HomeChemistryব্যাপন কি? ব্যাপনের প্রয়োগ

ব্যাপন কি? ব্যাপনের প্রয়োগ

ব্যাপন একটি স্বতঃস্ফূর্ত রাসায়নিক প্রক্রিয়া। উচ্চ ঘনত্বের এলাকা থেকে নিম্ন ঘনত্বের এলাকার দিকে কোন পদার্থের অণুসমূহের স্থানান্তর বা পরিব্যাপ্ত হওয়ার প্রক্রিয়াকে ব্যাপন বলে। গ্যাসের ক্ষেত্রে যতক্ষণ সর্বাংশে গ্যাসের চাপ সমান না হয় ততক্ষণ উচ্চ চাপের অঞ্চল থেকে নিম্ন চাপের অঞ্চলের দিকে গ্যাস অণুসমূহ স্থানান্তরিত হয়।

উদাহরণস্বরূপ বেগুনী বর্ণের আয়ােডিন বাম্পকে একটি ছিদ্রযুক্ত কাঁচ পাত্রে নিয়ে ছিদ্রের মাধ্যমে অপর একটি কাঁচ পাত্রের সঙ্গে সংযােগ দিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দেয়ার পর দেখা যায় যে বেগুনী বর্ণের গ্যাস ছিদ্র দিয়ে অপর পাত্রটির সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। এটি ব্যাপনের একটি উদাহরণ। ব্যাপন প্রক্রিয়া স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঘটে। পরিবর্তিত শর্তে এর অপর একটি দিক আছে যা অনুব্যাপন বা নিঃসরণ নামে পরিচিত।

 

ব্যাপনের ইতিহাস

দ্রবণের মধ্যে ব্যাপন এর তত্ত্বটি আবিষ্কার হওয়ার অনেক আগে থেকেই এটির প্রচলন হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, প্লিনি দ্য এল্ডার আগে সিমেন্টেশন প্রক্রিয়া বর্ণনা করেছিলেন, যা কার্বনের (C) ব্যাপনের মাধ্যমে লোহা (Fe) থেকে ইস্পাত তৈরি করে। আর একটি উদাহরণ বহু শতাব্দী ধরে সুপরিচিত, দাগযুক্ত কাচ বা মাটির পাত্র এবং চিনা সিরামিকের রঙগুলির ব্যাপন।

 

ব্যাপনের প্রয়োগ

নিচে ব্যাপনের প্রয়োগ বর্ণনা করা হল :

  • একটি গ্লাসে পানি নিয়ে তাতে এক ফোঁটা কালি যোগ করা হলে কিছুক্ষণ পর দেখা যাবে কালি সমগ্র পানিতে মিশে গেছে। এ ঘটনার নাম ব্যাপন।
  • একটি বন্ধ ঘরের এক কোণে একটি সেন্টের শিশি খুলে রাখার কিছুক্ষণ পর দেখা যাবে সুগন্ধ ঘরের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। এটি ব্যাপন প্রক্রিয়ার একটি উদাহরণ।
  • এক গ্লাস পানিতে এক দানা পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট ছেড়ে দেয়ার কিছুক্ষণ পর দেখা যাবে ক্রমশ বেগুনি রং সম্পূর্ণ পানিতে ছড়িয়ে পড়েছে। কারণ পটাশিয়াম ম্যাঙ্গানেটের রং বেগুনি। এটিও ব্যাপন প্রক্রিয়ার উদাহরণ।

 

ব্যাপনের ক্ষতিকর দিক

  • কল-কারখানা হতে বিষাক্ত গ্যাসের ব্যাপনে প্রকৃতির ক্ষতি হচ্ছে।
  • পরিবেশে CO2 এর ব্যাপনের ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
  • খোলা স্থানে রাখা ময়লা-আবর্জনার গন্ধ চারপাশে ছড়িয়ে পরছে।

 

ব্যাপন ও নিঃসরণ

ব্যাপন ও নিঃসরণের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য আছে। ব্যাপনের ক্ষেত্রে পদার্থের অনুসমুহ চারিদিকে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু সুরু ছিদ্রপথে উচ্চচাপের স্থান থেকে নিম্নচাপের স্থানের দিকে সজোরে বেরিয়ে আসে প্রক্রিয়াকে নিঃসরণ বলে। যেমনঃ আমরা যদি একটি বেলুন ফুলাই, এরপরে বেলুনটাকে বেধেঁ দেই।তারপরে বেলুনের গায়ে একটি স্কচটেপ লাগাই। স্কচটেপ এর উপর আলপিন দিয়ে ছোট একটি ফুটো করলে বেলুনের সমস্ত বাতাস খুব সজোরে সেই স্থান দিয়ে বেরিয়ে আসবে এটাই হলো নিঃসরণ।

আরো একটি উদাহরণের মাধ্যমে পরিষ্কার হওয়া যাক। আমরা বাসা বাড়িতে প্রায়ই গ্যাসের সিলিন্ডার ব্যবহার করে থাকি। এই সিলিন্ডারে এলপিজি গ্যাস থাকে যেটার পুর্ণরূপ হলো (লিকুইফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস) বা তরলিকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস । এই গ্যাস তরল আকারে গ্যাসের বোতলের ভিতর ভরা থাকে। আমরা যখন গ্যাসের চুলার সাথে গ্যাসের বোতলের সংযোগ দেই, তখন খুব সজোরে ওই তরল গ্যাস বোতলের ভেতর থেকে বাইরে বেরিয়ে আসতে থাকে এবং বাইরে এসে যখন চাপ কমে যায় তখন তার গ্যাসে পরিণত হয়। এটা হচ্ছে নিঃসরণের সবচেয়ে সহজ উদাহরণ এবং আমাদের আশপাশের আমরা প্রায়ই দেখতে পাই। এখানে এই নিঃসরনকে ব্যবহার করে অল্প জায়গাতেই অধিক পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ করা যায়।

 

ব্যাপন ও নিঃসরণ-এর তুলনাঃ

সাদৃশ্য:

  • ব্যাপন ও অনুব্যাপন উভয় প্রক্রিয়াই প্রবহমান পদার্থ অর্থাৎ তরল ও গ্যাসের অণুসমূহের স্থানান্তর প্রক্রিয়া।
  • উভয় প্রক্রিয়াতেই অণুসমূহের স্থানান্তর ঘটে উচ্চ চাপ অঞ্চল বা উচ্চ ঘনত্ব অথবা উচ্চ ঘনমাত্রার অংশ থেকে নিম্ন চাপ অঞ্চল বা নিম্ন ঘনত্ব/ঘনমাত্রার অংশে।
  • ব্যাপন ও অনুব্যাপন উভয় প্রক্রিয়ায় পরিশেষে সর্বাংশে পদার্থের ঘনত্ব/চাপ সমান হয়।

বৈসাদৃশ্য

  • ‘ব্যাপন’ সাধারণ বায়ুচাপে সাধারণ গতিতে সংঘটিত স্বতঃস্ফূর্ত প্রক্রিয়া। কিন্তু ‘অনুব্যাপন’ উচ্চ চাপের প্রভাবে সজোরে ঘটে।
  • অনুব্যাপন শুধু সরু ছিদ্র পথে অর্থাৎ নিয়ন্ত্রিত পথে ঘটে। কিন্তু ব্যাপন সরু বা বিস্তৃত উভয় পথেই ঘটতে পারে।

 

Tags :

  • ব্যাপন কী?; HCl গ্যাসের ব্যাপন হার NH3 অপেক্ষা কম কেন?;
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments