী এক ধরনের অঙ্গাণু রয়েছে। এদের ক্রোমাটোফোর (chromatophore) বলে। ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া, নীলাভ-সবুজ শৈবাল ইত্যাদি কোষে প্রাস্টিড থাকে না, সব রকম উদ্ভিদেই প্লাস্টিড থাকে।

 

প্লাস্টিড কত প্রকার ও কি কি? (How Many Types of Plastid?)

রঞ্জক পদার্থের প্রকৃতি এবং আকৃতির উপর ভিত্তি করে প্লাস্টিড তিন প্রকার। যথা–

(ক) লিউকোপ্লাস্ট (Leucoplast)

সাইটোপ্লাজমে অবস্থিত বর্ণহীন প্লাস্টিডকে লিউকোপ্লাস্ট বলে। এতে কোনো রঞ্জক পদার্থ থাকে না। সূর্যের আলোর সংস্পর্শে এলে লিউকোপ্লাস্ট, ক্রোমোপ্লাস্টে বিশেষ করে ক্লোরোপ্লাস্টে রূপান্তরিত হতে পারে। এরা অর্ধবৃত্তাকৃতি বা নলাকৃতির হতে পারে। মূল বা ভূ-নিম্নস্থ কাণ্ডে খাদ্য সঞ্চয় করা এদের প্রধান কাজ।

 

(খ) ক্রোমোপ্লাস্ট (Chromoplast)

সবুজ বর্ণ ব্যতীত যে কোন রঙিন প্লাস্টিডকে ক্রোমোপ্লাস্টিড বা ক্রোমোপ্লাস্ট (Chromoplast) বলে। ক্রোমোপ্লাস্টে দুই ধরনের রঞ্জক থাকে– লাল বর্ণের ক্যারোটিন ও হলুদ বর্ণের জ্যান্থোফিল। এদের উপস্থিতির জন্য ফুল রঙিন ও সুন্দর হয় এবং কীটপতঙ্গ আকৃষ্ট হয়ে পরাগায়নে সহায়তা করে।

ক্রোমোপ্লাস্ট এর কাজ (Function of Chromoplast) :

১. সবুজ বর্ণ ব্যতীত উদ্ভিদের অন্যান্য বর্ণ ক্রোমোপ্লাস্ট প্রদান করে।

২. ক্রোমোপ্লাস্ট পরোক্ষভাবে উদ্ভিদের বংশবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।

৩. ক্রোমোপ্লাস্টের কারণে ফুলের বর্ণ আকর্ষণীয় হয় এবং কীটপতঙ্গ, প্রজাপতি আকৃষ্ট হয়ে পরাগায়ন ঘটায়।

 

(গ) ক্লোরোপ্লাস্ট

ক্লোরোফিল নামক সবুজ বর্ণকণিকা অধিক মাত্রায় ধারণ করে বলে ক্লোরোপ্লাস্ট সবুজ বর্ণের। সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় শর্করা জাতীয় খাদ্য প্রস্তুত করাই এর প্রধান কাজ।

 

প্লাস্টিডের কাজ (Function of Plastid)

১. ক্লোরোপ্লাস্ট সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় খাদ্য তৈরি করে।

২. ক্লোরোপ্লাস্ট প্রয়োজনে প্রোটিন ও নিউক্লিক এসিড তৈরি করে।

৩. ক্রোমোপ্লাস্ট ফুলের বিভিন্ন রং সৃষ্টি করে। এতে কীটপতঙ্গ আকৃষ্ট হয়ে পরাগায়ন ঘটায়।

৪. লিউকোপ্লাস্ট খাদ্য সঞ্চয় করে।

 

এ সম্পর্কিত আরও কিছু প্রশ্ন ও উত্তরঃ–

১। ক্রোমোপ্লাস্টিড কত প্রকার?

উত্তর : ২ প্রকার।

২। ফুলের রং রঙিন হয় কেন?

উত্তর : উদ্ভিদের ক্রোমোপ্লাস্ট প্রচুর পরিমাণে ক্যারোটিন ও জ্যান্থফিল থাকে। এই ক্যারোটিন লাল বা কমলা এবং জ্যান্থফিল হলুদ বর্ণের জন্য দায়ী। অর্থাৎ ক্রোমোপ্লাস্টের উপস্থিতির কারণে ফুলের রং রঙিন হয়।

Leave a Comment