HomeBlogবাংলা ব্যাকরণ কাকে বলে? বাংলা ব্যাকরণের আলোচ্য বিষয় কয়টি ও কি কি?

বাংলা ব্যাকরণ কাকে বলে? বাংলা ব্যাকরণের আলোচ্য বিষয় কয়টি ও কি কি?

বাংলা ব্যাকরণ কাকে বলে?

যে বই পড়লে বাংলা ভাষা শুদ্ধরূপে বলতে, পড়তে ও লিখতে পারা যায়, তাকে বাংলা ব্যাকরণ বলে।

অর্থাৎ, যে শাস্ত্রে বাংলা ভাষার স্বরূপ ও প্রকৃতি সবদিক দিয়ে আলোচনা করা হয়, তাকে বাংলা ভাষার ব্যাকরণ বা বাংলা ব্যাকরণ বলা হয়।

 

বাংলা ব্যাকরণের আলোচ্য বিষয় কয়টি ও কি কি?

বাংলা ব্যাকরণের আলোচ্য বিষয় চারটি। এগুলো হলোঃ

১। ধ্বনিতত্ত্ব;

২। শব্দতত্ত্ব বলা রূপতত্ত্ব;

৩। বাক্যতত্ত্ব বলা পদক্রম এবং

৪। অর্থতত্ত্ব।

১। ধ্বনিতত্ত্ব : বাংলা ব্যাকরণে ধ্বনি বা বর্ণের আলোচনাকে ধ্বনিতত্ত্ব বলে। ধ্বনি, ধ্বনির শ্রেণীবিভাগ, ধ্বনির উচ্চারণ, বর্ণ, বর্ণের প্রকারভেদ, বর্ণের উচ্চারণ, বর্ণবিন্যাস, ধ্বনি পরিবর্তন, ণত্ব ও ষত্ব বিধান সন্ধি ইত্যাদি ধ্বনিতত্ত্বের আলোচ্য বিষয়।

২. শব্দতত্ত্ব বা রূপতত্ত্ব : বাংলা ব্যাকরণের শব্দ বা পদের আলোচনাকে শব্দতত্ত্ব বা রূপতত্ত্ব বলে। এক বা একাধিক ধ্বনির অর্থবোধক সম্মিলনে শব্দ তৈরি হয়, শব্দের ক্ষুদ্রাংশকে বলা হয় রূপ। রূপ গঠন করে শব্দ। তাই শব্দতত্ত্বকে রূপতত্ত্ব বলা হয়। শব্দ, শব্দের শ্রেণিবিভাগ, পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ, দ্বিরুক্ত শব্দ, বচন, পুরুষ বা পক্ষ, প্রত্যয়, উপসর্গ, অনুসর্গ, পদ ও পদের প্রকারভেদ, সমাস, কারক ইত্যাদি শব্দতত্ত্ব বা রূপতত্ত্বের আলোচ্য বিষয়।

৩. বাক্যতত্ত্ব : বাংলা ব্যাকরণে বাক্য-সম্পর্কিত আলোচনাকে বলা হয় বাক্যতত্ত্ব। মানুষের বাকপ্রত্যঙ্গজাত ধ্বনি সমন্বয়ে গঠিত শব্দসহযোগে সৃষ্ট অর্থবোধক বাকপ্রবাহের বিশেষ বিশেষ অংশকে বলা হয় বাক্য। বাক্য ও বাক্যের শ্রেণিবিভাগ, বাক্যের গঠন, বাক্যের বিশ্লেষণ, বাক্যের ব্যবহারযোগ্যতা, বাচ্য, উক্তি, বাক্যমধ্যে পদের স্থান বা ক্ৰম, যতি ইত্যাদি বাক্যতত্ত্বের আলোচ্য বিষয়। বাক্যের মধ্যে কোন পদের পর কোন পদ বসে, কোন পদের স্থান কোথায় বাক্যতত্ত্বে এসবের বিশ্লেষণ থাকে বলে বাক্যতত্ত্বকে পদক্রমও বলা হয়।

৪. অর্থতত্ত্ব : ব্যাকরণে শব্দ ও বাক্যের অর্থ-সম্পর্কিত আলোচনাকে বলা হয় অর্থতত্ত্ব। শব্দের অর্থবিচার, বাক্যের অর্থবিচার, অর্থের প্রকারভেদ, যেমন— মুখ্যার্থ, গৌণার্থ, বিপরীতার্থ ইত্যাদি বাংলা ব্যাকরণে অর্থতত্ত্বের আলোচ্য বিষয়।

 

বাংলা ব্যাকরণের শ্রেণিবিভাগ

১. বর্ণ প্রকরণ : বাংলা ব্যাকরণের যে অংশ পাঠ করলে বর্ণমালা, শব্দের বানান শিক্ষা ও উচ্চারণ প্রণালি সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করা যায়, তাকে বর্ণ প্রকরণ বলে।

২. শব্দ প্রকরণ ও বিরামচিহ্ন প্রকরণ : বাংলা ব্যাকরণের যে অংশ পাঠ করলে বাক্যের বিরামচিহ্ন দেয়ার সঠিক জ্ঞানলাভ করা যায়, এরূপ বিদ্যাকে শব্দ প্রকরণ বলে।

৩. পদ প্রকরণ : বাংলা ব্যাকরণের যে অংশ পাঠ করলে শব্দের প্রকার, পদের পরিচয়, শব্দ গঠন, লিঙ্গ, বচন, বিভক্তি, অনুসর্গ, প্রত্যয়, ধাতু, কারক, সমাস, ক্রিয়াল কাল, ক্রিয়ার ভাব, শব্দের ব্যুৎপত্তি সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করা যায়, তাকে পদ প্রকরণ বলে।

৪. বাক্য প্রকরণ : বাংলা বাকরণের যে অংশ পাঠ করলে বাক্য গঠন, বাক্যাংশ, বাক্যের প্রকার, বাক্য পরিবর্তন, বাক্য বিশ্লেষণ, বাগ্‌ধারা, বাক্যসংকোচন, বিরামচিহ্ন প্রভৃতি সম্বধে সম্যক জ্ঞানার্জন করা যায়, তাকে বাক্য প্রকরণ বলে।

৫. ছন্দ প্রকরণ : বাংলা ব্যাকরণের যে অংশ পাঠ করলে ছন্দ ও কবিতা রচনার কলা-কৌশল সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা যায়, তাকে ছন্দ প্রকরণ বলে।

 

বাংলা ব্যাকরণের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ

বাংলা ভাষার বয়স হাজার বছরের বেশি হলেও এ ভাষায় ব্যাকরণচর্চার ইতিহাস ৩০০ বছরের কম। বাংলা ভাষার উদ্ভবের শত শত বছর পর ব্যাকরণচর্চা শুরু হয়। ঢাকার ভাওয়ালে অবস্থানকালে পর্তুগিজ পাদ্রি মনোএল দা আসসুম্পসাঁও পর্তুগিজ ভাষায় ১৭৩৪ সালে প্রথম বাংলা ভাষার ব্যাকরণ রচনা করেন। পর্তুগালের রাজধানী লিসবন থেকে ১৭৪৩ সালে বইটি প্রকাশিত হয়। তারপর ন্যাথানিয়েল ব্র্যাসি হ্যালহেড ইংরেজিতে রচনা করেন বাংলা ভাষার ব্যাকরণ। তাঁর লেখা ‘এ গ্রামার অব দি বেংগল ল্যাংগুয়েজ’ বইটি হুগলি থেকে প্রকাশিত হয় ১৭৭৮ সালে। এ সময়ে ইংরেজিতে আরও যাঁরা বাংলা ভাষার ব্যাকরণ রচনা করেন, তাঁদের মধ্যে উইলিয়াম কেরি (প্রকাশকাল ১৮০১), গঙ্গাকিশোর (প্রকাশকাল ১৮১৬), কিথ (প্রকাশকাল ১৮২০), হটন (প্রকাশকাল ১৮২১), রাজা রামমোহন রায় (প্রকাশকাল ১৮২৬), শ্যামাচরণ সরকার (প্রকাশকাল ১৮৫০) , বীম্স (প্রকাশকাল ১৮৭২) উল্লেখযোগ্য।

বাঙালিদের মধ্যে প্রথম বাংলা ভাষার ব্যাকরণ রচনা করেন রাজা রামমোহন রায়। তাঁর রচিত ‘গৌড়ীয় ব্যাকরণ’ প্রকাশিত হয় ১৮৩৩ সালে। এটি তাঁর ইংরেজিতে লেখা বাংলা ভাষার ব্যাকরণের বাংলা অনুবাদ। এ সময়ে আরও যাঁরা বাংলা ভাষায় বাংলা ব্যাকরণ রচনা করেন, তাঁদের মধ্যে শ্যামাচরণ সরকার (১৮৫২), ব্রজনাথ বিদ্যালঙ্কার (১৮৭৮), নিত্যানন্দ চক্রবর্তী (১৮৭৮), নীলমণি মুখোপাধ্যায় (১৮৭৮), কেদারনাথ তর্করত্ন (১৮৭৮), চিন্তামণি গঙ্গোপাধ্যায় (১৮৮১), প্রসন্নচন্দ্র বিদ্যারত্ন (১৮৮৪) উল্লেখযোগ্য।

আধুনিককালে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বাংলা ব্যাকরণ রচনা করেন সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় (১৮৯০-১৯৭৭), মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ (১৮৮৫-১৯৬৯), সুকুমার সেন (১৯০১-১৯৯২), মুহম্মদ এনামুল হক (১৯০২-১৯৮২), মুনীর চৌধুরী (১৯২৫-১৯৭১) ও মোফাজ্জল হায়দায় চৌধুরী (১৯২৬-১৯৭১)। এছাড়া ব্যাকরণ নিয়ে আরও যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের মধ্যে আবুল কালাম মনজুর মোরশেদ, রফিকুল ইসলাম, পবিত্র সরকার, মনসুর মুসা, মহাম্মদ দানীউল হক উল্লেখযোগ্য

 

এ সম্পর্কিত আরও প্রশ্ন ও উত্তরঃ–

১। বাংলা ব্যাকরণ প্রথম রচনা করেন কে?

উত্তর : এন. বি. হ্যালহেড।

 

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments