HomeChemistryরাসায়নিক গতিবিদ্যা কাকে বলে?

রাসায়নিক গতিবিদ্যা কাকে বলে?

রসায়নের যে শাখায় রাসায়নিক বিক্রিয়ার বেগ সংক্রান্ত বিষয় আলোচনা করা হয় তাকে রাসায়নিক গতিবিদ্যা বলে। রাসায়নিক গতিবিদ্যায় (Chemical Kinetics) বিক্রিয়ার গতি বা হার এবং এর উপর বিভিন্ন নিয়ামকের প্রভাব নিয়ে আলােচনা করা হয়। একটি বিক্রিয়া কোন অবস্থায় কি গতিতে সম্পন্ন হবে বা বিক্রিয়াটি ঘটার কৌশল রাসায়নিক গতিবিদ্যার অন্তর্ভূক্ত।

রাসায়নিক গতিবিদ্যার মধ্যে রয়েছে দ্বিআণবিক গতিবিদ্যা এবং বিক্রিয়া ও শক্তি স্থানান্তরের সংঘর্ষ তত্ত্ব; একআণবিক হার তত্ত্ব ও অর্ধস্থায়ী দশা; গতিবিদ্যার ঘনীভূত-দশা ও বৃহদাণবিক বিষয়বস্তু।

 

রাসায়নিক গতিবিদ্যার ইতিহাস

জার্মান রসায়নবিদ লুডভিগ ১৮৫০ সালে সর্বপ্রথম রাসায়নিক গতিবিদ্যা নিয়ে কাজ করেন। তিনি পরীক্ষামূলকভাবে সুক্রোজের (গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজে) রুপান্তর হার অধ্যয়ন করেন এবং এই বিক্রিয়ার রাসায়নিক গতিপ্রকৃতি নির্ধারণের জন্য তিনি “সমন্বিত হার সূত্র” ব্যবহার করেন। ৩৪ বছর পরে তার কাজ উইলহেম অস্টওয়াল্ড এর নজরে আসে। উইলহেলমির পরে, পিটার ওয়েজ এবং ক্যাটো গুল্ডবার্গ ১৮৬৪ সালে ভরক্রিয়ার সূত্র প্রকাশ করেন। ভরক্রিয়ার সূত্র মতে, রাসায়নিক বিক্রিয়ার গতি (বা, হার) বিক্রিয়াকারী পদার্থসমূহের পরিমাণের সমানুপাতিক।

ভ্যান’ট হফ রাসায়নিক গতিবিদ্যা অধ্যয়ন করেন এবং ১৮৮৪ সালে তিনি তার বিখ্যাত “এটিউতস্ ডে ডুইনামিক চিমিক (রাসায়নিক গতিবিদ্যা অধ্যয়ন)” প্রকাশ করেন। “রাসায়নিক গতিবিদ্যা এবং দ্রবণের অসমোটিক চাপের সূত্রসমূহ” আবিষ্কারের মাধ্যমে যে অসাধারণ কাজ ভ্যান’ট হফ করেছিলেন, তার স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯০১ সালে তিনি রসায়নে প্রথম নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন। ভ্যান’ট হফের পরে রাসায়নিক গতিবিদ্যা বিক্রিয়া হারের পরীক্ষামূলক র্নিণয় নিয়ে আলোকপাত করা শুরু করে, আর সেখান থেকে বিক্রিয়ার হার সূত্রাবলী এবং হার ধ্রুবকগুলি নির্ণয় করা যায়। শূন্য ক্রম বিক্রিয়াগুলির জন্য তুলনামূলকভাবে সহজ হার সুত্র বিদ্যমান (যার জন্য বিক্রিয়া হারগুলি ঘনমাত্রার উপর নির্ভরশীল নয়), এবং প্রথম ক্রম বিক্রিয়া এবং দ্বিতীয় ক্রম বিক্রিয়া গুলির জন্যও অনুরুপ সহজ হার সূত্রাবলী আছে। আর, অপরাপর বিক্রিয়া গুলির জন্যও তাদের হার সমীকরণ প্রতিপাদন করা যায়। মৌলিক বিক্রিয়াগুলি ভরক্রিয়ার সূত্র অনুসরণ করে, কিন্তু যে সমস্ত বিক্রিয়া একাধিক ধাপে সংঘটিত হয় ধাপ-ভিত্তিক বিক্রিয়া, তাদের হার সূত্র বের করতে হয় প্রতিটি ধাপের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মৌলিক বিক্রিয়ার হার সূত্র গুলিকে যোগ করার মাধ্যমে এবং এভাবে বিক্রিয়ার হার বের করা কখনো বেশ জটিল হতে পারে। জটিল বিক্রিয়া বা বহু-ধাপ যুক্ত বিক্রিয়া যা আবার ক্রমাগত বিক্রিয়া নামেও পরিচিত, এরুপ বিক্রিয়ার হার-নির্ণায়ক ধাপ প্রায়শই বিক্রিয়ার হার নির্ধারণ করে থাকে। প্রথম ক্রম সার্বিক বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে একটি স্থিত অবস্থা অনুমানকরণ দ্বারা বিক্রিয়ার হার সূত্রের সরলীকরণ করা যাতে পারে। আরহেনিয়াস সমীকরণ এবং আইরিং সমীকরণের মাধ্যমে একটি বিক্রিয়ার সক্রিয়ন শক্তি পরীক্ষামূলকভাবে নির্ণয় করা হয় । যে সমস্ত নিয়ামক বিক্রিয়ার হার কে প্রভাবিত করে সেগুলোর মধ্যে প্রধান হলোঃ বিক্রিয়কগুলির ভৌত অবস্থা, বিক্রিয়কগুলির ঘনত্ব, বিক্রিয়াটি যে তাপমাত্রায় ঘটে তা এবং বিক্রিয়াটিতে কোনও অনুঘটক উপস্থিত আছে কিনা এসব।

গরব্যান এবং ইয়াবলনস্কি এর মতে, রাসায়নিক গতিবিদ্যার ইতিহাসকে তিনটি যুগে ভাগ করা যেতে পারে। প্রথম পর্যায়ে আছে বিজ্ঞানী ভ্যান্ট হফ কর্তৃক একাদিক্রমে অনুসন্ধান যার মাধ্যমে তিনি রাসায়নিক বিক্রিয়ার সাধারণ হার সূত্রাবলী এবং তাপগতিবিদ্যার সাথে রাসায়নিক গতিবিদ্যাকে সম্পর্কিত করার উপায় খুঁজছিলেন। রাসায়নিক গতিবিদ্যার ইতিহাসের দ্বিতীয় পর্যায়কে বলা যেতে পারে সেমিয়োনভ-হিনশেলউডের যৌথ প্রচেষ্টা, যেখানে তারা বিক্রিয়ার কৌশলের উপর জোর দিয়েছিলেন, বিশেষতঃ তারা জোর দিয়েছিলেন শিকল বিক্রিয়ার কৌশলের উপর। গতিবিদ্যার ইতিহাসের তৃতীয় পর্যায়ের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন অ্যারিস , আর তার কাজ সংশ্লিষ্ট ছিল রাসায়নিক বিক্রিয়া নেটওয়ার্কগুলির বিশদ গাণিতিক বর্ণনার সাথে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments