HomeTechnologyপেপাল কি? পেপাল এর সুবিধা ও অসুবিধা কি?

পেপাল কি? পেপাল এর সুবিধা ও অসুবিধা কি?

পেপাল কি? (What is PayPal in Bengali/Bangla?)

অনলাইনে অর্থ আদান-প্রদান এবং কেনাকাটার বিল পরিশোধ করার জনপ্রিয় মাধ্যম পেপাল (PayPal)। ইলন মাস্ক হলেন পেপাল এর অন্যতম সহপ্রতিষ্ঠাতা। বর্তমানে ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থায় রীতিমতো নেতৃত্ব দিচ্ছে পেপাল (বা পেপ্যাল)। কিন্তু আমাদের দেশে অনেকেই জানেন না যে পেপাল কি এবং এর উপকারিতা। কারণ বাংলাদেশেপেপ্যাল এখনো পর্যন্ত তাদের সেবা দেয়া শুরু করেনি। হয়ত আগামী মাস দুয়েকের মধ্যে বাংলাদেশেও চলে আসবে পেপ্যাল।

বিশ্বের ২০০টির অধিক দেশের ৩৬০ মিলিয়নের বেশি ব্যবহারকারী রয়েছে পেপাল এর। শুধুমাত্র ২০২০ সালের তৃতীয় প্রান্তিকেই ৪ বিলিয়ন লেনদেন সম্পন্ন করেছে পেপ্যাল।

১৯৯৮ সালে যাত্রার শুরু থেকেই অনলাইনে কেনাকাটা ও অর্থ আদান-প্রদানের এক নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে পেপাল। অনলাইনে পে করার ক্ষেত্রে চিরাচরিত ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের পরিবর্তে খুব সহজেই পেপ্যাল ব্যবহার করা যায়। চেক বা ওয়্যার ট্রান্সফার সার্ভিসের ভোগান্তি দূর করতে অনন্য ভূমিকা রেখেছে পেপাল।

যেকেউ বিনামূল্যে পেপ্যাল অ্যাকাউন্ট খুলে তাদের ব্যাংক একাউন্ট, ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ড টাকা পাঠানোর উদ্দেশ্যেপেপ্যাল একাউন্টে যুক্ত করতে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক জনপ্রিয় অনলাইন পেমেন্ট ব্যবস্থা, পেপাল সম্পর্কে বিস্তারিত।

 

পেপাল কি – (What is PayPal in Bengali?)

পেপাল একটি অনলাইন পেমেন্ট ব্যবস্থা, যা আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি। পেপাল মূলত একটি আমেরিকান বহুজাতিক কোম্পানি যেটি প্রযুক্তির মাধ্যমে আর্থিক সেবা প্রদান করে। পেপ্যাল এর মাধ্যমে অনলাইনে টাকা পাঠানো/খরচ করা যায় ও গ্রহণ করা যায়।

ব্যাংক একাউন্ট, ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ড PayPal একাউন্ট এর সাথে যুক্ত করলেপেপ্যাল ব্যবহার করে ব্যাংকের অর্থ দিয়েই পেপাল সাপোর্টেড স্টোর থেকে কেনাকাটা করা আয়। ব্যাংক ও মার্চেন্টের মধ্যে মিডলম্যান হিসেবে কাজ করে পেপাল। এছাড়াও পেমেন্ট তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে পেপাল।

বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের সদস্যদের পেপ্যাল ব্যবহার করে টাকা পাঠানোর পাশাপাশি অন্যদের থেকে টাকা রিসিভ ও করা যায় সেবাটির মাধ্যমে। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে এসব ফিচার ব্যাপক উপকারে আসে।

পেপাল ক্রেডিট – PayPal Credit

পেপাল ক্রেডিট পেপাল দ্বারা চালিত একটি ওপেন-এন্ড ক্রেডিট সার্ভিস একাউন্ট। তবেপেপ্যাল ক্রেডিট কিন্তু বাস্তব কোনো ক্রেডিট কার্ড নয়। যেসব জায়গায় পেমেন্ট মেথড হিসেবে পেপাল ক্রেডিট সাপোর্ট করে, সেখানে পেপাল ক্রেডিট ব্যবহার করা যাবে। ক্রেডিট কার্ডের মত পেপাল এর ক্ষেত্রে বিভিন্ন ফি প্রযোজ্য।

অর্থাৎ পেপ্যাল ক্রেডিট একটি ভার্চুয়াল ক্রেডিট কার্ডের মত কাজ করে, যা শুধুমাত্র পেপাল সাপোর্টেড পেমেন্ট পয়েন্টসমূহে ব্যবহার করা যায়।

পেপ্যাল ক্যাশ – PayPal Cash

২০১৯ সালে পেপাল ক্যাশ নামে আলাদা এই ফিচারটি চালু করে পেপাল। পেপালে থাকা সকল অর্থকে একসাথে পেপাল ক্যাশ বলা হয়।

যখন কেউ আপনাকে পেপালে টাকা পাঠাবে, আপনি চাইলে তা PayPal ক্যাশ একাউন্টে রাখতে পারেন কিংবা ব্যাংকে ট্রান্সফার করতে পারেন। পেপাল ক্যাশ একাউন্টে থাকা অর্থ পরিবার বা বন্ধুদের পাঠানো যাবে কোনো ধরনের ব্যাংক একাউন্টের মধ্যস্থতা ছাড়াই।

এছাড়াও গুগল পে ও স্যামসাং পে এর মত অনলাইন পেমেন্ট সার্ভিস থেকেও পেপাল ক্যাশ ব্যালেন্স নেওয়া যায়।

পেপাল বাংলাদেশে কবে আসবে?

বাংলাদেশে শীঘ্রই চালু হতে যাচ্ছে অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম, পেপ্যাল। চলতি বছরের মধ্যে পেপাল বাংলাদেশে চালু হতে পারে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

 

পেপাল কিভাবে কাজ করে – PayPal Explained in Bengli

দুইজন ব্যক্তি যারা নিজেদের মধ্যে অর্থ আদান-প্রদান করতে চান, তাদের মধ্যকার সার্ভিস প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে পেপাল। এটি ব্যবহার করে বন্ধু ও পরিবারকে কোনো আলাদা চার্জ ছাড়াই টাকা পাঠানো যায়। কোনো সার্ভিস বা কেনাকাটায় পেপ্যাল ব্যবহার করতে সেক্ষেত্রে একটি ছোট অংকের ফি প্রযোজ্য হয়।

ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য সাধারণ পেপাল একাউন্ট যথেষ্ট। তবে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে হলে পেপ্যাল বিজনেস একাউন্ট খুলতে হয়। ব্যক্তিগত একাউন্ট ব্যবহার করে পেপাল পেমেন্ট নেওয়া গেলেও বিজনেস একাউন্টে থাকছে আলাদা সুবিধা।

ব্যক্তিগত ও বিজনেস, উভয় অ্যাকাউন্টের সকল লেনদেন এর ক্ষেত্রে ফ্রড প্রটেকশন, উন্নত নিরাপত্তা ও এনক্রিপশন সুবিধা প্রদান করে পেপ্যাল।

বাংলাদেশ থেকে পেপাল একাউন্ট খোলা যায় কি?

২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই PayPal বাংলাদেশে চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই মুহুর্তে অফিসিয়াল কোনো উপায়ে বাংলাদেশ থেকে পেপাল একাউন্ট খোলা যায়না। অন্য কোনো ধরনের বিকল্প উপায়ে পেপাল একাউন্ট খোলা থেকে বিরত থাকুন। ভুয়া এড্রেসের কারণে একাউন্ট ব্যান হয়ে যেতে পারে, ফলে আপনি আপনার অর্থ হারাতে পারেন।

 

পেপাল এর সুবিধা-অসুবিধা (Advantages-disadvantages of PayPal)

বিশ্বজুড়ে প্রতিদিন অসংখ্য ক্রেতা বিক্রেতাগণ অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে পেপাল (www.paypal.com) ব্যবহার করছে। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে চিরাচরিত অর্থ লেনদেনের প্রথা থেকে সরে এসে পেপ্যাল এর মত ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থাগুলোকে সাদরে গ্রহণ করছে সবাই।

চলুন জেনে নেওয়া যাক পেপ্যাল কেনো এতো জনপ্রিয় ও এই পেমেন্ট সার্ভিস কেনো অধিক ব্যবহৃত হয়। এছাড়া আমরা জানবো পেপাল ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যাও।

 

সুবিধাঃ

অনলাইনে পে করার ক্ষেত্রে পেপাল কার্যকরী একটি উপায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক কেনো অন্যান্য পেমেন্ট ব্যবস্থা থেকে পেপ্যাল অধিক সুবিধাজনক।

১। সুরক্ষা

পেমেন্ট এর ক্ষেত্রে দারুণ সুরক্ষা প্রদান করে পেপাল। বেশ ভালো এনক্রিপশন ব্যবস্থা অনুসরণ করে প্রতিটা লেনদেন সম্পন্ন করে কোম্পানিটি। এছাড়াও পেপাল পারচেজ প্রটেকশন প্রতিটি ট্রানজেকশনে সুরক্ষা প্রদান করে। অর্থাৎ কোনো ধরনের সমস্যার ক্ষেত্রে পেপ্যাল আপনাকে রিফান্ড বা অন্য যেকোনো উপায়ে সাহায্য করবে।

২। গ্রহণযোগ্যতা

পেমেন্ট সার্ভিস হিসেবে পেপাল কতটা বিশাল, তা এর ২০৩টি দেশে চালানো কার্যক্রম এর দিকে তাকালেই ধারণা করা যায়। যেকোনো দেশে পেপ্যাল ব্যবহার করে কারেন্সি কনভার্ট না করেই পেমেন্ট করা যায়, যা ভ্রমণপিয়াসীদের জন্য বিশাল একটি সুবিধা।

৩। দ্রুততা

পেপাল ব্যবহার করে পেমেন্ট করতে ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার টাইপ করতে হয়না। শুধুমাত্র হাতের কাছে থাকা স্মার্টফোন ব্যবহার করে যেকোনো ধরনের পেপ্যাল লেনদেন করা যাবে। তাই পেপাল ব্যবহার করে পেমেন্ট করা অনেক দ্রুত ও সহজ প্রক্রিয়া।

৪। রিওয়ার্ড

ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে রিওয়ার্ড প্রদান করে পেপাল। ক্রেডিট কার্ড এর মাধ্যমে পেমেন্ট এর ক্ষেত্রে যেমন রিওয়ার্ড পাওয়া যায়, ঠিক তেমনই পেপাল এর মাধ্যমে লেনদেনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রিওয়ার্ড ও অফার পাওয়া যায়।

এছাড়াও ক্রেডিট কার্ড পেপাল একাউন্টের সাথে যুক্ত করে ব্যবহার করলেও সেক্ষেত্রে পেপাল রিওয়ার্ড পাওয়া যায়।

৫। একের ভেতর সব

আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি ব্যাংক একাউন্ট, ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড যুক্ত করা যায় পেপাল অ্যাকাউন্টে। এর ফলে পেপাল থেকেই সব লেনদেন করা যায় ঝামেলা ছাড়াই। এছাড়াও বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই পেপাল পেমেন্ট সাপোর্ট রয়েছে, যার ফলে পেপালকে একটি ইউনিভার্সাল ওয়ালেট ব্যবস্থা বলা চলে।

 

অসুবিধাঃ

সুবিধার পাশাপাশি সকল জিনিসের অসুবিধা থাকে। পেপাল ও তার ব্যতিক্রম নয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক পেপাল এর কিছু অসুবিধা সম্পর্কে।

১। চার্জ

যদিওবা PayPal ব্যালেন্স ব্যবহার করে পরিবার বা বন্ধুদের ফ্রিতে অর্থাৎ কোনো বাড়তি চার্জ ছাড়াই টাকা পাঠানো যায়, তবে ব্যবসায়িক লেনদেনের ক্ষেত্রে চার্জ কাটে পেপাল।

ইন্সট্যান্টলি পেপাল থেকে ব্যাংক একাউন্টে টাকা ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে ১% চার্জ দিতে হয়। আবার বিনামূল্যে ব্যাংক ট্রান্সফার করা গেলেও এতে বেশ কিছুদিন সময় লাগে।

২। একাউন্ট ফ্রিজিং

একাউন্ট ফ্রিজ করার ক্ষেত্রে পেপাল এর নামে অনেক অভিযোগ রয়েছে। একবার আপনার পেপাল একাউন্ট ফ্রিজ হয়ে গেলে, নির্দোষ প্রমাণিত হওয়া পর্যন্ত আপনার পেপাল অ্যাকাউন্ট বা তাতে থাকা অর্থ ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবে।

 

পেপাল এর বিকল্প – PayPal Alternatives in Bangladesh

পেপাল একমাত্র অনলাইন পেমেন্ট ব্যবস্থা নয়। পেপাল ছাড়াও আরো বিভিন্ন জনপ্রিয় পেমেন্ট ব্যবস্থা রয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক পেপাল এর কিছু বিকল্প সার্ভিস সম্পর্কে।

 

পেওনিয়ার

দেশে ফ্রিল্যান্সিং এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি ও পেপাল এর অভাব, এই দুই কারণে অনলাইন পেমেন্ট ব্যবস্থা হিসেবে বেশ জনপ্রিয় পেওনিয়ার। মাস্টারকার্ড গ্রহণ করে এমন যেকোনো দেশে ব্যবহার করা যায় পেওনিয়ার। এছাড়াও লোকাল ব্যাংক বা এটিএম বুথ থেকেপেওনিয়ার ব্যালেন্স ক্যাশ আউট করা যায়। পেওনিয়ার একাউন্ট খুলতে এখানে ক্লিক করুন।

 

বিকাশ

বিকাশ সম্পর্কে কমবেশি সবাই জানেন। বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সর্বাধিক জনপ্রিয় ডিজিটাল মানি ট্রানজেকশন সিস্টেম হলো বিকাশ। দেশের অভ্যন্তরীণ যেকোনো ধরনের ট্রানজেকশন সম্পন্ন করা যায় বিকাশ একাউন্ট ব্যবহার করে। এছাড়াও ব্যাংকের সাথে অর্থ লেনদেন করা যায় বিকাশ ব্যবহার করে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

MOST POPULAR